ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ৩:১০:২৪ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

পর্যটকশূন্যতায় ধুঁকছে কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৫৩ পিএম, ৪ আগস্ট ২০২৫ সোমবার

কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকা। ছবি: সংগৃহীত

কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকা। ছবি: সংগৃহীত

পর্যটকশূন্যতায় চরমভাবে ধুঁকছে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’। এক বছর আগেও কলকাতার 'মিনি বাংলাদেশ' ছিল শহরের খাদ্য, আতিথেয়তা এবং মুদ্রা বিনিময় ব্যবসার একটি প্রাণবন্ত কেন্দ্র। নিউ মার্কেটের কাছে ফ্রি স্কুল স্ট্রিট এবং মার্কুইস স্ট্রিটের আশেপাশের এই এলাকা বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় ছিল। 

এখানে সাশ্রয়ী হোটেল, 'ওপার বাংলা' খাবারের রেস্তোরাঁ, প্রধান রেলস্টেশন ও বাস টার্মিনালের নৈকট্য এবং চিকিৎসা সুবিধার কারণে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকত। 

কিন্তু ২০২৪ সালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পর্যটকদের আগমন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এখনও এই অস্থিরতার প্রভাব অনুভব করছেন, যার ফলে এক বছরে ১০০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে।

ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর একটি রক্ষণশীল অনুমান অনুযায়ী, 'মিনি বাংলাদেশ' এলাকার ক্ষতি ১০০০ কোটি টাকার বেশি। তবে ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলি খান বলেন, "হোটেল, রেস্তোরাঁ, খুচরা বিক্রয়, ভ্রমণ সংস্থা, মুদ্রা বিনিময়, চিকিৎসা সেবা এবং পরিবহন খাতে প্রতিদিন ৩ কোটি টাকার ব্যবসা হতো। নিউ মার্কেট এবং বড়বাজারের ক্ষতি যোগ করলে মোট ক্ষতি ৫০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।"

এই এলাকার অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে বা স্থানীয় গ্রাহকদের উপর নির্ভর করছে। মার্কুইস স্ট্রিটের একটি ভ্রমণ সংস্থার ম্যানেজার প্রবীর বিশ্বাস বলেন, "এক বছর আগেও একসঙ্গে একাধিক বাস পর্যটক নিয়ে আসত, পার্কিংয়ের জায়গা পাওয়া যেত না। এখন কয়েকদিন ধরে একজনও পর্যটক আসেন না।"

মুদ্রা বিনিময় ব্যবসা, রেস্তোরাঁ এবং হোমস্টে ব্যবসা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মার্কুইস স্ট্রিটের কারেন্সি এক্সচেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মোহাম্মদ ইন্তেজার বলেন, "আমরা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশি পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল ছিলাম। এখন আমাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।" 

ব্যবসায়ীদের মতে, এই এলাকার প্রায় ৪০ শতাংশ ছোট এবং মাঝারি রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে। বড় রেস্তোরাঁগুলো এখন খুব কম বাজেটে চলছে। রাধুনি রেস্তোরাঁর মালিক এনসি ভৌমিক বলেন, "ব্যবসা ২০ শতাংশ এ নেমে এসেছে, এটা চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। আমরা কোনোমতে টিকে আছি, পরিস্থিতি ফিরে আসার অপেক্ষায়।"

এই রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এলাকার ব্যবসায়ীদের জন্য দ্বিতীয় বড় ধাক্কা। এর আগে কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ও এই এলাকা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছিল। একজন রেস্তোরাঁ মালিকের ছোট ভাই বলেন, "মহামারীর পর ব্যবসার উন্নতি হবে ভেবে আমরা অনেক বিনিয়োগ করেছিলাম। ঋণ নিয়ে ব্যবসা সংস্কার করেছিলাম। কিন্তু এই অস্থিরতার কারণে ব্যবসা আবার ডুবে গেছে। আমার বড় ভাই মানসিক চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমাদের প্রতি মাসে ১.৫ লাখ টাকার ইএমআই দিতে হচ্ছে, কিন্তু আয় প্রায় নেই।"

বড় ব্যবসার পাশাপাশি, পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিও ভেঙে পড়েছে। হোমস্টে পরিচালক, রান্না করা খাবার সরবরাহকারী, ট্যুর গাইড এবং হোটেল কর্মী, রাঁধুনি, ড্রাইভার ও খুচরা দোকানের কর্মচারীদের জীবিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

এলিয়ট রোডের বাসিন্দা ফারহান রাসুল বলেন, "মহামারীর পর চাহিদা বাড়ায় আমি দুটি বাণিজ্যিক গাড়ি কিনেছিলাম। ব্যবসা ভালো চলছিল, প্রায়ই গ্রাহকদের ফিরিয়ে দিতে হতো। কিন্তু এখন মাসে মাত্র পাঁচ-ছয়টি বুকিং পাই, তাও স্থানীয়দের কাছ থেকে, যারা কম পয়সায় ভ্রমণ করতে চায়। আমাকে ইএমআই দিতে হচ্ছে।"

কলকাতার ‘মিনি  বাংলাদেশ’ আজ পর্যটকশূন্য, ব্যবসাহীন ও চরম অনিশ্চয়তায় ভরা। এই সংকট কবে কাটবে, ব্যবসা আবার পুরনো চেহারায় ফিরবে কি না—সেই প্রশ্নে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা এখনও আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করছেন। 

তথ্যসূত্র : দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া