ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:০৯:১২ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
খালেদা জিয়ার অবস্থা এখনও উদ্বেগজনক আরও পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা খালেদা জিয়ার এন্ডোসকপি সম্পন্ন, থামানো গেছে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ আগারগাঁওয়ে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, নারীসহ দগ্ধ ৬ প্রবাসীদের নিবন্ধন ছাড়াল এক লাখ ৯৩ হাজার

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার নয়া ডিরেক্টর তুলসী গ্যাবার্ড কে?

বিবিসি বাংলা অনলাইন | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:৪০ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০২৪ সোমবার

তুলসী গ্যাবার্ড

তুলসী গ্যাবার্ড

তুলসী গ্যাবার্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাশানাল সিকিউরিটি এজেন্সির ডিরেক্টর হিসাবে বেছে নিয়েছেন। দেশটিতে হিন্দুদের বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে সোচ্চার হতে দেখা গিয়েছে এই সাবেক ডেমোক্র্যাটকে।

তুলসী গ্যাবার্ডের নাম ঘোষণা করে ডোনাল্ড ট্রাম্প লিখেছেন, আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে সাবেক কংগ্রেসওম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুলসী গ্যাবার্ড ন্যাশানাল সিকিউরিটি এজেন্সির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে তিনি দুই দলেরই (ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান) ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন এবং এখন তিনি একজন গর্বিত রিপাবলিকান।

ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তুলসী গ্যাবার্ড। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।

হিন্দু কিন্তু ভারতীয় বংশোদ্ভূত নন:
তুলসী গ্যাবার্ডের পরিচয় সম্পর্কে অনেকেরই কৌতূহল রয়েছে। তার নাম এবং হিন্দু ধর্মের প্রতি বিশ্বাসের কারণে অনেকেই তাকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত বলেও অনুমান করেন। তবে তুলসী গ্যাবার্ড কিন্তু ভারতীয় বংশোদ্ভূত নন। যদিও নিজেকে হিন্দু বলেই পরিচয় দিয়ে থাকেন তিনি।

১৯৮১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামোয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা মাইক গ্যাবার্ড এবং মা ক্যারল গ্যাবার্ড। গ্যাবার্ড দম্পতির পাঁচ সন্তানের একজন তুলসী।

১৯৮৩ সালে তুলসী গ্যাবার্ডের বয়স যখন দু’বছর, তখন তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। হাওয়াইতে আসার পর, তার মা ক্যারল হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। তার বাবা একজন রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ছিলেন। হিন্দু ধর্মের প্রভাবের কারণে ক্যারল গ্যাবার্ড তার সন্তানদের হিন্দু নাম রেখেছিলেন।

রাজনীতির সফর:
তুলসী গ্যাবার্ডের পিতাও রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। তিনি প্রথমে রিপাবলিকান পার্টির (২০০৪-২০০৭) সদস্য ছিলেন এবং পরে ২০০৭ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে যোগ দেন।

তুলসী গ্যাবার্ড হাওয়াই থেকে ২০১৩ সালে প্রথমবার এমপি হিসাবে নির্বাচিত হন। ২০২১ সাল পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন তিনি।

রাজনীতি ছাড়াও, তুলসী গ্যাবার্ড দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি ন্যাশনাল গার্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই সময়ে ইরাক ও কুয়েতের মতো দেশে মোতায়েন ছিলেন তিনি।

তিনি ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বার্নি স্যান্ডার্সের হয়ে প্রচার করেন। ২০২০ সালে ডেমোক্র্যাট হিসাবে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে চেয়ে দলের কাছ থেকে মনোনয়ন চেয়েও লড়েছিলেন। পরে অবশ্য জো বাইডেনকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

মার্কিন কংগ্রেসের প্রথম হিন্দু সদস্য তুলসী গ্যাবার্ড তার মেয়াদকালে সরকার পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা, বিনামূল্যে কলেজ টিউশন এবং বন্দুক নিয়ন্ত্রণের মতো উদারপন্থী নীতিকে সমর্থন করেন।

২০২১ সালে হাউস ছাড়ার পর বেশ কিছু ইস্যুতে তাকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে দেখা যায়। সেই সময় পরোক্ষভাবে ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন বলেও মনে করা হয়েছিল।

এরপর ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে পররাষ্ট্রনীতি ও সামাজিক ইস্যুতে দলের সঙ্গে মতপার্থক্যের বিষয় উল্লেখ করে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ছাড়েন।

সে বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটারে) একটা পোস্টও করেন। এরপরই প্রকাশ্যে ট্রাম্পের সমর্থনে এগিয়ে আসেন মিজ গ্যাবার্ড।

২০২৪ সালে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ তিনি ।

চলতি বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারাভিযানে বেশ সাহায্য করেছেন তিনি। সাবেক ডেমোক্র্যাট হওয়ার কারণে প্রতিদ্বন্দ্বী কমালা হ্যারিসের বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তুতিতেও বেশ সাহায্য করেছেন তিনি।

বিজেপির সঙ্গে ‘নৈকট্য’:
২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে বিয়ে করেন তুলসী গ্যাবার্ড। সেই সময় তার বিয়ে নিয়ে ভারতে বিস্তর আলোচনাও হয়েছিল। কারণ, বৈদিক রীতি অনুযায়ী হাওয়াইয়ে সিনেমাটোগ্রাফার আব্রাহাম উইলিয়ামসকে বিয়ে করেছিলেন মিজ গ্যাবার্ড।

‘দ্য ক্যারাভান’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তরণজিৎ সান্ধু ও রাম মাধব।

বিয়ের অনুষ্ঠানে রাম মাধব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি ব্যক্তিগত বার্তা পড়ে শুনিয়েছিলেন এবং একটা গণেশের মূর্তি উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন।

বিয়ের কয়েক মাস আগে প্রথমবারের জন্য ভারত সফরে এসেছিলেন তুলসী গ্যাবার্ড। তিন সপ্তাহব্যাপী এই সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদী, তৎকালীন ক্যাবিনেট মন্ত্রী এবং সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎও করেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্যাপক প্রশংসা করতে শোনা গিয়েছিল তাকে।

হিন্দু পরিচয় নিয়ে সোচ্চার:
২০১৯ সালে, তুলসী গ্যাবার্ড তার হিন্দু পরিচয় সম্পর্কে ‘রিলিজিয়ন নিউজ সার্ভিস’-এর জন্য একটা প্রতিবেদন লিখেছিলেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, হিন্দু হিসাবে গর্ববোধ করলেও তিনি ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদী’ নন।

তিনি লিখেছেন, আমার বিরুদ্ধে হিন্দু জাতীয়তাবাদী হওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে। এই অভিযোগের প্রমাণ হিসাবে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতার সঙ্গে আমার বৈঠককে তুলে ধরা হয়েছে। যদিও প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, হিলারি ক্লিনটন এবং কংগ্রেসে আমার অনেক সহকর্মীই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বা তার সঙ্গে কাজ করেছেন।

মিজ গ্যাবার্ডের যুক্তি দিয়েছিলেন খ্রিষ্টান, মুসলিম, ইহুদি, বৌদ্ধসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষদের থেকে তিনি যে সমর্থন পেয়েছেন সেটাই তার অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ।

২০২০ সালে তিনি এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছিলেন, দুর্ভাগ্যবশত, হিন্দুফোবিয়া একটা বাস্তব চিত্র। কংগ্রেসের হয়ে আমার প্রতিটি প্রচারে এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এই লড়াইয়ে আমি তা প্রত্যক্ষভাবে অনুভব করেছি। আমাদের দেশে হিন্দুরা প্রতিদিন কী ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় এটা তার একটা উদাহরণ মাত্র। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও মিডিয়া এটা শুধু সহ্যই করে না, প্রচারও করে।

অনেক অনুষ্ঠানে তাকে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ভগবত গীতা নিয়ে কথা বলতে ও ভজন গাইতে দেখা গেছে। প্রথমবার সংসদে পৌঁছে গীতার শপথ নিয়েছিলেন তিনি।

শপথ নেওয়ার পর তুলসী বলেছিলেন, ভগবত গীতা আমাকে দেশ ও অন্যদের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে অনুপ্রাণিত করে।

২০২০ সালে করোনাকালে বিশ্ব যখন একটা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল, সেই সময় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন চেয়ে প্রতিযোগিতায় শামিল হয়েছিলেন।

সেই সময় গীতা সম্পর্কে একটা ভিডিও প্রকাশ করে বলেছিলেন, বর্তমান সময় আমাকে সেই পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে যখন আমি মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন ছিলাম। সেই সময়েও প্রতি মুহূর্তে আমার জীবন বিপন্ন ছিল এবং এখনকার মতোই বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। ভগবত গীতা সেই সময় আমায় আশ্রয় দিয়েছে, আজও দিচ্ছে।

বাংলাদেশ নিয়ে বক্তব্য:
২০২১ সালে দুর্গা পুজোর সময় বাংলাদেশে সহিংসতা দেখা যায়। শতাধিক হিন্দু পরিবারের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সেই সময় বহু হিন্দু মন্দির, বাড়িঘর ও দোকানপাটে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

এই আক্রমণের নিন্দা জানিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) একটা ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন তুলসী গ্যাবার্ড।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মন্দিরে ভগবানের ভক্তদের বিরুদ্ধে এমন ঘৃণা ও সহিংসতা দেখে আমার মন ভেঙে গিয়েছে। জিহাদিদের এই বিশ্বাস, যে মন্দির ও মূর্তি জ্বালিয়ে দেওয়া এবং নষ্ট করলে তাদের ঈশ্বর সন্তুষ্ট হবেন, আসলে দেখায় যে তারা ঈশ্বর থেকে কতটা দূরে। বাংলাদেশের তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের কাছে সময় এসেছে যে তারা হিন্দু, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধসহ সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ঘৃণার জিহাদি শক্তির হাত থেকে রক্ষা করুক।

এর আগে তুলসী গ্যাবার্ড সংসদে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। সেই সময় তিনি, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নৃশংসতার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে দায়ী করেন।