ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ২১:১১:৩৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
চট্টগ্রামে আজ শুরু উইম্যান এসএমই এক্সপো হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউ পুড়ে ছাই, রক্ষা পেল ৭ শিশু সবজির বাজার চড়া, কমেনি মুরগির দাম সারা দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি

মীরাবাঈ: রিওর ব্যর্থতার পরে টোকিও অলিম্পিকে জয়ের গল্প

বিবিসি বাংলা অনলাইন | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৬:৫৯ পিএম, ২৪ জুলাই ২০২১ শনিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

টোকিও অলিম্পিকে ভারতের হয়ে প্রথম পদকটি পেয়েছেন ভারোত্তোলক মীরাবাঈ চানু। অলিম্পিকের ভারোত্তোলনে রৌপ্য পদক জয় করা প্রথম কোন ভারতীয় অ্যাথলিট।

তিনি নারীদের ৪৯ কেজি বিভাগে এই পদকটি জিতেছেন। এই বিভাগে, চীনের হাউ ঝুই স্বর্ণ এবং ইন্দোনেশিয়ার উইন্ডি আসাহ ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন। মীরা মোট ২০২ কেজি ভার উত্তোলন করে রৌপ্য পদক পান।

এর আগে ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকে দুর্বল পারফরম্যান্স থেকে শুরু করে টোকিও অলিম্পিকের পদক জয়ের এই মাঝামাঝি সময়ে মীরার যাত্রা যেকোনো দুর্দান্ত গল্পকেও হার মানাবে।

তিনি যখন গতবার রিও অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিলেন, তখন তার গল্পটি অন্যরকম ছিল।

'ডিড নট ফিনিশ' : অলিম্পিকের মতো ম্যাচে আপনি যদি অন্য খেলোয়াড়দের থেকে পিছনে পড়ে যান তবে সেটি আলাদা বিষয়। কিন্তু আপনি যদি নিজের খেলাটি শেষ করতে না পারেন তবে এটি মনোবল ভেঙে দিতে পারে।

২০১৬ সালে ভারতের ভারোত্তোলক মীরাবাঈ চানুর ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছিল। অলিম্পিকে মীরা তার বিভাগের দ্বিতীয় অ্যাথলিট ছিলেন, যার নামের আগে অলিম্পিকে 'ডিড নট ফিনিশ' অর্থাৎ 'খেলা শেষ করেননি' লেখা ছিল।

প্রতিদিনের অনুশীলনে মীরা যে ওজনটি সহজেই তুলে ফেলতে পারতেন, অলিম্পিকে সেদিন তার হাতগুলো যেন বরফের মতো হিম হয়ে গিয়েছিল। সে সময় ভারতে ছিল গভীর রাত, তাই খুব কম ভারতীয় সেই দৃশ্য দেখেছিলেন।

সকালে ভারতের ক্রীড়া প্রেমীরা যখন খবরটি পড়েন, মীরাবাঈ রাতারাতি ভারতীয় ভক্তদের চোখে ভিলেন বনে যান। এটি এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে ২০১৬ সালের পরে মীরা হতাশায় পড়ে যান এবং প্রতি সপ্তাহে তাকে কাউন্সেলিং নিতে হয়েছিল।

এই ব্যর্থতার পরে মীরা এক পর্যায়ে ভারোত্তোলনকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি হাল ছাড়েননি এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় জোরালোভাবে ফিরে আসেন।

মীরাবাঈ চানু ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ গেমসে ৪৮ কেজি ভার উত্তোলন ক্যাটাগরিতে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন এবং এখন তিনি অলিম্পিক রৌপ্য পদক অর্জন করলেন।

এমনকি নিজের সঠিক ওজন বজায় রাখতে, রীতিমত না খেয়ে ছিলেন মীরাবাঈ। তবে, ৪ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার মীরাবাঈ চানুকে দেখে, এটি অনুমান করাও কঠিন যে এতো খর্বকায় মেয়েটি বাঘা বাঘা খেলোয়াড়দের ঘাম ছুটিয়ে দিতে পারেন।

৪৮ কেজি ওজনের মীরাবাঈ তার থেকে প্রায় চারগুণ বেশি ওজন অর্থাৎ ১৯৪ কেজি ওজনের তুলে ধরে ২০১৭ সালের ওয়ার্ল্ড ওয়েট লিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণ জিতেছিলেন।

ভারতের ইতিহাসে গত ২২ বছরে মীরাবাঈ প্রথম ভারতীয় নারী, যিনি এতো ওজন তুলেছেন। মীরা তার নিজের ওজন ৪৮ কেজিতে ধরে রাখতে সেদিন কোন খাবারও খাননি। এমনকি এই দিনটির জন্য প্রস্তুতি নিতে, মীরাবাঈ গত বছর তার আপন বোনের বিয়েতেও যাননি।

ভারতের হয়ে পদক জেতার পর মীরার চোখ থেকে অশ্রু ঝরে পড়ছিল। ২০১৬ সাল থেকে তিনি যে যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন এই অশ্রু ছিল তারই সাক্ষী।

বাঁশ দিয়ে ভারোত্তোলনের অনুশীলন : ১৯৯৪ সালের ৪ আগস্ট মণিপুরের একটি ছোট্ট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মীরাবাঈ। ওই গ্রামেই তার বেড়ে ওঠা।

মীরাবাঈ শৈশব থেকেই ছিলেন খুব প্রতিভাবান। তার গ্রাম ছিল প্রত্যন্ত এলাকায়, ইম্ফল থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে। যেখানে বিশেষ কোন সুযোগ-সুবিধা ছিল না।

সেই দিনগুলোতে, মণিপুরের একমাত্র নারী ভারোত্তোলক কুঞ্জুরানী দেবীই ছিলেন তারকা এবং এথেন্স অলিম্পিকে তিনি খেলতে গিয়েছিলেন।

ঠিক একই দৃশ্যটি ছোট্ট মীরার মনে গেঁথে গিয়েছিল এবং ছয় ভাইবোনদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট মীরাবাঈ ওয়েট লিফটার হবেন বলেই মনস্থির করেন।

মীরার জেদের সামনে তার মা-বাবাকেও হাল ছেড়ে দিতে হয়েছিল। ২০০৭ সালে যখন তিনি অনুশীলন শুরু করেন, প্রথমে তার কাছে কোনও লোহার বার ছিল না, তাই তিনি বাঁশ দিয়ে অনুশীলন করতেন।

গ্রামে কোনও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র না থাকায় তিনি প্রশিক্ষণ নিতে ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরে যেতেন। তার প্রতিদিন দুধ এবং মুরগি মাংস খাওয়ার প্রয়োজন ছিল, তবে মীরার অতি সাধারণ পরিবারের সেই সাধ্যও ছিল না। 

কিন্তু, মীরা কোন কিছুকেই তার সংকল্পের সামনে বাঁধা হতে দেননি। ১১ বছর বয়সে তিনি অনূর্ধ্ব -১৫ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন এবং ১৭ বছর বয়সে তিনি হন জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন।

যেই কুঞ্জুরানীকে দেখে মীরার মনে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন জেগেছিল, তার সেই আইডলের ১২ বছরের পুরনো জাতীয় রেকর্ডটি মীরা ২০১৬ সালে ভেঙে দিয়েছিলেন এবং সেটা ১৯২ কেজি ওজন তুলে।

তারপরও মীরার যাত্রা এতো সহজ ছিল না কারণ তার বাবা-মায়ের কাছে অর্থ সম্পদ ছিল না।

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছিল যে মীরা যদি রিও অলিম্পিকে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করতে না পারেন তবে তাকে এই খেলা ছেড়ে দিতে হবে।

যদিও এমনটি ঘটেনি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ছাড়াও মীরাবাঈ গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে রৌপ্য পদক জিতেছিলেন।

ভারোত্তোলন ছাড়াও মীরার নাচের প্রতিও ঝোঁক আছে।

বিবিসিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, আমি মাঝে মাঝে প্রশিক্ষণের পরে ঘর বন্ধ করে নাচানাচি করি। সালমান খানকে আমার খুব পছন্দ।