ঢাকা, বুধবার ০৮, মে ২০২৪ ৬:৩৭:৪৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ জিম্মি মুক্তিতে হামাসের সম্মতির পরও গাজায় যুদ্ধবিরতি অনিশ্চিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বাভাবিক রুটিনে ক্লাস শুরু আজ হজের ফ্লাইট শুরু ৯ মে পুলিৎজার পেল রয়টার্স, ওয়াশিংটন পোস্ট ও নিউইয়র্ক টাইমস

জলবায়ু সংকটের কারণে দেশে বাড়বে ক্যান্সারের ঝুঁকি

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:০০ পিএম, ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ বৃহস্পতিবার

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ বাংলাদেশের কয়েক লাখ মানুষকে ক্যান্সারের উচ্চ ঝুঁকিতে ফেলবে। আর্সেনিকের বিস্তারের ফলে এই সমস্যা দেখা দেবে। মূলত দূষিত কূপের পানি পান হবে এর অন্যতম কারণ। এখনই সাবধান না হলে ভবিষ্যত হবে ভয়াবহ।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বন্যা এবং বৈরী আবহাওয়ার কারণে বাড়বে আর্সেনিকের বিস্তার। গবেষণার বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। 

প্রতিবেদনে বলা হয়। তাপমাত্রা, দাবানল, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা ও তীব্রতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, আর কমছে বাতাসের মান। সেই সঙ্গে জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন বাড়াবে ক্যান্সারের মাত্রাও, বিশেষ করে ফুসফুস, ত্বক ও অন্ত্রের।

গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ফলে যে রোগ গুলো ছড়াচ্ছে তাতে ইতি মধ্যে দেশ জনস্বাস্থ্য সংকটে পড়েছে। কয়েক বছরে আর্সেনিকের বিষক্রিয়ার ফলে লাখ লাখ মানুষের ত্বক, মূত্রাশয় এবং ফুসফুসের ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছে।

গবেষক দলের প্রধান ও নরউইচ ইউনিভার্সিটির রসায়নের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সেথ ফ্রিসবি বলেছেন, পানীয় জল থেকে আর্সেনিক বিষক্রিয়া একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। আমি একবার এমন একটি গ্রামে গিয়েছিলাম যেখানে কেউ ৩০ বছরের বেশি বয়সী ছিল না।

বাংলাদেশের পানিতে প্রথম আর্সেনিক ধরা পরে ১৯৭০ সালে। সে সময় দূষিত ভূ-পৃষ্ঠের পানির কারণে দেশে শিশুমৃত্যুর হার ছিল সারা বিশ্বের মধ্যে সবথেকে বেশি।

জাতিসংঘের সাহায্য সংস্থা এবং এনজিওগুলি গার্হস্থ্য ব্যবহার, ফসল সেচ এবং মাছ চাষের জন্য বিশুদ্ধ জল সরবরাহের জন্য গভীর নলকূপ বোরিংয়ের একটি বিশাল কর্মসূচির পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। যদিও সেসময় নতুন কূপগুলি পানিবাহিত রোগের বিস্তার কমিয়ে শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে এনেছিল, কিন্তু ১৯৯০ সালের দিকে জানা যায় যে, বাংলাদেশের তলদেশের পাললিক শিলা থেকে তোলা পানিতে প্রাকৃতিকভাবে উচ্চ মাত্রার আর্সেনিক রয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব এলাকায় আর্সেনিকের মাত্রা বেশি, সেসব এলাকার মানুষের উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, মেটাবোলিক সিনড্রোম, বুদ্ধিবৈকল্য ও অ্যাজমার প্রবণতা বেশি।

অধ্যাপক ড. সেথ ফ্রিসবি বলেছেন, দেশে আর্সেনিকের উত্থান প্রাকৃতিকভাবে ঘটছে। হিমালয়ের উপরের অংশ থেকে পলিকে ধুয়ে ফেলা হয়েছে। সুতরাং গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, ইরাবদি এবং মেকং নদীর অববাহিকা থেকে আসা সমস্ত পলি প্রাকৃতিকভাবে আর্সেনিক সমৃদ্ধ।

ড. ফ্রিসবির ভাষ্যমতে, মানুষ যখন ভূ-পৃষ্ঠের পানি পান করত তখন কোনো সমস্যা ছিল না, কারণ ভূ-পৃষ্ঠের পানি বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে এবং এটি আর্সেনিককে অদ্রবণীয় করে তোলে এবং পানি থেকে সরিয়ে দেয়। কিন্তু গভীর কূপের পানি বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে না। আর সেই কারণেই হঠাৎ করেই এই গভীর কূপের পানি জনসাধারণকে পান করতে দেওয়াটা একটা বর ধরনের জনস্বাস্থ্য সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে মানুষ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। পরিণাম হচ্ছে মৃত্যু। এ দেশের গ্রামবাংলার অধিকাংশ মানুষ টিউবওয়েলের পানির ওপর নির্ভরশীল। ১৯৯৩ সালে প্রথম জানা যায়, টিউবওয়েলের পানিতেই রয়েছে আর্সেনিক, যা পান করলে একজন সুস্থ ব্যক্তি আর্সেনিক দূষণজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। 

তবে দুই এক মাস আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করলেই যে কোনো ব্যক্তি এ রোগে আক্রান্ত হবে, এমন ধারণা ঠিক নয়। কতদিন আর্সেনিকদূষিত পানি পান করলে কোনো ব্যক্তি আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত হবেন, তা নির্ভর করে পানিতে আর্সেনিক দূষণের পরিমাণের ওপর। দেখা গেছে, আর্সেনিকদূষিত টিউবওয়েলের পানি পান করে ৫ থেকে ৮ বছর পরও মানুষের দেহে রোগের উপসর্গ দেখা যায়।

আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর তিনটি পর্যায় রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত রোগীর গায়ে কালো কালো দাগ দেখা যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরো ত্বকও কালো হয়ে যেতে পারে। হাত ও নখের চামড়া শক্ত ও খসখসে হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে  আর্সেনিক দূষণ আক্রান্ত বলে প্রাথমিক লক্ষণ সমস্যার লক্ষণ চোখে কনজাংটিভাইটিস দেখা দিতে পারে বা চোখ লাল হয়ে যেতে পারে বমি বমি ভাব বা পাতলা পায়খানা হওয়ার লক্ষণ ও দেখা দিতে পারে আর্সেনিক দূষণে আক্রান্তে হলে।

খাবার পানিতে আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা ০.০৫ মিলিগ্রাম। এক লিটার পানিতে ০.০৫ মিলিগ্রাম মাত্রার আর্সেনিক মানুষের শরীরে কোনো ক্ষতি করে না। কোনো নলকূপের পানি পরীক্ষা করে যদি দেখা যায়, ওই মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ আর্সেনিক রয়েছে তাহলে সেই নলকূপের পানি খাওয়া ও রান্নার কাজে তা ব্যবহার করা যাবে না।

ড. ফ্রিসবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একই সময়ে, সমুদ্রপৃষ্ঠে সমুদ্রের জলের প্রবেশ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির আরেকটি ফল। এরফলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি করবে, আরেকটি রাসায়নিক পরিবর্তন যা "লবণ প্রভাব" নামে পরিচিত এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জলে আর্সেনিক প্রবেশের হার বাড়িয়ে দেবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে প্রায় ৯ লাখ মানুষ ফুসফুস এবং মূত্রাশয় ক্যান্সারে মারা যাবেন।

জলবায়ু বিরূপ পরিবর্তন হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যাবে না, তাই মানুষজাতির স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব চলতেই থাকবে দূরবর্তী ভবিষ্যৎ পর্যন্ত। বিশেষ করে পরিবেশের উচ্চ তাপমাত্রা, দূষিত বাতাস, দাবানল ইত্যাদির কারণে মানুষের শ্বাসতন্ত্র ও হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের ঝুঁকি বাড়ে মারাত্মক হারে।

গবেষকরা আরও জানান, ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার পরিবেশগত প্রধান কারণ হলো– বায়ুদূষণ, অতিবেগুনি রশ্মির তেজস্ক্রিয়তা, বাণিজ্যিক কলকারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া এবং খাদ্য ও পানির মজুদে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা।

প্লস ওয়ান জার্নালে বুধবার প্রকাশিত গবেষণাটিতে বলা হয়, জলজ রসায়নের এই পরিবর্তনগুলি বাংলাদেশের নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও এই প্রতিবেদনে দীর্ঘস্থায়ী আর্সেনিক বিষক্রিয়া থেকে মৃত্যু এবং রোগের হার বাড়ার আশঙ্কা করা হয়েছে।