ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:০৯:২২ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

পঞ্চগড়ে এবারও সৌন্দর্য ছড়াবে টিউলিপ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:১২ এএম, ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ শুক্রবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

গত বছরের মতো পঞ্চগড়ে আবারো শুরু হয়েছে টিউলিপ ফুলের চাষ। এ বছরও রাজসিক সৌন্দর্য ছড়াবে ভিনদেশি এই টিউলিপ এমনটাই আশা উদ্যোক্তাদের।

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) থেকে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার দর্জিপাড়ায় বৃহৎ পরিসরে টিউলিপের চাষ শুরু হয়েছে। সকালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান ও পরিচালক (প্রশাসন) সেলিমা আখতার ভার্চুয়ালি টিউলিপের বীজ বপনের উদ্বোধন করেন।

ইএসডিও’র উদ্যোগে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অর্থায়নে এবার দুই একর জমিতে ২০ জন নারী-পুরুষ উদ্যোক্তাদের নিয়ে চাষ করা হচ্ছে। গতবার উত্তরাঞ্চলে বেশ শীত থাকায় টিউলিপ চাষের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রান্তিক ৮ জন নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে টিউলিপ চাষ শুরু হয়। টিউলিপ চাষে ব্যাপক সাফল্য পাওয়ায় এ বছর দুই একর জমিতে এক লাখেরও বেশি টিউলিপের বীজ রোপনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো টিউলিপের চাষ। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন এ বছরও টিউলিপ চাষে যেমন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটবে তেমনি পর্যটকদেরও ব্যাপক সমাগম ঘটবে।

মঙ্গলবার দুপুরে দর্জিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ব্যাপক এলাকা নিয়ে জমি প্রস্তুতের মধ্য দিয়ে টিউলিপের বীজ রোপন শুরু হয়েছে। জমিতে খন্ড খন্ড প্লট করে স্প্রে করে নেওয়া হচ্ছে। কেউ লাঙ্গল দিয়ে লাইন টেনে যাচ্ছেন। লাইনের দুপাশে নারী-পুরুষরা মিলে টিউলিপের বীজ সারি সারি করে মাটিতে রোপন করছেন। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে রোপন শেষ হবে এবং রোপনের ২১-২৩ দিনের মধ্যে গাছে কলি আসতে শুরু করবে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।

এ বছর তেঁতুলিয়ায় ১০ প্রজাতির টিউলিপ সৌন্দর্য ছড়াবে। প্রজাতি ও রংগুলো হচ্ছে- অ্যান্টার্কটিকা (সাদা), ডেনমার্ক (কমলা ছায়া), লালিবেলা (লাল),  ডাচ সূর্যোদয় (হলুদ), স্ট্রং গোল্ড (হলুদ), জান্টু পিঙ্ক (গোলাপী), হোয়াইট মার্বেল (সাদা), মিস্টিক ভ্যান ইজক (গোলাপী), হ্যাপি জেনারেশন (সাদা লাল শেড) ও গোল্ডেন টিকিট (হলুদ)।

মুর্শিদা খাতুন, মনোয়ারা খাতুন, আয়েশা সিদ্দিকা নামে তিনজন উদ্যোক্তা বলেন, প্রথমবারের মতো গত বছর আমরা প্রান্তিক ৮ জন নারী মিলে এ অঞ্চলে টিউলিপ চাষ করেছিলাম। টিউলিপ চাষ করে আমরা আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হয়েছি। এছাড়া টিউলিপ ফুল দেখতে এ অঞ্চলে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটেছিল। আশা করছি এবারও টিউলিপের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করবে।

জানা যায়, শীতপ্রধান অঞ্চলের ফুল টিউলিপ। যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘টিউলিপা’। এটি নেদারল্যান্ডসে বেশি চাষ হয়। এটি বাগানে কিংবা কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হয়। ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখার জন্য এর আবেদন অনন্য। বর্ষজীবি ও কন্দযুক্ত প্রজাতির এ গাছটি লিলিয়াসিয়ে পরিবারভুক্ত উদ্ভিদ। টিউলিপের প্রায় ১৫০ প্রজাতি এবং এদের অসংখ্য সংকর রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের হাইব্রিডসহ টিউলিপের সকল প্রজাতিকেই সাধারণভাবে টিউলিপ নামে ডাকা হয়। টিউলিপ মূলত বর্ষজীবী ও শীতপ্রধান দেশের বসন্তকালীন ফুল হিসেবে পরিচিত।

ইএসডিও’র সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আইনুল হক বলেন, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) আর্থিক সহযোগিতায় গত বছর শারিয়াল ও দর্জিপাড়ায় আমরা ৮ জন নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে মাত্র ৪০ হাজার বীজ দিয়ে টিউলিপ চাষ করেছিলাম। কিন্তু এ বছর প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। এ বছর আমরা আরও নতুন ১২ জনসহ মোট ২০ জন চাষিকে নিয়ে শুধুমাত্র দর্জিপাড়ায় দুই একর জমিতে এক লাখ বীজ রোপন শুরু করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা এখানে টিউলিপ দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তৈরি করবো। পর্যটকদের জন্য এটি অন্যরকম আকর্ষণ তৈরি করবে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের যাতে কোনো প্রকার অসুবিধা না হয়, সেজন্য এই এলাকায় একটি ইকো-ট্যুরিজমের মাধ্যমে থাকার সুবন্দোবস্ত করছি। এছাড়া এখানে তেঁতুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।

আইনুল হক বলেন, আজ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে কলি আসবে। ২০-২১ দিনের মধ্যে টিউলিপ ফুলে ফুলে ভরে যাবে। আগামী ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসজুড়ে এখানকার বিভিন্ন অনুষ্ঠান, জাতীয় দিবস ও ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস রাঙাবে আমাদের টিউলিপ। মুগ্ধ করবে যেকোনো পর্যটককে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দ্বিতীয়বারের মতো এবার দর্জিপাড়ায় টিউলিপ চাষ হচ্ছে। তবে এবার ব্যাপক আকারে চাষ করা হচ্ছে। ফুলটি চাষ করতে হলে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে উত্তরের এ উপজেলায় কাঞ্চনজঙ্ঘা কাছে থাকায় এখানে বেশ শীত থাকে। এরকম শীতে টিউলিপ চাষে সুবিধা রয়েছে এবং বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া বাণিজ্যিক চাষের উদ্যেশ্যে বাংলাদেশের জলবায়ুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টিউলিপ ফুলের জাত উদ্ভাবন করতে গবেষণা চলছে। আশা করছি গতবারের মতো এবারও টিউলিপ চাষ সাফল্যের মুখ দেখবে এবং পর্যটন শিল্পে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।