ঢাকা, রবিবার ০৭, ডিসেম্বর ২০২৫ ৫:২৬:৩৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
খালেদা জিয়ার অবস্থা এখনও উদ্বেগজনক আরও পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা খালেদা জিয়ার এন্ডোসকপি সম্পন্ন, থামানো গেছে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ আগারগাঁওয়ে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, নারীসহ দগ্ধ ৬ প্রবাসীদের নিবন্ধন ছাড়াল এক লাখ ৯৩ হাজার

শীতল পাটিকে বাঁচিয়ে রেখেছে নারীরা

রাতুল মাঝি | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০৭:২৯ পিএম, ৮ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার

বাংলাদেশের শীতল পাটি এখন বিশ্ব ঐতিহ্য। বাংলাদেশের কয়েকটি এলাকার গ্রামীণ মানুষের অন্যতম কারুশিল্প এই `শীতল পাটি` সম্প্রতি অর্জন করেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। অথচ বাঙালির রোজকার জীবনে শীতল পরশ-বোলানো শীতল পাটি এখন মৃতপ্রায় শিল্প।

 

হারিয়ে যাচ্ছে শীতল পাটি বানানোর প্রধান অনুষঙ্গ `বেত`, `মুর্তা` বা `মোস্তাক` গাছ। `পাটিকর`রাও এখন আর শীতল পাটি বানিয়ে তাদের জীবন-জীবিকার রসদ খুঁজে পান না। দিন বদলাচ্ছে আর ক্রমান্বয়ে হারাচ্ছে হাজার বছরের পুরোনো বাঙালি ইতিহাস ও ঐতিহ্য। তারপরও কেউ কেউ এখনও ধরে রেখেছেন এই পাটি তৈরির পেশা। তাই ঠিক যেন ধুকে ধুকে বেঁচে আছে এ শিল্প। আর এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন গ্রামীণ নারীরা।

 

সিরাজগঞ্জ জেলায় এখনো তৈরি হচ্ছে উন্নতমানের শীতল পাটি। সিরাজগঞ্জের সদর, রায়গঞ্জ ও কামারখন্দ উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের চাঁনপুর, হরিপুর, ঝাঐল ও আটঘরিয়া গ্রামে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের উন্নতমানের শীতল পাটি।


এখানকার শীতল পাটির ঐতিহ্য প্রায় পাঁচশ’ বছরের। বংশপরস্পরায় প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার এ শিল্পের সাথে জড়িত। এ শিল্পকে তারা জীবন জীবিকার মাধ্যম হিসেবে অবলম্বন করে আসছে।


শীতল পাটির মূল কাঁচামাল মূর্তা বেত গাছ। বাড়ির আশপাশে ও সব ধরনের জমিতেই মূর্তা বেতগাছ চাষ হয়। চারা রোপণের পর দুই-তিন বছরেই মূর্তা বেতগাছগুলো পাটি তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। মূর্তা বেত গাছ কাটা, বেতি তোলা ও নানা ধরনের রঙের কাজ পুরুষেরাই করে থাকে। আর নিপুণ হাতে বাহারি ধরনের পাটি তৈরির কাজ করে বাড়ির নারীরা।

 

গ্রামগুলোতে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে ঘরের বউরা মেহেদী হাতে নিপুণভাবে বুনন করছে শীতল পাটি। বসে নেই স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। তবে ঊর্ধ্বমুখি শ্রমবাজারে মজুরি কম, পুঁজি সংকট, কাঁচামালের অভাব ও বাজারজাতকরণসহ নানা সমস্যা থাকলেও নারীদের দৃঢ় মনোবল এ শিল্পটিকে এখনো টিকিয়ে রেখেছে।


আটঘরিয়া গ্রামের কাঞ্চনা রানী ও বীনা রানী বলেন, বউ হয়ে যেদিন এ ঘরে এসেছি, তার পর দিন থেকেই শীতলপাটি বুননের কাজ শুরু করেছি। শীতল পার্টি তৈরি করাই আমাদের মূল পেশা। এটিই আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন।


হরিপুর গ্রামের কারিগর রামু ও লক্ষণ চন্দ্র জানান, শীতল পার্টি পূর্ব-পুরুষদের ঐতিহ্য। প্রায় পাঁচশ’ বছর ধরে এ গ্রামে শীতল পার্টি তৈরি করা হচ্ছে। আগে এগুলো কোলকাতাসহ বিভিন্ন দেশে চলে যেত। পুঁজি সংকটের কারণে এখন এ শিল্পের করুণ অবস্থা দেখা দিয়েছে। স্বল্পসুদে ঋণ পেলে শীত মৌসুমে শীতল পাটি তৈরি করে স্টক করে রেখে গরমের মৌসুমে বিক্রি করে লাভবান হওয়া যেত। কিন্তু পুঁজি না থাকায় তৈরি করার পরই অল্প দামে বিক্রি করে দেয়া হয়।


গৌর চন্দ্র জানান, শীতল পাটি বুনন ছাড়া আমরা অন্য কোন কাজ জানি না। এক সময় বিয়ের কথা উঠলেও এ পাটির কথা আগে মনে হতো। বিয়েতে এই পাটির চাহিদা ছিলো অনেক বেশি। এখন কমে গেছে।

 

তিনি আরো জানান, বাজারজাতকরণেও নানা সমস্যা রয়েছে। প্রতি শুক্রবার ঝাঐল ইউপির মাহমুদা খোলায় শীতল পাটির হাট বসে। সিলেট, রংপুর, রাজশাহী, টাঙ্গাইল ও নওগাঁসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকারা এসে কিনে নিয়ে যায়। আবার অনেকে বাড়ী থেকেও কিনে নিয়ে যায়।


সিলেটের পাইকার হামিদুর রহমান বলেন, এখান থেকে অল্প দামে কিনে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে থাকি। এতে ভালো লাভ হয়।


টাঙ্গাইলের পাইকার আব্দুল মালেক জানান, এখানকার শীতল পাটির খুব চাহিদা রয়েছে। এই শীতল পাটিগুলো আমরা বিভিন্ন বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করি।


কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দিন জানান, এখানকার শীতল পাটির সুনাম সারাদেশে। তাই শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে কারিগরদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ক্ষুদ্রঋণ বর্তমানে চালু নেই। তবে পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের সাথে সমন্বয় করে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।


এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা বলেন, উৎপাদিত শীতল পার্টি যাতে সহজভাবে বাজারজাত করা যায় সে জন্য নির্দিষ্ট হাটের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও এদের স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করবো আমরা।

 

সূত্র : বাসস