ঢাকা, রবিবার ২৮, এপ্রিল ২০২৪ ১:৪২:৩৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
খিলগাঁওয়ে একইদিনে তিন শিশুর মৃত্যু শেরে বাংলার কর্মপ্রচেষ্টা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে বৃষ্টি কবে হবে, জানাল আবহাওয়া অফিস শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের মাজারে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছাড়াবে আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

নালিতাবাড়ীর সেই ঐতিহাসিক সুতানাল দিঘি

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:৩২ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০২৩ বৃহস্পতিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে কাকরকান্দি ইউনিয়নের শালমারার নিকটবর্তী একটি গ্রামের নাম মধ্যমকুড়া। সবুজে ঘেরা ছিমছাম ছবির মতো গ্রাম। এ গ্রামের বিরাট জায়গাজুড়ে এখনও দৃশ্যমান সুতানাল দিঘি।

৩৮.৫৮ একর জমির ওপর বিশাল দিঘিটি সরকারি নথিপত্রে ‘বিরহিনীর দিঘি’ এবং এলাকার মানুষের কাছে ‘সুতানালীর দিঘি’ হিসাবে পরিচিত। তবে দিঘিটি কে কখন, কেন খনন করেছিলেন এ বিষয়ে সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায় না। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের অন্যতম সমৃদ্ধ জনপদ নালিতাবাড়ীর ইতিহাস, সমাজ জীবনাচার সম্পর্কে কোনো সুলিখিত গ্রন্থ কিংবা প্রামাণ্য রচনা নেই।

দিঘি সম্পর্কে এলাকার প্রবীণদের কাছ থেকে জানা যায়, মোঘল আমলের শেষের দিকে এ গ্রামে কোনো এক সামন্ত রাজার বাড়ি ছিল। আবার কেউ বলেন এখানে বৌদ্ধবিহার ছিল। কথিত আছে সামন্ত রাজা তার সহধর্মিণী রানিকে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের জন্য উপহার দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। রানি তখন রাজাকে বলেন, ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে আপনি এমন কিছু দান করুন যা যুগযুগ ধরে মানুষ মনে রাখবে।

রাজা তখন সিদ্ধান্ত নিলেন অবিরাম এক রাত ও একদিন সুতা কাটা হবে। যে পরিমাণ সুতা হবে সেই সুতার সম পরিমাণ লম্বা এবং প্রশস্ত একটি দিঘি খনন করা হবে। এলাকার জনগণ দিঘির পানি ব্যবহার করবে। আর তোমাকে স্মরণ করবে। দিনের পর দিন খননকাজ চলে। নির্মিত হয় বিশাল এক দিঘি। এক পাড়ে দাঁড়ালে অন্য পাড়ের লোক চেনা যায় না। সেই থেকে এই দিঘি কমলারানি বা সুতানাল দিঘি নামে পরিচিতি পায়।

তবে এলাকায় সুতানাল পুকুর নামেই পরিচিত। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নে মধ্যমকুড়া গ্রামে ৬০ একর জমির ওপর দিঘিটি অবস্থিত। উপজেলা সদর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে দিঘিটি। প্রতি বছর দূর-দূরান্ত থেকে মৎস্য শিকারী ও উৎসুক মানুষের আনাগোনায় পুকুর ও এলাকার পরিবেশ হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। এ দিঘির মাছ খুব সুস্বাদু বলে প্রশংসা রয়েছে বেশ। ১৯৮৩ সালে এই দিঘিকে কেন্দ্র করে ভূমিহীন ১১৮ জন সদস্য নিয়ে গড়ে ওঠে ‘সুতানালি দিঘিরপাড় ভূমিহীন মজাপুকুর সমবায় সমিতি। পুকুর পাড়েই তাদের বসবাস। এই পুকুরকে কেন্দ্র করে ভূমিহীনদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।

১৯৪০ সালে সরকারি ভূমি জরিপে ‘বিরহিনী রানি’র নামেই দিঘিটি রেকর্ড করা হয়েছিল। সে নামেই রেকর্ড করা আছে। দিঘির কাজলা কালো জলে মাঝে-মধ্যেই শীতের অতিথি পাখিসহ দেখা মেলে বক, পানকৌড়ি ও অন্যান্য পাখির। এখন সে দিঘিতে মাছ চাষ হয় প্রচুর। প্রতিবছর শত শত মৎস শিকারিরা টিকিট করে দিনরাত মাছ শিকার করেন। এ দিঘিতে শুধু মৎস্য শিকারিরাই আসেন না, আসেন প্রচুর ভ্রমণ পিয়াসীরাও। তবে প্রশাসনের উদ্যোগে পরিকল্পিতভাবে এ দিঘিটির সংস্কার ও সৃজিত করলে এটিও ভ্রমণপিয়াসীদের আলাদা মনের খোরাক জোগাবে বলে এলাকাবাসী মনে করেন।

আদিবাসী উন্নয়নকর্মী ও সমাজ সেবক ক্লডিয়া নকরেক কেয়া জানান, শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার মেঘালয়ের কোলঘেঁষা গারো পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প গড়ে উঠতে পারে। এরই অংশ হিসাবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পরিকল্পিত পরিকল্পনায় ঐতিহ্যবাহী সুতানাল দিঘিকে কেন্দ্র করেও সুন্দর ও আধুনিক পর্যটন স্পট গড়ে উঠতে পারে। এতে করে সরকার যেমন রাজস্ব আয় বাড়াতে পারবে তেমনি এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার চিত্রও বদলে যাবে বহুলাংশে।