ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:২৯:০২ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৪০ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০২৫ মঙ্গলবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক খুনোখুনি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ সংঘটনে ব্যবহার হচ্ছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। দেশের বিভিন্ন স্থানে গুলি করে হত্যার ঘটনা বেড়েছে। সর্বশেষ সোমবার পুরান ঢাকায় দিনের বেলা জনসমক্ষে গুলি করে হত্যা করা হয় একজনকে। নিহত তারিক সাইফ মামুনও ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপরাধীদের হাতে এখন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। গণঅভ্যুত্থান চলাকালে এবং পরবর্তী সময়ে অনেক অস্ত্র-গুলি সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে। পুলিশের লুট হওয়া ১ হাজার ৩৪২টি অস্ত্র এখনও উদ্ধার করা যায়নি। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবারিদের সংঘর্ষে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রের ব্যবহার দেখা গেছে। 

গত বুধবার রাতে চট্টগ্রামে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর জনসংযোগে গুলি চালানো হয়। এতে একজন নিহত, প্রার্থীসহ দুজন আহত হন। শুধু এটিই নয়; গত এক মাসে চট্টগ্রামে গুলিতে দুই রাজনীতিকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আর গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম শহর ও জেলায় খুন হয়েছেন ৩৫ জন। এর মধ্যে গুলিতে খুন ২২ জন। বাকিদের পিটিয়ে বা ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে অন্তত ১৫টি ঘটেছে রাজনৈতিক বিরোধের কারণে।

এ ছাড়া গত ১৫ মাসে খুলনায় ৪১ জন হত্যার শিকার হন। এর মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে ১৫টিতে। এ ছাড়া বগুড়ায় একই সময়ে ৮৪ জন নিহত হন। এর মধ্যে দুটিতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে।
পুলিশ সদরদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) এএইচএম শাহাদাত হোসাইন সমকালকে বলেন, সংসদ নির্বাচনের সময় সহিংসতার বিষয়টি মাথায় রেখে দায়িত্ব পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ। জোরদার করা হয়েছে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান। আর গুলির যেসব ঘটনা ঘটছে, সেগুলো গুরুত্ব সহকারে তদন্তের পাশাপাশি জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

ঢাকা-চট্টগ্রামে একের পর এক গুলি

চট্টগ্রামে গত ৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী জনসংযোগের সময় ঘাড়ে পিস্তল ঠেকিয়ে সারোয়ার হোসেন বাবলাকে গুলি করে এক সন্ত্রাসী। ঘটনাস্থলেই বাবলা নিহত হন। এর আগে ২৫ অক্টোবর বিকেলে চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে যুবদলকর্মী আলমগীর আলমকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় তাঁর আত্মীয় মুহাম্মদ রিয়াদও গুলিবিদ্ধ হন। গত ৭ অক্টোবর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ব্যবসায়ী মুহাম্মদ আবদুল হাকিম। তিনি রাউজানে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। গত ৬ জুলাই দুপুরে রাউজানে প্রকাশ্যে গুলি করে যুবদলকর্মী মো. সেলিমকে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে আইনের আওতায় এনেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত ১ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে চারজন গুলিবিদ্ধ হন। তাদের মধ্যে ঘটনার দিন শিপন মিয়া ও দুদিন পর ইয়াছিন মারা যান। 

খুলনায় গত ১ অক্টোবর দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশায় ঘুমন্ত অবস্থায় গুলি করে হত্যা করা হয় তানভীর হাসান শুভকে (২৯)। এর আগে ৪ সেপ্টেম্বর রূপসার নৈহাটিতে গুলি করে হত্যা করা হয় ইমরান হোসেন মানিককে। ২৪ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন অনিক নামে এক যুবক। তার আগে আগস্টে খুলনা মহানগরীতে খুন হয় পাঁচজন; জুলাইয়ে  দুজন।  এভাবে খুলনায় গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে ৪১টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টিতে ব্যবহৃত হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র। 

এদিকে গত ১৬ জুলাই রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুজনকে হত্যার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর নবোদয় হাউজিং এলাকায় মো. ইব্রাহিম নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। রাত ৯টার দিকে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যানে আল আমিন নামের আরেক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এর আগে ২৫ মে রাতে বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকায় বিএনপি নেতা কামরুল আহসানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ২০ মার্চ রাতে গুলশানে পুলিশ প্লাজার সামনে সুমন মিয়া নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার ব্যবসা করতেন। ৩১ মার্চ সাভারে মো. রুবেল নামের এক নিরাপত্তাকর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গত ১ আগস্ট মহাখালীতে মুখোশপরা দুই ব্যক্তির ছোড়া গুলিতে আহত হন বক্ষব্যাধি হাসপাতালের কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা জামাল হোসেন। 

বেপরোয়া ডাকাত-ছিনতাইকারী 

দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেপরোয়া হয়ে ওঠা কিছু সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতেও দেখা যাচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র। চাঁদাবাজি-লুটপাটে বাধা পেলেই তারা গুলি ছুড়ছে। সম্প্রতি আলোচনায় আসে রাজশাহী-কুষ্টিয়া অঞ্চলের ডাকাত দল ‘কাকন বাহিনী’। দলটির প্রধান হাসানুজ্জামান কাকনের সহযোগীরা স্পিডবোট নিয়ে পদ্মা নদীতে দাপিয়ে বেড়ায়। চালায় এলোপাতাড়ি গুলি। গত ১৩ অক্টোবর বাহিনীর সদস্যরা প্রায় অর্ধশত গুলি ছোড়ে পাবনার ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের ইসলামপাড়া এলাকায়। ২৭ অক্টোবর তারা কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মার চরে দুই কৃষককে গুলি করে হত্যা করে। ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন আরও দুজন।
রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, কাকন ও তার সহযোগীদের ধরতে অভিযান চলছে। এরই মধ্যে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

এদিকে, খুলনায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হুমায়ুন কবির ওরফে হুমার বাহিনী। প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে তার সহযোগীরা। সর্বশেষ গত ২৮ অক্টোবর দুটি বাড়িতে ১৫ রাউন্ড গুলি ছোড়ে তারা। সেই সঙ্গে চরমপন্থি সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল-জনযুদ্ধ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শিমুল ভুঁইয়ার মদদপুষ্ট মুন্না বাহিনীও এলাকায় বেপরোয়া। 

এর আগে খোদ রাজধানীতেই গুলি করে ছিনতাইয়ের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। ১২ অক্টোবর ভোরে খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়ায় নাফিস আজিজ সিদ্দিক নামে এক যুবককে গুলি করে মোটরসাইকেল ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ২৭ মে সকালে মিরপুর ১০ নম্বরে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পেছনের গলিতে প্রকাশ্যে গুলি করে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর ২২ লাখ টাকা ও বিদেশি মুদ্রা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনার ২০ দিন পর জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত অর্থের একাংশ উদ্ধার করে ডিবি। ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বনশ্রী এলাকায় এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে বিপুল স্বর্ণালংকার লুটের ঘটনা ঘটে। 

অভিযানে ধরা পড়ছে অস্ত্র

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত ও বিশেষ অভিযানে পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র ছাড়াও ধরা পড়ছে প্রচুর অবৈধ অস্ত্র। গত ২৬ অক্টোবর রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে বনলতা এক্সপ্রেস থেকে আটটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। অভিযানে ট্রেনের একটি বগি তল্লাশি করে পিস্তল ছাড়াও ১৪টি ম্যাগাজিন, ২৬ রাউন্ড অ্যামুনিশন, ২ দশমিক ৩৯ কেজি গান পাউডার ও ২ দশমিক ২৩ কেজি প্লাস্টিক বিস্ফোরক পাওয়া যায়। তখন জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে এখনও অস্ত্র-গোলাবারুদের উৎস-গন্তব্যের বিষয়ে তেমন কিছু জানা যায়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকা রেলওয়ে জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন।

গত ৬ নভেম্বর আইএসপিআর এক সংবাদ ‎বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ৩০ অক্টোবর থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত আট দিনে ৯টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, সাতটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ১২ রাউন্ড বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ, ১৮টি ককটেল, ২৩টি পেট্রোল বোমা উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। এর আগে ৮ সেপ্টেম্বর সেনাসদরের এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এক মাসে ৬৫টি অবৈধ অস্ত্র ও ২৯৭টি গোলাবারুদ উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। একই সময় হারানো ৯ হাজার ৭৯৪টি অস্ত্র এবং দুই লাখ ৮৭ হাজার ৩৫৯টি গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।

র‍্যাব-১১ গত ১ নভেম্বর জানায়, নরসিংদীর রায়পুরায় অভিযান চালিয়ে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছে পাওয়া গেছে দুটি বিদেশি পিস্তল, ছয়টি দেশি বন্দুক, একটি দোনলা বন্দুক, দুটি এলজি, পাঁচটি পাইপগান, তিনটি ম্যাগাজিন ও ৮২ রাউন্ড গুলি।

গত ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রামের রাউজানে র‍্যাবের অভিযানে এক বিএনপিকর্মীর বাড়ি থেকে বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ১০টি বন্দুক, একটি এয়ারগান, ১৫টি কিরিচ, চারটি রামদা, ১১টি কার্তুজ ও তিনটি চায়নিজ কুড়াল। গত ৯ সেপ্টেম্বর রংপুরের তাজহাট থানা এলাকায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে ১০টি একনলা বন্দুক ও ৩৬ রাউন্ড রাবার কার্তুজ উদ্ধার হয়।

তাজহাট থানার ওসি শাহজাহান আলী বলেন, বাগানের ভেতর কারা, কেন অস্ত্র-গুলি মজুত করেছিল– তা এখনও জানা যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। 

উদ্ধার হয়নি পুলিশের ১,৩৪২ অস্ত্র

পুলিশ সদরদপ্তর জানায়, ২০২৪ সালে পুলিশের পাঁচ হাজার ৭৬৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ছয় লাখ ৫২ হাজার আটটি গোলাবারুদ লুট হয়। এর মধ্যে চলতি বছরের ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত চার হাজার ৪২১টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও উদ্ধার হয়নি এক হাজার ৩৪২টি। গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে তিন লাখ ৯৪ হাজার ৭২১টি। বাকিগুলোর খোঁজ মেলেনি।