ঢাকা, সোমবার ২৯, এপ্রিল ২০২৪ ৪:৩২:৫৬ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
ফিলিপিন্সে সরকারি স্কুলে সশরীরে পাঠদান স্থগিত অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা, অনলাইনে ক্লাস দাবি হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে আজ, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা খিলগাঁওয়ে একইদিনে তিন শিশুর মৃত্যু শেরে বাংলার কর্মপ্রচেষ্টা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে বৃষ্টি কবে হবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

১৫ মিনিট ঘোরার কথা বলে ভারতে পাচার, ৭ বছর পর পরিবারের কাছে

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৭:২৫ পিএম, ১৭ আগস্ট ২০১৯ শনিবার

২০১২ সালে দূর সম্পর্কের এক চাচাতো ভাইয়ের মাধ্যমে ভারতে পাচার হয়েছিলেন খাদিজা খাতুন (১৯)। এরপর দীর্ঘ ৬ বছর ভারতের মালদহে সরকারি এক সেফহোমে থাকতে হয়েছে তাকে।

গত বছরের ১৯ এপ্রিল কোনো এক মাধ্যমে চাঁপাইনাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসে রাজশাহীর মানবাধিকার সংস্থা ‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র শেল্টার হোমে আশ্রয় নিয়েছিল সে। সেই থেকে খাদিজা দীর্ঘ এক বছর চার মাস এসিডি’র শেল্টার হোমে লালন-পালন হচ্ছিল।

আজ শনিবার এসিডি’র মাধ্যমেই মা-বাবাকে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে খাদিজা খাতুন। এ সময় তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সাত বছর পর মায়ের মায়াভরা মুখ দেখতে পেয়ে মনে হচ্ছে আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছি। কোনো দিন ভাবতেও পারিনি বাবা-মাকে ফিরে পাবো। পরিবারকে ফিরে পেয়ে এত খুশি হয়েছি যা কাউকেই বুঝাতে পারবো না। আমি এসিডি’র প্রতি চির কৃতজ্ঞ। পরিবারকে ফিরিয়ে দেওয়ার ঋণ আমি কোনোদিন শোধ করতে পারব না।’

কীভাবে ভারতে পাচার হয়েছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে খাদিজা বলেন, ‘আমার সেই দিনের বিভীষিকাময় মূহূর্তের কথা মনে করিয়ে দিলেন। আমার বয়স তখন ১২ বছর। দূর সম্পর্কের আমার এক চাচাতো ভাই আমাকে বলেছিল ১৫ মিনিটের জন্য চলো ঘুরে আসি। কিন্তু ১৫ মিনিট যে দীর্ঘ ছয়টি বছর হবে তা কে জানে! আমাকে সে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তখন সে কোনোকিছুই বলছে না। শুধু বলেছে “কোনো কথা বলবা না, আমি কোথায় নিয়ে যাই সেটা আমার ব্যাপার।” এভাবে সে আমাকে ভারতের মালদহে নিয়ে যায়।

খাদিজা বলেন, ‘আমাকে দালালদের হাতে যখন বিক্রি করে দিবে ঠিক সেই মূহূর্তে রাস্তার পাশেই হঠাৎ দৌঁড়ে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশের কাছে আশ্রয় নিই। পুলিশকে সব ঘটনা খুলে বললে আমাকে সেখান থেকে মালদহ সরকারি সেফহোমে পাঠায়। ২০১৮ সালে সেখান থেকে পুশব্যাক আসি। কিন্তু আমার বাসার ঠিকানা মনে না থাকায় আর বাসায় যেতে পারিনি।’    

খাদিজার বাবার নাম আবুল কাশেম ফকির আর মা আনোয়ারা বেগম। এসিডি’র অফিসে এসে মা আনোয়ারা বেগম জানান, তাদের বাড়ি ময়মনসিংহ। তবে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার গুলশান-২ এর নূরের চালা এলাকায় পরিবারকে নিয়ে বাস করছিলেন আনোয়ারা। এখনো সেখানেই বসবাস করছেন তারা। ২০১২ সালে খাদিজা যখন নিখোঁজ হন তার আগে সে মাদ্রাসা পড়ছিল। পড়ালেখার পাশাপাশি পাশের বাসার ধনাঢ্য এক ব্যক্তির সন্তানকে দেখাশোনার কাজ করছিলো খাদিজা।

আনোয়ারা বেগম আরও জানান, একদিন ওই বাড়িতে গিয়ে সেখান থেকেই নিখোঁজ হয় খাদিজা। পরে জানতে পারেন, প্রতিবেশী এক লোকের মাধ্যমে খাদিজা ভারতে পাচার হয়ে গেছে। তারপর থেকে আনোয়ারা মেয়েকে পাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন।

আনোয়ারা বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ আগে এসিডি’র মাধ্যমে হঠাৎ মেয়ের খোঁজ পাই। তখন থেকেই মেয়ের সাথে মোবাইলে কথা কই। বুঝতে পারি এই সেই আমার খাদিজা। অবশেষে গুলশান থেকে মেয়েকে নিতে রাজশাহীর উদ্দেশে রওয়ানা হই। শনিবার সকালে এসিডি অফিসে মেয়েকে পেয়ে খুব ভালো লেগেছে। মেয়েকে পেয়ে মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি।’

এসিডি’র শেল্টার হোম ম্যানেজার পুষ্প রাণী বিশ্বাস বলেন, ‘২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানার মাধ্যমে আমাদের শেল্টারহোমে আসে খাদিজা। তারপর থেকে সে শেল্টার হোমেই লালন-পালন হচ্ছিল। এখানে আশার পর থেকেই খাদিজা পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চেয়েছিল। আমরা তার পরিবারের খোঁজ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমরা পরিবারের খোঁজ পেয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষে শনিবার দুপুরে খাদিজাকে মা-বাবার কাছে হস্তান্তর করেছি।’