ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:১৫:০৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

পরিকল্পনার অভাবে স্থবির ওষুধের কাঁচামাল শিল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:৩৩ এএম, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ বৃহস্পতিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

প্রয়োজনীয় ওষুধের ৯৭ শতাংশই উৎপাদিত হয় দেশে। এ বিশাল উৎপাদন সক্ষমতার পেছনে যে কাঁচামাল প্রয়োজন, তার প্রায় ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হচ্ছে ভারত ও চীন থেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাঁচামালের ক্ষেত্রে এ ধরনের পরনির্ভরতা কেবল অর্থনৈতিক নয়; বরং জাতীয় নিরাপত্তার দিক থেকেও ঝুঁকিপূর্ণ।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সরকার গত ১৭ আগস্ট এপিআই (অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস) শিল্পের উন্নয়নে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এর আহ্বায়ক করা হয় স্বাস্থ্য সচিব সাইদুর রহমানকে। কমিটির দায়িত্ব ছিল– দেশীয় ওষুধের কাঁচামাল বা এপিআই শিল্পের উন্নয়নে সুস্পষ্ট কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করে সরকারকে প্রতিবেদন দেওয়া। নির্ধারিত সময়ের এক মাস পেরোলেও কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এ পর্যন্ত কমিটি কেবল একটি বৈঠক করেছে, সেখানেও কোনো নির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি হয়নি। এমনকি কখন প্রতিবেদন তৈরি হবে, সে বিষয়েও মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না।
গত ২৭ মে ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদন, নীতি-সহায়তা ও নিবন্ধন সহজীকরণ নিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) ও কাঁচামাল প্রস্তুতকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ এপিআই অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠক হয়। সেখানে দেশীয় ব্যবস্থাপনায় ওষুধের কাঁচামাল তৈরি ও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. শামীম হায়দার। বৈঠকে ডিজিডিএর পরিচালক শফিকুল ইসলামকে একটি রোডম্যাপ তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে শফিকুল ইসলাম এখনও কোনো প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে পারেননি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, কাজ চলমান। আরও কিছুদিন লাগবে। কবে প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে পারবেন, এ বিষয়ে তিনিও কিছু জানাতে পারেননি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এপিআই শিল্পের বিকাশ এখন সময়ের দাবি। কেবল ওষুধ রপ্তানি বাড়ানোর জন্য নয়, জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বনির্ভরতার জন্যও এ খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

সুবিধাভোগী চক্র চায় না দেশ কাঁচামালে স্বনির্ভর হোক

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. মোহাম্মদ আকিব হোসেন বলেন, ১৯৮২ সালের ঔষুধনীতির কারণে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল। এখন প্রয়োজন তেমনই একটি সাহসী সিদ্ধান্ত, যেখানে নির্দিষ্টভাবে বলা থাকবে– যে কাঁচামাল দেশে উৎপাদন হয়, তা আর বিদেশ থেকে আমদানি করা যাবে না। তিনি বলেন, ভারত ও চীনের স্বার্থ রক্ষায় একটি অসাধু চক্র কাজ করছে, যারা চায় না বাংলাদেশ এপিআই খাতে স্বনির্ভর হোক। ফলে দীর্ঘদিনেও কার্যকর নীতিমালা তৈরি হয়নি।

প্রণোদনার ঘোষণা, নেই বাস্তবায়ন

২০১৮ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রণয়ন করেছিল ন্যাশনাল এপিআই অ্যান্ড ল্যাবরেটরি রি-এজেন্টস প্রোডাকশন অ্যান্ড এক্সপোর্ট পলিসি। এতে ছিল এপিআই উৎপাদনে বিনিয়োগ, প্রণোদনা, নমুনা পরীক্ষায় সহজতা, স্বল্প সুদে ঋণসহ নানা নীতিগত সহায়তার প্রতিশ্রুতি। বাস্তবে এসব বাস্তবায়নে তেমন অগ্রগতি হয়নি। দেশে বর্তমানে ১৫-১৬টি প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল তৈরি করছে, যা মোট চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ। ৫১টির মতো এপিআই উৎপাদনের অনুমোদন থাকলেও প্রায় এক হাজার এপিআই এখনও আমদানিনির্ভর। প্রতিবছর প্রায় এক লাখ ৫৮ হাজার ২৮০ কোটি টাকা (১৩০ কোটি ডলার) বিদেশে চলে যাচ্ছে কাঁচামাল আমদানিতে।

গ্যাস-বিদ্যুৎ নেই, এপিআই পার্কে শুধু ঘরবাড়ি

ওষুধের কাঁচামাল প্রস্তুতে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় এপিআই পার্ক স্থাপন করে সরকার। এটি ছিল নতুন আশার সঞ্চার। সেখানে ২৭টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান প্লট নিলেও মাত্র চারটি অবকাঠামো প্রস্তুত করেছে। দুটি প্রতিষ্ঠান ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদন করছে। গ্যাস সংযোগ না থাকা, মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অপ্রতুলতা, দক্ষ জনবলের অভাবসহ নানা কারণে পার্কটি এখনও কার্যকরভাবে শিল্পাঞ্চল হয়ে উঠতে পারেনি। এরই মধ্যে সরকারের ৩৩০ কোটি টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। তবে বেশ কিছু ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি উদ্যোগে এপিআই পার্কের বাইরে এ কারখানা স্থাপন করেছে।

সরকারি সহায়তা ছাড়া লড়াই দীর্ঘস্থায়ী হবে না

বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সভাপতি ইনসেপ্‌টা ফার্মাসিউটিক্যালস্‌ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুক্তাদির বলেন, দেশীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আপ্রাণ চেষ্টা করছে। সরকারি সহায়তা ছাড়া এ লড়াই দীর্ঘস্থায়ী হবে না। এ খাত উন্নয়নে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনও সুপারিশ করেছে। এসব সুপারিশ এখনও আলোর মুখ দেখেনি। আমরা অনেকবার সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে কথা বলার চেষ্টা করেছি। তারা সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তিনি বলেন, কাঁচামাল শিল্পে যদি স্বাধীনতা না আসে, তাহলে ওষুধে আত্মনির্ভরতা অর্জনের পরও আমরা বড় সংকটে পড়ব। আন্তর্জাতিক বাজারে দামের ওঠানামা বা সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে এর প্রভাব পড়বে দেশের ভোক্তার ওপরে।

গণস্বাস্থ্য বেসিক কেমিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম জামাল উদ্দিন বলেন, ‘ওষুধের কাঁচামাল ৯০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এ খাত ভারত ও চীনের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা দীর্ঘদিনের। এ নির্ভরতা কমাতে না পারলে বাংলাদেশের ওষুধের নিরাপত্তা হুমকিতেই থেকে যাবে। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে ওষুধের কাঁচামালের বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু হিসেবে উল্লেখ করেছে। কমিশন কাঁচামাল শিল্পকে নীতি ও আর্থিক সহায়তা দিতে সুপারিশ করেছে। এটি আমাদেরও চাওয়া। তবে বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা দিয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য সচিব সাইদুর রহমান বলেন, ‘দেশীয় ব্যবস্থাপনায় ওষুধের কাঁচামাল প্রস্তুতে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুতের কাজ চলমান। সবার মতামত নেওয়ার জন্য একটু দেরি হচ্ছে। আমরা কিছুদিন সময় বাড়িয়ে নিয়েছি। আশা করছি, এ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন তৈরি করতে পারব।’ 

বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির কোষাধ্যক্ষ মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, ওষুধ প্রস্তুতের চেয়ে কাঁচামাল প্রস্তুত করতে অনেক বেশি অর্থ বিনিয়োগ প্রয়োজন। এই বিনিয়োগ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় করা সম্ভব নয়; এখানে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কাজ এগোবে না। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য– যে ওষুধগুলোর চাহিদা বেশি, সেগুলোর কাঁচামাল দেশেই উৎপাদনের প্রস্তুতি নেব, বিশেষ করে এপিআই পার্কে বড় পরিসরে কাঁচামাল উৎপাদন ও রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে। তবে তার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত অর্থ, অবকাঠামো ও নীতিগত সহায়ক পরিবেশ।

মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, চীন-ভারতসহ অন্যান্য দেশ প্রণোদনা ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় কাঁচামাল উৎপাদন করেছে। তবে ২০১৮ সালের নীতিমালা অনুযায়ী সরকারের সহায়তা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা আর ঘটেনি। ফলে কাঁচামাল শিল্প পিছিয়ে যাচ্ছে।