ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ১০:২২:৫৯ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ফের কমল স্বর্ণের দাম মক্কা ও মদিনায় তুমুল বৃষ্টির শঙ্কা খালেদার গ্যাটকো মামলায় চার্জগঠনের শুনানি পেছাল কুড়িগ্রামে তাপদাহ: বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায়

শহীদ কবি মেহেরুন্নেসার জন্মদিন আজ

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:৫৫ এএম, ২০ আগস্ট ২০২২ শনিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের প্রথম শহীদ নারী কবি মেহেরুন্নেসার জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৪০ সালের ২০ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। প্রায় বিস্মৃতির আড়ালে হারিয়ে যাওয়া দুঃসাহসী এক কবির নাম মেহেরুন্নেসা। স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীর ওপর নিষ্ঠুরতম ও নারকীয় হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে শহীদ হন তিনি।

ষাটের দশকের সম্ভাবনাময়, প্রাণবন্ত, হাস্যোজ্জ্বল এক তরুণী কবি মেহেরুন্নেসা। বাবা ক্যান্সারে মারা গেলে পরিবারের খরচ যোগাতে পত্রিকায় কপি লেখা এবং প্রুফ দেখার কাজ শুরু করেন তিনি। সে সময়ের প্রায় সব পত্রিকাতেই তার কবিতা ছাপা হত। কিন্তু সংসারের চাহিদা মেটাতে গিয়ে এক সময় সাহিত্য-সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন তিনি।
কিন্তু ছোটদুটি ভাইকে তো মানুষ করতে হবে। তাই নিজের সম্ভাবনা ভুলে পরিশ্রম করে গেলেন দিনরাত। এরই মাঝে “সাত কোটি জয় বাংলার বীর! ভয় করি নাকো কোন/ বেয়নেট আর বুলেটের ঝড় ঠেলে- চির বিজয়ের পতাকাকে দেবো, সপ্ত আকাশে মেলে/ আনো দেখি আনো সাত কোটি এই দাবীর মৃত্যু তুমি/ চির বিজয়ের অটল শপথ/ জয় এ বাংলায় তুমি....” এই কবিতাটি জানান দেয় বিপ্লবের কথা। পাকি শাসক গোষ্ঠীর প্রতি ছুঁড়ে দেয়া এই চ্যালেঞ্জে ক্ষমতার ভীত কেঁপে ওঠে।


পাক-হানাদার, রাজাকার ও বিহারীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসে নিজ বাড়ির ছাদে উড়িয়েছিলেন লাল-সবুজের পতাকা। অবাঙালি ও বিহারীদের হাতে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত মিরপুরের বাঙ্গালিদের রক্ষার জন্য যিনি প্রিয় বান্ধবী কাজী রোজীকে সঙ্গে নিয়ে গঠন করেছিলেন - “অ্যাকশন কমিটি”।

জাতির বিস্মৃতির আড়ালে হারিয়া যাওয়া সেই দুঃসাহসী কবির নাম মেহেরুন্নেসা। ঘাতকদের নির্মম হত্যাকাণ্ডে আমরা তাকে একাত্তরে হারিয়েছি।

৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার পর কবি মেহেরুন্নেসা ঠিক করে্ন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেবেন। ২৩ মার্চ পাকিস্তানের “প্রজাতন্ত্র দিবস” হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানের পতাকা না উড়িয়ে বাড়ির ছাদে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছিলেন অদম্য সাহসী এই মানুষটি। এতে ক্ষিপ্ত হয় ওই এলাকার রাজাকার ও বিহারীরা,  কিন্তু তাদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেন মেহেরুন নেসা। অবাঙালি ও বিহারীদের হাতে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত হতো মিরপুরের বাঙালিরা। এই অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি পাবার জন্য গঠিত হয় “অ্যাকশন কমিটি” যেখানে প্রেসিডেন্ট হন মেহেরুন্নেসার খুব কাছের বান্ধবী কাজী রোজি ও তিনি হন সদস্য। ২৫ তারিখেও কমিটির মিটিং শেষে দুই বান্ধবী গল্প করেন দেশের অবস্থা নিয়ে, কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে অনুমান করে্ন তারা।

এর ঠিক দুদিনের মাথায় ঘটে যায় এই নির্মম হত্যাকাণ্ড। ২৭ মার্চ, বেলা ১১ টার দিকে কাদের মোল্লার নেতৃত্বে মাথায় লাল ও সাদা পট্টি পরে মেহেরুন নেসার মিরপুরের বাসায় আসে কাদের মোল্লা, হাসিব হাশমি, আব্বাস চেয়ারম্যান, আখতার গুণ্ডা, নেহাল ও আরো অনেকে। মেহেরুন নেসা বুঝতে পেরে কুরআন শরীফ বুকে নিয়ে সকলের প্রাণ ভিক্ষা চায়, কিন্তু পিশাচেরা সেই আকুতি শোনেনি। একে একে সবাইকে জবাই করে হত্যা করে তারা, তারপর মেতে ওঠে নারকীয় উল্লাসে। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হবার পর দুইজন অবাঙালি বিহারীর মুখে শোনা যায় সেই নারকীয় উল্লাসের নির্মম ইতিহাস।

২৭ মার্চে নির্মমভাবে জবাই করে দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে হত্যা করা হয় কবি মেহেরুন্নেসা, তার মা ও দুই ভাইকে। মেহেরুন্নেসার দুই ভাইয়ের মাথা নিয়ে ফুটবলের মতো খেলেছিল সেদিন ঘাতকেরা। মেহেরুন্নেসার কাটা মাথা তারই লম্বা চুল দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে বেধে ঘুরানো হয়, আর নিচে পড়ে থাকে জবাই করা মুরগীর মতো রক্তাক্ত মেহেরুন্নেসার দেহটা। মিরপুরের কসাই কাদের মোল্লার নেতৃত্বে, তার দোসরদের সাথে পরিচালিত এই হত্যাকাণ্ড ছিল মানবতার ইতিহাসে অন্যতম এক কালো অধ্যায়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীর ওপর যে নিষ্ঠুরতম ও নারকীয় হত্যাযজ্ঞ হয় তারই শিকার হয়ে যিনি প্রথম শহীদ মহিলা কবি হিসেবে অভিহিত হন—তিনি মেহেরুন্নেসা। তার জন্ম ১৯৪০ সালের ২০অগাস্ট পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। ক্লাব অবসকিওর এর পক্ষ থেকে তার জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে তাকে স্মরণ করি।