ঢাকা, মঙ্গলবার ১৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ২:০৯:৪৩ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ মহান বিজয় দিবস দেশজুড়ে চলছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে : রাষ্ট্রপতি সাংবাদিকদের কল্যাণে প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেবে সরকার ‘হয়তো জানতেও পারবো না, মা কবে মারা গেছেন’

পুরুষতন্ত্রের পুরনো রোগ ও এক বিচারপ্রার্থী মা

ফারহানা মিলি | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৩৭ এএম, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ শনিবার

ফারহানা মিলি, সিনিয়র সাংবাদিক

ফারহানা মিলি, সিনিয়র সাংবাদিক

গত দু’দিনের খুব আলোচিত একটি ভিডিও দেখতে দেখতে, ধর্ষিত শিশুর মায়ের কান্নাজড়ানো কথাগুলো শুনতে শুনতে সইতে পারছিলাম না। আমাদের সংবেদনশীলতা আক্রান্ত হয় যখন আমরা শুনতে পাই নিজের কন্যাকে ধর্ষণ করছে পিতা! আমরা বিশ্বাস করতে চাই না। বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, “বাবার বিরুদ্ধে কন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগ” কথাটি লিখে গুগলে সার্চ দিন। কী দেখতে পেলেন?

সারাদেশের আনাচে-কানাচে ঘটে যাওয়া এমন ধারার সব ঘটনার খবর দেখতে পাবেন মূলধারার সব মিডিয়াতেই। যেগুলো রিপোর্টেড এবং অনেক ক্ষেত্রেই ধর্ষক পিতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে; অনেকে আদালত থেকে শাস্তিও পেয়েছে।

আমাদের নিজেদের চেনাশোনা মহলে কি এমন ঘটনার নজির নেই? অসংখ্য রয়েছে। কাজের সূত্রে একসময় “ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স”-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। ওই প্রতিষ্ঠানে নিকটাত্মীয়দের দ্বারা যৌননিপীড়ন ও ধর্ষণের শিকার শিশুদের বিপুলসংখ্যক কেস স্টাডি রয়েছে। এই নিকটাত্মীয়রা দাদা-মামা-চাচা থেকে শুরু করে আপন পিতা পর্যন্ত বিস্তৃত।

আলোচিত ভিডিওতে এক স্থপতি মা জানাচ্ছেন, তার সাবেক স্বামী ও তার পুত্রকন্যার পিতা ৫ ফেব্রুয়ারি তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে বলে মেয়ে মাকে জানিয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেয়েটিকে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং এ-ও বলেছেন যে, কেবল এবারই প্রথম নয়, মেয়েটিকে আগেও যৌননিপীড়ন করা হয়েছে।

এখন ক্লাস ফোরে পড়ুয়া মেয়েটিকে ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেলের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে। মামলা করেছেন মা। ইতোমধ্যে বাবাটির একটি ভিডিও শেয়ার হচ্ছে অনলাইনে। যারা শেয়ার করছেন তারা বলছেন, তারা বিভ্রান্ত। মায়ের বক্তব্য সঠিক না বাবার বক্তব্য সঠিক তা বুঝতে পারছেন না। তাহলে তিনটি বিষয় খেয়াল করতে বলবো।

প্রথমত, আপন পিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে শিশুটি নিজে। বলেছে, স্কুলে নেবার পথে গাড়িতে ওকে ধর্ষণ করেছে বাবা। ওকে ধর্ষণের আলামত যে পাওয়া গেছে সে কথা বলেছেন দেশের সবচেয়ে সেরা হাসপাতালের ডাক্তাররা। রক্তাক্ত একটি ১০ বছরের শিশুর শরীরে ধর্ষণের নমুনা পেতে ডাক্তার হবারও দরকার নেই আসলে। এখন শিশুটি ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি। যেখানে নিপীড়নের শিকার শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নারী-শিশুদের দ্রুত ভর্তি‍ করে সেবা দেওয়া হয়। এটি সরকারি প্রতিষ্ঠান।

দ্বিতীয়ত, পিতার বক্তব্যের ভিডিওটিও অনেক কিছু বলে দেয়। সে নিজেই বলছে যে, সে দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে নিজের গাড়িতে মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দেয়। পরে আড়াইটার দিকে স্কুল থেকে মায়ের কাছে ফোন আসে যে, তার মেয়ের পিরিয়ড হয়েছে, তার শরীরে রক্তপাত হচ্ছে। মা এরপর মেয়েকে নিয়ে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ধর্ষণের প্রমাণ মিললে প্রশ্ন হল যে, মেয়েটি কি তবে স্কুলে ধর্ষিত হয়েছে?

তৃতীয়ত, বাবা অভিযোগ করছে যে, মা চরিত্রহীন, তার ঘরে অনেক লোকজন আসে। তাহলে এই মা সন্তানদের কাস্টডি নিজের কাছে রাখতে চাইছেন কেন? বরং আগ্রহী বাবার কাছে সন্তানদের ছেড়ে দিয়ে নিজের জীবন বেছে নেওয়াই তো মায়ের জন্য সুবিধাজনক ছিল। আবার বাবাটি এটাও বলছে যে, সে সকালে ও রাতে সন্তানদের দেখতে ওই বাসায় যেত, সব দায়িত্ব পালন করত। তাহলে মায়ের বাসায় অত লোকজনের যাতায়াতের বিষয়টি তার স্বচক্ষে দেখার কথা। কিন্তু ভিডিওতে যে সে বলছে-- “সে “শুনেছে, ওই বাসায় অনেক লোক আসে”-- কথাটা দু’রকম হয়ে গেল না?

ভাবছি ট্রমাটাইজড শিশুটির কথা। প্লিজ, এটাকে মা-বাবার দ্বন্দ্ব বলে হালকা করে দেখবেন না। পারিবারিক নির্যাতন অত্যন্ত সিরিয়াস একটি ইস্যু, মধুর দাম্পত্য-কলহ নয়। সারা পৃথিবীতেই এটিকে এখন গুরুতর বিষয হিসেবে দেখা হচ্ছে। গৃহনির্যাতনের শিকার নারী ঘর ছাড়লে তার চরিত্রহনন করা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের গৎবাঁধা বিষয়। আর এ সুযোগে কোনো ক্ষমতাশালী পিডোফাইল পিতা যদি আইনি সহায়তায় কন্যাকে নিজের কাস্টডিতে নিয়ে যেতে পারে, তবে শিশুটির ভবিষ্যত কী হবে ভেবে দেখেছেন?

পৃথিবীতে পিডোফাইল (শিশুনিপীড়ক বা শিশুদের সঙ্গে যৌনতায় আগ্রহী) মানুষের সংখ্যা জনসংখ্যার ভালো একটি অংশই। কম করেও ৫ শতাংশ। আমেরিকার একটি জরিপ বলছে, ১২ বছরের কমবয়সীদের ধর্ষকদের বিশ শতাংশ আপন পিতা। পরিসংখ্যান সত্যিই গুরুতর।

৥ ফারহানা মিলি, সিনিয়র সাংবাদিক