ঢাকা, মঙ্গলবার ২৩, ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:০৯:১৪ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
‘সরকারকে অবশ্যই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে’ দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের ভিসা সেবা বন্ধ ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে বৈঠক কলকাতায় বাংলাদেশ হাইকমিশন ‘না রাখতে’ দেওয়ার হুমকি শুভেন্দুর ২৭ ডিসেম্বর ভোটার হবেন তারেক রহমান দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে সোনা

ইতিহাস বিকৃতকারীরা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে : প্রধানমন্ত্রী

বাসস | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০৫:১৫ পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০১৭ রবিবার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ দেশবাসীকে সতর্ক করে বলেছেন, রাজকার-আলবদর, যুদ্ধাপরাধী, খুনি, দুর্নীতিবাজ ও ইতিহাস বিকৃতিকারীরা, যারা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তারা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। আগামীর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক মুক্তির ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশ হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণেই বলা আছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি রেজিষ্টারে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে স্বীকৃতি প্রদান উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপনের অংশ হিসেবে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল আয়োজনে স্বাগত বক্তৃতা করেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম। আরো বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবৃন্দ, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দ, দেশবরেণ্য কবি, সাহিত্যিক প্রবন্ধকারসহ সকল শ্রেণী পেশার নাগরিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা পালার পাশাপাশি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর পরিচালনায় ‘ধন্য মুজিব ধন্য’ সঙ্গীতের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীবৃন্দ।
কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতা ‘স্বাধীনতা-এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’ পরিবেশন আবৃত্তি করেন ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়।
রবীন্দ্র সঙ্গীত এবং নজরুল সংঙ্গীতের কোলাজ ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও’ এবং ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ এর সঙ্গে দীপা খন্দকারের পরিবেশনায় দলগত নৃত্য পরিবেশিত হয়।
আওয়ামী লীগ নেতা আহকাম উল্লাহ কামাল চৌধুরীর কবিতা ‘মার্চ’ থেকে আবৃত্তি করে শোনান।
অনিক বোসের পরিচালনায় ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ্য মুজিবরের’ এবং ‘মুজিবর আছে বাংলার ঘরে ঘরে’সহ কয়েকটি গানের কোলাজের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনা।
জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো- দিয়ে পরিবেশনা শুরু করেন বরেণ্য শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। এরপর তিনি গেয়ে ওঠেন ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার’।
‘নাও ছাড়িয়ে দে’ সঙ্গীতের মুর্ছনায় নৌকাকে প্রতিপাদ্য করে শামীম আর নীপা এবং শিবলী মোহাম্মদের পরিবেশনায় সমবেত নৃত্য পরিবেশনা।
বিকেল ৩টার কিছু আগে মুহুর্মুহু করতালি আর গগনবিদারী শ্লোগানের মধ্যদিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ স্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনটায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমাবেশের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম।
তবে দুপুরের আগ থেকেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
এর আগে ধানমন্ডিতে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির এই উদযাপন শুরু হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শুরু হয় শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার সামনে ছিলো হাতি আর ঘোড়ার গাড়ি, এরপর ট্রাক।
এরপর একে একে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
ব্যানার-ফেস্টুনের লেখা ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের বিভিন্ন অংশ। কারও মাথায় থাকা লাল-সবুজের রঙে টুপিতেও ছিল ভাষণের অংশ।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘৭ মার্চের বক্তৃতা দেয়ার আগে আমার মা আমার বাবাকে বলেছিলেন- তোমার সারাটা জীবন তুমি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছ। তুমি জান এদেশের মানুষের মুক্তি কিসে। কাজেই কারো কথা শোনার কোন প্রয়োজন নাই। তোমার মনে যে কথা আসবে তুমি সেই কথাই বলবে। সেই বক্তৃতাই দেবে।’ পৃথিবীর এই একটি ভাষণ যেখানে জাতির পিতার হাতে কোন কাগজ ছিল না। কোন নোট, কিছুই ছিল না। এই ভাষণ সম্পূর্ণ তিনি তাঁর মন থেকে বলেছিলেন। যে ভাষণের মধ্যদিয়ে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়েছিল এবং বাংলাদেশের মানুষ যৃদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছিল। স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল জাতির পিতার নির্দেশে।
তিনি বলেন, জনগণ জাতির পিতার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল। আজকে সেই ভাষণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। আজকে বারবার আমার এই কথাই মনে হয় যারা এই ভাষণ একদিন নিষিদ্ধ করেছিল তাদের অবস্থাটা কি? তারা কোথায় মুখ লুকাবে? তারা যে এই মহাসত্যকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী ৪৬ বছর আগে তাঁরা যারা এই ভাষণ শুনতে পেরেছিলেন তাদের নিজেদের সৌভাগ্যবান উল্লেখ করে বলেন, যে নতুন প্রজন্ম ’৭৫ এর থেকে শুধু ইতিহাস বিকৃতি দেখেছে তাদের জন্য দু:খ হয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের সেই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আমাদের বহু প্রজন্ম জানতে পারে নাই। তবে, আজকে সময় এসেছে এই ভাষণ আজকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতর মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্থান করে নিয়েছে। এই ভাষণ বাজাতে গিয়ে বহু মানুষ জীবন দিয়েছেন, নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যারা সেদিন রক্ত দিয়ে গেছেন, যারা সংগ্রাম করেছেন আজকে তাদের সেই মহান আত্মত্যাগ স্বীকৃতি পেয়েছে। আজকে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বে সম্মান পেয়েছে।
শেখ হাসিনা সমাবেশস্থলে আগতদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের এখানে আগামী প্রজন্মের অনেকেই আছে আমি তাদেরকে একটা কথাই বলবো- এই গৌরবগাঁথা এই ভাষণ শুধু ভাষণ নয়, এই ভাষণে আমাদের শোষণ, বঞ্চনার ইতিহাস বলেছেন জাতির পিতা। এই ভাষণে তিনি নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, এই ভাষণে ভবিষ্যত বাংলাদেশ কি হবে সেটাও তিনি বলে গেছেন। আমরা আজকে স্বাধীন জাতি। যে বাংলাদেশকে একসময় এতেবারেই একটা দরিদ্র দেশ হিসেবে করুণার চোখে দেখা হতো।
তিনি বলেন, আল্লাহর রহমতে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আমরা জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে কাজ করেছি। আওয়ামী লীগ যখন থেকে ক্ষমতায় এসেছে তখন থেকেই আন্তর্জাতিকভাবে বাঙালি জাতি মর্যাদা পেয়েছে। আজকে বিশ্বে আমরা উন্নয়নের রোল মডেল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ আমাদের এখন আর করুনা করতে পারে না। আমরা এখন অর্থনৈতিকভাবেও শক্তিশালী। বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এই ভাষণের মধ্যদিয়েই জাতির পিতা বাঙালি জাতির যেই মুক্তির সনদ দিয়েছেন- বাংলাদেশের মানুষ অর্থনৈতিক মুক্তি পাবে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা পাবে, বাংলাদেশ হবে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ,বাংলাদেশ হবে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ, বাংলাদেশ হবে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ। ইনশাল্লাহ সেই বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলবো। আর ঐ রাজাকার, আলবদও, যুদ্ধাপরাধী, খুনী, যারা ইতিহাস বিকৃতকারি তারা যেন এদেশে কোনদিন ক্ষমতায় আসতে না পারে। এই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এই দেশ এগিয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো।
রাজধানী এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আজকের আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী সকলকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণ শেষ করেন। পরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভিত্তিক বর্নাঢ্য লেজার শো এবং আতশবাজির প্রদর্শনীর মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।