ঢাকা, শুক্রবার ২৬, এপ্রিল ২০২৪ ১:৩২:২০ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

ঢাবি এলাকায় নারীর হেনস্থা, মহিলা পরিষদের প্রতিবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:১২ পিএম, ১২ জুন ২০২২ রবিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

গত ৮ জুন দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্যার এ এফ রহমান হল এলাকায় এক নারী গণমাধ্যমকর্মীর সাথে ঘটা সহিংসতার প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

রোববার বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি।

বারবার আন্দোলনের পরও এই ধরনের ঘটনাগুলো থামছে না উল্লেখ করে সমাবেশে বক্তারা বলেন, সঠিক বিচার করতে পারলে এগুলো আর ঘটতো না। আজকে বাংলাদেশে নারী কোনো পরজীবী শ্রেণী নয়, সে এখন স্বাবলম্বী। সুতরাং সরকারের এইদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। যদি এসব ঘটনা আর দেখতে না চান, তবে আসুন আমরা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি এবং সরকারকে আইন প্রণয়নে বাধ্য করি।

সমাবেশে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফাওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে মহিলা পরিষদ সবসময় আন্দোলন করে আসছে। করোনার সময় থেকে সহিংসতা বাড়তে বাড়তে আজ এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। করোনা থেকে আমরা মুক্তি পেলেও নারীর প্রতি সহিংসতা থেকে মুক্ত হতে পারছি না। যারা নারীর প্রতি সহিংসতার মাধ্যমে পৌরুষ দেখান, তারা আসলে পুরুষত্বকে কলঙ্কিত করছেন; মানবিক আচরণ না করে মানবতাকে কলঙ্কিত করছেন।

তিনি বলেন, সকল পুরুষ নারীর প্রতি সহিংস আচরণ করেন না, নারীকে অসম্মানের-অমর্যাদার চোখে দেখেন না। কিন্তু যারা দেখেন, তাদের গুটি কয়েক পুরুষের জন্য সবাই অপরাধের মুখে পড়ে যাচ্ছেন। কাজেই তাদেরকে চিহ্নিত করার যে সংগ্রাম, আইনের আওতায় আনার যে সংগ্রাম, এই সংগ্রাম শুধু নারীর না, নারী পুরুষ সকলের। যারা মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করেন, মানুষের মর্যাদায় বিশ্বাস করেন, তারা আমাদের আন্দোলনে শামিল হবেন।

ফাওজিয়া মোসলেম আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল কেন্দ্র। আমরা যখন ছাত্র আন্দোলন করেছি তখন রাত ১২টা-১টার দিকেও সার্জেন্ট জহুরুল হক হল থেকে একা ফিরেছি। তখন তো আমাদের কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। আমরা বাহির থেকে যখন ক্যাম্পাসের চত্বরে ফিরেছি, তখন মনে হতো আমরা নিরাপদ জায়গায় আছি। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে এই ধরনের কাজ করছে, আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের চিহ্নিত করুন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান আপনাদের সম্মানের সাথে জড়িত।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, আজ বাংলাদেশের নারীদের অবদান দেশে বিদেশে স্বীকৃত। কোন ধরনের শিক্ষার ফলে ওই কাপুরুষ নারীর প্রতি এই ধরনের সহিংসতা দেখায়? আমরা পুরুষদের বলছি, আপনারা নতুন ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করুন, নতুন ধরনের মানুষ হন। নারীকে শরীর না, মানুষ হিসেবে বিবেচনা করুন, গ্রহণ করুন। সে আপনার অধীনস্থ না, পদানত না—এই শিক্ষায় আপনারা শিক্ষিত হন। যদি তা না হয় তাহলে আপনার পরিবারেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। যে সকল মৌলবাদী রাজনৈতিক শক্তি নারীর সাজসজ্জা, পোশাকের ওপর হস্তক্ষেপ করতে শুরু করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন সমাজকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে।


প্রতিবাদ সমাবেশে মহিলা পরিষদ ১১টি প্রস্তাব পেশ করে। সংগঠনের আন্দোলন উপপরিষদের অ্যাডভোকেসি লবির পরিচালক জনা গোস্বমী প্রস্তাব পাঠ করেন। সংগঠনের পেশকৃত প্রস্তাবগুলো হলো:

১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নারীর প্রতি সহিংসতায় অবিলম্বে নির্যাতকের দৃষ্টাত্বমূলক শাস্তির দাবি।

২. নারী ও কন্যার প্রতি যৌন নিপীড়নসহ সকল প্রকার সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধ করার দাবি।

৩. উত্ত্যক্তকররণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যা, এসিড নিক্ষেপের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার দাবি।

৪. নারীর স্বাধীন চলাচলে নিরাপত্তার দাবি।

৫. নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অপরাধ ও সন্ত্রাসমুক্ত নিরাপদ সমাজ গঠনে এগিয়ে আসার আহ্বান।

৫. নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে পারিবারিক মূল্যবোধ গড়ে তোলা এবং ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার নারীকে দায়ী করার মানসিকতা পরিহার করার আহ্বান।

৭. উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধে মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের আলোকে পৃথক আইন প্রণয়নের দাবি।

৮. ধর্ষণসহ নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা বন্ধে সরকারের ঘোষিত নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স এর বাস্তবায়ন দৃশ্যমান করা।

৯. কর্মক্ষেত্র ও রাস্তাঘাট, গণপরিবহনসহ ঘরে-বাইরে সর্বত্র নারী ও কন্যার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

১০. নারীর প্রতি প্রচলিত নৈতিবাচক প্রথা ও রীতিনীতি অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালানোর আহ্বান।

১১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয় সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে নিয়মিত মনিটরিং করা।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদের অ্যাডভোকেসি এন্ড লবির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক দীপ্তি সিকদারের সঞ্চালায় প্রতিবাদ কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম, কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদের সম্পাদক রেখা সাহা, উপপরিষদের আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি ও ডা. নাহীদ নবী লেখা। এছাড়াও ঢাকা মহানগর শাখা মহিলা পরিষদের সহসম্পাদক মঞ্জু ধর, কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. রাম লাল রাহা এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ঢাবির উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিস বিভাগের শিক্ষার্থী নিদিয়া রাকা ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী নির্জনা ভূঁইয়া বক্তব্য রাখেন।