ঢাকা, শুক্রবার ১৯, এপ্রিল ২০২৪ ২:৪১:৩০ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই দেশ আরও উন্নত হতো টাইমের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা নান্দাইলে নারী শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা তীব্র গরমে জনজীবনে দুর্ভোগ, বাড়ছে জ্বর-ডায়রিয়া কারাগার থেকে সরিয়ে গৃহবন্দী অবস্থায় সুচি কৃষকরাই অর্থনীতির মূল শক্তি: স্পিকার মধ্যপ্রাচ্যের দিকে নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নাটোরের চায়না খাতুনরা যাচ্ছেন পাকা বাড়িতে

বাসস | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:১৪ পিএম, ৯ জানুয়ারি ২০২১ শনিবার

নাটোরের চায়না খাতুনরা যাচ্ছেন পাকা বাড়িতে

নাটোরের চায়না খাতুনরা যাচ্ছেন পাকা বাড়িতে

একখন্ড জমির উপরে নিজস্ব বাড়ি হওয়ার বাস্তবতা তো দূরের কথা, ভূল করেও ভাবনাতে আসেনি চায়না খাতুনের। সরকারী অর্থায়নে জমিসহ নির্মাণাধীন বাড়িতে ওঠার প্রতীক্ষায় এখন দিন কাটছে তাঁর। অস্থায়ী কুটির থেকে চায়না যাবেন পাকা বাড়িতে। আনন্দে আত্মহারা চায়নার মতো প্রতিক্ষার প্রহর গুণছেন রওশন আরা, দেলজানসহ জেলার আরো ৫৫৮ উপকারভোগী গৃহহীন পরিবার।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষকে স্মরনীয় করে রাখতে বর্তমান সরকার দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এ পরিকল্পনার বাস্তবায়নে পর্যায়ক্রমে তাঁরা ভূমিসহ গৃহ পাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে গৃহহীনদের সারথি হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’-এমন দৃপ্ত শপথে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। সারাদেশে এক হাজার ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহহীনে ৬৫ হাজার ৭২৬টি বাড়ি নির্মাণ কাজ এখন শেষের পথে। এরমধ্যে প্রায় দশ কোটি টাকা ব্যয়ে নাটোর জেলায় ৫৫৮টি। আর মুজিববর্ষে সারাদেশে মোট এক লাখ বাড়ি নির্মাণসহ পর্যায়ক্রমে দেশের নয় লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষ পাবেন দুই শতাংশ জমিসহ তাদের স্বপ্নের বাড়ি।
জেলার সিংড়া উপজেলার মাঝগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের পাশে প্রায় পৌণে দুই লাখ টাকা ব্যয়ে চায়না খাতুনের বাড়ি নির্মাণ কাজ এখন শেষের পথে। দু’টো শয়নকক্ষ, রান্নাঘর, টয়লেট ও বারান্দাসহ চলছে বাড়ির দেওয়ালের পলেস্তরার কাজ। দেওয়াল রঙ, মেঝে আর টিনের চালার কাজ শেষ হলেই এটি হবে চায়নার স্বপ্নের বাড়ি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে উপজেলা প্রশাসন এসব বাড়ি নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে।
নির্মাণাধীন বাড়ির সামনে অভিব্যক্তি ব্যক্ত করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন বিধবা ও নিঃসন্তান চায়না খাতুন। বলেন, স্বপ্নেও কখনো আশা করিনি, আমার একটা বাড়ি হবে। আমি নামাজ পড়ে দো’য়া করি, শেখ হাসিনাকে ভালো রাখো আল্লাহ। জানা গেল বাবা-মা হারা চায়না খাতুনের তিন ভাই থাকলেও তাঁরা একমাত্র বোনের খোঁজও রাখেন না। মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে কোনরকম পেট চলে চায়নার।
চায়না খাতুনের অনুরোধে একই এলাকার হাপানিয়া সড়কে যেতে হলো তাঁর বর্তমান আবাস দেখতে। রাস্তার ধারে খেঁজুর পাতার কুটির। ঠান্ডা শীতের রাতে হু হু করে বয়ে চলা বাতাসে এ ঘরে চায়নার রাত কাটে কিভাবে? নিশ্চয়ই যুদ্ধ করে টিকে থাকা। যুদ্ধজয়ী চায়নার সুদিন আসছে। এ কুটির থেকে সে যাবে পাকা বাড়িতে। একান্তই নিজের পাকা বাড়ি।
স্কুল মাঠের একই সমান্তরালে নির্মাণাধীন আরো একটি বাড়ির মালিকানা পেতে যাচ্ছেন ট্রলি ড্রাইভার সোহেল রানা। নতুন বাড়ির সুখ স্বপ্নে বিভোর সোহেল রানার স্ত্রী জাহেদা বললেন, নিজের বাড়ি মানে তো মনের সাহস অনেক বেড়ে যাওয়া। এখন আমি আমার ছেলেকে পড়াশুনা করিয়ে মানুষ করতে পারবো।
নাটোর সদর উপজেলার হালসা ঝিনেপাড়া গ্রামে নতুন আবাসের বাসিন্দা হতে যাচ্ছেন রওশন আরা। শ্বাসকষ্টের রোগী হওয়ার কারনে তাঁর স্বামী কোন কর্মই করতে পারেন না। তাই স্বামী ছাড়াও তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসারের হাল ধরা রওশন আরা বলেন, পাটকাঠির বেড়া দিয়ে রাস্তার ধারে বাস করা ঘরের অবস্থা ঝড়-বৃষ্টির দিনে বিপদ ডেকে আনতো। এ বিপদের দিন পার হতে যাচ্ছে।
বাগাতিপাড়া উপজেলার কামারপাড়া গ্রামে গুচ্ছাকারে একই জায়গাতে বাড়ি নির্মিত হচ্ছে মোট ২৩ পরিবারের। পাশের মধ্যপাড়াতে মাটির বাড়ির আবাস ছেড়ে কামারপাড়ার বাসিন্দা হতে যাওয়া বিধবা দেলজান জানান, একমাত্র ছেলে আর ছেলে-বউকে নিয়ে তাঁর সংসার। ছেলে শারিরিক প্রতিবন্ধী হওয়াতে কৃষি শ্রমিকের কাজে উপার্জন কম বলে সংসারে টানাটানি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধীসহ সমাজের অসহায় মানুষের তালিকা প্রণয়ন করে প্রত্যেককে দুই শতাংশ জমির উপরে জমিসহ বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেক বাড়িতে দুইটি শয়নক্ষ, একটি করে রান্নঘর, টয়লেট আর বারান্দা আছে। তবে পানির ব্যবস্থা না থাকাতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগসহ অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় স্থানীয়ভাবে পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তা প্রকৌশলী সালাউদ্দিন-আল-ওয়াদুদ।
বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা দেবী পাল জানান, উপজেলার মোট ৪৪টি বাড়ি নির্মাণ কাজ এখন শেষের পথে। কামারপাড়া গ্রামে গুচ্ছাকারে নির্মাণাধীন ২৩টি বাড়ির সকল পরিবারকে নিয়ে একটি সমবায় সমিতি গঠনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ সমিতি বাড়িগুলোর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মামুদপুর বিলের খালে মাছ চাষ করে তাদের আর্থিক সংগতি যেন মজবুত করতে পারে।
নাটোরের জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বলেন, ইতোমধ্যে জেলা কৃষি ও খাস জমি ব্যবস্থাপনা কমিটি সভায় বাড়ির বরাদ্দপ্রাপ্ত ৫৫৮ ব্যক্তির অনুকূলে প্রত্যেকের দুই শতাংশ জমির মালিকানা সংক্রান্ত কবুলিয়ত নথি অনুমোদন করা হয়েছে। পরবর্তীতে এসব বাড়িতে বসবাসকারীদের যোগ্যতা অনুযায়ী সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা ছাড়াও সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে বেগবান করার প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে ভবিষ্যতে।