ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ১৯:২১:২৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
চট্টগ্রামে আজ শুরু উইম্যান এসএমই এক্সপো হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউ পুড়ে ছাই, রক্ষা পেল ৭ শিশু সবজির বাজার চড়া, কমেনি মুরগির দাম সারা দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি

করোনার ৬ মাস: কী বুঝলাম, এখনও অস্পষ্ট কী

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৪:২৫ পিএম, ১২ জুন ২০২০ শুক্রবার

করোনার ৬ মাস: কী বুঝলাম, এখনও অস্পষ্ট কী

করোনার ৬ মাস: কী বুঝলাম, এখনও অস্পষ্ট কী

ঠিক কবে এবং কার শরীরে প্রথম কোভিড-১৯ সংক্রমণ হয়েছিল, জানা নেই আমাদের। এই মহামারি পর্বের স্থায়িত্বকাল কতটা হবে, তা-ও ঘোর অস্পষ্ট। তবে যেটা নিয়ে সংশয় নেই তা হল, ডিসেম্বর ২০১৯-এর গোড়ার দিকে এই সংক্রমণ প্রথম ছড়িয়ে পড়েছিল চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে। অর্থাৎ, দেখতে দেখতে বিশ্ববাসীর জীবনে অর্ধেকটা বছর বা ছয়টা মাস কেটে গেল এই ভাইরাসকে সঙ্গে নিয়ে।

প্রথম যখন এই ভাইরাসের অস্তিত্ব সামনে আসে, তখন এর কোনও নাম ছিল না। স্থায়ী নামকরণের আগে প্রাথমিক ভাবে নোভেল করোনাভাইরাস (nCoV) ২০১৯ বলা হচ্ছিল। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ঘোষণা করে, করোনা গোষ্ঠীর এই ভাইরাসটির নাম সার্স-কোভ-২ (SARS-CoV-2 বা Severe Acute Respiratory Syndrome Coronavirus 2)। আর এই ভাইরাসঘটিত রোগটির নাম কোভিড-১৯ (Covid -19 বা Coronavirus Disease 2019)

ছয় মাস পরেও কিন্তু অনেকটাই চিনে বা বুঝে ওঠা যায়নি এই নবাগত শত্রুকে। মোকাবিলার স্থায়ী পথ তো দূরের কথা— কী ভাবে এই সংক্রমণ থেকে নিজেদের দূরে রাখা সম্ভব, কোন পথে এর সংক্রমণ ছড়ায়, কী ভাবে আটকানো যায় এর দ্রুত ছড়িয়ে পড়া— এ সব নিয়েও হোঁচট খেতে খেতে এগোতে হচ্ছে। অনেক উত্তর চার মাস আগে যা ছিল, চার মাস পরে তা বদলে গিয়েছে। সব মিলিয়ে ধোঁয়াশা এখনও অনেক। তবে এই ধোঁয়াশার মধ্যে থেকেই করোনাভাইরাস নিয়ে আমরা কিছু কিছু জিনিস মোটামুটি নিশ্চিত ভাবে জেনে বা বুঝে গেছি আমরা। যা ছয় মাস পরের এই পরিস্থিতিতে এক-দুই-তিন-চার করে বলে ফেলা সম্ভব।

সংক্রমণ দেশে দেশে ছড়াতে শুরু করার একদম গোড়ার দিকে একটা কথা চালু হয়ে গিয়েছিল— শীতটা কাটলেই করোনা চলে যাবে। ফলে ভারতের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে একটা স্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছিল এই মতামত। কিন্তু অচিরেই ভুল ভাঙল। গ্রীষ্ম গ্রাস করতে পারেনি একে।

বিশ্বময় করোনা ছড়ানোর প্রথম বাহন ছিলেন বিমানযাত্রীরা। আন্তর্জাতিক বিমানযাত্রায় যখন লকডাউন হতে শুরু করল, তত দিনে ভাইরাস ঢুকে পড়েছে দেশে দেশে।

এবার দেশের ভিতর যাতে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় সংক্রমণ না ছড়ায়, তার জন্য শুরু হল ‘কমপ্লিট লকডাউন’। যাত্রিবাহী ট্রেন-বাস-ঘরোয়া বিমান-ট্যাক্সি-অটো পর্যন্ত বন্ধ হল। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া বাকি সব দোকান-বাজার-রেস্তঁরা-কলকারখানা সব বন্ধ। ইউরোপ-আমেরিকার তুলনায় অনেক কম সংক্রমিত অবস্থায় এ দেশে লকডাউন শুরু হয়েছে। সংক্রমণ অবশ্য থেমে থাকেনি। দৈনিক নতুন সংক্রমণ বাড়তেই থেকেছে একটু একটু করে। যদিও অনেকেই মনে করেন, লকডাউন না হলে সংক্রমিতের সংখ্যায় অনেক আগে আমরা আমেরিকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফেলতাম।

কিন্তু বেঁচে থাকার যুদ্ধ তো শুধু মারণরোগের সঙ্গে নয়, রুজি-রুটির জন্যও। লকডাউন এখানে থাবা বসালো ভয়ঙ্কর ভাবে। করোনায় মরব, না কি না-খেয়ে মরব— ক্রুর বাস্তবতার এই চরম সঙ্কটে দাঁড়িয়ে, অর্থনীতির ডুবুডুবু নৌকাকে আবার ঠেলে তুলতে এখন চলছে আনলক পর্ব। ‘স্বাভাবিক’-এ ফেরার পর্ব। এই লক-আনলক বিভ্রান্তি পর্ব শুধু এ দেশে নয়, প্রায় সারা বিশ্বে একই ভাবে হাজির হয়েছে।

সবাই জানেন, লকডাউনের রাশ যত আলগা হবে, আরও বাড়বে সংক্রমণ। কিন্তু উপায় নেই। এই পরিস্থিতিতে আমরা তাকিয়ে রয়েছি অনেকগুলো ফ্যাক্টরের দিকে। মিউটেশন প্রক্রিয়ায় ভাইরাস দুর্বল হয়ে পড়বে, আবিষ্কার হয়ে যাবে প্রতিষেধক, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু কোনও দিক থেকে আশু কোনও সুখবরের নিশ্চয়তা নেই বললেই চলে। ফলে মেনে নিতে হচ্ছে, করোনার সঙ্গেই আপাতত আমাদের চলতে হবে। সাবধানে।

অর্থাৎ‌, করোনা এবং জীবন পাশাপাশি— এটাই নতুন স্বাভাবিকত্ব। সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক, হাত ধোওয়া, সর্দিকাশি হলেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার মতো বিষয় হয়ে উঠছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ। করোনা যত দিন থাকবে, চলতে হবে এ ভাবেই।  সেটা কত দিন, কেউ জানে না।

কোভিডে আক্রান্ত এবং মৃতদের মধ্যে প্রবীণদের অংশ বিশাল এতে সন্দেহ নেই। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গবেষণাকারী সংস্থা ‘হেল্থ অ্যানালিটিকস এশিয়া’র একটি রিপোর্ট অনু্যায়ী ভারতে মৃতদের মধ্যে ৬৩ শতাংশই ৬০ বছরের বেশি বয়সী। এপ্রিল মাসে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয় থেকে পাওয়া তথ্যের উপর ওই সমীক্ষা করা হলেও এখনও সেই চিত্রটা খুব একটা পাল্টায়নি।

ইউরোপ-আমেরিকার করোনাচিত্রে সামান্য হেরফের হলেও মোটের উপর ছবিটা একই প্রকৃতির। ইউরোপে ‘বুড়োরা  মরছে আমাদের কী’— এই জাতীয় মনোভাব প্রথম দিকে তরুণ প্রজন্মের একটা অংশের মধ্যে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু করোনার বয়স যত বেড়েছে সেই ধারণা ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে। সারা বিশ্বেই করোনা আক্রান্তদের একটা বড় অংশের বয়স ২০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। ফলে বয়সের তত্ত্ব ছেড়ে উঠে এসেছে ‘ইমিউনিটি’ বা ‘রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা’র তত্ত্ব।  অর্থাৎ, শরীরে রোগ প্রতিরোধ  ক্ষমতা যত বেশি থাকবে, করোনা থেকে তিনি তত বেশি ভয়মুক্ত। যেহেতু এই ভাইরাস ফুসফুসে আক্রমণ করে, তাই ফুসফুস সংক্রান্ত জটিলতা থাকলে ঝুঁকি বেশি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়ে উঠছে প্রাণঘাতী।

কী ভাবে একজন আক্রান্তের থেকে অন্য জনের শরীরে সংক্রমণ ছড়ায়? এত দ্রুত এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে সংক্রমিত করা দেখে একদম শুরুর দিকে ভাইরোলজিস্ট ও গবেষকদের একটা অংশ মনে করছিলেন, এই ভাইরাস বায়ুবাহিতও।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনার সংক্রমণ ছড়ায় শুধুমাত্র সংক্রমিত ব্যক্তির ‘ড্রপলেট’ থেকে। হাঁচি-কাশি বা কথা বলার সময় আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ থেকে আণুবীক্ষণিক লালাবিন্দু ছিটকে বের হয়, সেটা থেকেই অন্যের শরীরে সংক্রমণ ঘটে। সরাসরি সেই ড্রপলেট কারও গায়ে না পড়লেও ধাতব বস্তু, জামাকাপড়ের উপরে পড়লে, তার উপর অন্য কেউ হাত দিলে এবং সেই হাত নাকে মুখে দিলে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি বিপদ আক্রান্ত ব্যক্তির ড্রপলেট অন্য কারও শরীরে সরাসরি পড়লে।

সম্প্রতি আমেরিকার ‘সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ (সিডিসি)-এর বিজ্ঞানীদের গবেষণাতেও উঠে এসেছে, জিনিসপত্রের মাধ্যমের চেয়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের সংস্পর্শেই অনেক অনেক বেশি সংক্রমণ ঘটাচ্ছে এই ভাইরাস।

সিডিসির বিজ্ঞানীরা সমীক্ষায় দেখেছেন, বহু হাত ঘুরে অনলাইনে আসা কোনও পার্সেলের থেকেও একজন সংক্রামিত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে আসা অনেক বেশি ঝুঁকির।

এই সমীক্ষায় আরও উঠে এসেছে, আলমারি ও ড্রয়ার জাতীয় জিনিসে এই ভাইরাস প্রায় ২৪ ঘণ্টা বেঁচে থাকে। ধাতু ও প্লাস্টিকে বাঁচে প্রায় তিন দিন। কিন্তু আশ্রয় নেওয়ার মতো মানবশরীর না পেলে এই ভাইরাস ততটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে না।

প্রবল জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট—এগুলোই প্রাথমিকভাবে কোভিডের উপসর্গ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। তবে মাথা ব্যথা, বমির মতো কয়েকটি লক্ষণও দেখা গিয়েছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে। তবে করোনার কারণেই এই সব উপসর্গ, নাকি সংক্রমণের আগে থেকেই সেগুলো থাকছে এবং করোনা সংক্রমিত হলে সেগুলি প্রকট হচ্ছে, সে বিষয়ে এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা।

কিন্তু বিজ্ঞানীদের কপালের ভাঁজ চওড়া হয়েছে অন্য কারণে। প্রায় সব দেশেই এমন বহু আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে, যাদের কোনও উপসর্গই ছিল না।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয়ের হিসেবে, দেশে মোট আক্রান্তের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষই ছিলেন উপসর্গহীন। সারা বিশ্বের প্রেক্ষিতে সেই অঙ্ক আরও বেশি— প্রায় ৩৫ শতাংশ।

অর্থাৎ করোনার ছয় মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর এটা নিশ্চিত যে সর্দি-কাশি বা জ্বরের উপসর্গ না থাকলেও তিনি করোনা সংক্রমিত হতে পারেন। এবং ওই অবস্থায় অন্যকেও সংক্রমিত করতে পারেন।

একটু দেরিতে হলেও উঠে এসেছে মাস্কের অপরিহার্যতা। এ দেশে লকডাউন পর্ব শুরু হয়ে যাবার পরও অনেক দিন মাস্ককে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সারা বিশ্বেই এটা সত্য। হু প্রথমে যে গাইডলাইন দেয়, তাতে চিকিৎসকদের জন্য মাস্ক জরুরি বলা হলেও, আমজনতার জন্য মাস্ককে গুরুত্ব দেয়নি। অনেকের মতে, এই দেরিতে বোঝার মাসুল দিতে হয়েছে বিশ্বকে।

তাই এখন বিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞরা একমত, মাস্ক পড়লেই ৬০-৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে সংক্রমণ রুখে দেওয়া যায়। কারণ মাস্ক পরে আক্রান্তের ড্রপলেট বাইরে বেরোতে পারে না। ফলে কেউ সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় থাকেই না। আবার মাস্ক পরা থাকলে নাকে বা মুখে হাত পড়বে কম। ফলে নাক-মুখ দিয়ে ভাইরাসের শরীরের ভিতরে প্রবেশের সম্ভাবনা ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কমে যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে এন-৯৫ মাস্ক ০.৩ মাইক্রন ব্যাসের জীবাণু ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত আটকে দিতে পারে। করোনাভাইরাসের পাঁচ ভাগের এক ভাগ আকারের জীবাণুকেও ৯০ শতাংশ রুখে দেয়। অন্য দিকে সার্জিক্যাল মাস্ক ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ এবং কাপড়ের তৈরি মাস্ক সাধারণ মাস্ক এগুলোর মাত্রায় না হলেও, অনেক জীবাণু আটকাতেই কার্যকরী। তাই মাস্ক এখন প্রত্যেকের জন্য ‘মাস্ট’। আনলক পর্ব শুরু হয়ে যাওয়ার পর, এটা আরও অনেক বেশি জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে দেশে দেশে।

মাস্কের সঙ্গেই দৈনন্দিন জীবনে জুড়ে গেছে দূরত্ব রেখে চলা এবং হাত ধোওয়া। হু-এর নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে অন্তত এক মিটার দূরত্বে থাকলে সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রায় থাকে না বললেই চলে। কোনও কারণে সংক্রমিতের ড্রপলেট হাতে লাগলে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ধুয়ে ফেললেই সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে না। সাবান ব্যবহারের মতো পরিস্থিতি থাকে না সব সময়। সেখানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার কার্যকরী।

হু-এর হিসেবে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০০টি বিজ্ঞানী-গবেষকদের দল প্রতিষেধক বা টিকা তৈরির জন্য কার্যত দিন-রাত এক করে ফেলছেন। এমন একটা কথাও শোনা যাচ্ছে যে, এ বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের মধ্যেই করোনাভাইরাসের টিকা চলে আসবে। কিন্তু তার বাস্তবসম্মত ভিত্তি নিয়ে অনেক গবেষক এবং চিকিৎসা বিশেষজ্ঞই সন্দেহ প্রকাশ করছেন। কারণ এত অল্প সময়ের মধ্যে ইতিহাসে কোনও টিকাই তৈরি হয়নি। সেটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। লেগে যেতে পারে কয়েক বছরও।

কিন্তু টিকা দেরিতে হলেও অন্তত কোনও অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগে তৈরি হোক, যা অন্তত মৃত্যু এবং গুরুতর অসুস্থ হওয়া থেকে বাঁচাবে। ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের সাফল্য প্রশ্নাতীত নয়। কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছে রেমডেসিভির। কিন্তু সেটাও সবে প্রাথমিক পরীক্ষায় সফল হয়েছে। সব ধাপ উতরে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হতে এখনও অনেক দেরি বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।

তবে কি ভাইরাস কখনওই নিজে থেকে দুর্বল হবে না? টিকা বা প্রতিষেধক ছাড়া মুক্তি নেই মানব সভ্যতার? এই প্রশ্নে অবশ্য বিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ বলছেন, কোনও দিনই হয়ত নির্মূল হবে না কোভিড-১৯। যেমনটা হয়েছে বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু বা ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে। কেউ আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসা করতে হবে নির্দিষ্ট ওষুধ দিয়ে।

কারও মতে আবার, সার্স বা ইবোলার মতো চিরতরে নির্মূলও হয়ে যেতে পারে এই ভাইরাস। অথবা পোলিওর মতো বহু বছর ধরে টিকাকরণ করে নির্মূল করা যেতে পারে। পরের দু’-তিন মাসের মধ্যে এই ভাইরাস তার নিজের প্রক্রিয়াতেই দুর্বল হয়ে পড়তে শুরু করবে, এমন মতও রয়েছে। কিন্তু এই সব মতামতই অতীত অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে। করোনার এই নতুন ভাইরাসের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিশ্চিত করে বলার মতো প্রায় সর্বজনগ্রাহ্য কোনও গবেষণার ফল এখনও উঠে আসেনি।

তবে এর মধ্যেই এক ঝলক আশার আলো দেখাচ্ছে নিউজিল্যান্ড। গত সোমবারই তারা ঘোষণা দিয়েছে, দেশ করোনামুক্ত। প্রায় দু’সপ্তাহ নতুন করে কেউ আক্রান্ত হননি এবং দেশে প্রায় দেড় হাজার আক্রান্তের সবাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। চীনে নতুন সংক্রমণের সংখ্যাও এখন খুব কম।

কিন্তু একই সঙ্গে এটাও সত্যি যে, বিশ্বজুড়ে ধরলে সংক্রমণ পরিস্থিতি বেশ খারাপ। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হু প্রধান টেড্রোস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস। সোমবার জেনিভা থেকে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি বলেন, ‘ইউরোপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও, বিশ্বজুড়ে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। গত ১০ দিনের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এর মধ্যে ৯ দিনই এক লাখের বেশি মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।’

সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি আমেরিকা আর ব্রাজিলে। ভারত এদের থেকে তুলনামূলক ভাবে অনেকটা ভাল অবস্থায় থাকলেও, দৈনিক নতুন সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধি যথেষ্ট দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে রয়েছে।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা