ঢাকা, শুক্রবার ২৯, মার্চ ২০২৪ ১৭:৫০:১৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
টাঙ্গাইলে শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁতীরা রমজানের অর্ধেকেও কমেনি মাছ ও মাংসের দাম সেতু থেকে খাদে পড়ে বাসে আগুন, নিহত ৪৫ রমজানের অর্ধেকেও কমেনি মাছ ও মাংসের দাম ঈদযাত্রা: ৮ এপ্রিলের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে আজ বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের বাতিঘর নাজিয়া জাবিন

ফিচার ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৫:৪৮ পিএম, ১৬ মে ২০২২ সোমবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা আমাদের সমাজেরই অংশ, অথচ, সমাজে তারা যথার্থ মর্যাদা পায় না। অনেকেই তাদের দেখেন করুণার চোখে।  কিন্তু, ইচ্ছে করে তো আর কেউ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয় না।  
তবে, এই সমাজেও এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যারা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদেরকে ভালবাসেন, তাদের নিয়ে ভাবেন এবং তাদের নিয়ে কাজ করে, আনন্দ পান। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পাশে থেকে তাদের মূল সমাজের সাথে সম্পৃক্ত করতে চান। এমন মানুষদেরই একজন নাজিয়া জাবিন।    
রাজধানীর গুলশানে নাজিয়া জাবিনের অফিসের টেবিলে অনেক ব্রেইল বই। হাতের আঙ্গুলের স্পর্শে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা তা পড়ছে। 
সুলেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ‘দলের নাম ব্ল্যাক ড্রাগন’, মফিদুল হকের ‘সে কোন রবীন্দ্রনাথসহ’ বিভিন্ন বইয়ের পাতায় হাত বুলিয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা তাদের কল্পনার জগতে পাড়ি জমাচ্ছে। পাঠ্য বইয়ের বাইরে ব্রেইল পদ্ধতিতে তৈরি গল্প, উপন্যাস, ছড়াসহ বিভিন্ন বই পড়ার সুযোগটি করে দিয়েছেন মাজিয়া জাবিন। এই দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের কাছে তিনি বাতিঘর হিসেবেই আবির্ভুত হয়েছেন।
মাজিয়া জাবিন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বলতে রাজি নন। তার কাছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা পড়ালেখা শিখে এখন তারা হলেন দৃষ্টিজয়ী। এই দৃষ্টিজয়ীদের চোখে-মুখে খুশির ঝলক দেখতেই তিনি গড়ে তুলেছেন স্পর্শ নামের ব্রেইল প্রকাশনা সংস্থা। এই প্রকাশনা সংস্থা আগের ৭০টির বেশি বইসহ এ বছরের একুশের বই মেলায় মোট ৮০টি প্রকাশনা নিয়ে হাজির হয়েছে দৃষ্টিজয়ীদের কাছে। আর মেলা শেষে নিবন্ধন করা দৃষ্টিজয়ীরা এই বইগুলো পড়তে পারবে বিনা মূল্যে।
স্পর্শ ফাইন্ডেশনের যাত্রা শুরু ২০০৮ সালে। ২০০৯ সালে দেশে প্রথম ব্রেইলে ছড়ার বই প্রকাশ করে স্পর্শ ফাইন্ডশেন। ২০১১ সালে বাংলা একাডেমির একুশের বই মেলায় হাজির হয় স্পর্শের ব্রেইল বই। ২০১৬ সালে স্পর্শ ব্রেইল  প্রকাশনার সহযোগিতায় বাংলা একাডেমির প্রথম ব্রেইল বই প্রকাশিত হয় এবং প্রধাানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন। ২০১৭ সাল থেকে ব্রেইল বইগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে যাচ্ছে। দেশের বাইরেও বাংলাভাষী এবং ইংরেজী ভাষা জানা শিশুদের কাছে পাঠানো হচ্ছে বই। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, ব্যাপ্টিস্ট মিশন, ইন্টিগ্রেটেড স্কুলে ব্রেইল বইয়ের আলাদা কর্নার করা হয়েছে।
শিশু সাহিত্যিক নাজিয়া জাবিন। স্পর্শ ফাইন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনার প্রধান উদ্যোক্তা। 
নাজিয়া জানান, প্রথমে শিশুদের জন্য একটি ছড়ার বই বের করেছিলেন। সে সময় বইটির প্রকাশনা উৎসবে যোগ দেয়া কয়েকজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এসেছিলেন। তারা বইয়ের মলাট ছুঁয়ে পৃষ্ঠা গুণে নেড়েচেড়ে দেখে এর ব্যাপারে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করে।  
এ ঘটনার পাশাপাশি, নাজিয়া জাবিনের ব্যক্তিগত জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাও দৃষ্টিজয়ীদের জন্য কিছু করতে উৎসাহী করে তোলে। ১৯৯০ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় জাবিনের স্বামী সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার গুরুতর আঘাত পান। প্রায় ১৫ বছর তিনি চোখে তেমন কিছু দেখতে পেতেন না। দেশের বাইরে অস্ত্রোপচারের পর এখন তিনি পুরো দেখতে পাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 
এই দম্পতির একমাত্র মেয়ে ব্যারিষ্টার সিলমা তামানীনা ও তার স্বামীর সার্বিক সহায়তা এবং পরিবার ও বন্ধুদের সহায়তায় ব্রেইল প্রকাশনা গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলছে বলে জানালেন নাজিয়া জাবিন। গত বছর এই প্রকাশনার সঙ্গে যোগ দিয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। নাজিয়া অনন্যা শীর্ষ ১০ সম্মাননাসহ পেয়েছেন নানা সম্মাননা।
নাজিয়া জাবিন বলেন, কেবলমাত্র সরকারের একার পক্ষে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। প্রথমত মানুষের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে এবং আর্থিকভাবে স্বচ্ছল  ব্যক্তিদের  এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে। 
তিনি বলেন, সবাই এগিয়ে এলে এ সব দৃষ্টিহীন শিশু তথা ব্যক্তিরাই বদলে দিতে পারবে সমাজকে।
দৃষ্টিজয়ী নবম শ্রেনীতে পড়ুয়া নাহিদ আহমেদ ও তৃতীয় শ্রেনীতে সুমাইয়া বিনতে রাশেদ জানালো, স্পর্শের সহায়তার কারণেই তারা এখন ব্রেইল পদ্ধতিতে তৈরি অনেক বই পড়তে পারছে। স্পর্শ ছাড়া আর কেউ হয়তো তাদের কথা এমন করে ভাবেনি। এই অফিসে বসেই দৃষ্টিজয়ীরা প্রকাশের আগে বইয়ের প্রুফ দেখে দেয়।