ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ২৩:৩০:৫৭ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

১৮ মার্চ শুরু বইমেলা, চলো যাই বইমেলাতে

আফসানা হাফিজ | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:০৩ পিএম, ৬ মার্চ ২০২১ শনিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বাংলাদেশে যত বইমেলা হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বড় আর প্রধান হল ‘অমর একুশে বইমেলা’। আগামী ১৮ মার্চ শুরু হচ্ছে এই বইমেলা। শেষ হবে ১৪ এপ্রিল। বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের তান্ডবে এবার বইমেলা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। একুশে বইমেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের দেশের ইতিহাস। অন্যভাবে বলতে গেলে, আমাদের রাষ্ট্রভাষা ও বাংলাদেশ সৃষ্টির সঙ্গে একসূত্রে গাঁথা এই বইমেলার ইতিহাসও। বইমেলার সাতসতেরো জানাচ্ছেন উইমেননিউজ২৪.কম- এর বিশেষ প্রতিনিধি আফসানা হাফিজ

বইমেলা যেভাবে এলো
প্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় অনেক রকম মেলা পালনের খবর পাওয়া যায়। সভ্য সমাজের জন্য বইমেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হলেও বইমেলার ইতিহাস আসলে খুব বেশি প্রাচীন নয়। কারণ অতীতে বই প্রকাশ করতে চাইলে তা লিখতে হত হাত দিয়ে চামড়া, গাছের বাকল, গাছের পাতা ইত্যাদির উপর। তখন তো বই ছাপার যন্ত্রপাতি ছিল না। তাই বই প্রকাশে অনেক ঝামেলা পোহাতে হত। তাই বইমেলার কথা কেউ চিন্তাও করতে পারত না।
কিন্তু ছাপাখানা উদ্ভাবনের পর বই প্রকাশনা অনেক সহজ হয়ে গেল মানুষের কাছে। তাই মানুষ বইমেলার মত সম্পূর্ণ নতুন একটি মেলার সঙ্গে পরিচিত হল। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, এই ধরো, আজ থেকে ৫০০ বছর আগের কথা। খ্রিস্টীয় পনের শতকের। সবেমাত্র জোহানস গুটেনবার্গ মুদ্রণযন্ত্র বা ছাপাখানা আবিস্কার করেছেন। মানুষ ছাপাখানার সুবিধা উপভোগ করতে শুরু করেছে। সে সময়ই বিশ্বের প্রথম বইমেলা শুরু হয় জার্মানিতে।
কেউ কেউ বলেন, জার্মানির লিপজিগ শহরে প্রথম বইমেলাটি হয়েছিল। আবার কারও কারও মতে প্রথমে আসলে শুরু হয়েছিল ফ্রাংকফুর্ট শহরেই, কিন্তু মাঝে লিপজিগ খুব বড় করে মেলার আয়োজন করায় ওটার নামই লোকে জানত বেশি। প্রথমদিকে এসব মেলা তেমন সাড়া ফেলতে না পারলেও ধীরে ধীরে এটা অনেককে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়। তারপর ১৭ শতকের পর ইউরোপসহ বিশ্বের আরও কিছু দেশ ফ্রাংকফুর্টের আদলে বইমেলার আয়োজন করতে থাকে। আর এখন তো সারাবিশ্বে বইমেলা আকর্ষণীয় একটা মেলা।

বইমেলার নাম অমর একুশে বইমেলা কেন?
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারি বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে শহীদ হন রফিক, জব্বার, বরকত, সালামসহ আরও অনেক তরুণ শিক্ষার্থী। সে সংগ্রামে অর্জিত হয় বাংলাভাষার রাষ্ট্রীয় সম্মান। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১-এ বাংলাদেশ পায় স্বাধীনতা।
নবগঠিত বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক সাহিত্যিক জাগরণের প্রথম প্রকাশ ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। আসলে আমাদের মায়ের ভাষা বাংলাভাষার জন্য যারা নিজেদের প্রাণকে তুচ্ছ করেছিল তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যেই আমাদের এই বইমেলার নাম ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’।

একুশে বইমেলার শুরু হলো যেভাবে
১৯৭২ সালের কথা। চিত্তরঞ্জন সাহা বলে এক ভদ্রলোক বাংলা একাডেমীর উঠানে এসে কিছু বই নিয়ে বসলেন বিক্রির উদ্দেশ্যে। উনি একজন প্রকাশক। তার প্রকাশনার নাম মুক্তধারা, খুবই নামকরা প্রকাশনা সংস্থা ছিল ওটা একসময়। বাংলাদেশের প্রগতিশীল ও মুক্তমনা লেখকদের বই প্রকাশ করত এই মুক্তধারা।
সে বছর বাংলা একাডেমীও একুশ উপলক্ষে হ্রাসকৃত মূল্যে বই বিক্রয় করেছিল। কিন্তু চিত্তরঞ্জন সাহার মুক্তধারা ছিল একমাত্র বেসরকারি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। এভাবে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে একুশ উপলক্ষে বইমেলা একাই চালিয়ে যান। পরের বছর চিত্তরঞ্জন সাহার সাফল্য দেখে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তার সঙ্গে একাডেমী প্রাঙ্গণে বই বিক্রি শুরু করেন। পরবর্তী তিনবছরের মধ্যে সেখানে বই বিক্রেতাদের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। এ কারণে সে বছরই বাংলা একাডেমী একুশ উপলক্ষে বই বিক্রেতাদের বই বিক্রির এই প্রচেষ্টাকে বইমেলা হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়।
তারপর ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমী এই বইমেলাকে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামে নামকরণ করে। প্রতিবছর এই মেলার পরিধি বাড়ছে। যেমন ধরো, ১৯৮০ সালে মেলার স্টল ছিল মাত্র ৩০টি। কিন্তু ২০০৭ সালে মেলার স্টল সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৪১২টিতে। অবশ্য ২০০৮সালে বিশেষ কারণে বইমেলার স্টল সংখ্যা কমিয়ে ৩৬১টিতে আনা হয়েছিল। প্রতি বছরই মেলার দর্শক, পাঠক, লেখকদের সংখ্যা বাড়ছে।

অন্যান্য দেশে বইমেলা
বই হচ্ছে অফুরন্ত আনন্দ ও জ্ঞানের ভাণ্ডার। তাই পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই বইমেলার আয়োজন করা হয়। বিশ্বের শত শত বইমেলা থেকে সুপরিচিত কিছু বইমেলার কথা তুলে ধরা হলো এখানে।

ফ্রাংকফুর্ট বইমেলা : ফ্রাংকফুর্ট বইমেলা প্রায় ৫০০ বছরেরও প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী। বর্তমান সময়ে এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় বইমেলা। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট শহরে এই মেলা শুরু হয়। পাঁচদিনব্যাপী এই মেলার আয়োজক ‘জার্মান পাবলিশার অ্যান্ড বুকসেলার অ্যাসোসিয়েশন’।

লন্ডন বইমেলা: ফ্রাংকফুর্ট বইমেলার মত বড় না হলেও এ মেলারও আকৃতি আর গুরুত্ব রয়েছে বেশ। প্রতি বছর মার্চে তবে কোন কোন সময় অক্টোবরে আয়োজন করা হয় এ মেলার।

কলকাতা বইমেলা: কলকাতা বইমেলাকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম হিসেবে ধরা হয়। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের শেষ বুধবার থেকে ফেব্র“য়ারি মাসের প্রথম রবিবার পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

নিউ দিল্লি বইমেলা: নিউ দিল্লি বইমেলা ভারতের বৃহত্তর মেলা। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারতই ইংরেজিসহ অন্যান্য ভাষায় বই প্রকাশ করে। প্রতিবছর ভারতে ১২ হাজার প্রকাশক প্রায় ৯০ হাজার শিরোনামের বই ১৮টি ভাষায় প্রকাশ করে থাকে।

হংকং বইমেলা: হংকং ট্রেড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল-এর উদ্যোগে প্রতি বছর আয়োজিত হয় হংকং বইমেলা। হংকং কনভেনশন অ্যান্ড একজিবিশন সেন্টারে প্রতিবছর জুলাই মাসে এই মেলা শুরু হয়।