ঢাকা, রবিবার ০৭, ডিসেম্বর ২০২৫ ৫:২৪:২৪ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
খালেদা জিয়ার অবস্থা এখনও উদ্বেগজনক আরও পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা খালেদা জিয়ার এন্ডোসকপি সম্পন্ন, থামানো গেছে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ আগারগাঁওয়ে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, নারীসহ দগ্ধ ৬ প্রবাসীদের নিবন্ধন ছাড়াল এক লাখ ৯৩ হাজার

নওগাঁয় দড়ি তৈরি করে স্বাবলম্বী নারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ১১:১৩ পিএম, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ মঙ্গলবার

ঝুট কাপড় (গার্মেন্টেস-এর পরিত্যক্ত কাপড়) দিয়ে বিশেষভাবে দড়ি তৈরি করে গ্রামীণ অনেক নারী স্বাবলম্বী হয়ে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন।

 

নওগাঁ সদর ও রানীনগর উপজেলার ১০ থেকে ১২টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার নারী এ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দারিদ্রতার কষাঘাত মুছে ফেলে তারা সংসারে এনেছেন সুখ এবং স্বাচ্ছন্দ।


তাদেরই একজন নওগাঁ সদর উপজেলার ইলশাবাড়ি গ্রামের ফেরদৌসী আকতার। অভাব অনটনের সংসারে বড় মেয়েকে কলেজে পড়াশুনা করাচ্ছিলেন প্রতিবেশীদের সহযোগিতায়। পরিবারের সদস্য পাঁচজন। স্বামী অসুস্থ। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম এ ফেরদৌসি আকতার। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বড় মেয়ে মারা যাওয়ায় মুষরে পরে পরিবারটি। যখন অভাবের সাথে পাল্লা দিয়ে দিশেহারা ঠিক তখনই এক নিকট আত্মীয়ের পরামর্শে ঝুট কাপড় থেকে বিশেষভাবে দড়ি তৈরি শুরু করেন তিনি।


গত ৬ বছর থেকে দড়ি তৈরি এবং বিক্রি করে বেশ ভালো লাভ আসতে থাকে। দড়ি তৈরির আয় দিয়ে অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা, ওষুধপত্র, সংসারের যাবতীয় খরচ এবং এক ছেলে ও এক মেয়েকে পড়াশুনার খরচ চালাচ্ছেন তিনি। 


শুধু ফেরদৌসি আকতার নয় নওগাঁ সদর উপজেলার ইলশাবাড়ী, মাদারমোল্লা, চকবুলাকী, শিমুলিয়া, বলিরঘাট এবং রাণীনগর উপজেলার এনায়েতপুর ও বাহাদুরপুরসহ প্রায় ১০/১২টি গ্রামের গ্রামের প্রায় ১০ হাজার গ্রামীণ নারী গার্মেন্টসের ঝুট কাপড় থেকে দড়ি তৈরির সাথে সম্পৃক্ত হন। এ যেন এক জীবনযুদ্ধে জয়লাভের সফল কাহিনী।


নারী দড়ি তৈরিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ঝুট কাপড় দিয়ে আকর্ষনীয় শিকা, গরু ও ছাগল বাঁধার জন্য দড়ি তৈরি করছেন তারা। এ কাপড় থেকে তৈরি দড়ি মজবুত ও টেকসই বলে পানের বরজে বেশি ব্যবহার উপযোগী হওয়ায় চাহিদাও বেশি।

 

বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে অনেক নারী দড়ি তৈরির কাজ করছেন। পরে দড়ি বিক্রি করে তাদের ঋণ শোধ করেও লাভের মুখ দেখছেন। তবে তারা বলেছেন সরকারী সহযোগিতা ও স্বল্প সুদে ঋণ পেলে তাদের এ কাজের প্রতি আরও আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে।


প্রতিটি ঝুট কাপড়ের বস্তার ওজন ৮০-৮৫ কেজি। প্রতিকেজি ঝুট কাপড়ের দাম ৪৫ টাকা। সেই হিসেবে এক বস্তা ঝুট কিনতে তাদের খরচ হয় সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। এক বস্তা ঝুট থেকে তৈরি দড়ি বিক্রি হয় সাড়ে ৪ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। একজন নারী প্রতি সপ্তাহে ২ বস্তা ঝুটের দড়ি তৈরি করতে পারেন। কাজেই এক বস্তা ঝুট থেকে তৈরি দড়ি বিক্রি করে লাভ করতে পারেন প্রায় ৭০০ টাকা। এভাবে প্রতিমাসে একজন নারী গড়ে ৮ বস্তা ঝুট থেকে দড়ি তৈরি করতে পারেন। সহজেই প্রতিমাসে ৫ হাজারের বেশি টাকা নীট লাভ করেন। যেহেতু সংসারের অন্যান্য সকল কাজের ফাঁকে এ কাজগুলো তারা করেন বলে একাজ অত্যন্ত লাভজনক। কোন কোন পরিবারের সকল সদস্য মিলে এ কাজ করে থাকেন। সেসব পরিবারে লাভের পরিমান আরও বেশি।


সদর উপজেলার ইলশাবাড়ী গ্রামের ফেরদৌসি আকতার ও রেবেকা বিবি, মাদারমোল্লা গ্রামের আকলিমা বেগম ও জরিনা আকতার, শিমুলিয়া গ্রামের আয়শা বেগমসহ অনেকেই বলেছেন, প্রতি সপ্তাহে দড়ি বিক্রি করে প্রায় দেড় হাজার টাকার মতো লাভ থাকে। আর এখান থেকে পরিবারের ওষুধপত্র, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ উঠে আনে। নিত্য প্রয়োজনীয় সংসার খরচ সহজেই মেটানো সম্ভব হয়। 


এদিকে এই এলাকায় এ পেশাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একশ্রেণীর দড়ি ক্রেতাগ্রুপ। নওগাঁ সদর উপজেলার ঝুট কাপড় ব্যবসায়ী আসলাম হোসেন বলেন, বিভিন্ন গ্রাম থেকে এসে ঝুট কাপড় কিনে যায় নারীরা। তারা দড়ি তৈরি করে আবার আমার কাছে বিক্রি করে। এসব দড়ি বগুড়া, রাজশাহী, নাটোর থেকে এসে ক্রেতারা কিনে নিয়ে যায়।


নওগাঁ শিল্প সহায়ক কেন্দ্র (বিসিকি)-এর উপ-ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম বলেন, দারিদ্রগোষ্ঠী জনগণকে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিসিক কাজ করে যাচ্ছে। জেলায় যারা শিল্প উদ্যোক্তা আছেন তাদের বিসিক থেকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঋণ এবং শিল্পকারখানা সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করে থাকে। যেসব উদ্যোক্তা আছেন আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।

 

সূত্র : বাসস