ঢাকা, রবিবার ০৭, ডিসেম্বর ২০২৫ ৪:০৯:০৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
খালেদা জিয়ার অবস্থা এখনও উদ্বেগজনক আরও পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা খালেদা জিয়ার এন্ডোসকপি সম্পন্ন, থামানো গেছে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ আগারগাঁওয়ে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, নারীসহ দগ্ধ ৬ প্রবাসীদের নিবন্ধন ছাড়াল এক লাখ ৯৩ হাজার

একজন ময়নার সাতকাহন

ফিচার ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ১১:৫৬ এএম, ১৭ অক্টোবর ২০১৭ মঙ্গলবার

মেয়েটির আসল নাম ময়না। বয়স কত হবে ঠিক জানে না। আনুমানিক ১৪ বছর। ময়না থাকে ইসলামবাগ বস্তিতে। এক দূর সম্পর্কের খালার সঙ্গে। খালার নাম রাহেলা। রাহেলা খালাই তাকে কাজ জুটিয়ে দিয়েছে।


ময়না এখন বকশী বাজারের একটি বাসায় ছোটা বুয়ার কাজ করে। ছোট বুয়া হলেও কাপড় ধোয়া, ঘর মোছা থেকে শুরু করে বাসার রান্না বান্না সব কাজই তার জন্য জমা থাকে প্রতিদিন। সেই ভোরে আযানের সময় ময়না ঘুম থেকে ওঠে। ইসলামবাগ থেকে হেঁটে যায় বকশীবাজার। তারপর পৃথিবীর সব ক্লান্তি আর অবমাদ নিয়ে সে বস্তির ছোট ঘুপড়িতে ফিরে আসে। কখনো রাত ৯টায়। কখনো রাত ১০ টা এমনকি ১১টাও বেজে যায়।


অথচ কাজ শুরুর আগে গৃহকত্রী তাকে অনেক আশার কথাই শুনিয়েছিল। বাসায় তেমন একটা কাজ নেই। শুধু ঘর মোছা আর হাঁড়িপাতিল, বাসনপত্র ধোয়া। কথা ছিল সন্ধ্যার আগেই ছুটি মিলবে। কিন্তু এখন ময়না কিছুই মেলাতে পারছে না। কাপড় ধোয়াতেই সবচেয়ে বেশি কষ্ঠ হয়। ধোয়া মোছার কাজ করতে করতে তার হাতে ঘা হয়ে গেছে। গৃহকর্ত্রী ময়নার কাছ সব আদায় করে নেয়। অথচ প্রতিশ্রুতি দিয়েও মাইনে বাড়াচ্ছে না। কাজের শুরু থেকে এখনো যে ৫০০ টাকাই মামোহারা পায়। বর্তমানের জীবন সম্পর্কে ময়নার বক্তব্য কী? তার কথা হলো, ’বাইচ্যা থাকতে অইলে তো কাম করন লাগবই। আমরার মতন মাইনষের কাইগ্যে সুখ নাই। দূ:খ-কষ্টই আমরার জীবন।’


অতীতের কথা বলতে গিয়ে ময়নার চোখ সজল হয়ে ওঠে। তাদের গ্রামের বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। ময়নার বয়স তখন প্রায় আট বছর। এলাকার একটি লোক তার বাবা-মাকে টাকা পয়সার লোভ দেখিয়ে ময়নাকে মিরপুরের একটি বাসায় কাজের মেয়ে হিসেবে নিয়ে আসে। মিরপুরের বাসার গৃহকর্ত্রী তার বাবা-মাকে বলেছিল মেয়ে বড় হলে তারাই বিয়ে দিয়ে দেবে। দেখতে যেখতে ছয়টি বছর পার করে দিল সেই বাসায়। অনেক লোকজন ছিল সেই বাসায়। কাজের লোক বলতে সেই। গৃহকর্ত্রী ছিল খুব বদমেজাজী। যখন তখন মারধর করতো। এমনকি গরম চামচ বা খুন্তি দিয়ে ছ্যাকাও দিত। ছ্যাকার ক্ষত শরীরের নানান জায়গার এখনো রয়ে গেছে। ক্ষতের দাগ দেখাতে গিয়ে সেই সব দুঃসহ স্মৃতি যেন ময়নার চোখের সামনে ভেসে ওঠে।


এক পর্যয়ে ময়নার মা গৃহকর্ত্রীকে মেয়ে বড় হয়ে গেছে বিয়ে জন্য চাপ দেয়। তখন তার উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। বিয়ের খরচ পাতি যাতে না করতে হয় সেজনই অলংকার চুরির মিথ্যে অভিযোগ করে একদিন মিরপুরের সেই গৃহকর্ত্রী তাকে পেটাতে পেটাতে বাসা থেকে বের করে দেয়। সৌভাগ্য ক্রমে সেদিনই রাহেলা খালা তাকে দেখতে এসেছিল। সেই থেকে সে আছে রাহেলা খালার আশ্রয়ে।


জীবনের বিষাদময় কথা বলতে বলতে বাঁধবাঙা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ময়না। বাপ-মার সঙ্গেও তার এখন কোনো যোগাযোগ নেই। রাহেলা খালা তাকে কথা দিয়েছে টাকা পয়সা জমলে গ্রামে নিয়ে ময়নাকে ভালো একটি ছেলে দেখে বিয়ে দেবে। রাত বিরাতে রাস্তায় চলাফেরা করলে অনেক ব্যাটা-ছেলে তাকে অশ্লীল ইঙ্গিত করে। এসবকে ময়নার খুব ভয়। বস্তিতে, রাস্তায়, কর্মস্থল, বাসায় সবখানেই ময়নাকে খুব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে নিজেকে আগলে রেখে চলতে হয়। রাহেলা খালা তাকে বলেছে, সুন্দরভাবে সংসার করতে পারলে মেয়েদের জীবনে সুখ আসে। তখন আর কোনো দুঃখ থাকে না। একটি সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্নই এখন প্রচন্ড গতর ভাঙ্গা খাটুনি খাটতেও ময়নাকে নিরন্তর প্রণোদনা জোগাচ্ছে।