ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:৫৬:৫৭ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

‘এমন কনটেন্ট তৈরি করা উচিত যা মানুষের উপকারে আসে’ 

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৪:০৫ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সোমবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ভিন্ন চিন্তা ভাবনা আর পরিশ্রম দিয়ে নিজের কনটেন্ট এর মাধ্যমে আলাদা জায়গা তৈরি করেছেন রথি আহমেদ। ফ্যাশন, রান্না, লাইফস্টাইল— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার তৈরি করা ভিডিও মানুষ পছন্দ করছে। শুরুর দিকে কখনো ভাবেননি যে তিনি একদিন দেশের শীর্ষ কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মধ্যে নিজের নাম দেখতে পারবেন। 

ভিন্ন স্টাইলে হিজাব পরার ভিডিও দিয়ে শুরু করা টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে এখন অন্যান্য সোশাল মিডিয়ারও পরিচিত মুখ তিনি। চলুন জেনে নিই তার কনটেন্ট ক্রিয়েটর হয়ে ওঠার গল্প।

১. আপনার কনটেন্ট ক্রিয়েটর হওয়ার পেছনের অনুপ্রেরণা কি? 

রথি : আমার কনটেন্ট ক্রিয়েটর হওয়ার পেছনের গল্পটা খুবই অন্যরকম। আমার কখনোই কনটেন্ট ক্রিয়েটর বা ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার প্ল্যান ছিল না। ছোটবেলা থেকে আমার হিজাব পড়ার স্টাইলটা কিছুটা ভিন্ন ছিল। তাই আমাকে যারা ফলো করতো, তারা সবসময় আমার হিজাব স্টাইলের টিউটোরিয়ালের অনুরোধ করতো। কিন্তু তখন আমি এমন ভিডিও বানানো নিয়ে একদমই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম না। তখন আমার বন্ধুদের উৎসাহেই আমার ভিডিও বানানো শুরু করি। 


২. আপনি কীভাবে ফ্যাশন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে আসার ইন্সপিরেশন পেয়েছিলেন?

রথি : কাউকে দেখে বা অনুপ্রাণিত হয়ে আমার সোশ্যাল মিডিয়ার কাজ করা সেভাবে শুরু হয়নি। মূলত ক্লাস টেনে পড়ার সময় আমি প্রথম সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট খুলি। আমার অনুরোধে আমার বড় ভাই আমাকে অ্যাকাউন্টটা তখন খুলে দেয়। সেখান থেকে ধীরে ধীরে ভিডিও আপলোড শুরু।

৩. আপনার ভিডিওতে ফ্যাশন, খাবারের রিভিউ, রান্না এবং দৈনন্দিন জীবনের নানা বিষয় উঠে আসে। একসাথে এমন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে কাজ কীভাবে সামলান?

রথি : হ্যাঁ, আমি আসলে অনেক ধরনের কনটেন্ট বানাই। আমার কখনোই একটা ক্যাটেগরি সিলেক্ট করে কাজ করা হয়না। আমি ভেবেছিলাম যে কেবল ফ্যাশন নিয়েই কনটেন্ট ক্রিয়েট করব। কিন্তু আমার আসলে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। সেটি হতে পারে – ফ্যাশন, লাইফস্টাইল কিংবা কুকিং। 

তবে, সব ধরনের কনটেন্ট ক্রিয়েট করাও কিন্তু সহজ না। যেমন একটা রান্না নিয়ে কোন ভিডিও বানাতে হলে  ইনগ্রিডিয়েন্টস থেকে শুরু করে সবকিছু আগে থেকেই প্রস্তুত করা লাগে। আর সম্পূর্ণ রেসিপিটা নিজেকেই রান্না করতে হয়। অর্থাৎ এই ধরনের ভিডিও করতে মোটামুটি পাঁচ-ছয় ঘণ্টা সময় চলে যায়। আবার এডিটিং এরও কাজ থাকে। এই সব কিছু ম্যানেজ করে সবসময় কনটেন্ট তৈরি করাটা কঠিন। 

৪. কনটেন্ট ক্রিয়েটিংয়ের পাশাপাশি উদ্যোক্তা হয়ে উঠার জার্নি কেমন ছিল? 

রথি : ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল যে আমি ব্যবসা করব। বর্তমানে আমার দুইটা ব্যবসা আছে। একটা রেস্টুরেন্ট আছে আর "লাক্সারিওসা" নামে আমার একটা অনলাইন পেইজ আছে। আমার ক্যাফেটার নামও কিন্তু "ক্যাফে লাক্সারিওসা"। 

কনটেন্ট ক্রিয়েশনের আগের থেকে আমি বিজনেস শুরু করি। সেই সময় অনলাইন বিজনেসের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। মূলত ফ্যাশন নিয়েই আমার ব্যবসাটা গড়ে ওঠে। এছাড়া আমার একটা রেস্টুরেন্ট আছে। উদ্যোক্তা হওয়ার জার্নিটা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ তখন আমি খুবই ছোট। আমার স্কুল, পড়াশুনা আর কোচিং নিয়ে ব্যস্ততার পরে ব্যবসা নিয়ে কাজ করা কঠিন ছিল। ইনভেস্ট করার মতো অর্থও আমার ছিল না। প্রোডাক্ট নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছানো কিংবা প্রোমোশনের কাজ করাও সহজ ছিল না। আমার মনে হয় কনটেন্ট ক্রিয়েটিংয়ের চেয়ে ব্যবসা দাঁড় করানো বেশি কঠিন। তবে, আমার পরিবারের সাপোর্ট এবং নিজের ধৈর্যের কারণে আমি যখন যে কাজটা করতে চেয়েছি, তা করতে পেরেছি।

৫. টিকটকে আপনার বিশাল ফলোয়ার বেজ আছে। এই প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করেন?

রথি : টিকটকে আমার ফ্যানবেস বেশ ভালই। এটার একটা কারণ আছে। কারণ আমার টিকটকের জার্নিটা অনেক দিনের। প্রায় শুরু থেকে আমি এই প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট প্রকাশ করছি। আমি ২০১৭ সাল থেকে এই অ্যাপটা ব্যবহার করছি এবং কনটেন্ট ক্রিয়েট করছি। অন্য সব প্ল্যাটফর্মের মত টিকটকের কিছু রুলস ও কমিউনিটি গাইডলাইন আছে। আমি সবসময় চেষ্টা করি কমিউনিটি গাইডলাইনটা মেনে চলার পাশাপাশি কোয়ালিটিফুল কনটেন্ট তৈরি করার। আমি এখন বুঝতে পারি যে আমার অডিয়েন্স আমার কী টাইপের ভিডিও পছন্দ করে। আমি এই ব্যাপারটা মাথায় রেখেই ভিডিও তৈরি করি।  

৬. টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে অনেক ধরনের ট্রেন্ড আসছে। এক্ষেত্রে আপনার কনটেন্ট কীভাবে অন্যদের থেকে আলাদা?

রথি : সাধারণত যখন কোনও ট্রেন্ড আসে তখন সবাই ওই ট্রেন্ড গুলো ফলো করতে থাকে। আমার কিছু বিষয় নিয়ে ভিডিও করতে খুব বেশি পছন্দ করি। তার মধ্যে আছে ফ্যাশন ও কুকিং। আমি চেষ্টা করি আমার ফ্যাশন স্টাইলটা আমার মত করে উপস্থাপন করতে। রান্নার ক্ষেত্র আমার কুকিং এর রেসিপিটা যাতে অন্যদের থেকে আলাদা হয় সেই দিকটা খেয়াল রাখি। আমি চেষ্টা করি যে ভিডিওটা এমনভাবেই প্রেজেন্ট করতে যাতে সবার কাছে এটা ভালো লাগে। 

৭. সোশ্যাল মিডিয়া কেন্দ্রিক চ্যালেঞ্জ কীভাবে সামলান?

রথি : সোশ্যাল মিডিয়াতে সমালোচনা আমি অনেক বেশি ফেইস করি। যদিও সমালোচনা আমি একদমই পছন্দ করি না। যখন কোন খারাপ কমেন্ট আসে, কটূক্তি টাইপের কথা আসে বা কোন সমালোচনামূলক কথা বা কনটেন্ট আমার সামনে আসে আমি ট্রাই করি, এটা স্কিপ করতে ট্রাই করি মানুষের কথাগুলো মনে না নিতে। আমি আমার ভিডিওতে নেগেটিভ এবং বাজে কোন কমেন্ট দেখলে খারাপ লাগে। যদি এই কমেন্টটা কেউ পড়ে তার কাছেও এটা ভাল দেখাবে না। সেই ক্ষেত্রে আমি আমার কমেন্ট সেকশনে ফিল্টার করি। 

৮. আপনি কি এমন কাউকে ফলো করেন, যার ভিডিও আপনাকে নতুন কনটেন্ট তৈরিতে অনুপ্রাণিত করে?

রথি : যারা কনটেন্ট ক্রিয়েশন করে তাদের মধ্যে আমি অনেককেই ফলো করি। মানে তাদের কনটেন্ট দেখতে আমি পছন্দ করি। তবে রোল মডেল কাউকে মনে করি না। কারণ আমার কনটেন্ট ক্রিয়েশনটা শুরু হয়েছে আমার নিজের একটা কনটেন্ট ক্রিয়েট করে যেটা আমার অডিয়েন্সটা আমার কাছে রিকোয়েস্ট করেছিল। তো আমি মনে করি, আমি আমার রোল মডেল। কারণ আমি যেটা পারবো সেটা আমিই পারবো এবং কাউকে দেখে শিখে না। মানুষের কাছে থেকে আমি ইন্সপায়ার্ড হই। কারও কোনো কিছু ভালো লাগলে আমি ট্রাই করি যে ওই জিনিসটা তৈরি করার।  

৯. ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

রথি : ভবিষ্যতে আমি আমাকে অনেক বড় একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসাবে দেখতে চাই। যাতে বাংলাদেশের দশজনের নাম নিলে আমার নামটাও আসে। এছাড়া আমার বিজনেসগুলোকে একটু বড় পরিসরে নিয়ে যেতে চাই।  

১০. কনটেন্ট ক্রিয়েটর হতে চাইলে তাদের উদ্দেশ্যে কি পরামর্শ দিতে চান?

রথি : কনটেন্ট ক্রিয়েশন অনেক সোজা, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনেক কঠিনও। কারণ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন ধরনের গাইডলাইন থাকে। সবকিছু মেইনটেইন করে একটা কনটেন্ট ক্রিয়েট করতে হয়। আমি মনে করি, এমন কনটেন্ট তৈরি করা উচিত যা মানুষের উপকারে আসে। যার কারণে মানুষ আপনাকে ফলো করবে, পরের কনটেন্ট দেখতে চাইবে। কোন ধরনের নেগেটিভ কনটেন্ট প্রচার করা ঠিক না, কারণ ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে সবাই আপনার কনটেন্ট দেখবে। আপনার কাছে যদি মনে হয় আপনি কোন বিষয়ে সেরা, সেটা নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন। ফ্যাশন, কুকিং, ট্রাভেলিং, ড্যান্সিংসহ কনটেন্ট তৈরি অসংখ্য বিভাগ রয়েছে। আপনার পছন্দের জায়গায় নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারেন।