ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:১০:১৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

নীলক্ষেতে ব্যালট ছাপানোর অভিযোগ ঘিরে বিতর্ক

ঢাবি প্রতিনিধি | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:৪৬ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ শনিবার

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট পেপার নীলক্ষেতে অরক্ষিতভাবে ছাপানোর অভিযোগ তুলেছেন স্বতন্ত্র সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী আরাফাত চৌধুরী। নির্বাচনের আট দিন পর ১৭ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে এ অভিযোগ তোলেন তিনি।

তাঁর দাবি, নীলক্ষেতের একটি প্রিন্টিং প্রেসের দোকানে অরক্ষিতভাবে ব্যালট পেপারগুলো ছাপানো হচ্ছিল। দাবির পক্ষে তিনি একটি ছবি ওই পোস্টে যুক্ত করেন। ছবিটি ডাকসু নির্বাচনের আগে ৭ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ৫৭ মিনিটে তোলা হয়েছে বলে দাবি আরাফাতের।

ফেসবুক পোস্টে তিনি অভিযোগ করেন, ‘ব্যালট‌ পেপারে কোনো সিরিয়াল নম্বর কিংবা কিউআর কোড ছিল না। যে কেউ চাইলে আগে থেকেই যত খুশি তত ব্যালট পেপার ছাপিয়ে রাখতে পারবে।’ আরাফাত পোস্টে আরও লেখেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট আমরা ভোটার উপস্থিতি তালিকা ও ভোটকেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করার জন্য লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।’

ডাকসু নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠতে থাকে। এর মধ্যে একটি গুরুতর অভিযোগ ছিল অরক্ষিতভাবে নীলক্ষেতে ব্যালট পেপার ছাপানোর। অভিযোগের সূত্র ধরে এ বিষয়ে জানতে নীলক্ষেত গাউসুল আজম মার্কেটে অনুসন্ধান করে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী দল। তারা নীলক্ষেতে অরক্ষিতভাবে ব্যালট পেপার ছাপানোর সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, নীলক্ষেতে নয়, সর্বোচ্চ গোপনীয়তায় উন্নত মানের ছাপাখানায় তৈরি হয়েছে ব্যালট। এদিকে ব্যালট ছাপানোর সংখ্যা নিয়েও ছাপাখানা আর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্যে গরমিল উঠে আসে অনুসন্ধানে।

গতকাল বিকেলে ব্যালট পেপার ছাপানো প্রেসের দোকান বন্ধ পাওয়া যায়। মোবাইল ফোনেও পাওয়া যায়নি মালিককে। তবে এর আগে প্রেসটির মালিক মো. জালাল সাংবাদিকদের কাছে ব্যালট তাঁর প্রেস থেকে ছাপানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করেন। তিনি মো. ফেরদৌস নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে এই কাজ পেয়েছেন বলে জানান। জালাল জানান, তাঁর প্রেসের খোলামেলা পরিবেশেই ডাকসু নির্বাচনের ব্যালটের পেপার ছাপানো হয়েছে। বন্ধ ছিল না প্রেসের শাটারও। তাঁর কাছ থেকে ৪৮ হাজার ব্যালট পেপার নেওয়া হয়েছে।

প্রতি কাগজে দুটি ব্যালট থাকায় এর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৬ হাজারে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৭৭৫। এর মধ্যে ৯ সেপ্টেম্বরের ভোটে ১৮টি হলের মোট ভোটারের মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে ভোট পড়েছে ৭৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

জানা গেছে, ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ব্যালট পেপার নিয়ে কাটিং হয়েছে আরেকটি দোকানে। এর নাম ‘মক্কা পেপার কাটিং হাউস’। দোকানটির মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফেরদৌস নামের একজন কাজ নিয়ে এসেছিলেন এই দোকানে। কাটিংয়ের সময়ও পরিবেশ ছিল অরক্ষিত।

দোকানের এক কর্মচারী বলেন, কাগজটা স্পর্শকাতর ছিল। তাই আমরা রাত পৌনে ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে কাটিং করেছি। পরদিন সকাল ৯টার দিকে তারা ব্যালট নিয়ে যান। ওই কাটিং সেন্টারে সে রাতে কাটা হয়েছে ২২ রিম কাগজ, যাতে ব্যালটের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৮ হাজারের মতো। জালাল প্রেস থেকে বলা হচ্ছে, তারা ৯৬ হাজার ব্যালট ছাপিয়েছে। আর মক্কা কাটিং বলছে, তারা ৮৮ হাজার ব্যালট কেটেছে। এখানেই ৮ হাজার ব্যালটের গরমিল।

ডাকসু নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছাপা ও ওএমআর মেশিনে গণনা করার টেন্ডার পাওয়া প্রতিষ্ঠান আনজা করপোরেশন। আদাবর থানার নবোদয় আবাসিক এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান। আনজা করপোরেশনের চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, তাঁর নিজের প্রেস থেকে ছাপানো হয়েছে ব্যালট। যেটি কেরানীগঞ্জে অবস্থিত। তথ্য-প্রমাণ দিলে তিনি দায় চাপিয়ে দেন কর্মচারীদের ওপর। জাহিদ বলেন, আমি চীনে ছিলাম। আমার কর্মচারীরাই কাজটা করেছে।

জাহিদ হোসেনের দাবি, তারা ছাপিয়েছেন এক লাখ ৫৩ হাজার ব্যালট। তবে নীলক্ষেতের দুই দোকান থেকে দুই রকম হিসাব পাওয়া গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেছেন, কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের অতিরিক্ত ব্যালট পেপারের অর্ডার করা হয়নি। অর্থাৎ মোট ৩৯ হাজার ৭৭৫ ভোটারের বিপরীতে পাঁচটি করে পেপার বুঝে নেওয়া হয়। এর বেশি ব্যালট ছাপানো হয়নি। আর হল সংসদের জন্য প্রত্যেক ভোটারের বিপরীতে একটি করে পেপার নেওয়া হয়েছে। তবে সতর্কতার জন্য হল সংসদে অতিরিক্ত এক হাজার ৪০টি ব্যালট পেপার বেশি ছাপা হয়েছে। যত ব্যালট ব্যবহার হয়েছে, যত অব্যবহৃত আছে, এগুলো হিসাব করা হয়নি। তবে সব প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে সংরক্ষণ রয়েছে।

জানতে চাইলে ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক জসীম উদ্দিন বলেন, আমাদের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আনজা করপোরেশন অংশ নেয়। তারাই কাজটি পেয়েছে। তারা ব্যালট পেপার সরবরাহ করেছে। আমাদের এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। যেসব অভিযোগ এসেছে, সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানাব।

এর আগে ২৪ সেপ্টেম্বর প্রশাসন থেকে লিখিত আকারে জানানো হয়, ব্যালট পেপার মুদ্রণ একটি বিশেষায়িত প্রক্রিয়া। এর প্রতিটি পর্যায়ে নিবিড় তত্ত্বাবধান ও নির্বাচন কমিশনে কঠোর তদারকি ছিল। মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যালট পেপার পাওয়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা/কেন্দ্রপ্রধান সই করেন।

এতে আরও বলা হয়েছিল, যে ওএমআর মেশিনে স্ক্যানিং করে ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ সম্পন্ন করা হয়, তা নীলক্ষেতের কোনো দোকানে সম্ভব নয়। সুতরাং যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণ গোপনীয়তা রক্ষা করে ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ করা হয়েছে, তাতে এটি অরক্ষিত থাকার সুযোগ নেই। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ব্যালট পেপার ছাপানোর পর নির্দিষ্ট পরিমাপে কাটিং করে তা ওএমআর মেশিনে প্রি-স্ক্যানিংপূর্বক মেশিনের পাঠযোগ্যতা নিশ্চিত করে সিলগালাকৃত প্যাকেটে সরবরাহ করে।

অন্যান্য প্রার্থী ও প্যানেলের যে অভিযোগ

ডাকসু নির্বাচনে প্রশাসনের বিরুদ্ধে নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অভিযোগ তুলেছে ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, স্বতন্ত্র প্যানেলের সহসভাপতি প্রার্থী উমামা ফাতেমা এবং বামপন্থি সাতটি দলের প্যানেল ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’। গত ২২ সেপ্টেম্বর ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন নিয়ে ১১টি অনিয়মের অভিযোগ আনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। এর মধ্যে একটি অভিযোগ ছিল, নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট পেপার কোন প্রেস থেকে ছাপানো হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। ৭ সেপ্টেম্বর নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটের একটি ছাপাখানায় বিপুল সংখ্যক ব্যালট পেপার অরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া গেছে বলেও অভিযোগ আনা হয়।

২৫ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে ১২টি অভিযোগ আনেন প্রতিরোধ পর্ষদের জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসু। তাঁর অভিযোগগুলোর মধ্যে পাঁচটিই ছিল ব্যালটকেন্দ্রিক। অভিযোগগুলো হলো– ব্যবহৃত ব্যালটে কোনো ক্রমিক নম্বর না থাকা; ছাপানো, সরবরাহ করা, বাতিল ও ফেরত ব্যালটের হিসাব প্রকাশ করা হয়নি; ব্যালট কোথায় ছাপানো হয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি; নকল ব্যালট ফাঁসের অভিযোগ; নীলক্ষেতে একটি ছাপাখানায় বিপুলসংখ্যক অরক্ষিত ব্যালট পেপার উদ্ধার হলেও প্রশাসনের তদারকি ছিল না এবং ওএমআর মেশিনে কারচুপি।

১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) সদস্য সচিব জাহিদ আহসান সই করা বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচনে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ডাকসুতে প্রায় সাড়ে ৪০০ প্রার্থী ও হলের যারা প্রার্থী ছিলেন, তাদের পক্ষ থেকে নানা কনসার্ন জানানো হয়েছে। ব্যালট পেপার গাউসুল আজম মার্কেটে পাওয়া গিয়েছিল, এটার কোনো ব্যাখ্যা তারা দিতে পারেনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে: সাদা দল

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ডাকসু নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির যে তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে খতিয়ে দেখার দাবি রাখে। কারণ, ওই প্রতিবেদনে যে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে, তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সুনামকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে সই করেন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম এবং অধ্যাপক ড. আবুল কালাম সরকার।