ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ১০:৪৯:০৩ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউ পুড়ে ছাই, রক্ষা পেল ৭ শিশু সবজির বাজার চড়া, কমেনি মুরগির দাম সারা দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি কৃষক লীগ নেতাদের গণভবনের শাক-সবজি উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি শিশু হাসপাতালের আগুন সম্পূর্ণ নিভেছে

নাটোরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সবুজাভ সজনে গাছ

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:০৯ পিএম, ৯ এপ্রিল ২০২২ শনিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

পুষ্টি ও ওষুধী গুণাগুণের কারণে অত্যাশ্চার্য বৃক্ষ হিসেবে পরিচিত সজনে। এই সজনের আবাদ বেড়েছে নাটোরে। অনাবাদি ও পতিত জায়গাতে বেড়েছে সজিনা গাছের সংখ্যা। সাম্প্রতিক সময়ে ঝড়-বৃষ্টি না থাকার কারণে এখন গাছে গাছে সজনের প্রাচুর্য। তাই এবার সজনের ফলন বাড়বে। বাজারে এখন সহজলভ্য হয়ে উঠেছে সজনে। হাট-বাজারে গড় মূল্য ৫০ টাকা প্রতি কেজি।

চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, সজনের পুষ্টিগুন ব্যতিক্রমধর্মী। সজনে পাতায় ৩৮ রকম অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিডসহ ৩৮ শতাংশ আমিষ রয়েছে। সজনের পাতা পুষ্টিগুনের আঁধার। পরিমাণের ভিত্তিতে তুলনা করলে একই ওজনের সজনে পাতায় কমলা লেবুর সাতগুণ ভিটামিন সি, দুধের চারগুণ ক্যালসিয়াম এবং দুইগুণ আমিষ, গাজরের চারগুণ ভিটামিন ‘এ’, কলার তিনগুণ পটাসিয়াম, পালং শাকের তিনগুণ লৌহ বিদ্যমান। পুষ্টি ও ওষুধী গুন বিবেচনায় এ গাছকে অত্যাশ্চার্য বৃক্ষ বলা হয়। বাড়ির আঙ্গিনায় এটি একটি মাল্টিভিটামিন বৃক্ষ।

ডাঃ সাইফুল ইসলাম আরো জানান, ভারতীয় আয়ুর্বেদীয় শাস্ত্র মতে সজনে গাছ ৩০০ রকমের রোগ প্রতিরোধ করে এবং আধুনিক বিজ্ঞানও এ ধারণাকে সমর্থন করে। সজনের কচি ডগা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সজনের বাকল, শিকড়, ফুল, ফল, পাতা, বীজ এমনকি এর আঠাতেও ওষুধী গুন আছে। সজনে বাতজ্বর চিকিৎসায় কার্যকর ভূমিকা রাখে। পোকার কামড়ে এন্টিসেপটিক হিসেবে সজনে পাতার রস ব্যবহার হয়। মাথা ব্যথায় সজনের কচিপাতা কপালের দুই পাশে ঘষলে ব্যথা উপশম হয়। সজনে গ্যাস্টিক রোগের বায়ুনাশক হিসেবে কাজ করে। পাতার রস হৃদরোগ চিকিৎসায় এবং রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধিতে ব্যবহার হয়। শ্বেতীরোগ, টাইফয়েড জ্বর, প্যারালাইসিস এবং লিভারের রোগে সজনের রস উপকার। ক্ষতস্থান নিরাময়ের জন্য সজনে পাতার পেস্ট কার্যকরি। খাদ্যাভাসে সজনে গাছের পাতা বা সজনে থাকলে চোখের ছানি পড়া রোগ কম হয়। সজনে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। শ্বাসকষ্ট, মাথাধরা এবং মাইগ্রেন চিকিৎসায় সজনে ভালো কাজ করে। ভারত, চীনসহ পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে সজনে পাতার পাউডার দিয়ে তৈরি ক্যাপসুল বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করা হচ্ছে। আফ্রিকার দুর্ভিক্ষ পীড়িত অনাহার ও অপুষ্টি শিকার মৃতপ্রায় রোগাক্রান্ত শিশুদের দ্রুত আরোগ্যের জন্য সজনের পাতা ও পাতার গোড়া খাওয়ানোর কর্মসূচি চলমান রয়েছে।

সজনের ফলন শেষ হলে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে গাছ থেকে ডাল সংগ্রহ করে কার্টিং রোপণ করা হয়। বসতবাড়ি, রাস্তার ধারসহ যে কোন স্থানের মাটিতে তিন মিটার দূরত্বে কার্টিং রোপণ করা যায়। ৪০ ডিগ্রি এঙ্গেলে ডাল কাটলে ও একইভাবে রোপণ করলে শেঁকড় গজানো ও ঝড়ের প্রভাবমুক্ত থাকা সম্ভব বলে কৃষিবিদদের ধারণা। রোপণকালে গোবর সার এবং দ্রুত শিকড় গজানোর জন্য সামান্য ফরফরাস সার ও ছাই ব্যবহার করা উত্তম। আর গাছের উচ্চতা এক মিটার হলে ডগা কেটে এর আকৃতি ঝোপালো করা হলে ফলন বৃদ্ধি পায় এবং সজনে সংগ্রহে সুবিধা হয় বলে জানান নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মেহেদুল ইসলাম।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ২২০ হেক্টর আবাদি এলাকা থেকে প্রায়  চার হাজার টন সজনে উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির ফলে সজনের আবাদ বাড়ছে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে বিগত বছরের চেয়ে ফলন  অনেকটা বাড়বে।

বসতবাড়ি ছাড়াও রাস্তার দু’ধারে সজনের গাছ চোখে পড়ে। নাটোর সদর উপজেলার বড়হরিশপুর ইউনিয়নের দত্তপাড়া, ফতেঙ্গাপাড়া এলাকায় সজনে গাছের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। শহরতলীর বলারিপাড়া, হাজরা নাটোর এলাকার রাস্তার দু’ধারে শোভিত অর্ধ শত গাছ নজর কাড়ে। শহরের ঝাউতলা সড়কেও এখন গাছে গাছে সজনে।   

সাম্প্রতিক সময়ে ঝড় ও বৃষ্টি না থাকায় সজনে ফুলের কোন ক্ষতি হয়নি বলে এবার ফলন ভালো হবে বলে জানালেন সিংড়া উপজেলার বড়সাঁঐল গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম। এ কৃষকের বাড়ির আঙিনায় শোভা বর্ধন করছে চারটি সজনে গাছ। তিনি এবার বাড়িতে খেয়ে ও আত্মীয়-স্বজনদের বিতরণ করার পরও কিছু সজনে বিক্রি করছেন।  

নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদুল ইসলাম জানান, গাছে গাছে এখন সজনের প্রাচুর্য। ঝড়-বৃষ্টিমুক্ত আবহাওয়া থাকায় এবার ফলন হবে আশাতীত। একটি গাছ থেকে দুই মণ সজনে সংগ্রহ করা সম্ভব। সজনের আবাদ বাড়াতে নতুন কার্টিং রোপণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে ব্লক কর্মকর্তাবৃন্দ প্রতি বছরের মত এবারও ভূমিকা রাখবেন বলে জানান এ কর্মকর্তা। 

বাণিজ্যিকভাবে বারোমাসী সজিনা চাষে আগ্রহের কথা জানান নাটোর সদর উপজেলার তেবাড়িয়া এলাকার কৃষক মোঃ খোকন এবং নলডাঙ্গা উপজেলার রামশার কাজীপুর এলাকার কৃষক জহুরুল ইসলাম।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক মাহমুদুল ফারুক  বলেন, নাটোরে অত্যাশ্চার্য বৃক্ষ সজনের আবাদ ও উৎপাদন ক্রমশঃ বাড়ছে। সজনে চাষ বৃদ্ধি পাওয়াতে বাজারে বিক্রির মাধ্যমে কৃষকদের আর্থিক সংগতিও বেড়েছে। সজনের সকল উপাদান অর্থাৎ সজনেসহ এর ফুল ও পাতার  যথাযথ এবং বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে সুফল প্রাপ্তির পরিধি আরো বাড়বে।