ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ০:০৪:১৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদাপূর্ণ বৃত্তি পাওয়া চারজনের একজন মুমতাহিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৪:০৪ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ শুক্রবার

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাস অঙ্গরাজ্যের হেনড্রিক্স কলেজের মর্যাদাপূর্ণ ‘হেইজ মেমোরিয়াল স্কলারশিপ’ পেয়েছেন বাংলাদেশের মুমতাহিনা করিম মীম।

প্রতিবছর মাত্র চারজন শিক্ষার্থীকে এই সম্পূর্ণ খরচ বহনের বৃত্তি (ফুল রাইড) দেওয়া হয়। এবার এই বৃত্তি পাওয়া চারজনের তিনজন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থী, আর একমাত্র মুমতাহিনা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী।

বৃত্তির আওতায় চার বছরের টিউশন ফি, থাকা-খাওয়াসহ সব খরচ বহন করবে কলেজ কর্তৃপক্ষ। মুমতাহিনা জানান, চার বছরে তাঁর মোট বৃত্তির পরিমাণ টাকার হিসাবে দাঁড়াবে ২ কোটি ৬৫ লাখের বেশি।

গত ৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাড়েন মুমতাহিনা। তাঁর ক্লাস গত ২৬ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে। তিনি কম্পিউটার সায়েন্সে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে-পরে হোয়াটসঅ্যাপে মুমতাহিনার সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন শুরু করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ২৫টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তিনি ‘অফার লেটার’ পেয়েছেন। এতগুলো ‘অফার লেটার’ থেকে বাছাই করাটা তাঁর জন্য বেশ কঠিন ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত হেনড্রিক্স কলেজের বৃত্তিটি বেছে নেন তিনি। কারণ, তাঁর কাছে মনে হয়েছে, এটাই সবচেয়ে ভালো ও সুবিধাজনক।

মুমতাহিনা বলেন, ‘গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, আমি বৃত্তি পাওয়া চারজনের একজন।’

মুমতাহিনার জন্ম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটায়। তবে বড় হয়েছেন চট্টগ্রাম নগরে। অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি, আর কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন।

বাবা আব্দুল করিম চৌধুরী ব্যবসায়ী। মা ইয়াসমিন আকতার গৃহিণী। ছোট ভাই আবদুল্লাহ সাদ পড়ে প্রথম শ্রেণিতে।

মুমতাহিনা বলেন, স্কুল-কলেজের ক্লাসে তাঁর রোল ১০-এর মধ্যে থাকত। পড়াশোনার পাশাপাশি কোডিং, আঁকাআঁকি, বিতর্ক, সাহিত্য, সংগীতসহ অন্যান্য এক্সট্রা কারিকুলার বিষয়ে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। এসবে অংশ নিয়ে পেয়েছেন নানান পুরস্কার। আর এই কাজগুলো তাঁকে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনে সাফল্য পেতে ভালো সহায়তা করেছে বলে মনে করেন তিনি।

হেনড্রিক্স কলেজের বৃত্তির জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে একাডেমিক নৈপুণ্য, ভাষাগত দক্ষতার পাশাপাশি নেতৃত্ব, এক্সট্রা কারিকুলার কার্যকলাপের মতো বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়।

মুমতাহিনা জানান, তাঁর কোডিং শেখার হাতেখড়ি হয়েছিল মা ইয়াসমিন আকতারের হাতে। তা ছাড়া তাঁকে ছোট থেকেই বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করার পেছনের মানুষটিও তিনি।

টেলিফোনে কথা হয় ইয়াসমিন আকতারের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে মুমতাহিনার নিজেরও আগ্রহ ছিল। তাঁর আগ্রহের বিষয়গুলোতে তাঁরা সব সময় সমর্থন দিয়েছেন। মুমতাহিনা যাতে সাফল্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা শেষ করতে পারেন, সে জন্য তিনি সবার কাছে দোয়া চান।

ইয়াসমিন আকতার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাইনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিষয়ে এমবিএ করেছেন। তিনি একসময় ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতেন। কোডিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি দক্ষতা অর্জন করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন কোর্সও করেন। তিনি বলেন, যখন ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করতেন, তখন তা আগ্রহ নিয়ে দেখত মুমতাহিনা। আর এভাবেই প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে মেয়ের কাজের শুরু।

মুমতাহিনা জানান, তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর মা ইউটিউব থেকে কোডিং শেখার কিছু টিউটোরিয়াল তাঁকে দিয়েছিলেন। নিজের প্রথম প্রোগ্রাম ‘হ্যালো ওয়ার্ড’ প্রিন্ট করে আগ্রহটা আরও বাড়ে। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুলের জন্য ওয়েবসাইট বানিয়েছিলেন তিনি। তখন স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছিলেন।

প্রযুক্তি তো ছেলেদের বিষয়, মেয়ে হয়ে এসব কাজ পারবেন কি না, এমন সব প্রশ্ন শুনতে হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মুমতাহিনা। তিনি বলেন, তাই নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এগোতে হয়েছে তাঁকে। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুলে প্রোগ্রামিং ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষার্থীদের কোডিং শেখান। তাঁর নেতৃত্বের দল জাতীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অর্জন করে। করোনাকালে ইউটিউব দেখে শেখেন নানান প্রজেক্ট। নিজের জমানো টাকায় কেনেন আরডুইনো কিটসহ বিভিন্ন ধরনের সেন্সর। তাঁর ছোট্ট ঘরই হয়ে ওঠে ‘মিনি রোবোটিকস ল্যাব’। আর সেখানেই তৈরি করেন ফুড-সার্ভিং রোবট ‘কিবো’।

ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকির প্রতি দারুণ টান ছিল বলে জানান মুমতাহিনা। তিনি বলেন, নিজের ঘরের দেয়ালই ছিল তাঁর আঁকিবুঁকির ক্যানভাস। তাঁর মা তাঁকে বাসার কাছের একটি আর্ট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে তাঁর মন টেকেনি। ধরাবাঁধা নিয়মের মধ্যে আঁকাআঁকি পছন্দ করতেন না তিনি। এরপর ঘরে নিজের ছোট্ট স্টুডিও বানিয়ে তিনি মনোযোগ দিয়েছিলেন রঙ-তুলিতে।

মুমতাহিনা বলেন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কম্পিউটার, কোডিং, রোবোটিকসের মতো বিষয় নিয়ে আগ্রহ, স্বপ্ন লালন করে অগ্রসর হওয়াটা তাঁর জন্য সহজ ছিল না। তাঁকে অনেকেই বলতেন, ‘মেয়ে হয়ে এত বড় স্বপ্ন দেখতে নেই।’ তবে তিনি দমে যাননি। আর পারিবারিক, বিশেষ করে মায়ের সহযোগিতা তো ছিলই। যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে দেশের জন্য কাজ করতে চান মুমতাহিনা।

এই বিভাগের জনপ্রিয়