ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ৩:১০:২৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

নাইজারে পাওয়া মঙ্গলগ্রহের শিলা চড়া দামে বিক্রি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৪১ পিএম, ১১ আগস্ট ২০২৫ সোমবার

ছবি: সংগ্রহিত।

ছবি: সংগ্রহিত।

দুই বছর আগে পশ্চিম আফ্রিকার নাইজার দেশ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি বিরল মঙ্গল গ্রহের শিলাবৃত্তির নিদর্শন গত মাস নিউইয়র্কে নিলামে বিক্রি হয়েছে। 

মঙ্গলগ্রহের কোটি কোটি বছর পুরনো এই শিলাপিন্ডটি পৃথিবীতে পাওয়া সবচেয়ে বড় টুকরাগুলোর একটি। সথোবিস নিলামে এটি ৪ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়। তবে ক্রেতা ও বিক্রেতার পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।

মঙ্গলগ্রহ থেকে পাওয়া বিরল শিলার প্রথম প্রদর্শনী ঘিরে বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ, পৃথিবীতে পাওয়া ৫০ হাজার উল্কাপিন্ডের মধ্যে ৪০০ টির কম মঙ্গল গ্রহ থেকে আসা।

নিলামের সময় এই শিলার ওজন ছিল ২৪ দশমিক ৭ কেজি। সথবিস নিলামঘরে তোলা ছবিতে আলোর মধ্যে জ্বলজল করা লাল আর রূপালি রঙের এই শিলাখণ্ড সবাইকে মুগ্ধ করেছে।

কিন্তু এরপরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, কীভাবে শিলাখণ্ডটি নিলামে উঠল? নাইজার সরকার এক বিবৃতিতে এর রপ্তানির বৈধতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এটি অবৈধভাবে পাচার হয়ে থাকতে পারে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

নিলাম প্রতিষ্ঠান সথবিস এর বিরোধিতা করে বলেছে, সব প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়েছে। তবে নাইজার এখন শিলাখণ্ডটির আবিষ্কার ও বিক্রির বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।

এই শিলার বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়েছে, ‘এনডব্লিউএ ১৬৭৮৮’ (এনডব্লিউএ মানে নর্থ-ওয়েস্ট আফ্রিকা)। এটি কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা নিলামঘরে পৌঁছালো, সে সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়।

গত বছর প্রকাশিত একটি ইতালীয় একাডেমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই শিলা ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর নাইজারের আগাদেজ এলাকার সাহারা মরুভূমিতে (চিরফা ওয়াসিস থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার পশ্চিমে) এক উল্কাপিণ্ড অন্বেষণকারী খুঁজে পেয়েছিলেন। তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর যে কোনও জায়গায় পড়তে পারে। কিন্তু সংরক্ষণের জন্য অনুকূল আবহাওয়া আর মানুষের কম উপস্থিতির কারণে সাহারা মরুভূমি উল্কাপিণ্ড আবিষ্কারের অন্যতম প্রধান এলাকা।

তাই অনেকেই এই পরিবেশে উল্কাপিণ্ড খুঁজে পাওয়া এবং তা বিক্রির আশায় ঘুরে বেড়ান। ইতালীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনডব্লিউএ ১৬৭৮৮ স্থানীয় সম্প্রদায় আন্তর্জাতিক ডিলারের কাছে বিক্রি করেছিল। পরে এটি ইতালির আগরেজো শহরের একটি ব্যক্তিগত গ্যালারিতে স্থানান্তর করা হয়।

ফ্লোরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের খনিজবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক জিওভান্নি প্রাতেসি নেতৃত্বাধীন বিজ্ঞানীদের একটি দল এই শিলাখণ্ড পরীক্ষা করে এর গঠন ও উৎস সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন।

গত বছর ইতালিতে অল্প সময়ের জন্য এটি প্রদর্শিত হয়েছিল। রোমে ইতালির স্পেস এজেন্সিতেও এটি প্রদর্শন করা হয়। এরপর গত মাসে এটি নিউ ইয়র্কে প্রকাশ্যে দেখা যায়। তবে শিলাখন্ডটির দুটি টুকরো ইতালিতে গবেষণার জন্য রাখা হয়েছিল।

সথবিস নিলামঘর বলছে, এনডব্লিউএ ১৬৭৮৮ নাইজার থেকে রপ্তানি করা হয়েছে এবং সব প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই তা পরিবহণ করা হয়েছে।

সথবিসের এক মুখপাত্র বলেন, নাইজার এই শিলা রপ্তানির বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে সেটি তারা জানেন এবং বিষয়টি ঘিরে যে প্রশ্ন উঠেছে, সেগুলোকে আমলে নিয়ে নিজেদের কাছে থাকা তথ্য পর্যালোচনা করে দেখছেন তারা।

অন্যদিকে, অধ্যাপক পল সেরেনো, যিনি একদশক আগে নাইজার হেরিটেজ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, নাইজারের আইন লঙ্ঘিত হয়েছে।

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, কোনও দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য সেটি সাংস্কৃতিক বস্তু, শারীরিক বা প্রাকৃতিক জিনিস, কিংবা বহির্জাগতিক পদার্থ—যাই হোক না কেন সেদেশ থেকে নেওয়া যায় না। আমরা এখন ঔপনিবেশিক যুগ পেরিয়ে এসেছি, যখন এসবকিছুই স্বাভাবিক ছিল।”

নাইজার নিজেদের ঐতিহ্য রক্ষা করতে ১৯৯৭ সালে একটি আইন পাস করে। অধ্যাপক সেরেনো সেই আইনের একটি ধারার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে বিভিন্ন শ্রেণির বস্তুর বিস্তারিত তালিকা রয়েছে।

তাতে খনিজ পদার্থের নমুনার কথা শিল্পকলা, স্থাপত্য এবং পুরাতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মধ্যে উল্লেখ রয়েছে। তবে উল্কাপিণ্ডের কথা এতে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই।

সথবিস নিলামঘরের দেওয়া বিবৃতিতে নাইজার একথা স্বীকারও করেছে যে, উল্কাপিণ্ডের বিষয়ে তাদের সুনির্দিষ্ট কোনও আইন নেই। একই যুক্তি দেখিয়েছে সথবিসও।

তারপরও এত বড় ও চোখে পড়ার মতো এই প্রত্নবস্তুটি কীভাবে নাইজার কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে বাইরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হল তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।