ঢাকা, মঙ্গলবার ১০, ডিসেম্বর ২০২৪ ৪:৩৯:৫৯ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বিশিষ্ট চার নারী ব্যক্তিত্ব পেলেন বেগম রোকেয়া পদক বেগম রোকেয়া দিবস আজ পালিয়ে সপরিবারে মস্কোতে আশ্রয় নিয়েছেন আসাদ ভারতে ৪৪ স্কুলে বোমা হামলার হুমকি ভারত থেকে ১০০ মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানি শেষ ম্যাচে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে দিনাজপুর, তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রিতে নির্বাচনের আগে বড় ধরনের সংস্কার করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

হেমন্তে ছাতিম ফুল সুগন্ধ ছড়িয়ে যায়

আইরীন নিয়াজী মান্না  | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৩৬ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২৪ সোমবার

ছাতিম ফুল।

ছাতিম ফুল।

ছাতিম ফুলের গন্ধে মাতে মন/জোছনার স্নিগ্ধ আলোয় ভরে বন/মাতাল করা গন্ধ ছড়ায়/ ঘরের কোণে/হৃদয় ভরে উঠে/ কোন সে আলোড়নে। এই হেমন্তে রাজধানীর বাতাসে সন্ধ্যা থেকে একটি মিষ্টি তীব্র গন্ধ পথচারিদের মনকে আলোড়িত করছে৷ জ্যাম ও ধোয়ার শহরেও একটু লক্ষ্য করলেই যে কেউ পেতে পারেন সেই  সুগন্ধ৷ হেমন্তের ঠিক এ সময়টায় ছাতিম ফুলের সুবাসিত গন্ধে মন উতালা হয়ে উঠে৷ 

খোদ রাজধানীসহ সারা দেশের এখন এ ফুল বাতাসে মাদকতার সৃষ্টি করছে৷ শুনলে হয়তো অনেকে অবাক হবেন, ঢাকা মহানগরীর প্রায় সব এলাকাতেই ছাতিম গাছের দেখা মেলে৷ ঝাঁকড়া পত্রপল্লব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা উচু এই গাছের শাখা প্রশাখায় ভরা পাতা আর সাদার মধ্যে সবুজাভ রঙে থোকায় থোকায় ফুলে প্রকৃতির কি নিসর্গ তা না দেখলে অনুভব করা যায় না৷ 

ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বেশ কয়েকটি ছাতিম গাছ রয়েছে। এখানে সবচেয়ে বড় ছাতিম গাছটির দেখা মেলে রোকেয়া হলের প্রধান গেইটের বিপরিত দিকে হাকিম চত্বরের চায়ের স্টলের সাথে। ভাষা ইনষ্টিটিউটের গেটের দুপাশেও দুটি গাছ রয়েছে। এছাড়াও এই রাস্তাটি ধরে নীলক্ষেতের দিকে যেতে আরো কয়েকটি ছোট-বড় গাছের দেখা পাবেন। মলচত্বরে রয়েছে কয়েকটি গাছ। 

টিএসসির বাংলা একাডেমির দিকের গেটের পাশেও একটি গাছ রয়েছে। জাতীয় তিন নেতার মাজার প্রাঙ্গণে গেলে ছাতিমের দেখা মিলবে।  আরো একটি বিশাল গাছ চোখে পড়বে হাইকোর্টের গেটের বিপরিতে কার্জন হলের কোণার সীমানা ঘেষে। তার একটু সামনে শিক্ষা ভবনের পাশেও একটি ছাতিম গাছ ফুল ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 

কাকরাইল ইনকাম ট্যাক্স অফিস চাত্বরে একটি ছাতিম গাছ আছে। দুটি ছিলো। বছর পাঁচেক আগে বা তারও কিছু আগে বজ্রপাতে একটি গাছ মরে গেছে। 

ধানমন্ডি লেকের আশেপাশে বেশ কয়েকটি ছাতিম গাছের দেখা মেলে। ধানমন্ডির একাধিক রোডে এ গাছ রয়েছে। কলাবাগান মাঠের পাশে আছে।  

রাজধানীর রমনা পার্ক, চামেরি হাউজ, মন্ত্রীপাড়া, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বলধা গার্ডেনে দেখা মিলবে ছাতিম গাছের। 

মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে  ১০–১২টি ছাতিম গাছ রয়েছে। বুদ্ধিজীবী কবরাস্থানেও ছাতিম গাছে দেখা যায়। মিরপুর চিড়িয়াখানায় দেখা মিলবে বড় বড় ছাতিম গাছের।

তেজগাঁওয়ের লাভ লেনে একটি বিশাল ছাতিম গাছ ছিলো। সম্প্রতি বহুতল ভবনের ছোবলে গাছটি বিলিন হয়ে গেছে। তবে এ এলাকায় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণের বিশাল আকারের গাছটি এখনো সোভা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে গৌরবে।

ছাতিম ফুল ঘনপল্লবীত। এ গাছে  শরতের শেষ ভাগ থেকে হেমন্তের শেষ ভাগ পর্যন্ত এমনভাবে ফুল ফোটে যে পাতা দেখাই যায় না৷ দূর থেকে দেখে মনে হয় মাথার ওপর কেউ সাদা চাদর মেলে ধরেছে৷ অনেক দূর থেকে ভেসে আসে ফুলের সৌরভ৷ 

ছাতিমের ইংরেজি নাম Indian Devil tree (ইন্ডিয়ান ডেভিল ট্রি)৷ ছাতিম 'অ্যাপোসাইনেসি' বর্গের অন্তর্ভূক্ত উদ্ভিদ৷ বৈজ্ঞানিক নাম Alstonia scholaris (এলস্টোনিয়া স্কলারিস)৷ ছাতিম মূলাবর্তে সাতটি পাতা এক সঙ্গে থাকে বলে সংস্কৃত এবং হিন্দি ভাষায় একে 'সপ্তপর্ণ' বা 'সপ্তপর্ণা' নামে ডাকা হয়৷ 

ছাতিমের আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া৷ এই গাছ বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্র জন্মে৷ সাধারণত আদ্র , কর্দমাক্ত, জলসিক্ত স্থানে ছাতিম বেশি জন্মে৷ এছাড়া অন্যান্য অনেক ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলেও গাছটি পরে বিস্তার লাভ করেছে৷ 

বৃটিশদের কাছে ছাতিম ভুতুরে ইমেজ হলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ছাতিম গাছকে 'প্রাদেশিক বৃক্ষ' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে৷ ছাতিম গাছ ২০ থেকে ৪০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়৷ 

বহুশাখাবিশিষ্ট গাছটির ছাল গন্ধহীন, অসমতল ও ধুসর৷ ছাতিম পাতার উপরের দিক চকচকে আর তলার দিক ধুসর থাকে৷ এর শাখা পত্রমূলাবর্তবিশিষ্ট৷ ১০ থেকে ১৫ সে. মি. লম্বা পাতা একই মূলাবর্তে ৪ থেকে ৭ টা পর্যন্ত থাকে৷ শাখার শীর্ষে সবুজ মেশানো সাদা রংয়ে থোকায় থোকায় ক্ষুদ্রাকৃতি ফুল ফোঁটে৷ ৩০ থেকে ৬০ সে. মি. লম্বা সরু ফল এক বৃন্তে সাধারণতঃ দুটো করে ঝুলে থাকে৷ ছাতিমের বীজ লম্বাটে ডিম্বাকার, কিনারায় আঁশ থাকে আর শেষ প্রান্তে এক গোছা চুল থাকে৷ ছাতিম গাছের অভ্যন্তরে দুধের মতন সাদা এবং অত্যন্ত তেতো কষ প্রচুর পরিমাণে থাকে৷ 

ছাতিমের কষ ও বাকল বা ছাল ওষুধের কাজে ব্যবহার করা হয়৷ আমাশা, জ্বর, ম্যালেরিয়ে, চর্মরোগ ও স্নায়ূর শক্তিসূত্রে অসাড়তা আনে বলে রক্তের চাপ কমাতে ছাতিম উপকারী৷ ছাতিমের কাঠ দিয়ে খুব সাধারণ মানের আসবাবপত্র, প্যাকিং কেস, চায়ের পেটি, পেনসিল এবং দেশলাইয়ের কাঠি, শিশুদের লেখার জন্য স্লেট তৈরি করা হয়৷ এছাড়া এটি দিয়ে চামচ, কর্ক প্রভৃতি বানানো হয়৷