ঢাকা, শনিবার ২৭, এপ্রিল ২০২৪ ৪:৫৬:৪০ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছাড়াবে আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী চলতি মাসে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ

শিশুসাহিত্য খুব সহজ নয়: খালেদ হোসাইন

খালেদ হোসাইন | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:০৯ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বৃহস্পতিবার

শিশুসাহিত্যিক খালেদ হোসাইন।  ছবি: ফেসবুক থেকে।

শিশুসাহিত্যিক খালেদ হোসাইন। ছবি: ফেসবুক থেকে।

খালেদ হোসাইন স্বনামেই বিখ্যাত। তিনি একাধারে শিশুসাহিত্যিক, ছড়াকার, কবি ও প্রবন্ধকার। আশির দশক থেকে লিখছেন। তার মা কবিতা লিখতেন, আর স্বপ্ন দেখতেন ছেলে বড় হয়ে কবি হবে। তিনি কবি হয়েছেন, সেইসঙ্গে হয়েছেন সকলের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মানুষ। 
তিন দশক ধরে কাব্যসাধনার ফসল তার অনেক। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হলো,  ইলা মিত্র ও অন্যান্য কবিতা, শিকারযাত্রার আয়োজন, জলছবির ক্যানভাস, পাতাদের সংসার, এক দুপুরের ঢেউ। স্ত্রী আইরীন পারভীন, কন্যা রোদেলা ও ছেলে রৌদ্রকে নিয়ে তার সুখের সংসার। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। 
সম্প্রতি খালেদ হোসাইন উইমেননিউজ২৪.কম-এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘কিশোর লেখা’র সঙ্গে আলাপচারিতায় বসেছিলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শিশুসাহিত্যিক আহমাদ স্বাধীন। তার সমৃদ্ধ সাক্ষাৎকারটি উইমেননিউজ২৪.কম-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।  

 

প্রশ্ন: কেমন আছেন? ইদানিং পেশার বাইরের অবসর সময় কী নিয়ে কাটাচ্ছেন?
খালেদ হোসাইন: ধন্যবাদ। ভালো আছি। জীবনকে টিকিয়ে রাখতে হলে জীবিকার দরকার হয়। এ জন্য সবাইকে কিছু না কিছু করতে হয়। সেটা পেশা। আমার পেশাটা শিক্ষকতার। এটা এমন একটা পেশা, যা সার্বক্ষণিক। ক্লাসরুমে বা বিভাগে শেষ করে আসা যায় না। মাথায় থেকে যায়। আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা সব চলছে।  
তবে প্রশ্নটা সুন্দর। কারণ কোনো মানুষই পেশাবন্দী হয়ে থাকতে পারেন না, অমূল্য এ মানবজীবনের বহুবিধ চাহিদা থাকে, তা পূরণ করতে হয়। নইলে জীবনের কোনো অর্থদ্যোতকতা সৃষ্টি হয় না। 

 

প্রশ্ন: দেশের শিশুসাহিত্যের একজন সফল লেখক আপনি। আবার কবিতায় আপনার দখল অসামান্য। একজন শিশুসাহিত্যিক এবং একজন কবির মধ্যে কোন পরিচয়টা আপনাকে বেশি আনন্দ দেয়?
খালেদ হোসাইন: আমি আমার ডান চোখকেও ভালোবাসি, বাঁ চোখকেও ভালোবাসি। ভালোবাসার ঘনত্ব ও গভীরতার বৈষম্য আমি বুঝতে পারি না। শিশুসাহিত্যের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আশৈশব। মনের প্রবল টানেই তা সৃষ্টি করেছি, সে সম্পর্ক ঘুচিয়ে দিতে চাইনি। কারণ, কিছু বিষয় নিতান্তই ছড়ার উপযোগী, তা অন্যকোনো সাহিত্য-আঙ্গিকের উপযোগী নয়। লেখা যাবে না, তা নয়, কিন্তু প্রাণপ্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে উঠবে। আমি প্রবল ভালোবাসা থেকেই শিশুসাহিত্য রচনা করি। একই কথা আমি কবিতার ক্ষেত্রেও বলতে পারি। মনের ভেতরে তীব্র আকুতি সৃষ্টি না হলে কবিতা লেখি না। ভালো হোক বা না হোক, হৃদয়ের সাড়া না পেলে আমার লেখা হয়ে ওঠে না। 
প্রশ্নের সরাসরি উত্তরটা নিরঙ্কুশ করা আমার পক্ষে মনে হয় সম্ভব নয়। শিশুসাহিত্যিক বা কবি দুটি পরিচয়ই আমাকে আনন্দ দেয়। কারণ, শিশুসাহিত্যও সাহিত্যই। যে যে-আঙ্গিকেই কাজ করুন না কেন, সবাই সাহিত্যসৃষ্টি করেন, শিল্পের সাধনা করে। সবারই গন্তব্য এক- সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের সাধনা করা। এই দেশে বা সবদেশে আমরা সবাই মিলে সেই কাজটাই করি। 

 

প্রশ্ন: সহজ কথায় শিশুসাহিত্যের বিশেষ বৈশিষ্ট কি? লেখায় যা থাকা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন।
খালেদ হোসাইন:
শিশুমনের উপযোগী সাহিত্যই শিশুসাহিত্য। সেই অর্থে আমাদের শিশুসাহিত্য নেই বললেই চলে। আছে শিশু-কিশোর সাহিত্য। শিশু-কিশোরদের নিজস্ব একটি কল্পনাবিশ্ব থাকে, উদার, গভীর, রঙিন, আনন্দদায়ক ও প্রাণবন্ত। শিশুর প্রতি মমতা থাকলে নিজের শৈশবের স্মৃতির সমবায়ে শিশুসাহিত্য সৃষ্টি করতে হয়। তা তাদের কাছে উপভোগ্য ও মজাদার হয়ে উঠতে হয়। এজন্য ভাষা হতে হবে সহজ ও সাবলীল। পান্ডিত্যের পরিচয় দিতে গেলে নির্ভার আনন্দ থেকে তারা বঞ্চিত হবে। আর বিষয়ও হতে হবে শিশু-কিশোরদের জানা ও কল্পনার জগতের সঙ্গে মিল রেখে। 
শিশুসাহিত্য খুব সহজ নয়, তার সংজ্ঞার্থ নির্মাণও তা-ই। কারণ শিশুসাহিত্য শেষপর্যন্ত সর্বজনপাঠ্য, কিন্তু বড়দের সাহিত্যের সেই দায় নেই। শিশুসাহিত্যের কাজ নয় বিদ্বান করে তোলা, শিশুসাহিত্য সহজ এ প্রক্রিয়ায় তার চেতনাকে পুষ্টির জোগান দেবে, ব্যক্তিত্বকে গড়ে তুলবে, সুস্থ ও সুন্দরের প্রতি টান বাড়িয়ে দেবে, তার মধ্যে আস্থা ও সাহস সৃষ্টি করে দেবে। নির্ভার জ্ঞানের মধ্য দিয়ে তার বিকাশকে নিশ্চিত করতে চেষ্টা করবে। 
শিশুসাহিত্যে ‘মজা’ থাকতেই হবে। এ থেকেই বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মি আত্মাকে আলোকিত করে তুলবে। শিশুরাও যখন আঁকে বা লেখে বা কিছু করে তাতে উদ্ভট ও অদ্ভুতের মিশেল দেখা যায়, এটাতেই তাদের নিজস্ব মনের জগত খুঁজে পাওয়া যায়, মজাও, অন্তহীন আনন্দও।    

 

প্রশ্ন: শিশুসাহিত্যের কোন দিকটা শিশুদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন, যেমন ছড়া-কবিতা, মৌলিকধারার গল্প, রূপকথা, জাদুবাস্তবতা ইত্যাদি।
খালেদ হোসাইন:
শিশুদের পছন্দের তালিকায় ছড়া-কবিতা, রূপকথা-ধরনের গল্প, উদ্ভট বিষয়ের গল্প, হাস্যরসাত্মক গল্প প্রাধান্য পায়। কারো কারো মধ্যে জীবনী বা বিশ^জ্ঞান সম্পর্কে লেখা প্রবন্ধের প্রতিও আকর্ষণ দেখি। তবে মাতৃগর্ভে হৃৎস্পন্দনের মধ্য দিয়ে শিশুর যে ছন্দজ্ঞান সৃষ্টি হয়, তা থেকেই ছড়া বা ছন্দে রচিত কথাপুঞ্জ তাদের কাছে সর্বাধিক প্রিয় হয়ে ওঠে।  

 

প্রশ্ন: ‘লিখবো ছড়া বিষয় কোথায়, চক্ষে লাগে ধাঁধাঁ/যা দেখি সব লিখে গেছেন, ঠাকুর বাড়ির দাদা’...আপনার ছড়ার লাইন। প্রশ্ন হচ্ছে, রবি ঠাকুর বা পূর্বসুরীরা কি আসলেই সব লিখে গেছেন? লিখলে এখন তরুণরা কী লিখবে, আর না লিখলে নতুন অনুষঙ্গ বা নতুনভাবে কিছু লেখার জন্য নতুনদের কী পরামর্শ দেবেন?
খালেদ হোসাইন:
হ্যাঁ। তাঁর বা পূর্ববর্তী লেখকরা এতোসব বিষয় নিয়ে এমন মনোলোভন ভঙ্গিতে লিখে গেছেন, যে মনে হয়, লেখার জন্য আর কোনো বিষয় বা শৈলী অবশিষ্ট নেই। কিন্তু ক্রমপরিবর্তমান পৃথিবীতে তা তো আর সত্য নয়, তাই মজা করেই লিখেছিলাম। প্রতি পল-অনুপল বিশ^সংস্কৃতি ভীষণভাবে বদলে যাচ্ছে, বদলে যাচ্ছে ভাষা ও আচরণ। আমাদের মতো দেশে লেখার বিষয় অন্তত কখনো ফুরিয়ে যাবে না। প্রত্যেকটি শিশুই এক একটি আনন্দময় রহস্যের আধার। প্রত্যেক বিকশিত ব্যক্তিত্বও তা-ই। সবার চোখ ও দেখার ভঙ্গি আলাদা, ফলে দৃষ্টিকে প্রখর করে তুললেই হয়। অসুবিধে একটা এই, ছন্দ ও অন্ত্যমিল সৃৃষ্টি আয়ত্ত করা কঠিন নয়। কোনো বিষয়কে একটি ছন্দে অন্ত্যমিলসহ উপস্থাপন করলেই যে তা মানোত্তীর্ণ ও শিশু-উপভোগ্য হয়ে উঠবে, তা তো নয়। সে বিষয়রে উপযোগী ছন্দ, ভাষার সরলতা ও সাবলীলতা আর অন্ত্যমিলের অনিবার্যতাও বিবেচনা করতে হবে। তাহলেই কখনো কারো জন্য শিল্পসাধনা কঠিন হয়ে উঠবে না। সাধনা আর চর্চার মধ্যে পার্থক্য আছে এটা মনে রাখতে হবে। লেখা মুদ্রণে সংখ্যার সঙ্গে গুণগত মানকেও প্রাধান্য দিতে হবে। তাতে লেখকের জন্যও ভালো, সাহিত্যের জন্যও ভালো। রপ্ত হয়ে গেলে বা গ্রহণযোগ্যতা বাড়লে তখন অনেক লেখবার অধিকার জন্মেছে মনে করতে হবে।    
 

প্রশ্ন: ছোটদের ছড়া কবিতায় সাম্প্রতিক বিষয় তুলে আনাটা জরুরী কি না? 
খালেদ হোসাইন:
প্রশ্নটা এখন খুব প্রাসঙ্গিক। আমাদের লোকসাহিত্যের দিকে তাকালেও দেখবো, প্রকৃতি, মানবিক সম্পর্ক আর রূপকাত্মকভাবে রাজনীতির অংশগ্রহণ ব্যাপক। ‘আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে’ যেমন যুদ্ধে সৈনিক সাজাবার ধরন, তেমনি ‘বর্গি এলো দেশে’ তো বহিরাগতদের লুণ্ঠন প্রবণতা ও নিরাপত্তাহীনতার কথাই বলা হয়েছে। শ্রেণীবৈষম্যময় সমাজের নানা চিত্রও উঠে এসেছে নানা ছড়ায়। সমাজবৈজ্ঞানিক বিবেচনায় সুকুমার রায় তার ‘সাপুরে’ কবিতাটিতে মধ্যবিত্তের নিষ্ক্রিয়তার ছবি এঁকেছেন, শিশুভোগ্য এ ছড়ায়, রবীন্দ্রনাথেও পাই, নজরুলেও পাই। তবে জবরদস্তি করে রাজনীতি কেন, কোনো উপাদানই শিশুসাহিত্যে আরোপ করা অনৈতিক। তাতে নিজের স্বার্থ হাসিল হতে পারে, শিশুসাহিত্যের কোনো ফায়দা নেই। শিশুর প্রিয় জগত মূলত পশুপাখি, আকাশ-বাতাস জল, সবুজ শস্য, রঙিন ফল, সুরভীময় ফুল, মেঘ আর তাদের নিজস্বকল্পনা জগতটাই। 
বলতে চাই, রাজনীতি শিশুসাহিত্যে জরুরি নয়, আবার দূরে সরিয়ে রাখার বিষয়ও নয়। বিশেষত আমাদের মতো দেশে যেখানে শিশুদের কোনো নিরাপত্তা নেই, খাদ্য ও শিক্ষার কোনো নিশ্চয়তা নেই, সেখানে শিশুর প্রতি মমতাময় যে কোনো উচ্চারণ মানবিকবোধের সাধারণ বিবেচনায়ই রাজনৈতিক হয়ে উঠতে পারে। 

 

প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধ সাহিত্যের মতো একটা স্বকীয় শক্তিশালি শাখা আমাদের আছে, যা অন্য কোন ভাষাসাহিত্যে নেই। এর সঠিক ব্যবহার কি আমরা করতে পারছি?
খালেদ হোসাইন:
মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করেছি, এর সব দায় আমরা মিটাতে পারিনি, পঞ্চাশ ষাট বছরে তা সম্ভবও নয়। তবে স্বাধিকার আন্দোলনের আমাদের যে পথচলা তা সুদীর্ঘ ও সমবেত মানুষের ঘাম, অশ্রু ও রক্ত¯্রােতে প্লাবিত। মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই এ বিষয়ে ছড়া লেখার সূচনা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ও পরবর্তী সময়েও সৃষ্টির প্রবাহমানতা অব্যাহত। 
আমরা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রত্যাশিত মানের লেখা কমই পেয়েছি। যদি না আমরা মুক্তিযুদ্ধের বিশালায়তন পরিধি, গণআকুলতা, আত্মত্যাগের মর্যাদা অনুধাবন করতে পারি, তাহলে বিচ্ছিন্ন ও প্রক্ষিপ্ত বা খ-িত কিছু লেখা পেতেই পারি, কিন্তু তাতে মুক্তিযুদ্ধের গভীর তাৎপর্য প্রতিফলিত হওয়া সম্ভব নয়। অনেক ভালো লেখা পেয়েছি, অনেক গ্রন্থ প্রণীত, সংকলিত ও সম্পাদিত হয়েছে, কিন্তু প্রত্যাশিত সেই লেখার জন্য বা সৃষ্টিসম্ভারের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। মেধা, মনীষী, মৌলিকত্বের সঙ্গে নিরঙ্কুশ দেশপ্রেম ও শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতা ছাড়া তা সম্ভব নয়। তবু আমরা যে যার সামর্থ্য নিয়ে চেষ্টা করে যাবো।   

 

প্রশ্ন: ‘ছড়ায় নতুন রূপকথা’ আপনার একটা রূপকথার গল্পের বই। যা ছড়ায় ছড়ায় লেখা গল্প। এরকম ছড়াগল্প বা ছড়াকাহিনি একসময় লেখা হতো খুব। আমাদের দেশের অনেক বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক এই ঘরানায় আগে লিখলেও এখন তেমন লেখা হচ্ছে না, অথচ এটা ছোটদের জন্য দারুণ একটা শাখা। এই ব্যাপারে কিছু বলুন?
খালেদ হোসাইন:
ছড়ায় দেশে-বিদেশে অনেকেই রূপকথা, গীতিকা এমনকি মহাকাব্যকেও শিশুদের উপযোগী করে ছন্দোব্ধভাবে উপস্থাপন করেছেন। আমি মৌলিক ঘটনা রূপকথার আদলে আনন্দজনকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। তাতে রূপকথার জগতে যেমন ভ্রমণ করা হয়ে ওঠে, কিছু ঘটনা, চরিত্র ও তাদের কর্মকা-ে সমকালীন বিষয়ের রেশ পাবে, কিন্তু তা প্রাধান্য পাবে না। রাজার বিদূষককে বেতন দিতে না পারা, বিদূষকের যাত্রদলে যোগ দেয়া, রাগ করে রানীর নৌকায় করে বাপের বাড়ি চলে যাওয়া, রাজার না-খাওয়ার মতো পরিস্থিতি, মন্ত্রীর দাওয়াত গ্রহণ, পুকুরে হাতমুখ ধোবার জন্য নামতে গিয়ে আছাড় খেয়ে পুকুরে পড়ে যাওয়া, মন্ত্রী ধাক্কা দিয়ে ফেলেছে বলে রাজার সন্দেহ, খিদের জ¦ালায় তার বাড়িতে যাওয়াÑসবই সাধারণ জীবনের নৈমিত্তিক ব্যাপার। এসবকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কাহিনি বা রাজপ্রাসাদের বর্ণনায় ছোটরা বেশ মজা পাওয়ার কথা, যেহেতু লিখতে গিয়ে আমি খুব মজা পেয়েছিলাম। ‘ছড়ায় নতুন রূপকথা’ আমি হাসতে হাসতে লিখেছি। 
আখ্যানপ্রিয়তা সব দেশে সব মানুষের মধ্যে আছে। সবাই এক অর্থে আখ্যানাংশ রচনা করে। পুরোটা যদি ব্যঞ্জনাময় করে উপস্থপান করা যায়, তাহলে সবারই তা ভালো লাগবে বলে আমার বিশ্বাস। 
এখন যারা তরুণ তাঁদের অনেকে তো অনেক প্রস্তুতি নিয়ে ছড়া লেখেন, ব্যক্তিভেদে মেধার তারতম্য থাকবেই। নিষ্ঠা ও সাধনা তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারে নিশ্চয়।     

 

প্রশ্ন: আপনার নিজের লেখা আপনার পছন্দের সেরা কয়েকটি বইয়ের নাম বলুন।
খালেদ হোসাইন:
আমার ছড়ার বইয়ের সংখ্যা ১৫টি বা একটি-দুটি বেশি। সব কটি বইই আমার প্রিয়। নাম বলতে হলে ‘হাউমাউ’, ‘ঠাট্টা’, ‘হলদে পাখি আয়’, ‘বৃষ্টি যদি আসে’, ‘লেজ’, ‘রঙগুলো সব থাক না!’Ñএগুলোর কথা মনে পড়ছে। গল্পের বই ‘চিড়িয়াখানা’, ‘যে দেশে খেলনা নেই’, ‘ফড়িং’। কিছু সম্পাদিত বইও আছে। 

 

প্রশ্ন: আপনার পাঠ করা সেরা কয়েকটি বইয়ের নাম বলুন। যা পাঠে তরুণরা সাহিত্যের রস আস্বাদন করার পাশাপাশি শিখতে পারবে কিছু।
খালেদ হোসাইন:
রবীন্দ্রনাথের বইগুলো পড়েছি, নজরুল-সুকান্তের বই। আলী আহমেদ চুনকা পাঠাগারে পড়ি সুনির্মল বসুর ‘ছন্দের টুং টাং’। চমৎকারভাবে ছন্দ আলোচনা করা। মনে পড়ছে, ইউ ডু, আই ডু, সরোজিনী নাইডু!’ খুব সহজ করে বলা। সুকুমার রায়, অবন ঠাকুর, সুনির্মল বসু, অখিল নিয়োগী বা স্বপ্নবুড়ো, দেবসাহিত্য কুটিরের বার্ষিকীগুলো, উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। এখলাসউদ্দিন আহমদের ‘মাঠপাড়ের গল্প’, ‘বৈঠকী ছড়া’ আলী ইমামের নানা বইÑগল্প-উপন্যাস, প্রবন্ধ। পরে অন্যদের লেখা। যে যার পছন্দ অনুযায়ী বই পড়লেই ভালো। যেমন আমার বড় ভাই ইংরেজি বইগুলো জোগাড় করে আনতেন আমার কথা ভেবে, আমি উপকৃত হয়েছি। 

 

প্রশ্ন: বাংলা শিশুসাহিত্যের নিবেদিত ও সমৃদ্ধ এই সময়ের কয়েকজন শিশুসাহিত্যিকের নাম বলুন, তারা কেন সেরা?
খালেদ হোসাইন:
এই সময়ের? যাঁরা এখনো লিখছেন? লুৎফর রহমান রিটনÑসহজাতভাবে সমৃদ্ধ, বিষয় ও রূপায়ণে চমক থাকে। আমীরুল ইসলামÑবিষয়ের সম্প্রসারণে অনিসন্ধিৎসু, মাহবুবা হক কুমকুমÑএকটি থেকে অন্য লেখায় নিজেকে অতিক্রম করে যান, ওয়াসিফ এ খোদা- একনিষ্ঠ, বৈচিত্র-অভিসারী, নির্জন। কোমলভাবে রাজনীতিকে তুলে আনেন। রোমেন রায়হান- স্বতঃস্ফূর্ত, সাবলীল ও জ্যান্ত, ব্রত রায়- সমকাল ও সর্বকালের সমন্বয়ের চেষ্টা করেন। সম্প্রতি অনেকের লেখাই ভালো লাগছে। এমন প্রশ্নে উত্তর দেয়াটা ভালো না। হঠাৎ সবার নাম মনে পড়ে না। তাঁদের ক্ষিপ্ত হবার কারণ তৈরি হয়। দেখেছি, অনেক সময় মানোত্তীর্ণ ও ঘনিষ্ঠজনদের নাম বাদ পড়ে যায়। তাঁদের কাছে মার্জনা প্রার্থনা করি। তাঁরা নিশ্চয় বুঝবেন। 

 

প্রশ্ন: এখন পর্যন্ত আপনার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা কত?
খালেদ হোসাইন:
সব মিলিয়ে পঞ্চাশের মতো, শিশুসাহিত্য কেন্দ্রিক গোটা বিশেক। 

 

প্রশ্ন: নতুন কী লিখছেন?
খালেদ হোসাইন:
যা লেখি, সবই নতুন মনে হয় আমার, যদি লেখি। তেমন বড়ো কোনো পরিকল্পনা নিয়ে কিছু লেখা হচ্ছে না। ছড়া সমগ্রের ২য় খ- প্রকাশিত হবে, মনে মনে গোছাচ্ছি। একাডেমিক লেখা ও দেখা নিয়ে ব্যস্ত আছি। মৌলিক লেখার মধ্যে মূলত ছড়া ও কবিতাই লিখছি।  

 

প্রশ্ন: তরুণ শিশুসাহিত্যকদের উদ্দ্যেশে বলুন। সাহিত্য রচনায় নিজেদের কীভাবে সমৃদ্ধ করতে পারে তারা?
খালেদ হোসাইন:
যাঁরা শিশুসাহিত্য করতে আসেন, তাঁদের আন্তরিকতার প্রশংসা করি, আর প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা কথা মনে পড়িয়ে দিতে চাই। অনেক পড়লে জানা যায়, কী ও কীভাবে তা আমাকে না লিখলেও চলবে, কীভাবে লিখতে হবে তার ইশারাও পাওয়া যাবে। বইপড়ার মতো শিশুদের ভালোবাসাটাও জরুরি। ভালোবাসাও সাধনার ব্যাপার। বিষয়ই সব নয়, বলবার ভঙ্গির মধ্যে অভিনত্ব সৃষ্টি করতে পারলে নিজের মনে শান্তি পাওয়া যায়।  

 

প্রশ্ন: শিশুসাহিত্যিক আইরীন নিয়াজী মান্না ও তার সম্পাদিত ‘কিশোর লেখা’ নিয়ে কিছু বলুন।
খালেদ হোসাইন:
আইরীন নিয়াজী মান্নার সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক সুদীর্ঘদিনের। তিনি যা করেন সম্ভব সর্বাধিক নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা নিয়েই করেন। মান্না এই সময়ের একজন নিষ্ঠাবান শিশুসাহিত্যিক। ছোটদের জন্য যারাই এই সময়ে পত্রিকা বের করছেন, তাঁদের সবাইকে অভিনন্দন জানাই। চিত্তের ঔদার্য ছাড়া এমন একটি সাংগঠনিক কাজকে এ সময়ে এগিয়ে নেয়া যায় না। 
‘কিশোর লেখা’ সাধারণত ইস্যুভিত্তিক হয়ে থাকে। এ ধরনের কাজে দূরদর্শি পরিকল্পনা লাগে, লেখা জোগাড়ের জন্য অহর্নিশি প্রয়াস চালাতে হয়, পত্রিকাকে রঙিন ও অলংকৃত হতে হয়। প্রগাঢ় মমতাবোধ ছাড়া এসব বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।‘কিশোর লেখা’ এই সময়ে আমার খুব প্রিয় একটি মানসিক আস্তানা ও আহার। আমি প্রিয় মান্নার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনা করি। কিশোর লেখারও।