ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:৫৬:৪২ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

পাঁচ বছর পর হুতি কারাগার থেকে মুক্ত ইয়েমেনি মডেল

বিনোদন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:৩৫ এএম, ২৮ অক্টোবর ২০২৫ মঙ্গলবার

ইয়েমেনের তরুণ মডেল ও অভিনেত্রী ইনতিসার আল হাম্মাদি।

ইয়েমেনের তরুণ মডেল ও অভিনেত্রী ইনতিসার আল হাম্মাদি।

পাঁচ বছরের দীর্ঘ বন্দিজীবনের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন ইয়েমেনের তরুণ মডেল ও অভিনেত্রী ইনতিসার আল হাম্মাদি। হুতি বিদ্রোহীদের কারাগারে প্রায় অমানবিক নির্যাতন ও অন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তার কাটানো এই সময় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তার মুক্তি ইয়েমেনজুড়ে নারীর অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইয়েমেনের হুতি-নিয়ন্ত্রিত রাজধানী সানায় ইনতিসারকে গ্রেফতার করেছিল বিদ্রোহীরা। সে সময় তার বয়স ছিল মাত্র ২০ বছর। হুতিদের অভিযোগ ছিল, তিনি ‘অশোভন আচরণ’ করেছেন এবং ‘মাদকদ্রব্য রাখার’ দায়ে জড়িত। পরে এক হুতি আদালত তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো শুরু থেকেই এই মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও নারীবিদ্বেষমূলক বলে সমালোচনা করে আসছিল। তাদের দাবি—ইনতিসারকে শুধু তার জীবনধারা ও প্রকাশভঙ্গির কারণে টার্গেট করা হয়েছিল, কারণ তিনি হুতি-নিয়ন্ত্রিত সমাজে নারীর স্বাধীনতা ও আধুনিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন।
ইনতিসারের সঙ্গে আরও তিন নারীকে তখন গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে ইনতিসার ও ইউসরা আল নাশরি একই মেয়াদের সাজা পান। অন্য দুই নারীকে যথাক্রমে এক ও তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ইনতিসারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ কখনোই আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি, বরং অভিযোগ তোলা হয় যে তার স্বীকারোক্তি জোর করে আদায় করা হয়েছিল।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ইনতিসারকে আটক রাখার সময় চোখ বেঁধে জিজ্ঞাসাবাদ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, এমনকি বর্ণবিদ্বেষমূলক গালাগাল দেওয়া হয়। তার ওপর চাপ সৃষ্টি করে অপরাধ স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। এ পরিস্থিতিতে ২০২১ সালে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলেও জানা গেছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিনিধি মন্তব্য করেন, “ইনতিসারের মামলা হুতি কর্তৃপক্ষের নারীদের প্রতি ভয়ানক বৈষম্য ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দমননীতির একটি প্রতীক।” একইভাবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, “ইনতিসার কেবল একজন তরুণ মডেলই নন, তিনি এমন এক প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করেন যারা নিপীড়নের ভয় ছাড়াই নিজেদের প্রকাশ করতে চায়।”
চলতি অক্টোবর মাসে, প্রায় পাঁচ বছর বন্দিত্বের পর, অবশেষে মুক্তি পান ইনতিসার আল হাম্মাদি। রবিবার তার আইনজীবী খালিদ আল কামাল সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ইয়েমেনের বিশিষ্ট নাগরিক ও মানবাধিকারকর্মীরা তার মুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “ইনতিসারের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা এখন সবচেয়ে জরুরি।” তাদের মতে, তার ওপর হওয়া নির্যাতন হুতি-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে নারীর নিরাপত্তাহীনতা ও বিচারহীনতার গভীর সংকেত বহন করে।
ইনতিসার আল হাম্মাদি ইথিওপীয় মা ও ইয়েমেনি বাবার সন্তান। গ্রেফতারের আগে তিনি টানা চার বছর মডেল হিসেবে কাজ করেছেন এবং দুটি ইয়েমেনি টেলিভিশন সিরিজে অভিনয় করেছেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয় ছিলেন—ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে তার হাজারো অনুসারী রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী পোশাক, জিন্স, কিংবা লেদার জ্যাকেটে ছবি পোস্ট করে তিনি ইয়েমেনি তরুণদের মধ্যে নতুন ধারার ফ্যাশন আইকন হয়ে উঠেছিলেন। কখনো ওড়না মাথায় দিতেন, কখনো উন্মুক্ত চুলে হাজির হতেন—যা হুতি সমাজের রক্ষণশীল মানদণ্ডে ছিল ‘অগ্রহণযোগ্য’।
২০১৪ সালে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে হুতিদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় নারীদের ওপর সহিংসতা ও নিপীড়ন ভয়াবহভাবে বেড়েছে। নারীরা শিক্ষা, চাকরি, এমনকি চলাফেরার স্বাধীনতাতেও বাধার মুখে পড়ছেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, হুতি শাসনের অধীনে নারীর প্রতি আচরণ একটি দমনমূলক সামাজিক নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
জাতিসংঘ ইয়েমেনের পরিস্থিতিকে বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট বলে আখ্যা দিয়েছে। যুদ্ধ, ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও অবরোধের কারণে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত। এ অবস্থায় ইনতিসারের মতো তরুণী মডেলের ওপর নির্যাতন কেবল ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, বরং নারীর মর্যাদার লঙ্ঘনের এক প্রতীক হয়ে উঠেছে। 
তথ্যসূত্র : দ্য ন্যাশনাল