ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮, মার্চ ২০২৪ ২০:০০:০৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু গাজায় নিহত বেড়ে ৩২ হাজার ৪৯০ অ্যানেস্থেসিয়ার ওষুধ বদলানোর নির্দেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঈদ কেনাকাটায় ক্রেতা বাড়ছে ব্র্যান্ড শপে বাঁচানো গেল না সোনিয়াকেও, শেষ হয়ে গেল পুরো পরিবার

মাতা হারি: ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত বা কুখ্যাত নারী গুপ্তচর

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৪৪ পিএম, ৬ আগস্ট ২০২২ শনিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আজ থেকে ১০০ বছর আগে ১৫ অক্টোবর ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল মাতা হারির-যাকে আজও বলা হয় ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত বা কুখ্যাত নারী গুপ্তচর। তিনি ছিলেন সহজ বাংলায় যাকে বলা যায় ইউরোপের মক্ষিরাণী।
তার অভিনব নগ্ন নাচ দেখার জন্য, তার সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করার জন্য বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, জেনারেল, শিল্পপতিরা উন্মুখ হয়ে থাকতেন। এসব ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মাধ্যমে যেসব গোপন তথ্য মাতা হারি জানতে পারতেন তা হাতবদল করেই তিনি হয়ে ওঠেন এক সাংঘাতিক গুপ্তচর। আর ধরা পড়ার পর এটাই তার মৃত্যু ডেকে আনে।

দণ্ড কার্যকরের দিন সকালবেলা প্যারিসের সেন্ট লাজার কারাগার থেকে তাকে একটি ধূসর সামরিক গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় শহরের উপকণ্ঠে শ্যাতো দু ভিসেনেস-এ। তার সঙ্গে ছিলেন দুইজন নান আর তার আইনজীবী। সেখানে মাটির দেয়ালের সামনে একটি খুঁটি পোঁতা হয়েছিল। মাতা হারিকে সেখানে দাঁড় করানো হলো, ফায়ারিং স্কোয়াডের ১২ জন সৈন্য লাইন ধরে দাঁড়ালো। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় ৪১ বছরের মাতা হারির পরনে ছিল লম্বা কোট আর মাথায় ছিল চওড়া কিনারওয়ালা ফেল্টের টুপি।

কিছু খবরে বলা হয়, এসময় মাতা হারি তার চোখ বাঁধতে দেন নি। যখন তার একটি বাঁধা হয়েছে, তখন খোলা অপর হাত দিয়ে তিনি তার আইনজীবীর উদ্দেশ্যে হাত নাড়লেন। এরপর ফায়ারিং স্কোয়াডের কমান্ডার তার তলোয়ার দ্রুত হাতে নিচে নামালেন, সঙ্গে সঙ্গে সৈন্যদের বন্দুকের গুলির শব্দ হলো। মাতা হারি হাত বাঁধা অবস্থাতেই হাঁটু মুড়ে ঢলে পড়লেন। এরপর একজন সেনা অফিসার রিভলভার হাতে মাতা হারির দিকে এগিয়ে গেলেন এবং তার মাথায় একটি গুলি করলেন।

তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দৃশ্যের একটি ছবিও আছে, যদিও অনেকেই এটি সত্য বলে বিশ্বাস করেন না। তাদের কথা এটি সম্ভবত সে সময়কার একটি সিনেমার স্থির চিত্র। মাতা হারি কথাটা আসলে এসেছে ইন্দোনেশিয়ান ভাষা থেকে যারা অর্থ 'দিনের চোখ' বা সূর্য। তার আসল নাম মার্গারেট জেল, জন্ম নেদারল্যান্ডসে ১৮৭৬ সালে।

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে ইউরোপের রাজধানীগুলো ছিল মাতা হারির জন্য পাগল। তার প্রেমিকদের মধ্যে ছিলেন মন্ত্রী, শিল্পপতি, সেনাধ্যক্ষরা। তবে প্রথম মহাযুদ্ধ শুরু হবার পর সরকারি গোয়েন্দারা বুঝলেন, তাকে গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহার করতে পারলে তার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া।

মাতাহারির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ছিলেন একজন জার্মান গুপ্তচর, এবং মিত্রবাহিনীর সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যৌনসম্পর্কের সুযোগ নিয়ে তিনি গোপন তথ্য জেনে নিয়ে প্রতিপক্ষের কাছে পাচার করেছেন। পত্রপত্রিকায় সে সময় লেখা হয়েছিল, মাতা হারি হাজার হাজার মিত্রবাহিনীর সৈন্যের মৃত্যুর জন্য দায়ী। তবে পরে তার বিচারের সময় সাক্ষ্যপ্রমাণে দেখা যায় যে তিনি আসলে ছিলেন একজন ডাবল এজেন্ট, অর্থাৎ তিনি জার্মান ও মিত্রবাহিনী উভয়ের জন্যই গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন।

মাতা হারির বৈবাহিক জীবন সুখের ছিল না। তবে পরে প্যারিসে এসে তিনি একজন যৌন-উত্তেজক নাচিয়ে হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। অনেকে বলেন, স্ট্রিপটিজ - যেখানে একটি মেয়ে নাচতে নাচতে ক্রমশ নগ্ন হতে থাকে - সেই নাচ বলা যায় মাতা হারিরই উদ্ভাবন। যুদ্ধের সময় জার্মান সামরিক কর্মকর্তা আরনল্ড ভন কাল্লের পাঠানো একটি টেলিগ্রাম ফরাসী গোয়েন্দারা ধরে ফেলে, যাতে দেখা যায় 'এজেন্ট এইচ টুয়েন্টিওয়ান' বলে একজনের উল্লেখ আছে। 

এতে আরো ছিল মাতা হারির গৃহকর্মী নারীর ঠিকানা ব্যাংকের তথ্য ইত্যাদি। ফলে গোয়েন্দাদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে এজেন্ট এইচ টুয়েন্টিওয়ান আসলে মাতা হারি-ই আর কেউ নয়। সেই টেলিগ্রাম এখন একটি জাদুঘরে রাখা আছে। তবে অনেকে এর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ করেন। তাদের কথা - মাতা হারিকে ধরার জন্য ফরাসী গোয়েন্দারাই এটা সাজিয়েছিল। কারণ ফ্রান্সের উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধে তাদের ধারাবাহিক খারাপ ফলের জন্য মাতা হারির মতো একজনকে দায়ী হিসেবে দেখানো। যাতে জনগণকে খুশি রাখা যায়। মাতা হারি ছিলেন একজন বলির পাঁঠা - এটাই অনেকের মত।

তবে ধরা পড়ার পর শেষ জিজ্ঞাসাবাদে মাতা হারি স্বীকার করেন যে হ্যাঁ, তাকে জার্মানরা গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ করেছিল ১৯১৫ সালে। তবে তিনি বলেন, তিনি আসলে মিত্রবাহিনীর প্রতিই অনুগত ছিলেন - তার ইচ্ছে ছিল জার্মানদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কেটে পড়ার। তবে তার বিরুদ্ধে পাওয়া তথ্যে তা প্রমাণ হয় নি। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর কেউ তার দেহ নিতে আসেনি। কাজেই দেহটা দিয়ে দেয়া হলো প্যারিসের মেডিক্যাল স্কুলে - যাতে সেটা ছাত্রদের কাটাছেঁড়ার প্রশিক্ষণে ব্যবহার করা যায়। তার মাথাটা এ্যানাটমি মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। তবে প্রায় ২০ বছর আগে দেখা যায়, সেটা নিখোঁজ। সম্ভবত কেউ মাথাটা চুরি করে নিয়ে গেছে।

সূত্র: বিবিসি