ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:৫৯:১৩ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
পূর্বাচল ৩০০ ফিটে নেতাকর্মীদের ঢল মগবাজারে ককটেল বিস্ফোরণে যুবক নিহত পোস্টাল ভোটে নিবন্ধনের সময় বাড়লো হাদি হত্যায় মোটরসাইকেল চালকের সহযোগী গ্রেপ্তার ইন্টারনেট শাটডাউন চিরতরে নিষিদ্ধ করল সরকার

দুই বেলা ভাত আলু ডাল, এক বেলা না খেয়ে থাকছেন লঙ্কানরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৮:৫০ পিএম, ৮ ডিসেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় গত এক বছর ধরে চলছে চরম অর্থনৈতিক দুরাবস্থা। এর প্রভাব পড়েছে দেশটির প্রত্যেক সাধারণ মানুষের ওপর। বর্তমানে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, পর্যাপ্ত খাবার কেনার সামর্থ্যও অনেকের নেই।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিমের অঞ্চল ক্যান্ডির হানথালা নামক একটি গ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেছে।

চা বাগান সমৃদ্ধ হানথালা গ্রামের হার্সিনি নামের এক নারী সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছেন, তাদের তিন বেলা খাবার খাওয়ার সামর্থ্যও নেই। এখন দুই বেলা খাচ্ছেন। তাও শুধুমাত্র ভাত ডাল আর আলু। আরেক বেলা না খেয়ে থাকছেন।

প্রতিদিনই এসব খাবার খাওয়ায় তার তিন বছরের ছোট মেয়ে নিতিশার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তিনি জানিয়েছেন, মেয়ে নিতিশাকে পর্যাপ্ত খাবার দিতে না পারায় সে এখন পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। তবুও মা হিসেবে কিছু করতে পারছেন না তিনি।

হার্সিনি আরও জানিয়েছেন, গত কয়েক সপ্তাহে ডিম অথবা দুধের দেখা পাননি তারা। অথচ মাত্র এক মাসে আগে আরেক মেয়ের জন্ম দিয়েছেন তিনি।

অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারণে আয় কমে যাওয়ায় খাবার কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থও বেশিরভাগ মানুষের কাছে নেই। এ কারণে বাধ্য হয়ে শিশুদেরসহ ক্ষুদার্থ থাকতে হচ্ছে অনেক পরিবারকে।

হার্সিনির গ্রামের অনেক শিশুই পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। ওই অঞ্চলের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার না পাওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এ সংখ্যা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চিকিৎসক বলেছেন, ‘অপুষ্টির প্রভাব প্রকাশ হতে সময় লাগে। বর্তমানে বেশিরভাগ শিশু প্রাকৃতিকভাবে শরীরে যে পুষ্টি মজুদ থাকে সেগুলো ব্যবহার করে টিকে আছে। কিন্তু অব্যাহতভাবে এরকম চলতে থাকলে ভবিষ্যতে এর লম্বা প্রভাব পড়বে ‘

বিশ্ব খাদ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে শ্রীলঙ্কার চার ভাগের তিন ভাগ মানুষের খাদ্য কেনার মতো নিরাপদ আয়ের ব্যবস্থা নেই। ফলে পুরো জনসংখ্যার ৭০ ভাগ মানুষ তাদের খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন।

 

অপুষ্টি এবং মা

খাবার কেনার সামর্থ্য কমে যাওয়ার বিষয়টির বিরুপ প্রভাব পড়েছে গর্ভবতী নারীদের ওপর। হানথানা গ্রামের ২৪ বছর বয়সী কাঞ্চনা নামে এক নারীর সঙ্গে কথা বলে বিবিসি। তিনি জানান, চার মাসের গর্ভবতী তিনি। সবকিছু ঠিক থাকলে জমজ সন্তানের জন্ম দেবেন। কিন্তু তার কপালেও জুটছে না পুষ্টিকর খাবার।

কাঞ্চনা বলেন, ‘জমজ সন্তানের কারণে আমি প্রায়ই ক্ষুদার্থ হই। এ কারণে ভাত খাই। ডিম, মাছ হলে ভালো হতো। কিন্তু এগুলোর দাম বেশি। আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধ এবং দামি খাবারের মধ্যে যে কোনো একটিকে বেঁছে নিতে হয়।’

দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আরেকটি গ্রামে দেবি নামের অপর এক গর্ভবতী নারী বিবিসিকে জানিয়েছেন, তার শরীর তেমন ভালো না এবং ওজন অনেক কম। কিন্তু পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ নেই। বর্তমানে সরকারি হাসপাতাল থেকে ভিটামিন ওষুধ ও ভাত খেয়ে থাকতে হচ্ছে তাকে। বিবিসির সঙ্গে আরও অন্তত ১০ জন নারীও একই কথা বলেছেন।

আগে গর্ভবতী নারীদের সরকারের পক্ষ থেকে পুষ্টিকর ভিটামিনের প্যাকেট দেওয়া হলেও অর্থ সংকটের কারণে সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ক্ষুধার্ত পেটে স্কুলে যাচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরা

শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাঞ্চল মাথুগামার একটি গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা করেন আনোমা শ্রীয়াঙ্গি ধর্মবর্ধনে। তার সঙ্গে কথা বলে বিবিসি। তিনি সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছেন, তার স্কুলে অনেক শিশু আছে যারা সকালে কিছু না খেয়ে ক্লাস করতে আসে। গত তিন চার মাস আগেও ২০-২৫ জন শিশু ক্ষুধার কারণে অজ্ঞান হয়ে যেত। এ সমস্যা সমাধানে  ব্যক্তিগতভাবে অনেকে এগিয়ে এসেছেন। এখন এভাবেই চলছে তাদের কার্যক্রম।

শ্রীলঙ্কার ফুড ফার্স্ট ইনফরমেশন এন্ড একশন নেটওয়ার্কের (এফআইএএন) প্রেসিডেন্ট এস ভিসভালিঙ্গাম জানিয়েছেন, খাবার না পাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছেন। তবে এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন তারা।

সূত্র: বিবিসি