ঢাকা, শুক্রবার ১৯, এপ্রিল ২০২৪ ১৯:০২:১০ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
সবজির বাজার চড়া, কমেনি মুরগির দাম সারা দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি কৃষক লীগ নেতাদের গণভবনের শাক-সবজি উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি শিশু হাসপাতালের আগুন সম্পূর্ণ নিভেছে শিব নারায়ণ দাশের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক পরলোকে জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ন

দুর্নীতি বন্ধে অভিন্ন আইনের আওতায় আসছে সব বিশ্ববিদ্যালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:১২ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে অভিন্ন আইনের আওতায় আসছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এই সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মত সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতি চালু, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে তৃতীয় লিঙ্গের জন্য কোটা সংরক্ষণ, উচ্চশিক্ষায় গবেষণা নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির জন্য নীতিমালা প্রণয়ন, গবেষণার চৌর্যবৃত্তি বন্ধে নীতিমালা তৈরি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ-পদোন্নতির জন্য অভিন্ন নীতিমালাসহ উচ্চশিক্ষায় সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে আইন প্রণয়নে ২৪ দফা সুপারিশ করেছে । এসব সুপারিশ সংবলিত বার্ষিক প্রতিবেদন গত রবিবার রাতে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে হস্তান্তর করেছে ইউজিসি।

প্রতিবেদনের বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ইউজিসির ৪৬তম বার্ষিক প্রতিবেদনে উচ্চশিক্ষার বর্তমান অবস্থা, সমস্যা ও করণীয় সম্পর্কে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে-পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অভিন্ন নীতিমালা করা। যেটি প্রতিবেদনে ইতিমধ্যে আমরা সুপারিশ করেছি। অন্যান্য সুপারিশগুলোর ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ নেবো। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি বিধি-বিধানকে অমান্য করছে। এ কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে একটি অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা করতে হবে। সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রপতিও কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন বলে ইউজিসি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার অ্যাপেক্সবডি ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ২০১৯ সালের কার্যক্রমের ওপর এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ৫৬৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ২৪টি সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ৪৬টি সরকারি ও ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য স্থান পেয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির ১০ নম্বর আদেশ দ্বারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইউজিসি প্রতিষ্ঠা করেন। মাত্র ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে দেশে পাবলিক ও বেসরকারি মিলে ১৫১ বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তদারকি করতে যে আইনি ক্ষমতা দরকার তা বিদ্যমান আইনে সম্ভব না। একই সঙ্গে উচ্চশিক্ষার পরিধি ও ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউজিসির বর্তমান অবকাঠামো ও জনবল দিয়ে সামগ্রিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে তদারকি সম্ভব হচ্ছে না। উচ্চ শিক্ষার সার্বিক ব্যবস্থাপনা এবং মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা নিশ্চিত করতে আর্থিক বরাদ্দ ও অবকাঠামো সুযোগ সুবিধাসহ আইনি ক্ষমতা বৃদ্ধি জরুরি বলে সুপারিশ করা হয়েছে।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে আন্তজার্তিক পর্যায়ের শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের নিবিড় ও কার্যকরী যোগাযোগ ও সহযোগিতা আশাব্যঞ্জক নয়। উচ্চশিক্ষার গুনগত মানোন্নয়নের জন্য বিশ্বের প্রথম সারির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে যৌথ গবেষণা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনে উচ্চতার ডিগ্রি অর্জনের জন্য স্কলারশিপ ও ফেলোশিপের সংখ্যা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। এজন্য একটি নীতিমালা করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে ইউজিসি।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানসম্পন্ন কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও উচ্চশিক্ষায় নারী-পুরুষের সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত কল্পে কাজ করতে হবে। এসডিজি-৪ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শিক্ষা খাতে ইউনেস্কোর সুপারিশ বাস্তবায়নের পক্ষে মত দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক আইসিটি সমৃদ্ধ তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি এবং তাদের মূল্যায়ন রিপোর্ট ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য প্রক্রিয়ায় অভিভাবকদের নিয়মিত অবহিতকরণ। শিক্ষা ও গবেষণা সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েব সাইটে প্রকাশে সরকারের নির্দেশনা জারির সুপারিশ করা হয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে দেশের বিশ্ববিদ্যায়গুলোতে ইন্টিগ্রেটেড ইউনিভার্সিটি ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট প্লাটফর্ম তৈরির পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইআরপি সফটওয়ার প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে কাজের জবাব দিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শিল্প, পেশাগত সংস্থা ও কমিউনিটির সংযোগ এবং শিল্প সংস্থার প্রতিনিধিদের কারিকুলাম কমিটিতে যুক্ত করে একাডেমিক প্রোগ্রাম যুযোপযোগী করা অতীব জরুরি বলে মত দিয়েছে ইউজিসি। বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষক তৈরি করতে ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি, উন্নত গবেষণা করার জন্য সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও গবেষণার প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র চিহ্নিত করার জন্য ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল স্থাপন জরুরি। ইউজিসির অধীনে এ তিনটি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। গবেষণার চৌর্যবৃত্তি ঠেকাতে কোন নীতিমালা নেই। গবেষণার মান নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির জন্য সফটওয়ার তৈরির সুপারিশ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভিন্ন ভিন্ন আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ায় নানা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। যে কারণে ৭৩ অধ্যাদেশ/আইনে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাড়া অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একটি ‘আম্রেলা অ্যাক্ট’ এর মাধ্যমে পরিচালনার সুপারিশ করা হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি/পদোন্নয়নের জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণী নীতিমালা দ্রুত বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, পদোন্নতি/পদোন্নয়নের জন্য একটি অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে ইউজিসি উদ্যোগ নিতে পারে বলে সুপারিশে বলা হয়েছে। উপাচার্য, উপ-পউপাচার্য ও ট্রেজারার নিয়োগের ক্ষেত্রে একাডেমিক এক্সেলেন্স, প্রাশসনিক দক্ষতা ও নৈতিক মূল্যবোধের ওপর গুরুত্ব দিয়ে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার ইউজিসির মতামত গ্রহণ করতে পারে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত কলেজ ও মাদ্রাসায় মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে।

৭৩’অধ্যাদেশ/আইনের অধীনস্থ ছাড়া অন্য সকল পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির আওতায় নিয়ে আসার সুপারিশ করা হয়েছে। বেসরসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুশাসন নিশ্চিত করতে আইন-২০১০ যুযোপযোগী করাসহ শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপযুক্ত বেতন কাঠামো ও চাকরি বিধিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে। শতকরা তিন ভাগ মুুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও অসচ্ছল দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষর্থীদের বিনা বেতনে অধ্যায়ন সুযোগ নিশ্চিত করতে একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন, বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে নীতিমালা করে করের আওতাভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। একই জেলায় একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেয়া বন্ধের সুপারিশ করেছে ইউজিসি।

সান্ধ্যকালীন, উইকেন্ড, এক্সিকিউটিভ এ ধরনের কোর্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। যে কারণে এসব কোর্চ বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে ইউজিসির অনুমোদ নিয়ে ডিপ্লোমা, শর্ট কোর্স, ভোকেশনাল, ট্রেণিং প্রোগ্রাম খণ্ডকালীন স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম পরিচালনা করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে নীতিমাল প্রণয়ন করতে প্রয়োজনে নির্দেশনা প্রদান করতে পারবে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে ভর্তির নির্দেশিকা তৈরি, কারিকুলাম প্রণয়ন ও ভিন্নভাবে পরীক্ষা নিয়ে সুরক্ষার নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠির শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে কোটা নির্ধারণে সুপারিশ করেছে ইউজিসি। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে ফলাফল নির্ভর শিক্ষা কাঠামো গড়ে তুলতে ইউজিসি কর্তৃক আউটকাম বেইজড এডুকেশন কারিকুলাম টেমপ্লেট প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশনার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া দ্রুত অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল আন্তজার্তিক মান অনুসরণ করে সকল উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও চলমান প্রোগ্রামগুলোর অ্যাক্রিডিট করার সুপারিশ করা হয়েছে।

-জেডসি