ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ৯:১৮:২৬ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউ পুড়ে ছাই, রক্ষা পেল ৭ শিশু সবজির বাজার চড়া, কমেনি মুরগির দাম সারা দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি কৃষক লীগ নেতাদের গণভবনের শাক-সবজি উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি শিশু হাসপাতালের আগুন সম্পূর্ণ নিভেছে

জাতির পিতার জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস

আইরীন নিয়াজী মান্না | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:২৮ পিএম, ১৭ মার্চ ২০২১ বুধবার

ক্যাপশান: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে গণভবনে শিশুদের ঢল। বঙ্গবন্ধুর পাশে কর্ণেল জামিল ও ব্যক্তিগত সচিব মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন (১৭ মার্চ, ১৯৭৫) ।

ক্যাপশান: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে গণভবনে শিশুদের ঢল। বঙ্গবন্ধুর পাশে কর্ণেল জামিল ও ব্যক্তিগত সচিব মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন (১৭ মার্চ, ১৯৭৫) ।

আজ ১৭ মার্চ বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। জাতি আজ যথাযোগ্য সম্মানের সাথে তাঁর জন্মদিন পালন করছেন।

জাতির পিতা শিশুদের খুবই ভালোবাসতেন।  তাইতো জীবনের শেষ জন্মদিনটিও তিনি শিশুদের সাথেই কাটিয়েছিলেন।

তিনি সাধারণত নিজের জন্মদিন পালন করতেন না।  তবে ১৭ মার্চ নিজের জন্মদিন তিনি শিশুদের সঙ্গে কাটাতে পছন্দ করতেন।  ওই দিন শিশুরা দল বেঁধে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে আসতো তার বাসায়।  তিনি তাদের সাথে আনন্দ করে দিনটি কাটাতেন।

এই মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বর্তমানে সারাদেশে ১৭ মার্চ তার জন্মদিন নানা আয়োজনে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা হয়।

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বা বিশ্ব শিশু দিবস পালন করা হলেও জাতীয় শিশু দিবস ছিল না।  শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার কারণেই তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম মেয়াদে (১৯৯৬-২০০১) ক্ষমতায় এসে ১৭ মার্চকে জাতীয় শিশু দিবস ঘোষণা করে।  ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চ দিবসটি পালন শুরু হয়। প্রথমে দিনটিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা না করলেও পরবর্তীতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।

২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হারানোর পর তৎকালীন বিএনপি সরকার জাতীয় শিশু দিবস পালন করা বাতিল করে দেয়।  ফলে ২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দিবসটি পালিত হয়নি।  পরবর্তীতে ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়ে আসার পর আবারও প্রতিবছর জাতীয় পর্যায় বড় আয়োজনের মাধ্যমে এই দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে।

দেশজুড়ে শিশুদের অংশগ্রহণে নানা আয়োজনে জাতীয় শিশু দিবস পালণ করা হয় প্রতি বছর।  আলোচনা সভা, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিশুদের সামনে উঠে আসে জাতির মহান নেতার জীবনাচরণ, আত্নত্যাগ, দেশ গঠনসহ নানা ইতিহাস।  জাতির পিতা শেখ মুজিবের জীবনের নানা গৌরবোজ্জ্বল কাহিনি শুনে শিশুরা গৌরব বোধ করে।  জাতির পিতাকে জানার মধ্যে দিয়ে তারা প্রিয় জন্মভূমির ইতিহাস জানতে পারে, জানতে পারে বাঙালির গৌরবের ইতিহাস।  আর এভাবেই নিজ মাতৃভূমিকে ভালোবাসতে শেখে শিশুরা।

প্রতি বছর ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে রাজধানীর ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়িটিতে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে জন্মদিনের কর্মসূচি শুরু হয়।  এদিন জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা জানাতে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মদিনে সবচেয়ে বড় আয়োজনটি হয় তার জন্মভূমি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। যে জন্মভূমির মাটিতে শায়িত আছেন জাতির জনক। জন্মভূমিতে তার সমাধিক্ষেত্রটিকে ঘিরে আয়োজন করা হয় শিশুসমাবেশের।  সেখানে শিশুদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে দিনটি।  মিলাদ-মাহফিল ও দোয়ার মাধ্যমে স্মরণ করা হয় মহান নেতাকে।  থাকে নানা রকম অনুষ্ঠান।  রচনা প্রতিযোগীতা, চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগীতাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  দিনব্যাপী চলতে থাকে বইমেলা।  বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণের টানে পিতার জন্মদিনে ছুটে যান টুঙ্গিপাড়ায়।  এই শুভ দিনটি তিনি শিশুদের সঙ্গে কাটান।  পিতার জন্মদিনে বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় বিজয়ী-মেধাবী-দুস্থ শিশুদের হাতে তুলে দেন নানা উপহার ও পুরস্কার।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের খোঁজখবর নেন।  শিশুদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেন এবং ছবি তোলেন।

এদিন বেসরকারি উদ্যোগেও উদযাপন করা হয় দিবসটি।  ব্যক্তিগত আয়োজন ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ও সেবামূলক সংগঠন, এনজিও, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিশু সংগঠনগুলো নানা আয়োজনে জাতির পিতার জন্মদিন উদযাপন করে থাকে।  

দেশের সীমানা ছাড়িয়ে জাতির পিতার জন্মদিনের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের নানা দেশে।  বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলোর আয়োজনে প্রবাসীরা আনন্দের মেতে ওঠেন এ দিন।

এদিকে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শিশু একাডেমী দিবসটি উদযাপন করে জাকজমকপূর্ণ নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। দেশব্যাপী শিশু একাডেমীর প্রতিটি শাখা নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এদিন।  রাজধানীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১২ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান হয়।  এর মধ্যে অন্যতম বইমেলা।  দেশের নামি-দামি সব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মেলায় স্টল নেয়।  সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লেখাপাঠ, বঙ্গবন্ধুর জীবনীপাঠ, ছবি আঁকা, আবৃত্তি, বঙ্গবন্ধুর ভাষণের প্রতিযোগীতাসহ নানা ধরণের আয়োজন চলতে থাকে বইমেলাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

অন্যদিকে জাতির পিতার জন্মদিনে ১৭ মার্চ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও রেডিও বাংলাদেশসহ দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সংবাদপত্রগুলো বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। দেশের অনলাইন পত্রিকাগুলো বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা দিক নিয়ে বিশেষ আঙ্গিকে সংবাদ পরিবেশন করে।

শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর দরদ ছিল অপরিসীম।  বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।  ভবিষ্যতে দেশ গড়ার নেতৃত্ব দিতে হবে আজকের শিশুদেরই। তাই শিশুরা যেন সৃজনশীল মুক্তমনের মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে-তিনি সব সময়ই সেটা চাইতেন। তাই জাতির পিতার জন্মদিনকে শিশু দিবস হিসেবে পালন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই মহান নেতার জীবন ও আদর্শ অনুসরণে এ দেশের শিশুদের যথাযোগ্য সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই হোক বাঙালি জাতির প্রধান অঙ্গীকার।

ছেলেবেলার প্রিয় বঙ্গবন্ধু বড় হয়েও ছোটদের ভীষণ ভালোবাসতেন।  কচিকাঁচার মেলা ও খেলাঘর ছিল তার প্রিয় সংগঠন।  কৈশোরে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কচিকাঁচার মেলায় ভর্তি করে দিয়েছিলেন তিনি।  জাতির পিতা জীবনের শেষ দিনটি কাটিয়েছিলেন এই সংগঠনের ভাই-বোনদের মাঝে।  তার জন্মদিনটি আমরা ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে পালন করি।  তাই তো শিশুদের কাছে দিনটি আনন্দের ও খুশির।