ঢাকা, শুক্রবার ২৯, মার্চ ২০২৪ ১১:২৩:০২ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
ঈদযাত্রা: ৮ এপ্রিলের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে আজ বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু গাজায় নিহত বেড়ে ৩২ হাজার ৪৯০ অ্যানেস্থেসিয়ার ওষুধ বদলানোর নির্দেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের

বাজেট ঘোষণা আজ, বাস্তবায়নই মূল চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৪৬ পিএম, ৩ জুন ২০২১ বৃহস্পতিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আজ জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি মোট জিডিপির ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনা শেষে আগামী ৩০ জুন বাজেট পাস হবে।

আজ বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকেল ৩টায় বাজেট অধিবেশনে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিকেল ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এ বাজেট উপস্থাপন করা হবে। এবারের বাজেটের স্লোগান ‘জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’। এটি হবে স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০তম বাজেট এবং বর্তমান সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের তৃতীয় বাজেট ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীর তৃতীয় বাজেট।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সব সময় একটি ‘স্মার্ট’ বাজেট বক্তৃতা দেয়ার চেষ্টা করেন। সেই বক্তৃতা হবে ‘টু-দ্য-পয়েন্ট’ ও সংক্ষিপ্ত। কিন্তু এবার তা করা সম্ভব হচ্ছে না। অর্থমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের যে বাজেট বক্তৃতা উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন তা অনেকটা বড়সড়। ডাউস আকৃতির এই বাজেট বক্তৃতার পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৯৬। এর মধ্যে কর সম্পর্কিত বিষয় রয়েছে ২০ পাতার। অর্থমন্ত্রী অবশ্য বক্তৃতার পুরোটা পড়বেন না। বক্তৃতার বিভিন্ন অংশ মাল্টি মিডিয়ার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হবে।

এবারের এই বাজেট হচ্ছে জিডিপির মাত্র ১৭.৪৬ শতাংশ। ২০২১ অর্থবছরের জন্য মূল বাজেট ছিল পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা, যা ছিল জিডিপির ১৭.৯০ শতাংশ। এ হিসাবে বাজেটের প্রকৃত আকার বৃদ্ধির পরিবর্তে সংকোচিত হচ্ছে। এর পরেও বাজেট বাস্তবায়ন হয়ে দাঁড়াচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ। চলতি অর্থবছরের সাত মাসে মূল বাজেটের বাস্তবায়ন ব্যয় বৃদ্ধির পরিবর্তে আগের বছরের চেয়ে ৮.৫৩ শতাংশ কমে গেছে। এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় কমেছে ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। বাজেট বাস্তবায়নে ব্যর্থতায় সংশোধিত বাজেটের ব্যয় অবশ্য হ্রাস করে হ্রাস করে পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা করা হয়েছে।

করোনার কঠিন পরিস্থিতিতে বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলা হচ্ছে আগামী বাজেটে প্রাধিকার পাবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামে এবারের বাজেটটি প্রস্তুত হয়েছে সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে। ঝিমিয়েপড়া অর্থনীতির পালে কিছুটা হাওয়ার জন্য ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখা হচ্ছে। কিছু খাতে দেয়া হচ্ছে কর অবকাশ সুবিধা। কমানো হচ্ছে, পুঁজিবাজারে নেই এমন কোম্পানির কর্পোরেট কর হারও।

এবারের বাজেটে সঙ্গতকারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। পাশাপাশি কোভিড-১৯ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়ন, কৃষি খাত, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অর্থবছরের পুরো সময় জুড়েই থাকবে সরকারের নানা ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, বাড়ানো হবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা। এবার সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বরাদ্দ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যার আকার এক লাখ সাত হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। এখানে বলে রাখা ভালো-সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ ও প্রাইমারি স্কুল শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকাও রয়েছে।

শুধু তাই নয়, এবারই প্রথম নিরাপত্তামূলক নতুন এক তহবিল গঠনের প্রস্তাব থাকছে বাজেটে; যার নামকরণ করা হয়েছে ‘অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতি অভিঘাত মোকাবেলা তহবিল’। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এর পাশাপাশি বাজেট বক্তৃতার শুরুর দিকে থাকবে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক খাতের বিভিন্ন অগ্রগতির গুণকির্তন, এবং কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের নানা চিত্র। এরপর থাকবে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের একটি চিত্র। তারপর দেয়া হবে আগামী অর্থবছরের ব্যয় বা বাজেটের আকার ও ব্যয় বরাদ্দের চিত্র।

বাজেটে ব্যয় ও আয় : আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেটের আকার বা ব্যয় ধরা হচ্ছে ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে বাজেটের আকার বাড়ছে ৩৫ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।

আগামী বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হচ্ছে তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে আয় বাড়ছে ১১ হাজার কোটি টাকা। মোট আয়ের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্য দেয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরেও এনবিআরকে একই পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া রয়েছে।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত কর থেকে আসবে ১৬ হাজার কোটি টাকা। আর কর ব্যতীত প্রাপ্তি ধরা হচ্ছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। আগামী বছরে বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার পরিমাণ ধরা হচ্ছে তিন হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ধরা হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। এডিপি ইতোমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) অনুমোদন করেছে।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ ধরা হচ্ছে দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৬.২ শতাংশ। আর অনুদানসহ সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হচ্ছে দুই লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৬.১ শতাংশ।

আগামী অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। এ খাতের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়া হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়া হবে ৩২ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য খাত থেকে নেয়া হবে পাঁচ হাজার এক কোটি টাকা। নতুন বাজেটে বিদেশী উৎস থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা।

আসছে বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। আর বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সর্বাধিক গুরুত্ব স্বাস্থ্য খাতে : আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ৭.৪ শতাংশ। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে আগামী বাজেটে নতুন কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ এবং বিভাগীয় শহরের বাইরে হাসপাতাল-ক্লিনিক নির্মাণে বিনিয়োগ করা হলে ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হতে পারে। ২০৩১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই সুযোগ মিলবে। পাশাপাশি সরকারি সব হাসপাতালকে অত্যাধুনিক করা হবে। আইসিইউ, ভেন্টিলেটরসহ করোনা মোকাবেলার পর্যাপ্ত সামগ্রী কেনা হবে। এ ছাড়া করোনা মোকাবেলায় নতুন দুই হাজার চিকিৎসক, ছয় হাজার নার্স এবং ৭৩২ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়া হবে। তাদের জন্য আসছে বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে।

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিশেষ বরাদ্দ : চলতি অর্থবছরে করোনা মোকাবেলা, বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা কেনা বাবদ সরকার ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। তাই আগামী বাজেটেও পৃথক ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ থাকবে।

করপোরেট করে ছাড় আসছে : করোনার সময় ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে করপোরেট করে ছাড় দিতে পারে সরকার। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করপোরেট কর হার ৩০ শতাংশ করা হতে পারে। এটি এখন সাড়ে ৩২ শতাংশ। সম্প্রতি কোম্পানি আইন সংশোধন করে এক ব্যক্তির নামে কোম্পানি খোলার সুযোগ দিয়েছে সরকার। এ ধরনের কোম্পানির কর হার ২৫ শতাংশ করা হতে পারে। আর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারও কিছুটা কমানো হতে পারে বলে জানা গেছে।

-জেডসি