জীবনপ্রান্তে আশ্রয়ের সন্ধানে
পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায় | উইমেননিউজ২৪.কমআপডেট: ০৩:১৩ এএম, ৪ জুলাই ২০১৮ বুধবার
’’আমি একজন একলা মানুষ। বয়স আশির কোঠায়। তবে শক্তপোক্ত চেহারা, বাজারহাট করতে পারি, রাঁধতে পারি, নিজের দেখাশোনাটাও করতে পারি। তেমন কোনও রোগব্যাধিও নেই। তিয়ানজিন-এর এক বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা থেকে অবসর নিয়েছি। মাসে ৯৫০ ডলার বেতন পাই।’’
গত বছর ডিসেম্বরের এক কনকনে সকালে চিনের এক নাগরিক হান চেন কয়েক টুকরো সাদা কাগজে নীল কালিতে এই কথা ক’টি লিখে বাড়ির সামনের বাসস্টপের গায়ে আটকে দেন। কেন? কারণ, তিনি চাইছিলেন তাকে কেউ দত্তক নিক। ভরণপোষণের দায়িত্ব নয়, সে সামর্থ্য তার ঢের আছে। যা নেই, তা হল এক সম্পূর্ণ পরিবার। স্ত্রী মারা গিয়েছেন, ছেলেরাও দূরে দূরে। যোগাযোগ প্রায় নেই। তাই তিনি চান একটা সুন্দর পরিবার, যারা শেষের ক’টা দিন তাকে লালনপালন করবে, বিছানার পাশটিতে ঘিরে থাকবে, আর মারা যাওয়ার পর তাকে কবর দেবে। না, তিনি নার্সিংহোমের কৃত্রিম আয়াস চান না। ভারী ভয় করে তার। ভয়, একলা মরতে। বন্ধ দরজার আড়ালে পচে কাঠ হয়ে থাকবে তার দেহ—এমনটা ভাবতেই পারেন না তিনি।
এই ভয়টা কেবল হান চেন-এর নয়। চিনের জনসংখ্যার পনেরো শতাংশেরও বেশি মানুষের ভয় এটা। সেই পনেরো শতাংশ যাদের বয়স ষাট পেরিয়েছে, শারীরিক সক্ষমতা ক্রমশ কমে আসছে। তাদের মধ্যেই নিরাপত্তার অভাবটা যেন বড্ড দ্রুত চারিয়ে যায়। এমনিতেও বয়স্ক মানুষের সংখ্যাবৃদ্ধি চিন সরকারের প্রবল মাথাব্যথার কারণ। ক্রমশ বুড়িয়ে যাচ্ছে চিন। দীর্ঘ দিন পালন করে আসা এক সন্তান নীতি জনসংখ্যার কাঠামোটাকেই ঘেঁটে দিয়েছে। অনুমান, ২০৪০ সালের মধ্যে চিনে প্রতি চারজনের মধ্যে এক জনের বয়স হবে ষাটের ওপরে। অর্থনীতির পক্ষে এমন খবর রীতিমতো অস্বস্তিকর। জনসংখ্যার বয়স বাড়লে দেশে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে। উৎপাদনও কমে। অন্য দিকে, বয়স্ক নাগরিকের সুরক্ষাব্যবস্থায় রাজকোষের ওপর চাপ বাড়ে। চিন এখনই সেই অসুবিধের কিছু কিছু টের পেতে শুরু করেছে।
আর পরিবারগুলোর কী অবস্থা? ছবিটা খুব চেনা। ঠিক যেন আমাদের শহরাঞ্চলের আশপাশের বাড়িগুলোরই ছবি। অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা কাজের সূত্রে অন্য শহরে, অন্য দেশে থিতু। বৃদ্ধ বাবা-মায়েরা কখনও পাশের বাড়ির, কখনও কাজের লোকের ভরসায় শেষের সময়টার জন্য দুরুদুরু বুকে দিন গুনে চলেছেন। এক সময় সমস্যা এমন বাড়ে যে, সন্তান যাতে নিয়মিত বাবা-মায়ের কাছে আসে, তাদের দেখভাল করে, সেই জন্য চিন সরকারকে আইন করতে হয়। কিন্তু পরিবারের বয়স্ক মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ তো আসলে মনের ব্যাপার। শুধু আইনে কি আর তা লাফিয়ে বাড়ে? চিনেও বাড়েনি। তার ওপর আবার আর পাঁচটা দেশের মতো সে দেশেও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব বা পরিবার কল্যাণ গোছের তত্ত্বকথাগুলোয় বিস্তর ফাঁকফোকর। হানের মতো একলা মানুষরা সম্ভবত সেটা বুঝেই নিজেই নিজের হয়ে এমন বিজ্ঞাপন ঝুলিয়েছিলেন।
কাজও হয়েছিল বেশ। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে হানের একাকীত্বের প্রতি তখন সহানুভূতি উপুরচুপুর। কেউ খাবারের ব্যবস্থাটা করে দিতে চাইছেন, তো কেউ নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করছেন। তা সত্ত্বেও হানের মেজাজ বেজায় তিতকুটে। তার চোখে তখন ভাসছে এক আদর্শ পরিবারের ছবি। না-ই বা হল সেই পরিবার রক্তের সম্পর্কের। তবুও এক ছাদের নীচে অনেকে মিলে থাকা, বাড়ির দালানে, উঠোনে খেলে বেড়ানো নাতিনাতনিরা, প্রয়োজনে জলের গেলাস, ওষুধ, সুপের বাটি হাতে বিছানার পাশে প্রিয়জনের উপস্থিতি, সুখদুঃখের গল্প শোনার সঙ্গী—সে সব তো কই কিছু জুটছে না তার! শুকনো প্রতিশ্রুতি আর আহা-উহু’তে কি আর বুড়ো মানুষের মন গলে? হান জানতেন না, সারা পৃথিবীতেই তেমন পরিবারের বড্ড আকাল। কে-ই বা এক আশি বছরের মেজাজ আর আবদারকে সাধ করে নিজের বাড়িতে ডেকে আনতে চায়? তা-ও এসেছিল ফোন। তার দায়িত্ব নিতে চেয়ে। কিন্তু সে নাকি পরিযায়ী শ্রমিক। কোনও একটা ছাদের তলায় নয়, নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে তার কাজ। উত্তর না দিয়ে হান সেই ফোন দড়াম করে রেখে দেন।
শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফোন আসাও কমে যায়। হানকে আবার চেপে ধরে সেই কুনকুনে ভয়টা। যে মানুষটা মাওয়ের চেয়ারম্যান হওয়া থেকে চিনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব সমেত সমাজের নানা ওঠাপড়ার সাক্ষী, প্রচুর ঝড়ঝাপ্টা সামলে এগোতে হয়েছে যাকে, তিনি শেষের ক’টা দিন যেন আঁকড়ে ধরেছিলেন ফোনটাকে। বিজ্ঞাপনের সূত্রে যে ছিটেফোঁটা কয়েক জনকে বন্ধু পেয়েছিলেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেন। বয়স্কদের হেল্পলাইনে ফোন করে তার এমন অবস্থার জন্য উগরে দেন ক্ষোভ। তার পর এক সময় একেবারে চুপও করে যান। কেন যে হঠাৎ তিনি চুপ করলেন, তার সাইকেল-চ়়ড়া মূর্তিটা কেন যে আচমকাই উধাও হল, সেই প্রশ্নগুলো পাড়া-প্রতিবেশীদের মনেও এল না। বরং পড়শি-সমিতি, যাদের ওপর নাকি এলাকার বাসিন্দাদের খোঁজখবর রাখার দায়িত্ব, তারাই চমকে গেলেন হানের মৃত্যুর খবরে। আর ভারী খেপে গেলেন হানের কানাডাবাসী ছোট পুত্র। তার সাফ কথা, এ সব বিজ্ঞাপন দিয়ে ভয়ঙ্কর অন্যায় করেছেন বাবা। আর তার চেয়েও বেশি অন্যায় করেছে যারা সে সব নিয়ে হইচই বাধিয়েছে। মোটেও তার বাবাটি একলা ছিলেন না। ছেলেরা ভালই দেখত তাকে।
কিন্তু একলা হানের শেষ দিনগুলো কেমন ছিল? উত্তর জানা নেই। শুধু এটুকু জানা যায়, মারা যাওয়ার আগে তিনি হাসপাতালের বিছানাটুকু অবধি পৌঁছেছিলেন। তুমুল ব্যস্ত পৃথিবীর মাঝে কেউ এক জন সেই বদান্যতাটা অন্তত দেখিয়েছিলেন।
- প্রথমবারের মত সিরি-এ ম্যাচে ছিলেন সব নারী রেফারি
- ভারতীয় নাগরিকের হৃদপিণ্ডে বাঁচলো পাকিস্তানের আয়েশার প্রাণ
- গরমে গাছেরা প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছে তো!
- ২৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেশে
- ঢাকাসহ ২৭ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আজ
- থাইল্যান্ড সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী
- ছবির জন্য ওজন বাড়িয়ে বিপাকে পরিণীতি
- বসুন্ধরা গ্রুপে নিয়োগ, আবেদন ২ মে পর্যন্ত
- তিল চাষে ঝুঁকছেন সদরপুরের কৃষকরা
- কাটাখালী পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হলেন রিতু
- তীব্র গরমে শরীরে পানিশূন্যতারোধে উপকারী ফল
- অব্যাহত তাপপ্রবাহের মধ্যে শিলাবৃষ্টির আভাস
- আজ সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল
- মাত্র ১০ মিনিটের ঝড়ে লন্ডভন্ড মৌলভীবাজার
- আজ দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী
- খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরো বাড়ল
- জমজমাট ফুটপাতের ঈদ বাজার
- দেশে ধনীদের সম্পদ বাড়ছে
- বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা
- যে বিভাগে বিচ্ছেদের হার বেশি
- ৭ই মার্চ পরিস্থিতি, কেমন ছিলো সেই দিনটি
- ঘরের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
- সদরঘাট ট্র্যাজেডি: সপরিবারে নিহত সেই মুক্তা ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা
- শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণের নেপথ্যে
- দিনাজপুরে ব্যাপক পরিসরে শিম চাষের লক্ষ্য
- জিমন্যাস্টিকসে শিশু-কিশোরদের উৎসবমুখর দিন
- কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকার নেতৃত্বে সাজ্জাদ-মোশাররফ-শরীফ
- বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের
- বিরল পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বিশ্ব
- ‘এক মাসে ৫৩ নারীর আত্মহত্যা’