ঢাকা, সোমবার ২২, ডিসেম্বর ২০২৫ ৪:৩৯:২৯ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
তুমি আমাদের বুকের ভেতরে আছো: প্রধান উপদেষ্টা সংসদ নির্বাচনের তফসিল সংশোধন ইসির আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অ্যাপ ব্যবহার করবে ইসি খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ঘিরে পরিকল্পিত গুজব ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর সামরিক মর্যাদায় দাফন আজ

নারী খেলোয়াড় হেনস্থা: কোচকে বিরত রাখার নির্দেশ

বিবিসি বাংলা অনলাইন | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:৪০ পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার

কয়েকটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে গত ১০ থেকে ২২শে নভেম্বর কলকাতা সফর করে বাস্কেটবলের ন্যাশনাল উইমেন টীম এবং সেখানেই দলের একজন সদস্যকে 'গলায় চড় মারা'র অভিযোগ উঠেছে দলটির কোচ সবুজ মিয়ার বিরুদ্ধে।

কোচ সবুজ মিয়ার নেতৃত্বে দলটি ঢাকায় ফিরে আসার পর ওই দলের খেলোয়াড় তাসফিয়া চৌধুরী কোলকাতায় ম্যাচ চলাকালে কোচের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ করে দল থেকে পদত্যাগ করেন।

তাসফিয়ার অভিযোগ, ম্যাচ চলাকালে কোচ তার গলায় হাত দিয়েছেন এবং একই সাথে এ দলটির বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চলাকালে আরও কয়েকজন খেলোয়াড়কে চড় থাপ্পড় মারার অভিযোগও আনা হয়েছে।

এছাড়া বিকেএসপিতে দলটির প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চলাকালে একজন খেলোয়াড়ের দিকে তার চড় মারার ভঙ্গি ধরা পড়েছে একটি ভিডিওতে।

তাসফিয়া চৌধুরী বলছেন অনেক দিন ধরেই নারী খেলোয়াড়দের চড় থাপ্পড় মেরে আসছিলেন কোচ সবুজ মিয়া। সেটির প্রমাণ রাখতেই তিনি নিজেই ওই দৃশ্য ভিডিও করেছেন।

তবে কোচ সবুজ মিয়া অভিযোগটি আক্রোশমূলক উল্লেখ করে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিনি কখনোই খেলোয়াড়দের সাথে এমন কোনো আচরণ করেননি।

গত ১০ থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে নারী বাস্কেটবল দল প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার জন্য কলকাতা সফরে ছিল।

সেখানে একটি ম্যাচ চলাকালে এক পর্যায়ে তাসফিয়ার গলায় চড় মারেন কোচ সবুজ মিয়া, যিনি অনেক দিন ধরেই নারী দলটির প্রশিক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন।

"কলকাতায় ট্যুর চলাকালে কোচ সবুজ মিয়া আমার গলায় হাত দিয়েছেন। তিনি ম্যাচ চলাকালে আমার গায়ে হাত দিয়েছেন,'' তাসফিয়া বিবিসিকে বলেন।

''ফিরে এসেই আমি জানিয়েছি আমি আর খেলবোনা। ন্যাশনাল টিম থেকে আমি সরে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু এসব ঘটনা বন্ধ হওয়া উচিত," তিনি বলেন।

তার অভিযোগ, গত ঈদের পর থেকে তাদের টীমের ঢাকার বাইরের সদস্যদের অনেকের সাথেই এমন আচরণ করা হয়েছে।

খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী নারী বাস্কেটবলের এই দলটিতে শুরুতে ১২ জন খেলোয়াড় ছিল ছিল।

পরে একজন বাদ পড়ে আর একজন চলে যায় এবং বাকী দশজনের মধ্যে সাতজন জেলা পর্যায় থেকে আসা।

তাসফিয়া চৌধুরীর অভিযোগ তাদের সাথে প্রতিনিয়তই এমন আচরণ করা হয়েছে।

"প্রত্যেকদিনই কারও না কারো গায়ে হাত তোলা হতো। থাপ্পড় মারা হতো,'' তাসফিয়া বলেন।

তাসফিয়া বলেন, তিনি আগেও তার বাবাকে জানিয়েছিলেন যিনি প্রমাণের কথা বলেছিলেন। বিকেএসপিতে ২১ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ক্যাম্প ছিল।

''সেখানেই আমি একটি ঘটনা ভিডিও করি যাতে একজন খেলোয়াড়কে কোচের চড় দিতে দেখা যায়,'' তিনি বলেন।

তাসফিয়া চৌধুরী বলেন, তাদের প্রাকটিসের সময় পুরুষ কোচ ছাড়া আর কেউ থাকতো না।

পুরো বিষয়টি জানিয়ে অলিম্পিক এসোসিয়েশন ও আন্তর্জাতিক বাস্কেটবল সংস্থাকে চিঠি দেন তাসফিয়ার বাবা কাওসার চৌধুরী।

মি. চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, তার মেয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর খেলবে না।

''কিন্তু আমরা লড়াই করবো যাতে আর কোনো মেয়ে এমন আচরণের শিকার না হয়। এ ঘটনার যেন একটা কঠোর ব্যবস্থা হয়,'' তিনি বলেন।

অভিযোগ অস্বীকার করলেন কোচ : বিবিসি বাংলাকে কোচ সবুজ মিয়া বলেন, দলের প্রস্তুতির সময় তাসফিয়ার বাবা ও মা বারবার বাধা দিয়েছেন নানা অজুহাত তুলে।

"যে ভিডিওর কথা বলা হচ্ছে সেখানে চড় দেয়ার কোনো ঘটনাই নেই। এমন কোনো ঘটনা কখনোই ঘটেনি,'' সবুজ মিয়া বিবিসিকে বলেন।

''দশ বছর ধরে আমি কোচিং করাই। কোনোদিন কেউ এ ধরণের অভিযোগ করতে পারবেনা,'' তিনি বলেন।

তিনি বলেন ১০ নভেম্বর কলকাতা যান টীমসহ প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে। ২২ নভেম্বর তারা ফিরে আসেন।

তিনি অভিযোগ করেন যে, ফিরে আসার পর তাসফিয়ার মা তাকে 'চার্জ' করেন টিমকে বিমানে না এনে বাসে আনার কারণে। এরপর তাসফিয়া আর প্রাকটিসে আসেনি এবং ২৪ নভেম্বর পাসপোর্ট নিয়ে যায়।

''এখন তারা চড় মারার অভিযোগ করছে, যা মোটেও সত্যি নয়। পুরোটাই আক্রোশমূলক,'' তিনি বলেন।

"আমি চড় মারিনি। চড় মারবো কেন?'' সবুজ মিয়া বলেন।

''একজন খেলোয়াড় একটা মিস করার পর আমি শাসন করছিলাম যে এভাবে মিস করলে চড় মারবো। কোনো মেয়ের গায়ে হাত তোলা তো দুরের কথা, প্রশিক্ষণে কোনো কিছু শেখানোর সময়েও আমি সামনে কাউকে রাখি,'' তিনি বলেন।

যদিও তাসফিয়ার দাবি প্রশিক্ষণের সময় আর কাউকে কখনো রাখা হয়না।

"এমনকি ধানমন্ডি উইমেনস কমপ্লেক্সের সামনে রাস্তায় ভোর ছয়টার সময় নারী খেলোয়াড়দের আসতে বাধ্য করেছেন কোচ," তাসফিয়া বিবিসিকে বলেন।

কোচ স্থগিত : বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের ডিরেক্টর জেনারেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ফখরুদ্দিন হায়দার বিবিসি বাংলাকে বলেছেন নারী খেলোয়াড়দের সাথে কোনো ধরণের অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে তারা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করেন।

" আমরা তাকে (কোচ সবুজ মিয়া) টিমের কার্যক্রম থেকে বিরত রেখে তদন্তের জন্য বাস্কেটবল ফেডারেশনকে নির্দেশ দিয়েছি। তারা তদন্ত করে আমাদের জানাবে,'' তিনি বলেন।

নারী খেলোয়াড়দের হেনস্থা : হকি নারী দলের সঙ্গে এখন কাজ করছেন পারভিন নাসিমা নাহার পুতুল। একসময় নিজে ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় ও সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেছেন।

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের সবক্ষেত্রেই তার পদচারণ রয়েছে।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, নারী খেলোয়াড়দের বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হওয়ার অভিযোগ নতুন কিছু নয়।

"যে অভিযোগ এসেছে তার পূর্ণাঙ্গ ও সঠিক তদন্ত হওয়া দরকার,'' তিনি বলেন।

তিনি বলেন, এই ঘটনার একটা জোরালো প্রতিবাদ হওয়া দরকার, এবং মহিলা টিমের সাথে মহিলা কোচ ও ম্যানেজার জরুরি হয়ে পড়েছে।

''অনেকে তাদের খারাপ অভিজ্ঞতার ঘটনাগুলো বলেইনা। ফেডারেশন ও ক্রীড়া পরিষদকে সতর্ক হওয়া উচিত.'' তিনি বলেন।