ঢাকা, রবিবার ০৭, ডিসেম্বর ২০২৫ ৪:০৯:০৬ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
খালেদা জিয়ার অবস্থা এখনও উদ্বেগজনক আরও পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা খালেদা জিয়ার এন্ডোসকপি সম্পন্ন, থামানো গেছে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ আগারগাঁওয়ে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, নারীসহ দগ্ধ ৬ প্রবাসীদের নিবন্ধন ছাড়াল এক লাখ ৯৩ হাজার

ইফতারের প্রধান অনুষঙ্গ মুড়ি

সালেহীন বাবু | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০৭:১৩ পিএম, ১৮ মে ২০১৮ শুক্রবার

রোজা দরজায় কড়া নাড়ছে। ইফতারের প্রধান অনুষঙ্গ মুড়ি। বাঙালী সারা বছর মুড়ি খেলেও ইফতারে মুড়ির কদর অনেক বেশি। গ্রামে গ্রামে গভীর রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত চলছে মুড়ি ভাজার উৎসব। রমজানে এ উৎসবে নতুন মাত্রা যোগ হয়। গ্রামের নারীরা দিন-রাত ব্যস্ত মুড়ি তৈরি করতে। তাদের সাথে হাত মেলাচ্ছেন পুরুষরাও। 

বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার মুড়ি বিখ্যাত ও সুস্বাদু। দেশের নানা এলাকায় হাতে মুড়ি তৈরি করা হয়। এসব মুড়ি হয় রাসায়নিক সার ও কেমিক্যালমুক্ত। দেশের বিভিন্ন জায়গায় মুড়ির কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় প্রচুর মুড়ি উৎপাদন হয়। তবে মেশিনে ভাঙা মুড়ির চাইতে হাতে ভাঙা মুড়ি অনেক সুস্বাদু হয় এবং চাহিদাও ব্যাপক।  

রমজান মাসে সরগরম হয়ে উঠেছে নাটোরের মুড়ির গ্রাম হিসেবে পরিচিত গোয়ালদিঘী কৃষ্ণপুর গ্রাম। রাসায়নিক সার ও কেমিক্যালমুক্ত হওয়ায় এই মুড়ির ব্যাপক সুনামের পাশপাশি চাহিদা রয়েছে। তবে এবার ধানের দাম বেশি হওয়ায় বিপাকে মুড়ি উৎপাদকরা। লাভের পরিমান কম হওয়ার শংকা তাদের। এখানে বছরে যে পরিমাণ মুড়ি উৎপাদন হয় তার দ্বিগুণ হয় রমজান মাস এলেই। তাই এখন দম ফেলার সুযোগ নেই কৃষ্ণপুর গ্রামের মানুষদের। আমন, বিনা-৭, হরি ধান, ২৯ ধান, ১৬ ধান, ৫২ ধানের মুড়ি উৎপাদিত হয় এখানে। ইতোমধ্যে এখান থেকে মুড়ি কিনে রাজধানী ঢাকা, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জসহ দেশের নানান অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছে পাইকাররা।

কৃষ্ণপুর গ্রামের মুড়ি উৎপাদনকে কেন্দ্র করে পাশের ডালসড়ক এলাকায় গড়ে উঠেছে মুড়ির আড়ত। ওই আড়ত থেকে প্রায় প্রতিদিনই ২শ মন মুড়ি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। মুড়ির মান দেখে হয় দরদাম। আমন ও হরি ধানের মুড়ির চাহিদা বেশি। ১৬ ধানের মুড়ি প্রতি মণ ২৮শ’ থেকে ২৯শ’ টাকা, আমন ধানের মুড়ি ৩ হাজার টাকা থেকে ৩১শ’ টাকা ও অনান্য মুড়ি গড়ে ২৬শ’ থেকে ২৯শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

মুড়ির ব্যবসায়ী অহিদুল ইসলাম জানায়, ‘রোজা সামনে থাকায় হাতে ভাজা মুড়ির কদর বেড়েছে। স্বল্প পুঁজির এ ব্যবসা হলেও প্রতিদিন দুই থেকে তিন লাখ টাকার মুড়ি বিক্রি হয় স্থানীয় এ আড়তে।’

মুড়ি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ভেজাল মুক্ত মুড়ি হওয়ায় ইতোমধ্যে এখান থেকে মুড়ি কিনে ঢাকা, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গেছেন পাইকাররা। স্বল্প পুঁজির ব্যবসা হলেও রমজানকে ঘিরে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার মুড়ি বিক্রি হয়।

এদিকে মুড়ির পল্লী হিসেবে খ্যাত পটুয়াখালীর বরগুনার ভূতমারা গ্রামের সবারই পেশা মুড়ি ভাজা। আর এখন সব বাড়িতেই চলছে মুড়ি ভাজার ধূম। অর্ধ শতাব্দীকালেরও অধিক সময় ধরে মুড়ি ভেজে জীবন ধারণ করে আসছে এ গ্রামের পাচঁ শতাধিক পরিবার।

মুড়ি পল্লীর মুড়ি ব্যবসায়ী নির্মল জানান, মোর দাদায় এই ব্যবসা করছে, মোর বাবায়ও করছে মুইও করি বউ পোলা-মাইয়া লাইয়া এই ব্যবসা করি। এই মুড়িতে কোন ভ্যাজাল নাই। পাইকাররা বাড়িদ্যা আইয়া লইয়া যায়।

বরগুনা শহরের মুড়ির পাইকার ও খুচরা বিক্রেতা অমলেশ জানান, মুড়ি পল্লী থেকে মুড়ি এনে বরগুনায় মুড়ির চাহিদা মেটানো হয়। আমরা প্রতিকেজিতে ৫ টাকা ব্যবসা করি। এই মুড়ি তৈরিতে খরচ বেশি হওয়ায় দামও একটু বেশী হয়। মোটা ধানের মুড়ি বিক্রি হয় প্রচুর। এতে লভ্যাংশ কম হলেও প্রচুর বিক্রির ফলে আমাদের মূলধন বেরিয়ে আসে কম সময়ের মধ্যে। নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবে মুড়ি ভাজায় ভূতমাড়া গ্রামটি এখন মুড়ি পল্লী হিসেবে পরিচিত বলেও জানান এই ব্যবসায়ী।

ঢাকার পাশের মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপ জেলার ধলাই, সরুপাই, উভাজানি ও নবগ্রামগুলো মুড়ি গ্রাম হিসেব পরিচিত। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে গ্রামগুলোতে তৈরি হয় ভেজালমুক্ত মুড়ি। বিষমুক্ত হওয়ায় এই মুড়ির কদর যেমন স্থানীয়দের কাছে তেমনি রয়েছে জেলার বাইরেও। মুড়ি তৈরি করেই জীবিকা চলে এই গ্রামগুলোর বেশির ভাগ মানুষের।

সরুপাই গ্রামের আব্বাস তালুকদার জানান, তাদের তৈরি মুড়ি বাজারে ৮০-৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়। পাইকাররা বাড়ি থেকেই তাদের মুড়ি কিনে নিয়ে যায়। তিনি আরো জানান, তাদের তৈরি মুড়ি অনেক সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত। বড় সাইজের গোল আকৃতির মুড়ি তৈরিতে তারা কোন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করেন না। যে কারণেই জেলাব্যাপী তাদের মুড়ির ব্যাপক চাহিদা।

মানিকগঞ্জ শহরের পাইকারী মুড়ি ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম সরকার জানান, গ্রামে ভাজা মুড়ির কদর শহরের মানুষের কাছে বেশি। সেখান থেকে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় কিনে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়।

রমজান আসামাত্রই সরগরম হয়ে ওঠে বরিশালের বুড়িরহাটের মুড়িপল্লী। বরিশাল-ঝালকাঠি সীমান্ত এলাকা বুড়িরহাট ও আশপাশের ১০ গ্রামে মোটা মুড়ি বানানো হচ্ছে ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। অন্য সব পরিচয় হারিয়ে এসব গ্রাম বর্তমানে ‘মুড়ির গ্রাম’ নামে পরিচয় পেয়েছে দেশব্যাপী। আড়তদারদের দেয়া ৫০ কেজি চালে মুড়ি হয় ৪৪ কেজি। এই মুড়ি বাজারে বিক্রি হয় কেজিপ্রতি ৬৬ টাকা দরে। বুড়িরহাট ও এর আশপাশের এলাকায় প্রতিদিন তৈরি হয় ২০০ মণ মুড়ি। যা দেশের বিভিন্ন বাজারে চলে যায়। রমজান আসামাত্র মুড়ির চাহিদা বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন আড়তদারেরা।

এ সমস্ত এলাকা ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন মুড়ি করখানা থেকে মুড়ি পাইকারি বিক্রয় করা হয়। কারখানা থেকে দুই ধরনের পাইকারি মুড়ি পাওয়া যায়। একটি দানাদার টাইপের মুড়ি আর একটি মাঝারি সাইজের মুড়ি।

এ প্রসঙ্গে সাভারের বাইপালের মুড়ির কারখানার মালিক আমিনুল জানান, আমাদের মত বিভিন্ন বিভিন্ন মিলগেট থেকে দানাদার মুড়ি বা লাাল মুড়ির কেজির দাম পড়ে পাইকারি হিসেবে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা, আর মাঝারী জাতের মুড়ি পাইকারি কেজি প্রতি পড়ে ৫৭ থেকে ৬০ টাকা।

দানাদার মুড়ি বা লাল মুড়ি খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। আর মাঝারী জাতের মুড়ি খুচরা বাজারে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর হাতে ভাজা মুড়ি রাজধানীসহ ঢাকার বাইরের খুচরা বাজারে ১২০-১৩০ টাকা দরে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।