ঢাকা, মঙ্গলবার ০৭, মে ২০২৪ ১১:৩৫:৫৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
জিম্মি মুক্তিতে হামাসের সম্মতির পরও গাজায় যুদ্ধবিরতি অনিশ্চিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বাভাবিক রুটিনে ক্লাস শুরু আজ হজের ফ্লাইট শুরু ৯ মে পুলিৎজার পেল রয়টার্স, ওয়াশিংটন পোস্ট ও নিউইয়র্ক টাইমস চলে গেলেন ১৯৭৮ বিশ্বকাপ জয়ী আর্জেন্টিনার কোচ মেনোত্তি হজের ভিসায় সৌদি সরকারের নতুন নিয়ম

বিশ্বজয়ের স্বপ্ন নতুন সুইংয়ের সুলতানের চোখে

খেলাধুলা ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৪৭ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার

নিউজিল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে ৭ উইকেট নিয়ে উচ্ছ্বসিত শামি। 

নিউজিল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে ৭ উইকেট নিয়ে উচ্ছ্বসিত শামি। 

আগামী রোববার হয়তো নিজের ক্রিকেট জীবনের সেরা স্পেলটা করার লক্ষ্যে দৌড় শুরু করবেন মোহাম্মদ শামি। আর শামির প্রতিটি উইকেট গোটা দেশের স্বপ্নকে একটু একটু করে বাস্তবের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

সুইংয়ের সুলতান ওয়াসিম আকরাম বলছেন, ‘আমি এত ভাল সিমে বল করতে কাউকে দেখিনি। মোহাম্মদ শামিকে ঘুম থেকে উঠে বল করালেও বোধ হয় এভাবেই বল করবে। এক কথায় অবিশ্বাস্য।’  

‘সুইংয়ের নতুন সুলতান’ এই মোহাম্মদ শামি। জীবনের মাঠে প্রতি পদক্ষেপে হোঁচট খেলেও ক্রিকেট মাঠে তার প্রভাব কোনও ভাবেই পড়তে দেননি শামি। অনেক অধ্যবসায়, পরিশ্রম, জেদের ফসল ফলছে ইডেন থেকে ওয়াংখেড়েতে।

সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেল ও কেন উইলিয়ামসন যখন চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছোটাচ্ছেন তখন রোহিত শর্মা শেষ তাস খেললেন। সেই শামির হাতেই বল তুলে দিলেন তিনি। নতুন বলের দুই বোলার যশপ্রীত বুমরা, মোহাম্মদ সিরাজ থাকলেও শামির উপরেই ভরসা দেখালেন তিনি। কেন? আবার ধার করতে হবে আকরামের কথা। ‘শামির সব থেকে বড় অস্ত্র ও নতুন বলের পাশাপাশি কয়েক ওভারের পুরনো বলেও সুইং করাতে পারে। তার থেকে আর একটু বেশি পুরনো বল পেয়ে গেলে শুরু হয় রিভার্স সুইং। এই ধরনের বোলার যে কোনও অধিনায়কের ভরসার জায়গা।’

সেটাই করছেন রোহিত। শামি আসছেন, উইকেট নিয়ে দলকে লড়াইয়ে ফেরাচ্ছেন। ঠিক যেমনটা করলেন ওয়াংখেড়েতে। প্রথমে আউট করলেন উইলিয়ামসনকে। সেই ওভারেই ফেরালেন টম লাথামকে। সেখানেই শেষ হয়ে গেল নিউ জ়িল্যান্ডের লড়াই। পরে আরও তিনটি উইকেট নিলেও সেমিফাইনালে শামির প্রথম চার উইকেটই ভারতকে ফাইনালে তুলেছে। সে ভারত প্রথমে ব্যাট করে যতই ৩৯৭ করুক না কেন, শামি না থাকলে ম্যাচ শেষে রোহিত হাসিমুখে ওয়াংখেড়ে ছাড়তে পারতেন কি না তা নিয়ে কিন্তু সন্দেহ রয়েছে।

এই শামির শুরুটা কিন্তু সহজে হয়নি। উত্তরপ্রদেশের সহসপুর নামের একটি গ্রাম থেকে উঠে আসা যুবকের স্বপ্ন ছিল ভারতীয় দলে খেলবেন। কিন্তু জাতীয় দল তো দূর, উত্তরপ্রদেশেই সুযোগ পাচ্ছিলেন না তিনি। চলে আসেন বাংলায়। সুযোগও পান। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধীরে ধীরে নিজের নাম তৈরি করতে থাকেন। শামির কাছে আশীর্বাদ হয়ে আসে ২০০৮ সাল। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্স কেনে তাকে। দু’বছর ছিলেন শামি। একটি ম্যাচেও খেলেননি। শুধু নেটে বোলিং করেছেন। কিন্তু এই দু’টি বছর তিনি পেয়ে যান ওয়াসিম আকরামকে। কেকেআরের বোলিং কোচের কাছ থেকে একলব্যের মতো শিক্ষা নিয়েছেন। নিজেকে তৈরি করেছেন। অপেক্ষা করেছেন সুযোগের। ২০১৩ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে (তৎকালীন ফিরোজ শাহ কোটলা) যখন তার অভিষেক হচ্ছে, তখন শামিকে দেখে বোঝা গিয়েছিল তিনি কতটা আত্মবিশ্বাসী। প্রথম ম্যাচেই মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন। সেই বছরই ক্রিকেটের সব ফরম্যাটে ভারতীয় দলে অভিষেক হয়ে যায় তার।

মাঠের জীবনে শামি যতটা হেসেছেন, মাঠের বাইরের জীবনে ততটাই মুখের হাসি উধাও হয়েছে তার। স্ত্রী হাসিন জাহানের সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হয়েছে। মেয়েকে নিয়ে আলাদা হয়ে গিয়েছেন হাসিন। করেছেন বধূ নির্যাতনের মামলা। বিবাহবিচ্ছেদ চেয়েছেন। এমনকি শামির বিরুদ্ধে ম্যাচ গড়াপেটারও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। সে সব এক হাতে সামলেছেন শামি। প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি। স্ত্রীর বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। শুধু মন দিয়ে নিজের খেলাটা খেলে গিয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনের কারণে তার ক্রিকেট কোনও দিন খারাপ হয়নি।

তারপরও ধীরে ধীরে ভারতীয় দলে শুধুই টেস্টের বোলার হয়ে গিয়েছিলেন শামি। সাদা বলের ক্রিকেটে সুযোগ পাচ্ছিলেন না। চলতি বিশ্বকাপে যখন সুযোগ পান তখনও শামিকে নেওয়া নিয়ে সমালোচনা হয়। প্রশ্ন ওঠে, প্রায় এক বছর সাদা বলের ক্রিকেট না খেলা শামিকে কী দেখে নিলেন অজিত আগরকরের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটি। এই সিদ্ধান্ত না দলকে ডোবায়? দলে সুযোগ পাওয়ার পরেও শামি বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল। স্ত্রী হাসিনের করা মামলায় আদালতে গিয়ে আগাম জামিন নিতে হয় শামিকে। তবেই খেলার সুযোগ পান বিশ্বকাপে।

প্রথম চার ম্যাচে বেঞ্চ গরম করেছিলেন শামি। বুমরা ও সিরাজের উপর বেশি ভরসা ছিল রোহিতের। সঙ্গে ছিলেন দুই পেসার অলরাউন্ডার হার্দিক পাণ্ড্য ও শারদুল ঠাকুর। শামি কিচ্ছু বলেননি। শুধু অপেক্ষা করেছেন। হার্দিকের চোট লাগায় বদলে যায় দৃশ্যপট। দলের ভারসাম্য ঠিক রাখতে পঞ্চম ম্যাচে নেওয়া হয় শামিকে। ধর্মশালায় নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচেই শামি নেন ৫ উইকেট। পরের ম্যাচে ৪। পরের ম্যাচে আবার ৫। ব্যস। মুখে কিছু বলতে হয়নি শামিকে। শুধু নিজের বলের সিম ঠিক জায়গায় রেখেছেন। মাঠে আগুন ছুটিয়েছেন। শাসন করেছেন একের পর এক ব্যাটারকে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে ভারতের একমাত্র বোলার হিসাবে ৫০ উইকেট নিয়েছেন। চলতি বিশ্বকাপে মাত্র ৬ ম্যাচেই সর্বাধিক ২৩ উইকেট শামির ঝুলিতে। রেকর্ড করে বলেছেন, ‘সুযোগের অপেক্ষা করছিলাম। খুব বেশি সাদা বলের ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাইনি। তবে সুযোগ পেলে কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। লিগ পর্বে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধেই প্রথম সুযোগ পেয়েছিলাম। অনেকে বোলিংয়ে বৈচিত্র্যের কথা বলেন। কিন্তু আমার লক্ষ্য থাকে শুধু সঠিক জায়গায় বল ফেলা। আমি বিশ্বাস করি ঠিক জায়গায় বল রাখতে পারলে নতুন বলে উইকেট আসবেই। ম্যাচের যে কোনও সময়ই উইকেট আসতে পারে।’

আসলে শামি মুখে নয়, কাজে করে দেখাতে ভালবাসেন। যে ভাবে বার বার সব অবজ্ঞার জবাব দিয়েছেন। নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। যখনই তার ব্যক্তিগত জীবনে কাদা ছেটানো হয়েছে তখনই তার বল আগুন ঝরিয়েছে। হতে পারে এটা বিরাট কোহলির বিশ্বকাপ। হয়তো অধিনায়ক হিসাবে ইতিহাসে নিজের নাম খোদাই করে নেবেন রোহিত শর্মা। হয়তো ক্রিকেটার হিসাবে না পারলেও কোচ হিসাবে বিশ্বকাপ জিতবেন রাহুল দ্রাবিড়। কিন্তু তাদের ঠিক তাদের সকলের পাশেই জ্বলজ্বল করবেন শামি। কারণ, বিরাট, রোহিতের পাশাপাশি ভারতের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন অনেকটাই নির্ভর করছে তার কাঁধে। আর নিজের কাজটা চুপচাপ করে যাচ্ছেন তিনি। যেমনটা সব সময়ই করে থাকেন।

এখন অপেক্ষা রোববারের। সে দিনই বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাঠে হাসিমুখে নিজের ক্রিকেট জীবনের সেরা স্পেলটা করার লক্ষ্যে দৌড় শুরু করবেন শামি। বলটা স্টাম্প ভেঙে দিতেই ছুটে এসে তাকে কোলে তুলে নেবেন রোহিত। আর শামির প্রতিটি উইকেট গোটা দেশের স্বপ্নকে একটু একটু করে বাস্তবের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এখন থেকেই এই স্বপ্নটা দেখতে শুরু করে দিয়েছেন সুইংয়ের নতুন সুলতান, তার চোখে এখন শুধুই বিশ্বজয়ের স্বপ্ন।