ঢাকা, শনিবার ২৭, এপ্রিল ২০২৪ ৯:১৭:২৩ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছাড়াবে আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী চলতি মাসে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ

সারাহ ইসলাম ঐশ্বর্য: যে জীবন আলো জ্বেলে যায়

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:১৪ এএম, ২০ জানুয়ারি ২০২৩ শুক্রবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

সারাহ ইসলাম ঐশ্বর্য। কতই বা বয়স, মাত্র ২০ বছর। তার জীবনের আলো নিভে গেছে এই বয়সেই। মৃত্যুর পরও তাকে ঘিরে দেশেজুড়ে চলছে আলোচনা। কেন হবে না? নিজে নিভে গেলেও আলোকিত করে গেছেন চারটি জীবন। সারাহ দুটি কিডনি ও কর্নিয়া দান করে গেছেন। ইতোমধ্যে এগুলো প্রতিস্থাপনও করা হয়েছে মৃত্যুপথযাত্রী কয়েকজনের দেহে। তিনিই দেশের প্রথম মরণোত্তর কিডনি দানকারী বীরকন্যা।

জন্মের শুরুতে সারাহ জীবনসঙ্কটে পড়েন। মাত্র ১০ মাস বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধি টিউবেরাস স্ক্লেরোসিস নামের দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন তিনি। দেহকে কুরে কুরে শেষ করে দেওয়া এই রোগ নিয়েই পার করেছেন ১৯ বছর। সেই জীবনযাত্রা সাঙ্গ হলো বুধবার (১৮ জানুয়ারি)।


ক্লিনিক্যালি ডেড ঘোষণার পর বীরকন্যা সারাহর দুটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে দু’জনের দেহে। কর্নিয়া দুটিও প্রতিস্থাপন করা হয়েছে দু’জনের চোখে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজশ্রী দাশ একটি কর্নিয়া সুজন নামের এক ২৩ থেকে ২৫ বছরের এক যুবকের আরেকটি কর্নিয়া কমিউনিটি অপথালমোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শীষ রহমান ফেরদৌস আক্তার নামের এক ৫৬ বছর বয়সী নারীর চোখে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

কতটা মানসিক শক্তি নিয়ে তিনি জীবনের ১৯ বছর পাড়ি দিয়েছেন। শৈশবে এই দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার পর বন্ধুরা কেউ তার কাছে আসতে চাইত না, পাশে বসতো না। আরও কত কিছুই না তাকে সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু মানুষের জীবনে আলো জ্বালায় যারা, তারা কী এত সহজে দমে যেতে পারেন? সেই দুঃসহ পথ পাড়ি দিয়ে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন প্রিয় বিষয় ফাইন আর্টস নিয়ে।

সম্প্রতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শৈশব থেকে মেয়ের দুরারোগ্য ব্যাধি নিয়ে মেয়ের লড়াইয়ের কথা বলতে গিয়ে কণ্ঠ ধরে এসেছিল মা শিক্ষিকা শবনম সুলতানার। তিনি বলেন, শৈশব থেকেই ওর মুখের দিকে তাকিয়ে সবাই ভয় পেত। কেউ তার পাশে বসতে চাইত না। এ জন্য সে অনেক কষ্ট পেত, মাঝে মাঝে কাঁদতো।

সারাহ জানতেন তার দুরারোগ্য ব্যাধির কথা, এও জানতেন, তিনি বাঁচবেন না। একদিন মাকে বলে গিয়েছিলেন প্রয়োজন হলে আমার ব্রেনও তুমি দান করে দিও আমার মৃত্যুর পর। সবকিছুই তুমি গবেষণার জন্য দিয়ে দিতে পার, মা।

গত কয়েকদিন আগে তাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। বুধবার ক্লিনিক্যালি ডেড ঘোষণার পর মেয়ের ইচ্ছের সম্মান জানাতে মা শবনম সারাহর অঙ্গ দানে সম্মতি দেন।

বীরকন্যা সারাহর মৃত্যুর পর তাকে সম্মান জানানোর উদ্যোগ নিয়েছেন বিএসএমএমইউর প্রক্টর ও রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, বিএসএমএমইউয়ের ক্যাডাবেরিক সেলের নামকরণ করা হবে সারাহর নামে। ইতোমধ্যে তার নামে একটি ফলকও তৈরি করা হয়েছে।

এছাড়া তার পরিবারের সদস্যরাও বিএসএমএমইউতে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

হাবিবুর রহমান বলেন, কিডনিদাতার অভাবে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ মারা যান। সারা যে নিদর্শন রেখে গেছেন তাতে উৎসাহিত হয়ে অনেকেই কিডনি দান করবে। তাতে অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচবে।

কিডনি দান করার বিষয়টি কোনো সাধারণ ঘটনা নয় বলে জানান বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ক্যাডাবেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্টের প্রথম অঙ্গদাতা হিসেবে সারাহ ইসলামের নাম বাংলাদেশের চিকিৎসাক্ষেত্রে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। দেশে কিডনি রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। এর মধ্যে অনেকেই দাতার অভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে না পেয়ে মারা যান।