ঢাকা, শুক্রবার ২৬, এপ্রিল ২০২৪ ৫:১৫:০০ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

কোভিড-১৯: ঝুঁকির মুখে অন্তঃসত্ত্বা মা ও নবজাতক

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৩২ পিএম, ১৮ মার্চ ২০২১ বৃহস্পতিবার

কোভিড-১৯ : ঝুঁকির মুখে অন্তঃসত্ত্বা মা ও নবজাতক

কোভিড-১৯ : ঝুঁকির মুখে অন্তঃসত্ত্বা মা ও নবজাতক

কোভিড-১৯ এর থাবায় থমকে গেছে পুরো বিশ্ব। পৃথিবীজুড়ে এক ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে আতঙ্ক নিয়ে দিনাতিপাত করছেন কোটি কোটি মানুষ। এরই মাঝে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন অন্তঃসত্ত্বা মা ও নবজাতক শিশুরা।
শিশুদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফ বলছে, বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালে বাংলাদেশেও প্রসূতি মা ও নবজাতকদের রূঢ় বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লকডাউন ও কারফিউয়ের মতো নিয়ন্ত্রণমূলক নানা পদক্ষেপ; মহামারী সামলাতে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর হিমশিম অবস্থা ও সরঞ্জামের ঘাটতি এবং ধাত্রীসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা কোভিড-১৯ রোগীদের সেবাদানে নিয়োজিত থাকায় শিশুর জন্মের সময় দক্ষ লোকবলের ঘাটতি রয়েছে। সব মিলিয়ে এই সময়ে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।
ময়মনসিংহের বেসরকারি কর্মকর্তা শাহীন আলমের স্ত্রী তহুরা খানম অন্তঃসত্ত্বা। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে তাঁর ডেলিভারি হওয়ার কথা। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হতে ভয় পাচ্ছেন তিনি। তার ভাষ্য, করোনার আতঙ্ক চারদিকে। কিছু জটিলতা থাকায় চিকিৎসক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু করোনাকালে চিকিৎসা ব্যবস্থার যে বেহাল অবস্থা দেখা দিয়েছে তাতে হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছি।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. কামরুজ্জাহান পান্না বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনার বাস্তবতায় যখন অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা একটি নতুন জীবন আনার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন, ঠিক সেই সময়ে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে মায়েরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছেন। তবে আমরা সব ধরনের রোগীদেরই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেবা দিতে সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, কোভিড-১৯ সঙ্কট শুরুর পর থেকে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে মাতৃ ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। উল্লেখ্য, ৬৩টি জেলা হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ৩৩টিতে এখন সব ধরনের জরুরি গর্ভকালীন ও প্রসূতি সেবা দেয়া হচ্ছে।
অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) এর সাবেক সভাপতি রওশন আর বেগম বলেন, এখন স্বাস্থ কেন্দ্রে পরিষেবা কমায় আরও অতিরিক্ত ৩৮ শতাংশ প্রসব হচ্ছে বাড়িতে। এতে মাতৃমৃত্যু এবং অন্যান্য জটিলতার ঝুঁকি বাড়ছে। তবে করোনাকালে নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির মধ্যে মাতৃস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটি আছে।
এ উপ-কমিটি কয়েক দফা সুপারিশে গর্ভাবস্থায় মায়ের প্রথম তিন মাসে একবার, শেষ তিন মাসের মধ্যে করোনা টেস্ট করা এবং কোনো মা হাসপাতালে গেলে ফিরিয়ে না দেয়ার কথা বলা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চিকিৎসক, নার্স এবং ধাত্রীদের জন্য নির্দেশিকা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মহামারী চলাকালে মাতৃ, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখতে সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল বিভাগের পরিচালক ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া বলেন, সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে ভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে সহায়তা করবে এবং স্বাস্থ্যকর্মী এবং রোগীদের সুরক্ষা দেবে। তাই নির্দেশনা অনুযায়ী আক্রান্ত রোগীদের থেকে আক্রান্ত নন-এমন রোগীদের পৃথক করা, হাত ধোয়া ও অন্যান্য হাইজিন বিষয়গুলি মেনে চলা এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামগুলির যৌক্তিক ব্যবহার করতে হবে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি তোমো হোযুমি বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ সত্ত্বেও অন্তঃসত্ত্বা মা ও নবজাতকের জীবনরক্ষাকারী রুটিন সেবাসমূহ যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা মেনে অব্যাহত রাখা দরকার। অনাগত মাসগুলোতে অন্তঃসত্ত্বা মা ও অসুস্থ নবজাতকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে জীবন রক্ষায় সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করছে ইউনিসেফ।
তিনি বলেন, করোনার এই সময়ে দেশে নারীদের গর্ভকালীন, সন্তান জন্মকালীন ও সন্তান জন্মের পরের সেবা পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। অসুস্থ নবজাতকের জরুরি সেবা লাগবে। কারণ তাদের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি থাকে। এছাড়া শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করার জন্য সহায়তা এবং সুস্থ রাখতে ওষুধ, টিকা ও পুষ্টি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে ইউনিসেফের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
ইউনিসেফ বলছে, কোভিড-১৯ মহামারীর আগেও প্রতিবছর ২৮ লাখ অন্তঃসত্ত্বা নারী ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, প্রতিরোধ করা যায় এমন কারণেই অধিকাংশেরই মৃত্যু হয়েছে। তবে মা ও শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন অভীষ্ট (এমডিজি) অর্জন করেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র ফেলো নাজনীন আহমেদ বলেন, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য স্বাস্থ্য কর্মীদের হোম ভিজিটের সুযোগ দিতে হবে। আর প্রত্যন্ত এলাকার নারীদের গর্ভকালীন ও প্রসূতি সেবার জন্য তৈরি করা বাড়িতে (ম্যাটারনাল ওয়েটিং হোম) থাকা এবং টেলিফোনে পরামর্শ গ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে। যেসব জায়গায় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে সেখানে বাড়িতে গিয়ে সন্তান জন্মকালীন সেবা প্রদানে স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং জীবাণুমুক্ত বার্থ কিটসহ সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ঘরবন্দী নারী ও শিশুরা স্বাস্থ্য ঝুঁকি, মানসিক চাপ ও বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত নারী কর্মীরা কর্মহীন হয়ে পড়ছে। অনেকের আয় কমে গেছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে তাদের অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তার উপর।
‘দেখা যায় যেকোন দুর্যোগের সময় নারী ও শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে করোনা মোকাবেলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ১ লাখ কোটি টাকার বেশি প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে নারীরাও উপকৃত হচ্ছে। এক কোটি পরিবারকে সরকার খাদ্য সহায়তা ও শিশু খাদ্য বিতরণ করছে।