ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ১২:৩৫:৪০ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউ পুড়ে ছাই, রক্ষা পেল ৭ শিশু সবজির বাজার চড়া, কমেনি মুরগির দাম সারা দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি কৃষক লীগ নেতাদের গণভবনের শাক-সবজি উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি শিশু হাসপাতালের আগুন সম্পূর্ণ নিভেছে

বাংলাদেশ-ভুটান অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি সই

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৪১ পিএম, ৬ ডিসেম্বর ২০২০ রবিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ও ভুটান দ্বিপাক্ষিক অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি বা পিটিএ (প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট) স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশকে ভুটানের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়ার ঐতিহাসিক দিনে আজ রোববার (৬ ডিসেম্বর) সকালে এই বাণিজ্য চুক্তি সই হয়।

নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তি সই করেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও ভুটানের অর্থবাণিজ্যমন্ত্রী লোকনাথ শর্মা। চুক্তি সই অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভুটান প্রান্ত থেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং যুক্ত ছিলেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে বাণিজ্য বেড়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে এক কোটি ২৮ লাখ ডলার বাণিজ্য হয়েছিল। ধীরে ধীরে তা বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলার।

এর মধ্যে বাংলাদেশ ভুটানে রফতানি করেছে ৭৫ লাখ ৬০ হাজার ডলারের পণ্য। আর ভুটান থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে ৪ কোটি ৯৯ লাখ ডলারের পণ্য। প্রধানত পাথর আমদানি হয় ভুটান থেকে। এই বাণিজ্যের মাধ্যমেই বাংলাদেশ ভুটানের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি বাজার।

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ভুটান। সেই থেকে গত ৫০ বছর ধরে দুদেশের সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নত হয়েছে। তাই চুক্তির দিন হিসেবে ৬ ডিসেম্বরকে বেছে নেয়া হয়।

এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশ ভুটানের বাজারে ১০০টি পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাবে। আর ভুটান বাংলাদেশের বাজারে তাদের ৩৪ পণ্যে একই সুবিধা পাবে।

বর্তমানে সাফটার আওতায় ভুটানকে ১৮টি পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেয় বাংলাদেশ, বিপরীতে ভুটান দেয় ৯২টি পণ্যে। নতুন চুক্তি কার্যকর হলে বাংলাদেশ ভুটানকে নতুন ১৬টি পণ্যসহ মোট ৩৪টি পণ্যে শুল্ক সুবিধা দেবে। বিপরীতে ভুটানে পাওয়া যাবে ১০২টি পণ্যে শুল্ক সুবিধা। দ্বিপক্ষীয় এই বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের একটি প্রস্তাব এর আগে গত সেপ্টেম্বরে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

ভুটানের পর থাইল্যান্ডের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া আরও ১৭টি দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা চালাচ্ছে সরকার। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ে, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ফিলিস্তিন, ব্রাজিল, চীন, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া। এসব দেশের সঙ্গেও নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে এফটিএ শাখাকে শক্তিশালী করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের তথ্য মতে, বাংলাদেশের সঙ্গে এখন ১৯৮টি দেশের বাণিজ্য রয়েছে। এর মধ্যে ৭১টি দেশের সঙ্গে রয়েছে বাণিজ্য ঘাটতি। বিশাল এ ঘাটতি কমাতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ এবং পিটিএ সইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীন থেকে আমদানি হয় এক লাখ ১৪ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয় ভারতের সঙ্গে। গত বছর দেশটির সঙ্গে মোট দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয় ৭২ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে আমদানি ৬৪ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা ও রপ্তানি পাঁচ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। তবে এফটিএ চুক্তির জন্য এগিয়ে থাকা ভুটান ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য শীর্ষ দশে নেই।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে থাইল্যান্ডের সঙ্গে আট হাজার ২৮৫ কোটি টাকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে। এমধ্যে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি মাত্র ২৩৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে একইসময়ে ভুটানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয় ৪৫৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি মাত্র ৩৮ কোটি টাকা। তবে দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ বেড়ে চলেছে।

২০১০ সালে প্রণীত দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নীতিমালা অনুযায়ী কোনো দেশের সঙ্গে এফটিএ করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের লাভ-ক্ষতি নিরূপণের লক্ষ্যে একটি ফিজিবিলিটি স্টাডি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক্ষেত্রে ভুটান, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে এফটিএ নিয়ে বাংলাদেশ ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন করলেও থাইল্যান্ডের সঙ্গে তা এখনো সম্পন্ন করতে পারেনি। দেশটির সঙ্গে আপাতত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তিতে আলোচনা এগিয়ে চলছে।

বাংলাদেশের প্রস্তাবিত মুক্তবাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে গত ১৭ থেকে ২৫ আগস্ট সাউদার্ন কমন মার্কেটের (মার্কোসুর) অন্তর্ভুক্ত চারটি দেশ আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ে সফর করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ওই চারটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়নের উপায়সমূহও পর্যালোচনা করা হয়।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, সবশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৪৩ লাখ ৫৬ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে ভুটানে। দেশটির বাজারে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স, আসবাব, তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি করেন। অপরদিকে দেশটি থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে প্রায় চার কোটি ডলারের পণ্য। এর মধ্যে কমলা, দারুচিনি সবচেয়ে বেশি। এছাড়া বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ভুটান থেকে চুনাপাথর, পাথর, কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করেন।

-জেডসি