ঢাকা, শুক্রবার ১৯, এপ্রিল ২০২৪ ৯:০৮:৪৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই দেশ আরও উন্নত হতো টাইমের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা নান্দাইলে নারী শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা তীব্র গরমে জনজীবনে দুর্ভোগ, বাড়ছে জ্বর-ডায়রিয়া কারাগার থেকে সরিয়ে গৃহবন্দী অবস্থায় সুচি কৃষকরাই অর্থনীতির মূল শক্তি: স্পিকার মধ্যপ্রাচ্যের দিকে নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

চার যুগ ধরে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সেবায় ব্রত জিলিয়ান রোজ

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:৪২ পিএম, ১৩ মে ২০২২ শুক্রবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

চার যুগেরও বেশি সময় ধরে মেহেরপুরবাসীকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন ব্রিটিশ নাগরিক জিলিয়ান এম রোজ। অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সেবা দিয়ে কেড়ে নিয়েছেন মানুষের মন। মানবসেবায় ত্রুটি হবে, এমন ভাবনায় নিজেকে রেখেছেন চিরকুমারী।

বল্লভপুর মিশন হাসপাতালের এই নার্স রোগী ও প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে আবদ্ধ হয়েছেন মায়ার বন্ধনে। তাই তো বয়সের ভারে নুয়ে পড়া জিলিয়ান রোজ (৮০) বাকি জীবন কাটাতে চান মানুষের সেবা করে। হতে চান বাংলাদেশের নাগরিক।

এদিকে বছরান্তে ভিসার মেয়াদ বাড়াতে পড়তে হয় বিভিন্ন জটিলতায়। তাই দ্বৈত নাগরিকত্ব নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু সাড়া পাননি। তাই তাকে নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন মেহেরপুরবাসী।

জানা গেছে, ১৯৩৯ সালে দক্ষিণ ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন জিলিয়ান এম রোজ। জিলিয়ানের বাবা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। ছোটবেলায় পিতৃবিয়োগ ঘটে জিলিয়ানের জীবনে। একমাত্র ভাই ড. ডিএ রোজের সঙ্গে বেশ কিছুদিন কাটানোর পর সিদ্ধান্ত নেন ধর্ম প্রচারের। খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচারের জন্য ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশের বরিশাল জেলায় আসেন রোজ।

সে সময় বাংলাদেশের মানুষ, মাটি, প্রকৃতি দেখেছেন ঘুরে ঘুরে। ১৯৭০ সালে স্বজনদের টানে ফিরে যান নিজ দেশে। কিন্তু এ দেশের মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে ফের চলে আসেন ১৯৭৪ সালে। দেশে নার্স হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথমে খুলনা ও পরে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর হাসপাতালে আসেন। শুরু করেন মানবসেবা। কবে কখন যে সময় যৌবন চলে গেল, টের পাননি। তাই থেকে গেলেন চিরকুমারী।

রোজ খুব প্রয়োজন ছাড়া কারও সঙ্গে কথা না বললেও নিজ হাতে রোগীকে সেবা প্রদান করেন নিরলসভাবে। দীর্ঘদিন ধরে থাকার কারণে তার হৃদয়জুড়ে এখন বাংলাদেশের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। মানুষকে পরম মমতায় সেবা দিয়ে মন জয় করেছেন। তার চলনে-বলনেও চলে এসেছে বাঙালিয়ানা। তাই এখন তার একটাই চাওয়া, বাংলার মাটিতে শেষ বিদায়।

জিলিয়ান রোজ পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন একটি বৃদ্ধাশ্রম। স্থাপন করেছেন নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। চার্চ অব বাংলাদেশ অনুমোদিত এক একর জমির ওপর স্থাপন করেছেন মিশন হাসপাতাল। তিনি হাসপাতাল থেকে কোনো বেতন নেন না। ব্রিটিশ সরকারের পেনশনে চলে তার সংসার। জেলার দরিদ্র রোগীদের সেবা প্রদানের অর্থ আসে বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে।

 রোজ বলেন, ২০১৭ সালে স্বজনদের চাওয়ায় দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য মনস্থির করেছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশের প্রকৃতি, মানুষ ও মাটির ভালোবাসায় আর যেতে মন চায়নি। পরিবার একাধিকবার দেশে ফিরে যাওয়ার কথা জানালেও আমি বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে অপারগতা প্রকাশ করি।

জিলিয়ান বলেন, সরকার যদি আমাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়, তাহলে যত দিন বেঁচে থাকব, তত দিন এভাবে সেবা দিয়ে যাব। রোজের ভাষায়, পৃথিবীতে এসেছি সেবা দিতে। বৃদ্ধদের জন্য কেউ কিছু করে না। তাই আমি নিজে একটি বৃদ্ধাশ্রম খুলেছি। তারা যেন শেষ জীবনে ভালোভাবে মৃত্যুবরণ করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, আমি যখন ১৯৬৪ সালে এ দেশে আসি, তখন পূর্ব পাকিস্তান ছিল। পরে আমি মালয়েশিয়ায় চলে যাই। সেখান থেকে আবারও দেশে ফিরি। পরে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের খুলনা জেলায় সেবা দেওয়ার জন্য চলে আসি। খুলনায় বেশ কয়েক বছর গ্রামাঞ্চলে সেবা দিয়ে ১৯৮১ সালে বল্লভপুর মিশন হাসপাতালে যোগদান করি। সেই থেকে গরিব-দুঃখী মানুষের সেবা করে যাচ্ছি।