ঢাকা, সোমবার ২৯, এপ্রিল ২০২৪ ৩:৩১:৫৯ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
ফিলিপিন্সে সরকারি স্কুলে সশরীরে পাঠদান স্থগিত অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা, অনলাইনে ক্লাস দাবি হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে আজ, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা খিলগাঁওয়ে একইদিনে তিন শিশুর মৃত্যু শেরে বাংলার কর্মপ্রচেষ্টা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে বৃষ্টি কবে হবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

দেশে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন: ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষক

তানভীর আলাদিন, বাসস | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:২৭ এএম, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ রবিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশে পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের সঙ্গে বাজারে বিক্রি মূল্য ভালো পাওয়ার কারণে এ বছর বেশ খুশি দেশের কৃষকরা। মৌসুমের প্রথম দিকে কেজি প্রতি ১২০ টাকা পেলেও এখন গুণগত মান ভেদে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন তারা।

বেশি দামের আশায় ইতোমধ্যে অপরিপক্ক পেঁয়াজ উঠিয়ে কেউ-কেউ বাজারে তুলছেন। আবার অনেকে আগাম জাতের পেঁয়াজ উঠানো এবং হালি পেঁয়াজ রোপণেরও ব্যস্ত সময় পার করছেন। পেঁয়াজ আবাদের অন্যতম জেলাগুলোর মাঠ ও বাজারে সরেজমিন ঘুরে এসে এমন চিত্র তুলে ধরেছেন বাসসের সংবাদদাতাগণ।

বৃহত্তর যশোর সংবাদদাতা সুলতান মাহমুদ জানান- চলতি রবি মওসুমে যশোর কৃষি জোনের আওতায় ৬ জেলায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। বাড়তি চাহিদার জোগান দিতে এ কৃষি জোনে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯০২ হেক্টর বেশি জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।বাজারে আসা নতুন পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত ৬ জেলায় ৫হাজার ৮৬৩ হেক্টর জমির পেঁয়াজ কাটা সম্পন্ন হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

যশোর কৃষি জোনের আওতায় ৬ জেলা হচ্ছে- যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর। আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি (২০২৩-২০২৪) মওসুমে ৬ জেলায় মোট ৩৮হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩৯ হাজার ৭৫২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।এর মধ্যে যশোর জেলায় পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৭০৭ হেক্টর জমিতে। আবাদ হওয়া জমি থেকে ৪০৩ হেক্টর জমির পেঁয়াজ কর্তন করা হয়েছে। এ জেলায় পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে।

ঝিনাইদহ জেলায় পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৮৪ হেক্টর জমিতে।আবাদ হওয়া জমি থেকে ২৮৫ হেক্টর জমির পেঁয়াজ কর্তন করা হয়েছে।এ জেলায় পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। মাগুরা জেলায় পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৩৯ হেক্টর জমিতে।আবাদ হওয়া জমি থেকে ৬৪০ হেক্টর জমির পেঁয়াজ কর্তন করা হয়েছে। এ জেলায় পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে।

কুষ্টিয়া জেলায় পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমিতে।আবাদ হওয়া জমি থেকে ৩হাজার ৪৮ হেক্টর জমির পেঁয়াজ কর্তন করা হয়েছে।এ জেলায় পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।

চুয়াডাঙ্গা জেলায় পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ১ হাজার ১৩১ হেক্টর জমিতে। আবাদ হওয়া জমি থেকে ৫৫০ হেক্টর জমির পেঁয়াজ কর্তন করা হয়েছে।এ জেলায় পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে। মেহেরপুর জেলায় পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৫৩৬ হেক্টর জমিতে।আবাদ হওয়া জমি থেকে ৯১০ হেক্টর জমির পেঁয়াজ কর্তন করা হয়েছে।এ জেলায় পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে।

গত বছর থেকে পেঁয়াজের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছেন বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। যশোর বড় বাজারের পেঁয়াজের পাইকারী আড়তদার মোহাম্মদ কামাল হোসেন বাসসকে জানান, শুক্রবার প্রতিমণ পেঁয়াজ মান ভেদে ২হাজার ৪০০ টাকা থেকে ২হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।যা গত সপ্তাহ থেকে মন প্রতি কমেছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। আগামি দু থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের দাম আরও কমে যাবে বলে তিনি জানান।

যশোরের চৌগাছা উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের পেঁয়াজ কৃষক ওসমান আলী জানান, তিনি ১০ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। জমি থেকে পেঁয়াজ কাটা শেষ পর্যায়ে।ফলনও ভালো হয়েছে।তিনি প্রায় ৫০ মণ পেঁয়াজ পাবেন বলে আশাবাদী।দাম ভালো পাওয়ায় আগামিতে আরো বেশি জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করবেন বলে জানান।

এ ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন পেঁয়াজ কৃষক জানান, তারা গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন এ দু’মওসুমেই পেঁয়াজের চাষ করে থাকেন। পাতিবিলা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাকিল আহমেদ বলেন, এ ইউনিয়নসহ আশপাশের বিভিন্ন ইউনিয়নে চাষিরা পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকছেন।পেঁয়াজ চাষ বাড়াতে চাষিদের নিয়ে উঠান বৈঠকসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

যশোর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, পেঁয়াজ চাষ বাড়াতে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিদের দেয়া হয়েছে কৃষি প্রণোদনা।এ অঞ্চলের কৃষকরা বাজারে পেঁয়াজের অধিক যোগান দিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছেন।নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু করায় দামও কমতে শুরু করেছে। পেঁয়াজের উৎপাদন সারা বছর অব্যাহত রাখতে অধিক ফলনশীল নতুন-নতুন জাতের পেঁয়াজ চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

রাজবাড়ী সংবাদদাতা নুরে আলম সিদ্দিকী হক জানান- জেলায় বরাবরই পেঁয়াজ উৎপাদন ভালো হয়। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয় হয়নি। পেঁয়াজ উৎপাদনে সারাদেশের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রাজবাড়ী জেলা। দেশের মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের ১৬ ভাগ যোগান দেয় রাজবাড়ী জেলা।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, এ বছর ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে রয়েছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ। জেলার শুধু মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হবে অন্তত ৯৫ কোটি টাকার।

বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ উঠানো ধুম পড়েছে রাজবাড়ীর জেলার পাঁচটি উপজেলার চরাঞ্চলে। অনেকে বেশি দামের আশায় অপরিপক্ক পেঁয়াজ উঠিয়ে বাজারে তুলছেন। হঠাৎ করে পেঁয়াজ উঠানো ও হালি পেঁয়াজ রোপণের ধুম পড়েছে। ক্ষেতে মাঠে কৃষি শ্রমিকরা পাল্লা দিয়ে কাজ করছেন। তাদের সহযোগিতা করছেন নারীরা।

কালুখালী উপজেলার হরিণবাড়ীর চর মধু মিয়ার চরে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষ শ্রমিকরা পেঁয়াজ উঠিয়ে জায়গায় জায়গায় স্তুপ করে রাখছেন। আর নারী শ্রমিকরা লম্বা লাইন বসিয়ে পেঁয়াজ কাটছেন।

নারী শ্রমিক আলেয়া বেগম জানান, সংসারের অন্যান্য কাজ শেষে পেঁয়াজ কাটার কাজ করেন তিনি। এতে এক মণ পেঁয়াজ কাটার জন্য তিনি পারিশ্রমিক পান ৫০ টাকা। প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ মণ পেঁয়াজ তুলতে পারেন।

মঞ্জু আরা খাতুন জানান, তার স্বামী কৃষি কাজ করেন। তিনিও তাকে সহযোগিতা করেন। পেঁয়াজ মৌসুমে মাসে তিনি ৯ হাজার টাকা আয় করবেন।  

গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের চর কর্ণেশন গ্রামের কৃষক মিনহাজ উদ্দিন জানান, পেঁয়াজের দাম বাড়াতে বিক্রির জন্য তুলে ফেলছেন। কৃষক মানিক মিয়া জানান, গত বছর তাদের পেঁয়াজ বিক্রি শেষ হয়ে যাওয়ার পর দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাই এবার দাম বেশির আশায়  পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। দাম বাড়াতে খুশি তিনি।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।  পেঁয়াজ ক্রেতারা বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ শেষের দিকে মাত্র দুই সপ্তাহ পরেই বাজারে আসবে হালি পেঁয়াজ। হালি পেঁয়াজ বাজারে আসলে দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাজবাড়ীর মাটি পেঁয়াজ চাষের উপযোগি। এ জেলার পেঁয়াজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলায় পাঠানো হয়। এ বছর রাজবাড়ীতে সাড়ে ৬ হাজার কৃষককে পেঁয়াজ চাষে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া পেঁয়াজের রোগ জীবাণু বিষয়ে পরামর্শও প্রদান করা হচ্ছে। চাষীরা আগাম পেঁয়াজ তোলায় উৎপাদন প্রতি শতাংশে বড় জোর ২০ থেকে ২৫ কেজি পেঁয়াজ কম উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমানে ১ মণ পেঁয়াজ যে দামে বিক্রি হচ্ছে, পরবর্তীতে হয়ত দেড় মণ পেঁয়াজেও সেই দাম পাবেন না। তাই কৃষক আগাম পেঁয়াজ তুলে ফেলছেন। এছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা ও কৃষকরা লাভবান হওয়ায় কৃষি বিভাগও কৃষকদের নিরুৎসাহিত করছে না।

মাগুরা সংবাদদাতা দেলোয়ার হোসেন জানান, জেলার কৃষকরা এ বছর ১১ হাজার ৩৯ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। পেঁয়াজের ভালো দাম পেয়ে কৃষকরা খুশি। মুড়িকাটা (কন্দাল) পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। বর্তমানে এ পেঁয়াজ জেলার পাইকারি বাজারে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার চার উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ চাষ হয়েছে শ্রীপুর উপজেলায়। এ উপজেলায় ৬ হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলায় ৯৩৫ হেক্টর, শালিখায় ৭৩০ হেক্টর ও মহম্মদপুর উপজেলায় ৩ হাজার ১৯৯ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে।

চাষকৃত জমি থেকে ১ লাখ ৫৪ হাজার ১২৫ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। চলতি মৌসুমে কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল, লাল তীর কিং, তাহেরপুরী(বারি-১), মেটাল কিং ও লাল তীর কিং হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজ চাষ করছেন। পেঁয়াজ চাষ সফল করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সুষম সার ব্যবহার, জমিতে সেচ দেয়ার পর সেচের পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা ছাড়াও রোগ ও পোঁকামাকড় দমনে বালাই নাশক ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া সময়মত কৃষকরা পেঁয়াজ শেষ করতে পারায় ফলন বেশ ভালো হয়েছে। বিশেষত লাল তীর কিং ও তাহেরপুরী পেঁয়াজ বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায়। এতে কৃষকরা পরবর্তি সময়ে ভালো দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন।

শ্রীপুর উপজেলার নবগ্রাম গ্রামের কৃষক মোকাদ্দেস হোসেন জানান, এ বছর তিনি আড়াই  একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল লাল তীর কিং জাতের পেঁয়াজের চাষ করছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগ পেঁয়াজ চাষে তাকে নানা পরমর্শ দিয়ে সহযোগিতা করায় ভালো ফলন পাবেন বলে আশা করছেন । চাষকৃত জমি থেকে প্রায় ৩০০ মনের অধিক পেঁয়াজ পাবেন বলে আশা করছেন তিনি।  

একই উপজেলার তারাউজিয়াল গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম জানান, ৬৯ শতক জমিতে বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তিনি প্রায় ১০০ মন পেঁয়াজ পাওয়ার পাশাপাশি ভালো দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফি রফিকুজ্জামান জানান, চলতি মৌসুমে ১১ হাজার ৩৯ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগের পরামর্শকে কাজে লাগিয়ে কৃষকরা ভালোভাবে পেঁয়াজ চাষ করতে পেরেছেন।  আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। ভালো দামে কৃষকরা পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।    

শরীয়তপুর সংবাদদাতা এসএম মজিবুর রহমান জানান, এ বছর পেঁয়াজের বাজারমূল্য ভালো পেয়ে বেশ খুশি শরীয়তপুরের চাষিরা। মৌসুমের প্রথম দিকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে কিছু কিছু উচু অঞ্চলের আগাম পেঁয়াজের দাম পেয়েছেন কৃষক কেজি প্রতি ১২০ টাকা।

তবে এখন ভরা মৌসুমে জেলার সবচাইতে বড় মিরাশার কৃষি বাজারে কৃষক প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পাচ্ছেন গুণগত মাণ ভেদে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। তবে আবাদ মৌসুমে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের ৮ থেকে ১০ তারিখ ভারি বৃষ্টিপাতের কারনে পেঁয়াজ আবাদ ১০ থেকে ১৫ দিন বিলম্বিত হওয়ায় ফলনও বিঘাপ্রতি ১০ থেকে ১৫ মণ কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষক।

ইতিমধ্যে জেলার ৮৫ শতাংশ পেয়াজ গোলায় তুলেছেন কৃষক। জেলার বার্ষিক পেঁয়াজের চাহিদা ২৮ হাজার ৭৬০ টন হলেও এবছর ৪৭ হাজার ৫৭৯ টন উৎপাদন হবে বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুসারে জেলার জাজিরা উপজেলার বিকেনগর, পশ্চিম নাও ডোবা, পূর্ব নাওডোবা, সেনেরেচর, বড়কান্দি, বড় গোপালপুর, মূলনা, জাজিরা, জয়নগর ও পালের চর ইউনিয়নেই সব চেয়ে বেশী পেঁয়াজ আবাদ ও উৎপাদন হয়।

এছাড়াও বিলাসপুর, কুন্ডেরচর ইউনিয়নে তুলনামূলক কম আবাদ হয়। নড়িয়া উপজেলার রাজনগর, মোক্তারের চর, নশাসন, জপসা, ভোজেশ্বর ও ফতেহ জঙ্গপুর ইউনিয়নে বেশী আবাদ হয়। সদর উপজেলার চন্দ্রপুর, চিকন্দী, শৌলপাড়া, ডোমসার ও বিনোদপুর ইউনিয়নে, ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর, ইসলামপুর, ধানকাঠি, সিধলকুড়া ও পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়নে, গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া, সামন্তসার, ইদিলপুর, নলমুরি, কুচাইপট্টি,ও গোসাইরহাট ইউনিয়নে এবং ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও, রামভদ্রপুর, ডিএম খালি’ চরভাগা, তারাবুনিয়া ও সখিপুর ইউনিয়নে বেশি পেঁয়াজের আবাদ ও উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে জাজিরা উপজেলার প্রধান অর্থকরি ফসল হচ্ছে পেঁয়াজ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) রফিকুল ইসলাম বাসস’কে বলেন,চলতি মৌসুমে জেলার ৬টি উপজেলায় ৪ হাজার ৭৮ হেক্টর জমিতে পেয়াজ আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু জাজিরা উপজেলাতেই হয়েছে ২ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও নড়িয়া উপজেলায় ৫৮৬, ভেদরগঞ্জে ২২৮, সদরে ১৭৬, গোসাইরহাটে ১২৮ ও ডামুড্যা উপজেলায় ৯০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। জেলার বর্ষিক পেয়াজের চাহিদা ২৮ হাজার ৭৬০ টন হলেও এবছর ৪৭ হাজার ৫৭৯ টন উৎপাদন হবে বলে আমরা আশা করছি।

তিনি জানান, ইতিমধ্যে ৮৫ শতাংশ পেঁয়াজের ফলন কৃষক ঘরে তুলেছেন। ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই শতভাগ উত্তোলন শেষ হবে। শরীয়তপুরে মুড়িকাটা পেয়াজ আবাদ বেশি হলেও আমরা সংরক্ষণযোগ্য হালি পেঁয়াজ আবাদ বৃদ্ধির লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি।

জেলার সবচেয়ে বড় কৃষিবান্ধব মিরাশার চাষি বাজারের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও পাইকার আব্দুল জলিল মাদবর বলেন, এবার কৃষকরা পেঁয়াজের যে ভালো দাম পেলো।গত বছরের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই আমাদের এই বাজারে কিছু কিছু আগাম পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। তখন আমরা কৃষকদের মান ভেদে কেজি প্রতি ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত দিয়েছি। এখনো ভালো মানের পেঁয়াজ ৬৫-৭০টাকা কেজি প্রতি দিতে পারছি।

এ বাজারটি কৃষকবান্ধব হওয়ায় এই অঞ্চলের সব কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য এখানে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।

জেলার সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জাজিরা উপজেলার বিকেনগর ইউনিয়নের হাওলাদারকান্দি গ্রামের কৃষক আবুল কালাম সিকদার বলেন,  এবার বেশি পাওয়াতে আমাদের যে কোন বছরের চেয়ে বেশি লাভ হচ্ছে। একই ইউনিয়নের পূর্বকাজিকান্দি গ্রামের পেঁয়াজ চাষি আলমগীর কাজী বলেন, পেঁয়াজ আমাদের অন্যতম অর্থকরি ফসল। পেঁয়াজের ফলন তুলে আমরা পরিবারের বড়-বড় খরচের কাজগুলো সমাধান করি। এবার আমি তিন বিঘা জমিতে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা খরচ করে পেঁয়াজ আবাদ করেছি। তিন শতক জমির আগাম পেঁয়াজ ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখে তুলে মিরাশার চাষি বাজারে নিয়ে ৪ হাজার ৮০০টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি করেছি। এখনো ২ হাজার ৬০০টাকা মণ দরে পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে পারছি।

কুষ্টিয়া সংবাদদাতা নুর আলম দুলাল জানান- জেলা এখন শীতকালীন পেঁয়াজে পরিপুর্ণ। বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজিতে।কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সুত্রে জানা যায়, চলতি বছর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে  জেলায় ১২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ করা হয়েছিল। এতে উপৎপাদন হয়েছে ৮৯ হাজার টন।

সদর উপজেলার বরিয়া টাকামারা গ্রামের পেঁয়াজ চাষি সাইদুল ইসলাম জানালেন, মাঠ থেকে পেঁয়াজ হরিণানায়নপুর, বৃত্তিপাড়া, উজানগ্রাম হাটে বিক্রি করেছেন এখন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে খুচরা ৯০টাকা আর পাইকারী ৭৫ থেকে ৮০ টাকা।

পৌর বাজারে পেঁয়াজ আড়তদারী ব্যবসায়ী দিপু মোল্লা জানালেন, সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করা অনেক ঝামেলা। তাই তাদের নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসায়ী আছেন যাদের কাছ থেকে তারা মাল ক্রয় করেন। এ বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজ খরচসহ ৩ হাজার ১০০ টাকা মণ, ৭৭ টাকা কেজি প্রতি ক্রয় করেছেন। আর বিক্রি করেছেন ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে।

কুষ্টিয়া সাদ্দাম বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা করিম ও সিদ্দিক হোসেন জানালেন, বাছাইকরা মুড়িকাটা পেঁয়াজ খুচরা বিক্রি করছেন ৯০ টাকা দরে। গত কয়েকদিন আগেও পেঁয়াজের দাম কম ছিল। তখন ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। সেই পেঁয়াজ এখন তাদের পাইকারি কিনতে হচ্ছে (বাছাই করা) ৮৫ টাকা দরে। আরে গড়ে নিলে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে।  

সদর উপজেলার কৃষি অফিসার সৌতম কুমার শীল জানান, জেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শীতকালীন পেঁয়াজ ইতিমধ্যে চাষ হয়েছে ১১হাজার ৯৪৯ হেক্টরে জমিতে। এর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৩০০  টন। তাতে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলেও তিনি জানান।  

সদর উপজেলার বৃত্তিপাড়া, উজানগ্রামের কৃষকরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে চারা পেঁয়াজ চাষে চাষিদের খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা থেকে ৩৫ হাজার টাকা। পাশাপাশি সার, কীটনাশক, তেল ও শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধি পাওয়ায় এবছর উৎপাদন খরচও বেশী হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের ফলন ৬০ মণ থেকে ৭০ মণ পর্যন্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। মাঠের ফলন ভালো হলে পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন খুচরা,পাইকারী বিক্রেতারা।

পাবনা সংবাদদাতা রফিকুল ইসলাম সুইট জানান- দেশের পেঁয়াজের অন্যতম উৎপাদনস্থল হিসেবে পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলা সুপরিচিত। সাঁথিয়া উপজেলায় এবার ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আগাম বা মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। আর হালি পেঁয়াজের হবে সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে।

অন্যদিকে সুজানগর উপজেলায় ১ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা ও ১৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে হালি জাতের পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। সুজানগর, বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় গত সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়ছে। মুড়িকাটা পেয়াঁজ তোলা শেষ পর্যায়ে হওয়ায় দাম বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে। আগামী ১৫-২০ দিন পর চারার পেঁয়াজ উঠানো শুরু হলে পেঁয়াজের দাম অনেক কমে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সুজানগর হাট, বেড়ার চতুর হাটসহ তিন উপজেলার বিভিন্ন হাটে পাইকারিতে প্রতি মণ ২হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা (কেজি ৬০-৭০) টাকায় বিক্রি হয়েছে।  জেলা শহরের বড় বাজারে খুচরা পেঁয়াজের দাম ৮০-৮৫ টাকা, লাইব্রেরি বাজার ও মাসুম বাজারে ৮৫-৯০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে।  

কৃষক ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে এখন আগাম বা মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। মাসদেড়েক আগে এই পেঁয়াজ হাটে উঠেছে। সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায় কৃষকেরা যে মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের আবাদ করেছিলেন, তার বেশির ভাগই ইতিমধ্যে তোলা হয়েছে। বাজারে এই জাতের পেঁয়াজের সরবরাহ কমতে শুরু করেছে। তাই বাড়ছে মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম। ১৫-২০ দিনের মধ্যেই প্রধান জাত হালি জাতের পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করবে। তখন পেঁয়াজের দাম আবার কমে আসবে।  

সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক রেজাউল করিম মন্ডল বলেন, আমি ৬ বিঘা মুড়িকাটা পেয়াজ আবাদ করেছিলাম গত সপ্তাহে উঠায়ে বিক্রি করে দিয়েছি। দাম ভালো পেয়েছি। সুজানগরের মুড়িকাটা পেয়াজ প্রায় সবাই তুলে ফেলেছে যার ফলে বর্তমানে পেয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। ২০-২৫ দিন পরেই হালি জাতের পেয়াজ উঠবে তখন দাম কমে যাবে।  

করমজা চতুর হাটের পেঁয়াজের আড়তদার হারুন আর রশিদ বলেন, ‘গত হাটের চাইতে আজকের হাটে কেজিতে ১০ টাকার মতো বেশি। মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠানোর একেবারে শেষ পর্যায়ে। হালি পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত দাম এই রকমই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। পাবনা ভোক্তা অধিকারের এডি মামুদুল হাসান বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছি কেউ যাতে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াতে না পারে।  পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জামাল উদ্দিন বলেন, পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। ১৫-২০ দিনের মধ্যেই চারার পেঁয়াজ উঠবে তখন দাম কমে যাবে।

কুমিল্লা (দক্ষিণ) সংবাদদাতা কামাল আতাতুর্ক মিসেল জানান- জেলায় বারী-৫ জাতের পেঁয়াজের বেশ ভালো ফলন হয়েছে। এগুলো আগাম জাতের পেঁয়াজ। পেঁয়াজের বীজের দাম একটু বেশি হলেও ভালো ফলন ও বাজার দর বেশি থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। ক্ষেত থেকে আগাম জাতের এই পেঁয়াজ ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা।

কুমিল্লা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এ বছর জেলায় ৪০০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লার  তিতাস, হোমনা, মেঘনা, মুরাদনগর উপজেলার মাঠে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজের চাষ করা হয়েছে। এরই মধ্যে বারী-৫ জাতের পেঁয়াজ তোলা শুরু হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে এন-৫৩ জাতের পেঁয়াজও তোলা শুরু হবে।

তিতাস উপজেলার মাছিমপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি সোহেল মিয়া বাসসকে জানান, তিনি বারী-৫ জাতের বীজ কিনে চারা তৈরি করে মাঠে এক বিঘা জমিতে চাষ করেছিলেন। ৮৫ দিনে তাঁর মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে তাঁর পেঁয়াজ তোলা ও বিক্রি হয়ে গেছে। এক বিঘা জমিতে তার ৮৫ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তিনি কুমিল্লার নিমসার বাজারে আড়তে ৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। এতে তার সব খরচ বাদ দিয়ে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।  

মুরাদনগর উপজেলার বয়রা মোবারক হোসেন জানান, তিনি গ্রামের মাঠে দুই বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন এন-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষ করেছেন। পেঁয়াজের আকার খুব ভালো হয়েছে। দুই বিঘা জমিতে তার সেচ, সার, পরিচর্যা মিলে খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা। কয়েক দিনের মধ্যে পেঁয়াজ তোলা হবে। দুই বিঘা জমিতে তার প্রায় ১৮০ থেকে ১৯০ মণ পেঁয়াজ হবে বলে আশা করছেন।

স্থানীয় হাট বাজারে প্রতি কেজি খুচরা মূল্য ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এমন বাজার দর পেলে তার সব খরচ বাদ দিয়ে ৬ লাখ টাকা লাভ হবে বলে তিনি আশাবাদী। কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, এ সময়ে আমাদের দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। এবার ফলন খুবই ভালো হচ্ছে, দরও ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা।

দিনাজপুর সংবাদদাতা রোস্তম আলী মন্ডল জানান- জেলায় কৃষি অধিদপ্তর  চলতি বছর ২ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পেয়াজের চারা রোপণ অব্যাহত থাকবে।

জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক  মো. নুরুজ্জামান মিয়া  জানান, আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পেঁয়াজের চারা রোপণ কার্যক্রম চলমান থাকবে। তিনি আশা করেন পেঁয়াজ আবাদ নির্ধারিত  সময়ের মধ্যেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

দিনাজপুরে পেঁয়াজ চাষিদের  সাথে কথা বলা হলে তারা জানান, এবারে তারা ৬০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করছেন। দিনাজপুর শহরের বাহাদুর বাজার আড়ৎদারদের সাথে কথা বলে জানা যায, তারা ৬৫ টাকা কেজি দরে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে পেঁয়াজ  বিক্রি করছেন। বাজারে  গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করা হচ্ছে।