ঢাকা, শুক্রবার ১৯, এপ্রিল ২০২৪ ০:৪৩:২৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই দেশ আরও উন্নত হতো টাইমের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা নান্দাইলে নারী শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা তীব্র গরমে জনজীবনে দুর্ভোগ, বাড়ছে জ্বর-ডায়রিয়া কারাগার থেকে সরিয়ে গৃহবন্দী অবস্থায় সুচি কৃষকরাই অর্থনীতির মূল শক্তি: স্পিকার মধ্যপ্রাচ্যের দিকে নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

করোনা: অনিশ্চয়তায় দেশে ফেরা দুই লাখ শ্রমিকের জীবন

বিবিসি | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৫৯ পিএম, ৬ জুলাই ২০২০ সোমবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

করোনার কারণে বেশিরভাগ দেশ ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করায় প্রবাসে কর্মরত বিপুল সংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক ইতোমধ্যে চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। এরমধ্যে দেশে লকডাউনের কারণে আটকে পড়ায় নতুন করে আবার বিদেশ গিয়ে চাকরি করতে পারবেন কিনা সেটা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অভিবাসী শ্রমিকদের দেশে ফেরত আসা ঠেকাতে সরকারকে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক দুইভাবেই সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে দুই লাখ অভিবাসী শ্রমিক দেশে ফিরেছেন। এছাড়া ২১ মার্চ আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হওয়ার পর এ পর্যন্ত চার্টার্ড ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন আরও অন্তত ১৮ হাজার শ্রমিক। সম্প্রতি সৌদি আরব, কাতার, কুয়েতসহ বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে জানানো হয় যে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক চাকরি হারাতে পারেন। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে সামনের দিনগুলোয় অভিবাসীদের ফেরত আসার এই স্রোত আরো বাড়বে।

বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণের আগেই এই প্রাদুর্ভাব হানা দিয়েছিল সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইতালিসহ আরো নানা দেশে। যেখানে বহু বাংলাদেশি অভিবাসী কাজ করেন। ওই দেশগুলোয় বছরের শুরুর দিকেই লকডাউন শুরু হওয়ায় বেকায়দায় পড়ে যান প্রবাসী শ্রমিকরা। বিশেষ করে যারা অবৈধভাবে আছেন, তাদেরকে এখন জোর করে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। আবার বৈধ শ্রমিকদের অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাছাড়া কাজের চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও বেশিরভাগের সেটা নবায়ন করা হচ্ছে না। আবার চুক্তির মেয়াদ যাদের আছে, তাদের অনেককেই ছুটির নামে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।

দনিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা রাশেদুল হাসান রুমি। গত তিন বছর ধরে সিঙ্গাপুরে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। সেখানকার কোম্পানির সাথে তার আরো দুই বছর কাজের চুক্তি ছিল। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় গত ১১ মার্চ তাকে ছুটির কথা বলে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়। এখন তার ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে আসছে অথচ লকডাউনের কারণে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা হয়নি। তিনি আদৌ সিঙ্গাপুরে ফিরে গিয়ে কাজ করতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কোম্পানি তার কাজের পারমিট ক্যান্সেল করে দিয়ে বলেছে করোনার প্রাদুর্ভাব কাটলে দেখা যাবে। কোম্পানি নিতে চাইলে নিবে, না চাইলে নিবে না। কোনো গ্যারান্টি নাই।এখন বিদেশ যাওয়ার ঋণ কিভাবে শোধ করবেন, তার আয়ের ওপর নির্ভরশীল সাত সদস্যের পরিবারকেই বা কিভাবে সামলাবেন এমন নানা দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরেছে তাকে।

এমন পরিস্থিতিতে করণীয় কী: অভিবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দুটি উপায়ে সরকারের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন প্রবাসীদের বেসরকারি সংস্থা রামুরুর চেয়ারম্যান তাসনিম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা নিয়ে যে ২০১৬ সালের যে আন্তর্জাতিক বিধিমালা আছে সেখানে বলা হয়েছে, যেকোনো দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে অভিবাসী শ্রমিকরা যেই দেশে অবস্থান করবেন, তাদের দায়িত্ব সে দেশের ওপরই বর্তায়।

অভিবাসী গ্রহণকারী দেশগুলো সেটা তোয়াক্কা করছে না, এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন ফোরামের সামনে উপস্থাপন করে সমাধান করতে হবে।

তবে যেসব শ্রমিক করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের ফিরে এসেছেন তাদের দ্রুত দেশের ভেতরেই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন মিসেস সিদ্দিকী। তার ওপর বিশ্বব্যাপী তেলের দাম পড়ে যাওয়ায়, এই শ্রমিকরা পুনরায় কবে বিদেশ যেতে পারবেন, সেটা বলা যাচ্ছে না। কেননা ওই দেশ-গুলোয় সব কিছু স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে। এখানে সরকারকে অভিবাসীদের পেছনে বিনিয়োগ করতে হবে।”

সংকট সমাধানে সরকার কী করছে: প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব নাসরিন জাহান জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর এই শ্রমিকদের যেন আবার তাদের কাজের জায়গায় ফিরতে পারেন, সেজন্য কাজ করছে সরকারের কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি। বিদেশ থেকে শ্রমিকদের এই ফিরে আসা ঠেকাতে সেইসঙ্গে এরিমধ্যে ফেরত আসা শ্রমিকদের পুনর্বাসনে এই কমিটি কাজ করে যাচ্ছে। অভিবাসী গ্রহণকারী দেশগুলোর কাছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রীর যৌথ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, তারা যেন শ্রমিকদের বাংলাদেশে ফেরত না পাঠিয়ে তাদের দেশেই বিকল্প কর্মসংস্থানে যুক্ত করার চেষ্টা করে। বলে জানান

এছাড়া করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে যেসব প্রবাসী শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ইতোমধ্যে ২০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে এই টাকা নেয়া হবে। প্রত্যাগত শ্রমিক বা তাদের পরিবারের সদস্যরা সর্বোচ্চ ৪% সুদে এক লাখ টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। সবশেষ বাজেটে এই দেশে ফেরা প্রবাসীদের জন্য বাড়তি আরও ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

তিনি বলেন সৌদি আরবে একজন স্বল্প দক্ষ শ্রমিক যে বেতন পায় তার ১০ গুণ বেশি বেতন পায় দক্ষিণ কোরিয়ার একজন দক্ষ শ্রমিক। আমরা ওইসব দেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ করছি। পূর্ব ইউরোপের দেশ-গুলোয় কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। তবে সরকারি প্রণোদনা বা বিদেশি দাতব্য সংস্থাগুলো থেকে যে সাহায্য আসছে, সেটা সমন্বিতভাবে একটি নীতিমালার আওতায় বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।


-জেডসি