ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:১৪:৩৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

মেধাবী ছাত্রী নন্দিনীর মৃত্যু নিয়ে যা জানা গেল

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:৩৮ এএম, ৯ অক্টোবর ২০২৫ বৃহস্পতিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

প্রথম বর্ষের শেষ পরীক্ষায় বুধবার (৮ অক্টোবর) অংশ নেওয়ার কথা ছিল তার। এর আগেই গত ৫ অক্টোবর গভীর রাতে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা হাসপাতালে মারা যান ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্রী নন্দিনী সরকার। তার মরদেহ গ্রামের শ্মশানে নেওয়া হয়নি। পারিবারিক জমিতে দাফন করা হয়েছে (মাটিচাপা) তাকে।

এদিকে অনুসন্ধানে মিলেছে ভয়ঙ্কর তথ্য। কুষ্টিয়া সদর থানার ওসি (অফিসার ইনচার্জ) মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন, থানার এসআই হাফিজুর রহমান নন্দিনীর সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেছেন। এর আগে নন্দিনীর মৃত্যুর বিষয়টি অবহিত করে কুষ্টিয়া হাসপাতাল থেকে একটি স্লিপে থানায় (কুষ্টিয়া) পাঠানো হয়। ওই স্লিপে মৃত্যুর করণ হিসেবে মাদকের বিষক্রিয়াতে নন্দিনীর মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (কুষ্টিয়া হাসপাতাল) ডা. হোসেন ইমাম। কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে।

কুষ্টিয়া সদর থানার ওসি (অফিসার ইনচার্জ) আরও জানিয়েছেন, কুষ্টিয়া থানায় কোনো মামলা বা জিডি হয়নি; কিন্তু শৈলকূপা (ঝিনাইদহ) থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। শৈলকূপা থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুম খান অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করার খবর নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, কুষ্টিয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরে রাজি না হওয়ায় জনৈক সঞ্জয় কুমার সরকার (বিজনের প্রতিবেশী) শৈলকূপা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন। ওই অপমৃত্যুর মামলায় মাদকের বিষক্রিয়াতে নন্দিনীর মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে  সঞ্জয় কুমার সরকার বুধবার (৮ অক্টোবর) টেলিফোনে জানান, ওই দিন ( ৫ অক্টোবর) চরম ব্যস্ততার মাঝে ছিলাম। কী লিখেছি তা মনে নেই।

তিনি আরও জানান, অপমৃত্যুর মামলার তথ্য ইমেইলে পাওয়ার পরে কুষ্টিয়া হাসপাতালের ডাক্তারেরা ময়নাতদন্ত করেন এবং স্বজনদের কাছে মরদেহ বুঝে দেন।

জানা যায়, মানিকগঞ্জ জেলার গিলন্ড গ্রামের ইজিবাইকচালক অনিল সরকারের দুই মেয়ের মধ্যে নন্দিনী বড়। দুর্গাপূজার সপ্তমীর দিনে পূজার উৎসব উপভোগ করতে ছোট বোন বিনা (১৭), চাচা গণেশ সরকারের স্ত্রী হাসি ও চাচাতো ভাই (গণেশ সরকারের ছেলে) সমিরকে সঙ্গে নিয়ে ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার ভাণ্ডারীপাড়ায় বিজন সরকারের বাড়িতে আসেন। অষ্টমীর দিনে আসেন চাচা (নন্দিনীর) গণেশ সরকার। গাজীপুর প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলস নামের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে ট্রান্সপোর্ট সুপারভাইজার পদে চাকরি করেন তিনি (গণেশ সরকার)।

শৈলকূপা উপজেলার ভাণ্ডারীপাড়া গ্রামে তার শ্বশুরবাড়ি। বিজন তার শ্যালক। অর্থাৎ হাসির (গণেশের স্ত্রী) বাবার বাড়ি। গণেশ সরকারের দুই ছেলে। ছোট ছেলে প্রতিবন্ধী।

গণেশ জানান, গত ৩ অক্টোবর শুক্রবার নৌকা ভাড়া করেন তারা। শৈলকূপা শহর সংলগ্ন কুমার নদে বিসর্জন উপভোগ করেন পরিবারের সদস্যরা। তাদের সঙ্গে প্যারামাউন্ট ট্যাক্সটাইলস মিলের দুইজন কর্মচারীও ছিলেন। কিন্তু তাদের নাম পরিচয় জানাননি গণেশ। গত ৪ অক্টোবর অসুস্থ হয়ে পড়েন নন্দিনী। সন্ধ্যা ৭টার দিকে শৈলকূপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয় তাকে (নন্দিনী)।

গণেশের দেওয়া তথ্যমতে সমিরসহ তিনজন নন্দিনীকে নিয়ে যায় শৈলকূপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। একজন নারী ডাক্তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন এবং স্যালাইন দেওয়ার কথা বলেন। ওই দিন বাড়িতে (বিজন সরকারের বাড়ি) এনে স্যালাইন দেওয়ার কিছু সময় পর রাত অনুমান ১২টার দিকে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন নন্দিনী। আবারও নেওয়া হয় শৈলকূপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। চারজন ডাক্তার নন্দিনীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন এবং সংজ্ঞাহীন অবস্থায় রেফার করা হয় কুষ্টিয়া হাসপাতালে। সেখানে রাত অনুমান ৩টা ১০ মিনিটের দিকে মারা যান নন্দিনী।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে নানা নেতিবাচক গল্প। এতে শোকে কাতর নন্দিনীর পরিবারটি বিব্রতকর অবস্থায় দিন কাটছে বলে জানান গণেশ সরকার।

বিজন জানান, শৈলকূপা শহরে পূজার বিসর্জন হয়েছে ২ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার)। ভাণ্ডারীপাড়াসহ অন্যান্য গ্রামের বিসর্জন হয়েছে ৩ অক্টোবর (শুক্রবার)। বাড়িতে অতিথি ঠাসা। কে কোথায় কী করছে কিছুই বোঝা যায়নি।

নন্দিনীর প্রসঙ্গ টেনে বিজন বলেন, আসার পর থেকে পড়ালেখায় মগ্ন ছিলেন। বিসর্জনের দিনে নৌকায় করে আনন্দ করেছে। মদপান করেছে কিনা জানা নেই বলে দাবি করেন বিজন।

গ্রামের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায় বিসর্জনের দিন (অক্টোবর) নন্দিনী ও তার ছোট বোন বিনাসহ অন্তত ৬ জন সমবয়সী নারী নৌকায় চড়ে আনন্দ করেন। তারা পান করেন বাংলা মদ। সেই থেকে নন্দিনী অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৪ অক্টোবর সকাল থেকে অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এরপর ওই দিন (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় নেওয়া হয় শৈলকূপা উপজেলা স্বাস্থ্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে; কিন্তু সেখানে থাকতে চাইনি নন্দিনী।

প্রাপ্ত তথ্যমতে একজন নারী ডাক্তার নিবিড়ভাবে কথা বলে ঘটনা জানার চেষ্টা করেন।

সংশ্লিষ্ট উপজেলা (শৈলকূপা) স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রথমে শরীর দুর্বল এবং দ্বিতীয়বার শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসেন নন্দিনী।

শৈলকূপা হাসপাতালে জরুরি বিভাগের নথি পর্যালোচনা করে জানা যায়, ৪ অক্টোবর (২০২৫) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নন্দিনীকে চিকিৎসার জন্য আনা হয়। পরে ৪ তারিখ দিবাগত রাত (৫ অক্টোবর)  আড়াইটার দিকে দ্বিতীয়বার হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালের রেজিস্টার খাতায় নন্দিনীর ভর্তির কারণসহ পুলিশ কেস হিসেবে সিল দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ মাদকের বিষক্রিয়া বা অতিরিক্ত মদপানের প্রাথমিক আলামত ওই দিন নন্দিনীর শরীরে মিলেছিল।

এ বিষয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহের সহকারী পরিচালক গোলক মজুমদার জানান, বাংলা মদ যা ক্যারু অ্যান্ড কোম্পানিতে প্রস্তুত করা হয়; সেটি পান করলে বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু ওই মদের সঙ্গে ভেজাল মেশালে বিপদ হতে পারে এবং মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

তিনি আরও জানান, একজন পরিদর্শকের নেতৃত্বে একটি টিম মাঠে নেমেছে। কী ধরনের মাদক নন্দিনী পান করেছিল সেটি চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে তারা।

প্রাপ্ত তথ্যমতে- ইতোমধ্যে সরকারের উচ্চমহল থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নন্দিনীর মৃত্যুর সঠিক কারণ খুঁজে বের করতে পুলিশ প্রশাসনকে (ঝিনাইদহ) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার (৭ অক্টোবর) দুপুরের দিকে সাদা পোশাকে শৈলকূপা থানার দুইজন পুলিশ সদস্য উপজেলার (শৈলকূপা) ভাণ্ডারীপাড়া গ্রামের বিজয় কুমার সরকারের বাড়ি পরিদর্শন করেছেন।

শৈলকূপা থানার ওসি মাসুম খান বুধবার (৮ অক্টোবর) রাতে জানান, অপমৃত্যুর মামলায় বাদী নন্দিনীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে মাদকের বিষক্রিয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পরে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে বলে জানান ওসি।