ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:১৮:৫৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্রে নারীরা গণহারে চাকরি ছাড়ছেন, কী কারণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:৪৭ এএম, ১৯ অক্টোবর ২০২৫ রবিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেটা হলো অভূতপূর্ব হারে নারীরা চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নারীরা গণহারে চাকরি আগেও ছেড়েছেন। এখন যে বাস্তবতা, তা ইতিহাসের অন্যতম সর্বোচ্চ।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৫৫ হাজার নারী কর্মক্ষেত্র থেকে সরে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিএলএস) তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এই সময় সামগ্রিকভাবে শ্রমশক্তির হার প্রায় অপরিবর্তিত ছিল।

১৯৪৮ সাল থেকে বিএলএসের সংগৃহীত তথ্যে দেখা যায়, কেবল মহামারির সময় এর চেয়ে বেশি নারী কাজ ছেড়েছেন। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, এই ধারা চলতে থাকলে সাম্প্রতিক ইতিহাসের অর্জন হারিয়ে যেতে পারে। নারীরা যে পরিমাণে শ্রমবাজারে যুক্ত হয়েছিলেন, তা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকা শক্তি।

ব্রিটিশ বহুজাতিক সংস্থা কেপিএমজির প্রধান অর্থনীতিবিদ ডায়ান সংক বলেন, ‘এতে শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শক্তিশালী অর্থনীতির জন্য সবার অংশগ্রহণের সুযোগ থাকা উচিত। এটা পুরুষ বনাম নারীর প্রতিযোগিতা নয়—আমাদের সবাইকে দরকার, সবার হাতে কাজ থাকা দরকার।’

কেন এই উল্টোরথ

মহামারির আগের বছরগুলোয় ২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের হার পুরুষদের চেয়ে দ্রুতহারে বেড়েছে। এই পরিবর্তনের পেছনে ছিল একাধিক কারণ—স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবারের সদস্যদের যত্নআত্তির কাজে নারীদের সম্পৃক্ততা, শিক্ষার প্রসার এবং নির্মাণ, কৃষি, মেরামতের মতো পুরুষপ্রধান ক্ষেত্রেও নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি।

কিন্তু মহামারিতে সবকিছু উল্টে গেল। মহামারির কারণে ২ কোটি ১৯ লাখ মানুষ চাকরি হারান, যাঁদের অর্ধেকেরও বেশি ছিলেন নারী। মাত্র এক মাসে কর্মক্ষম নারীদের অংশগ্রহণ ৩ শতাংশ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশে। অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ালেও নারীদের কাজে ফেরার গতি ছিল মন্থর। এ বিষয়কে অনেকে শি–সেশন বা নারীদের মন্দা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। নারীরা তখন বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন।

শিশুযত্নের ব্যয় বেড়ে যাওয়া, এই খাতে শ্রমিকসংকট, পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের দেখাশোনার দায়িত্ব—সব মিলিয়ে অনেক নারী ঘরে ফিরে গিয়েছিলেন।

সংক বলেন, ‘মহামারির পর হাইব্রিড ও বাসা থেকে কাজের সুযোগ থাকায় নারীরা আবার ফিরে এসেছিলেন। গত বছর নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ সর্বোচ্চ ৭৮ দশমিক ৪ শতাংশে পৌঁছায়, যদিও এখন তা নেমে এসেছে প্রায় ৭৭ দশমিক ৭ শতাংশে।

সংক আরও বলেন, ‘নারীদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আমরা ২০০০ সালের শিখর পেরোতে পেরেছিলাম শেষমেশ, কিন্তু সেই অর্জন টেকসই হচ্ছে না। বিপুলসংখ্যক নিয়োগ আর হাইব্রিড কাজের সুযোগের কারণে আমরা আগের শিখর ছাড়িয়ে যেতে পেরেছিলাম—একদিক থেকে এটি চমকপ্রদ; যদিও অন্যদিক থেকে তা কিছুটা হতাশাজনক। কেননা, উন্নত বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র এখনো পিছিয়ে।’

শিক্ষিত মা ও কৃষ্ণাঙ্গ নারীরাই বেশি ছাড়ছেন

এই শ্রেণির নারীদের কাজ ছাড়ার কারণ বহুবিধ ও কাঠামোগত। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো শিশুযত্ন ও প্রাক্‌–প্রাথমিক শিক্ষার ব্যয় ক্রমেই বাড়ছে।

ক্যালিফোর্নিয়া–বার্কলের গবেষণায় দেখা গেছে, এ খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান আর্থিক সংকটে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে। কম মজুরি ও স্বল্প তহবিলের কারণে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে অভিবাসন কমে যাওয়ায় সংকট আরও বেড়েছে। ফলে অনেক এলাকায় এখন শিশুযত্নের সুযোগ নেই।

এই বোঝা এখন পরিবারগুলোর ওপর পড়ছে। সংক বলেন, পাঁচ বছরের কম বয়সী সন্তানের মায়েরাই সবচেয়ে বেশি কাজ ছেড়ে দিচ্ছেন। বিশেষ করে স্নাতক বা তার বেশি শিক্ষিত নারীরা দ্বিগুণ হারে কর্মক্ষেত্র ছাড়ছেন। অনেক দক্ষ ও প্রশিক্ষিত নারী পুরোপুরি শ্রমবাজার থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন। এর প্রভাব শুধু পরিবারের আয়েই নয়, পরবর্তী প্রজন্মের আর্থিক স্থিতিশীলতায়ও পড়ছে।

সংক আরও বলেন, নারীরা উপার্জন করলে সন্তানেরাও সাধারণত ভালো থাকে। ফলে কর্মজীবনের এই বিঘ্ন শিশুদের ভবিষ্যৎও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

অন্যদিকে অফিসে ফেরার বাধ্যবাধকতা থাকায় অনেকে কাজ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) উত্থান এবং মন্থর চাকরির বাজারে অফিসকেন্দ্রিক ও সেবামূলক খাতগুলোয় চাপ বেড়েছে।

অন্যদিকে কৃষ্ণাঙ্গ নারীরাও বিপুল হারে চাকরি ছাড়ছেন। সংক বলেন, অর্থনীতি দুর্বল হলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীগুলো আগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যাঁদের সম্পদ বা নিরাপত্তা কম, তাঁদের ক্ষেত্রে এ প্রভাব আরও গভীর।

অর্থনীতিবিদ মিশেল হোল্ডারের ভাষায়, সরকারি খাতে কর্মীর সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত—যে খাতে নারী, বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ নারীর উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে বেশি—এবং বৈচিত্র্য ও সমান সুযোগের নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রশাসনের পশ্চাৎপদ মনোভাব—এ দুই কারণে সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে।

এ ছাড়া সরকারের নীতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নারীদের ঘরে ফিরতে উৎসাহিত করছে বলে মন্তব্য করেন মিশেল হোল্ডার।

হোয়াইট হাউস অবশ্য বলছে, নারীদের সহায়তায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যেমন নবজাতকের জন্য বিনিয়োগ হিসাব, শিশু কর ক্রেডিট বৃদ্ধি ও নির্ভরশীল ব্যক্তিদের যত্নআত্তির ক্ষেত্রে সহায়তার পরিকল্পনা।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র টেলর রজার্স বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন অর্থনীতি গড়ে তুলছেন, যেখানে নারীরাও সমানভাবে উপকৃত হচ্ছেন। তাঁর নতুন করনীতির কারণে যেমন পরিবারগুলোর ব্যয়ভার কমছে, প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, তেমনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হচ্ছে।

নারীদের অভিজ্ঞতা

যেসব নারী এ বছর কর্মক্ষেত্র ছেড়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা নানা রকম—কখনো সহজ, কখনো বেদনাদায়ক। কারও জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া ছিল সহজ—কর্মপরিবেশ হয়ে উঠেছিল বৈষম্যমূলক বা বিষাক্ত, কেউ আবার পরিবারের স্বাস্থ্য ও মানসিক ভারসাম্যে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

দুই সন্তানের মা এক নারী নির্বাহী বলেন, ঘর ও অফিস সামলাতে গিয়ে একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। আরেক নারী সাবেক সেনা–আইনজীবী বাবার অসুস্থতার কারণে সরকারি চাকরি ছেড়েছেন।

কারও ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটি কঠিন ছিল—বছরের পর বছর পরিশ্রম করে পাওয়া স্বপ্নের চাকরি তহবিলসংকট বা পারিবারিক বিপর্যয়ের কারণে ছাড়তে হয়েছে।

এক তরুণী মা বলেন, সপ্তাহে তিন দিন শিশুযত্নের খরচ গৃহঋণের কিস্তির চেয়েও বেশি হওয়ায় প্রিয় চাকরি ছাড়তে হয়েছে। কাজের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মানসিক ও শারীরিকভাবে এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে আর ফেরা সম্ভব হয়নি।

ওই তরুণী মা আরও বলেন, ‘সম্ভবত আমরা এমন অবস্থায় এসে পড়েছি, যেখানে কাজের চাপ এতটাই বেড়েছে যে আমরা নিজেদের, পরিবার কিংবা সন্তানদের যত্ন নেওয়ার সুযোগই পাচ্ছি না।’