ঢাকা, শুক্রবার ২৬, এপ্রিল ২০২৪ ৩:৩২:৪৩ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

কুমিল্লার বীর মুক্তিযোদ্ধা কিশোরী কাজী হেলেন

অনু সরকার | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৬:৫৬ পিএম, ৬ মার্চ ২০২১ শনিবার

কুমিল্লার বীর মুক্তিযোদ্ধা কিশোরী কাজী হেলেন

কুমিল্লার বীর মুক্তিযোদ্ধা কিশোরী কাজী হেলেন

১৯৭১ সাল; যুদ্ধ চলছে সারা দেশজুড়ে। কিশোরী মেয়েটির বয়স বড় জোর ১৪ বছর। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রথমে জিবি হাসপাতাল এবং পরে খেলাঘর হাসপাতালে যোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন সাহসী এই কিশোরী কাজী হেলেন৷ নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে যুদ্ধাহতদের সেবা করলেও পরবর্তিতে নিজেই বঞ্চিত হয়েছেন জীবনের নানাক্ষণে৷

১৯৫৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জে জন্ম কাজী হেলেনের৷ তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কাজী সফর আলী৷ মা কাজী আবু জাহান বেবী৷ বাবা ছিলেন ব্রিটিশ শাসনামলের একজন সেনা সদস্য৷ ফলে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি অনেককে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছেন৷ তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক৷ বাবার বীরত্ব ও সাহসিকতার ছোঁয়া মেয়ে হেলেনকেও অনুপ্রাণিত করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে৷

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় নবম শ্রেণিতে পড়তেন হেলেন৷  এ সময় চা বাগানে মুক্তিযুদ্ধে যেতে আগ্রহী মানুষদের প্রশিক্ষণ দিতেন তার বাবা৷ এ কারণে পাক সেনারা তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়। বাবা, মামা, মামাতো ভাইসহ একসাথে নয়জনকে হত্যা করে পাক বাহিনী৷

জীবন বাঁচাতে হেলেন মা এবং ছোট ভাই-বোনদের নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। গোপন জায়গায় আশ্রয় নেন তারা৷ পরে অনেক কষ্টে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলার রাজবাড়িতে চলে যান সকলে৷

এ সময়ের ঘটনা স্মরণ করে হেলেন বলেন, ‘দুই দিন অনাহারে পার করতে হয়েছে আমাদের৷ এমনকি ভাত খাওয়ার জন্য একটি থালাও ছিল না৷ পরে আমাদের এক দাদা অর্থাৎ আব্বার দূর সম্পর্কের আত্মীয় কর্নেল রউফ আমাদের সহায়তা করেন৷ একটা থালা আর একটা গ্লাস কিনে দেন তিনি৷ খোলা মাঠের মধ্যে সে সময় একটু চিড়া আর মুড়ি খেয়ে কাটাতে হয়েছে সকলকে৷ অনেক সময় পাকসেনাদের গোলা এসে কাছেই পড়েছে৷ তবুও ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে গেছি৷'

দেশের জন্যে কাজ করতে গিয়ে বাবা শহীদ হয়েছেন। যে কোনো সময় নিজের প্রাণটাও চলে যাবে। এভাবে পরে পরে জীবন দিলে তো চলবে না, দেশের জন্য কাজ করার প্রয়োজন ভাবলেন হেলেন। তার পরই নেমে পড়লেন কাজে।

এ সময় কর্নেল রউফের সহায়তায় তিন মাসের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রশিক্ষণে অংশ নেন কাজী হেলেন৷ এরপর তাকে জিবি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে পাঠানো হয়৷ পরে তাকে মেলাঘর হাসপাতালে দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ নিজের জীবন উজার করে রাত-দিন অন্য অনেকের সঙ্গে কাজ করে যান হেলেন।

হবিগঞ্জে জন্ম এবং বড় হলেও কুমিল্লায় স্থায়ী হয়েছেন হেলেন। কারণ মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে পরিচয় হয়েছিল তৎকালীন কুমিল্লার জেলা প্রশাসকের সাথে৷ ফলে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি কুমিল্লায় চলে আসেন৷ জেলা প্রশাসক সাহেব সিভিল সার্জন নূরুন্নবীর কাছে কাজী হেলেনকে হাসপাতালে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেন৷ এর পরই কুমিল্লা হাসপাতালে সেবিকার কাজ শুরু করেন কাজী হেলেন৷

সেই থেকে কুমিল্লায় চিকিৎসা সেবা দিয়ে গেছেন মুক্তিযোদ্ধা কাজী হেলেন৷ কিন্তু আজও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি৷ গেজেটে নিজের নাম অন্তর্ভুক্তির প্রতীক্ষায় রয়েছেন এই বীর নারী৷ হবিগঞ্জের মেয়ে হওয়ায় কুমিল্লার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডাররা এক সময় তার নাম অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বাধা দিয়েছে বলে জানান হেলেন৷

কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে গিয়ে জানা গেছে, কাজী হেলেনের নাম মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে৷

একজন মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও স্বাধীন দেশে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন কাজী হেলেন৷ তার অভিযোগ, সিনিয়র নার্স হিসেবে নিয়োগ থাকা সত্ত্বেও তিনি সিনিয়র স্কেলে বেতন-ভাতা পাননি দীর্ঘদিন৷ বিশেষ করে ম্যাট্রন অফিস তাকে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ তার।

হেলেন বলেন, ‘সিনিয়র স্টাফ হিসেবে কাজ করা সত্ত্বেও আমাকে বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছে জুনিয়র স্টাফ হিসেবে৷ এছাড়া আমাকে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়েছিল। শুধু রাত অথবা বিকেলে ডিউটি দেওয়া হতো৷ অবশেষে একদিন ডেপুটি সিভিল সার্জন নিজে এ ব্যাপারে শক্ত পদক্ষেপ নেন। এর ফলে আমাকে ডায়রিয়া ওয়ার্ড থেকে প্রথমে মেডিসিন ও পরে ইসিজি শাখায় বদলি করা হয়৷'

কৃতজ্ঞতা: ডয়চে ভেলে