ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ৪:০৭:৪২ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউ পুড়ে ছাই, রক্ষা পেল ৭ শিশু সবজির বাজার চড়া, কমেনি মুরগির দাম সারা দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি কৃষক লীগ নেতাদের গণভবনের শাক-সবজি উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি শিশু হাসপাতালের আগুন সম্পূর্ণ নিভেছে

তারাক্ষ্যাপা এবং একগুচ্ছ হাসনুহানার স্মৃতি

মাহমুদা পারভীন | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৮:১৫ এএম, ৭ অক্টোবর ২০২১ বৃহস্পতিবার

হাসনুহানা

হাসনুহানা

ততকালীন রানীগঞ্জ মহকুমার এক অজপাড়া গাঁয়ের গৃহবধু জাহেদা খাতুনের মনে গভীর দুঃখ। কারণ তার বড় ছেলের পর বেশ কয়টি সন্তান জন্মের পরপরই মারা গিয়েছে। ঝাড়ফুঁক, তাবিজ কবচ কোনো কিছুতেই যখন কিছু হলো না, তখন জাহেদা খাতুন তারাপীঠ মন্দিরে গেলেন। তারপর জন্ম নেওয়া তার  ছেলেটা বেঁচে গেলে তারাপীঠের প্রতি এই মায়ের কৃতজ্ঞতার সীমা রইলো না। 
বাড়ির সকলে এই ছেলের নাম দিলো তারাক্ষ্যাপা। এই ছেলে খুব ক্ষ্যাপাটে স্বভাবের, কিন্তু মায়াকাড়া। বড় বড় চোখের গভীর দৃষ্টির কারণে সহজেই সে সবার মনোযোগ কেড়ে নিতে পারে। 
শৈশবেই তারাক্ষ্যাপার বাবা মারা গেলে তার মায়ের বিয়ে হয়ে যায় চাচার সঙ্গে। এই আকস্মিক ঘটনায় অস্থিরচিত্ত বালকের গভীর অভিমান হলো মায়ের প্রতি। কিছুদিন পরে কাউকে না বলে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেল সে। অনেক অনেক দূরের এক নামকরা স্কুলে সে একাই গেল ভর্তি হতে। অভিভাবকহীন নিতান্তই এক বালককে হেডমাস্টার ভর্তির অনুমতি দিলেন না! কিন্তু নাছোড়বান্দা তারাক্ষ্যাপা দপ্তরির কাছ থেকে একটা কাগজ চেয়ে নিয়ে খসখস করে ভর্তির জন্য একটা আবেদন লিখল। তারপর আবেদনটা দপ্তরির হাতে দিয়ে স্কুলের সামনের তেপান্তরের মতো বিশাল মাঠটা খালি পায়ে, জলভরা চোখে অভিমানী বালক যখন হেঁটে পাড়ি দিয়ে স্কুল থেকে বের হয়ে যাচ্ছে এমন সময় হেডমাস্টারমশাইয়ের হাতে বালকের দরখাস্ত পড়লো। হেডমাস্টারমশাই বিস্মিত হয়ে দেখলেন পুরো আবেদনপত্র কবিতার আকারে লেখা। 
নির্ভুল নিখুঁত ছড়ার ছন্দে লেখা আবেদনপত্র হাতে নিয়ে হেডমাস্টার নিজে ছুটে গিয়ে বালকের হাত ধরে নিয়ে এলেন।বিনা বেতনে ভর্তি এবং জায়গিরের ব্যবস্থা করে দিলেন। ভীষণ খুশি হয়ে তারাক্ষ্যাপা নতুন স্কুলে পড়াশোনায় মন দিলো।
কিন্তু বছর না ঘুরতেই ‘ছনছনে’  বালক স্কুল ছেড়ে একদিন পালিয়ে গেল। নানান ধরনের জায়গায় নানান ধরনের কাজ করে একদিন  অনেক দূরের আরেক স্কুলে ভর্তি হলো। নতুন এই স্কুলের ভোলানাথ কর্মকার নামে এক শিক্ষকের বিদায় অনুষ্ঠানে মানপত্র লেখার দায়িত্ব পড়লো তারাক্ষ্যাপার উপর। ‘করুণ গাথা’ নামে কবিতার মতো করে আট লাইনের অসাধারণ একটা মানপত্র লিখলো সে। আট লাইনের মানপত্রের প্রতি লাইনের প্রথম শব্দের প্রথম  বর্ণ পরপর সাজালে পাওয়া যায় তারাক্ষ্যাপার পোশাকি বা আসল নাম :
   ন.............................
   জ----------------------
   রু........….…...............
   ল.…..........................
   এ..............................
   স..............................
   লা.............................
   ম..............................

আরেকটু বড় হয়ে তারাক্ষ্যাপা তার নামের আগে পারিবারিক পদবি ‘কাজী’ যুক্ত করলো এবং ‘এসলাম’  শব্দটি বদলে দিয়ে ‘ইসলাম’ করার পরে তাঁর পুরো নাম হলো–কাজী নজরুল ইসলাম। আমাদের দুখু মিয়া। 
দুখু মিয়া কিংবা তারাক্ষ্যাপার একটা কবিতার দুইটা লাইন মাথায় কিছু দিন ধরে খুব ঘুরঘুর করছে:
‘বন্ধু গো!  আর বলিতে পারি না, বড় বিষ–জ্বালা 
                                                     এই বুকে। 
দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি তাই যাহা আসে 
                                                        কই মুখে।’
...      ...      ...

আমার দাদার বাড়িতে একটা ত্রিকোণ আকৃতির বাগান ছিলো। সেই বাগানের এক কোণে একটা ‘হাসনুহানা’ গাছ ছিলো। পূজার ছুটিতে দাদার বাড়ি বেড়াতে গেলে রাতের বেলা আমাদের অপূর্ব সুন্দর বাড়িটা হাসনুহানার মিষ্টি গন্ধে মৌ মৌ করতো। 
আমার বারান্দায় টবেই মুনীর হাসনুহানা লাগিয়েছে। ঝেঁপে এই গাছে ফুল ফুটেছে। হাসনুহানার সুগন্ধে কেবলই আমার ফেলে আসা অপূর্ব ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে! 
তারাক্ষ্যাপার মতো আমরা সবাই তো আর কবিতা লিখতে পারি না। তাই চলুন জটিল-কুটিল অসংবেদনশীল মানুষদের দেয়া ‘বিষজ্বালা’ ক্ষমা করি, করুণা করি। 
শুভ সন্ধ্যা। সকলকে হাসনুহানার শুভেচ্ছা জানাই। 
সবার মঙ্গল হোক।