ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:৫৮:৩৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

অভাবের তাড়নায় ৫০ হাজার টাকায় সন্তান বিক্রি!

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি  | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:০২ এএম, ৩ অক্টোবর ২০২৫ শুক্রবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মানুষের বাড়িতে ভিক্ষাবৃত্তি করে চলে মারুফা আক্তারের (৩৫) সংসার। তার স্বামী লালন মিয়া দিনমুজুর। যখন যে কাজ পান সেই কাজই করেন। বিয়ের আট বছরে মারুফা-লালন দম্পতির ঘরে একে একে জন্ম নিয়েছে সাত সন্তান। লালন মিয়া ও স্ত্রী মারুফার নিজেদের বাড়ি বা জমি নেই। অভাবের কারণে লালনের বাবা মৃত্যুর আগে নিজের বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। 

সম্প্রতি অভাবের তাড়নায় তারা দুই পুত্র সন্তানকে বিক্রি করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটেছে।

সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে সন্তান জন্মের ১৫ দিন পর নিজের নাড়িছেঁড়া ধনকে তুলে দিয়েছেন অন্যের হাতে। বিনিময়ে তারা পেয়েছেন ৫০ হাজার টাকা। এর আগেও আরেকটি সন্তানকে জন্মের পরই ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন এই দম্পতি।  

সরেজমিন দেখা যায়, অন্যের জমিতে একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে আশ্রয় নিয়েছেন লালন-মারুফা। ঘরের দরজা ভেতর থেকে লাগানো। দরজায় কড়া নাড়তেই একটি ছোট বাচ্চা দরজা খুলে, দেখা মেলে মা আর সন্তানের ভালোবাসার এক দৃশ্য। একটি ছোট ঘর, নেই কোনো আসবাবপত্র। ঘরের এক কোণে সদ্য সন্তান জন্ম দেওয়া অসুস্থ এক মা বসে আছেন; আর তার চারপাশে ছোট ছোট পাঁচটি শিশু ঘিরে আছে। মাটিতে বসে শিশুগুলো বিভিন্ন পাত্রে ভাত খাচ্ছে সেদ্ধ লাউ দিয়ে। দেখে মনে হচ্ছে বাচ্চাগুলো দীর্ঘদিন ধরে কিছু খায়নি।

সন্তান বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে মারুফা বলেন, আমাদের কেউ নাই। অভাবে পড়লেই মানুষ গালি দেয়, লাথি দেয়। শিশুদের মুখে দুধ জোটে না। বিছনাপাতি নাই, মাডিত ঘুমাই। আর বুকের ভেতরে আগুন জ্বলে, তবুও কিছু করার নাই। এহন যহন নিজের আবুইদ্যা বেইচ্যা দিছি মাইনসে আইসা মেলা কথা কয়। আমরার পেটে যখন খাওন থাহেনা তখন কেউ আইসা জিগাই না।

লালন-মারুফা দম্পতির ফুফু জাহানার বেগম বলেন, বেইচ্যা বেছতনা কিতা করব? ভিক্ষা কইরা খায়। কেউ এরার খবর নেয় না। আবুইদ্যাডা জন্মের পর থেইক্যা অসুস্থ আছিন। হের লাইগ্যা বিক্রি কইরা দিছে। 

লালন মিয়া বলেন, এমন একটা অবস্থা আছিন কাচা (নবজাতক) আবুইদ্যা আর বৌডারে লইয়া বিপদে পইড়া গেছিলামগা। সন্তান জন্ম দেওনের পর বৌডা খুবই অসুস্থ হয়ে যায় আর অন্যদিকে আবুইদ্যাও মরা যাওনের অবস্থা হয়। ভাবছি ঘরে না খাইয়া, বিনা চিকিৎসায় পোলাডা মইরা যাইব। হের লাইগ্যা বেইচ্যা দিছি। কাগজ কইরা দিয়া দিছি। কাগজ ছাড়া কেউ কিনতে চায় না।

স্থানীয় বাসিন্দা মোছাম্মত নূরুন্নাহার বেগম বলেন, মারুফার চিৎকার শুনে আমি গিয়ে দেখি ওর প্রসব বেদনা উঠছে, আল্লাহ উদ্ধার করছে। জন্মের পর থেকে বাচ্চাটাকে বিভিন্ন রোগে ধরছে। এমনিতে পাঁচটা বাচ্চা আছে, এগুলোরেই খাবার দিতে পারে না। বাচ্চাকে চিকিৎসা কেমনে করাইব।

বুড়িশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইকবাল চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি। 

নাসিরনগর থানার ওসি মাকছুদ আহাম্মদ বলেন, আমি দুই দিন হয় এই উপজেলায় বদলি হয়ে আসছি। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীনা নাসরিন বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তবে এক্ষেত্রে সরকারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে শুরু করে বিভিন্ন এনজিও সঠিকভাবে কাজ করলে অযাচিত জন্মহার কমানো যেত। তারপরও এই পরিবারকে আর্থিক ও আশ্রয়ণের ঘর দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. হাফিজ উদ্দীন ভূইয়া বলেন, দরিদ্রতা আগেও ছিল এখনো আছে; কিন্তু বস্তুতান্ত্রিকতার কারণে আমাদের পারিবারিক বন্ধন লোপ পেয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা আগে খুব একটা শোনা যেত না। এখন প্রায়ই এসব ঘটনা ঘটছে। তবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন দপ্তর যদি তাদের দায়িত্বটুকু সঠিকভাবে পালন করত তাহলে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যেত।