ঢাকা, রবিবার ০৭, ডিসেম্বর ২০২৫ ৩:৫৮:০২ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
খালেদা জিয়ার অবস্থা এখনও উদ্বেগজনক আরও পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা খালেদা জিয়ার এন্ডোসকপি সম্পন্ন, থামানো গেছে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ আগারগাঁওয়ে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, নারীসহ দগ্ধ ৬ প্রবাসীদের নিবন্ধন ছাড়াল এক লাখ ৯৩ হাজার

কাদম্বিনীর সংগ্রাম

অনু সরকার | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ১১:২৫ পিএম, ২ এপ্রিল ২০১৮ সোমবার

কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় ভারতের প্রথম নারী স্নাতক ও ডাক্তার। অসম্ভব ব্যক্তিত্বময়ী, বিদুষী এই নারীকে আধুনিক সময় কতটা মনে রেখেছে! অথচ কী দৃপ্ত পদক্ষেপে, অসম্ভবের বেড়া টপকে তিনি এ দেশের প্রথম নারী গ্র্যাজুয়েটের শিরোপা পান ১৮৮২ সালে। শুধু তা-ই নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় তিনিই প্রথম নারী ডাক্তার, যিনি ডাক্তারি শাস্ত্রের তিন-তিনটি বিলিতি ডিগ্রি লাভ করেন! একবার ফিরে দেখা যাক অনমনীয় এই নারীর সেই মহৎ কীর্তি।


কাদম্বিনীর জন্ম হয় ১৮ জুলাই, ১৮৬১ সালে। তার বাবা ব্রজকিশোর বসু ছিলেন ভাগলপুর স্কুলের হেডমাস্টার। তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম এবং নারীশিক্ষায় অত্যন্ত উৎসাহী। সেখানে তিনি নারীমুক্তির জন্য ‘ভাগলপুর মহিলা সমিতি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন। উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি মেয়েকে ভাগলপুর থেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন। তৎকালীন সমাজ নারীশিক্ষাকে মোটেই সুনজরে দেখেনি। কিন্তু তেজি কাদম্বিনী সেই চোখরাঙানিকে অবজ্ঞা করে ১৮৭৩ সালে ভর্তি হন কলকাতার হিন্দু মহিলা বিদ্যালয়ে। সেই বছরই স্কুলটি স্থাপিত হয়েছিল (পরবর্তী কালে স্কুলটির নাম হয় বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়)। আর সেখান থেকেই ১৮৭৮ সালে তিনি এন্ট্রান্স পাশ করেন। তার পর ভর্তি হন বেথুন কলেজে। সেখানে পড়াশোনা করেন বিজ্ঞান নিয়ে। স্নাতক হন ১৮৮২ সালে। তারই সঙ্গে গ্র্যাজুয়েট হন আরও এক বাঙালি মহিলা চন্দ্রমুখী বসু। এই দুই কৃতী মহিলাই প্রথম ভারতীয় নারী, যারা গ্র্যাজুয়েট হওয়ার দুর্লভ সম্মান অর্জন করতে পেরেছিলেন।


স্নাতক হওয়ার পর ডাক্তারি পড়ার জন্য মনস্থির করেন কাদম্বিনী। সেই খবর ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি। কলকাতার অভিজাত সমাজ নানাভাবে তাকে ব্যঙ্গ করতে শুরু করে। তিনি যাতে ডাক্তারি পড়তে না পারেন, চলল তার জন্য নানা অপচেষ্টাও। ছাড়ার পাত্রী ছিলেন না কাদম্বিনীও। আবার সমাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৮৮২ সালে ভর্তি হন মেডিকেল কলেজে। তখন শুধু রক্ষণশীল সমাজই নয়, তার বিরোধিতা করতে থাকে মেডিকেল কলেজের টিচিং স্টাফও। বঙ্গবাসী কাগজে তার মাথা নত করে দেওয়ার জন্য একটি কার্টুন প্রকাশিত হয়, যাতে দেখানো হয়েছিল, কাদম্বিনী তার স্বামী দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাকে দড়ি বেঁধে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। তার নিচে লেখা ছিল কুরুচিকর নানা মন্তব্য।


বঙ্গবাসী কাগজের সম্পাদক মহেন্দ্রলাল পালের এ ধরনের আচরণকে মোটেই প্রশ্রয় দেননি কাদম্বিনী দেবী বা তার স্বামী দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়। আদালতে অভিযোগ জানান তারা। বিচারে মহেন্দ্রবাবুর ছ’মাসের জেল এবং একশো টাকা জরিমানা হয়। একটি মেয়ের এ হেন সাহস রীতিমত তোলপাড় ফেলে দেয় সমাজে।


কাদম্বিনী ডাক্তারি পাশ করেন ১৮৮৬ সালে। তিনি এবং আনন্দী গোপাল জোশী প্রথম ভারতীয় নারী ডাক্তার, যারা ওয়েস্টার্ন মেডিসিন নিয়ে প্র্যাকটিস করার যোগ্যতা অর্জন করেন। এরপর কাদম্বিনী ইংল্যান্ডে পাড়ি দেন এবং এলআরসিএস এবং জিএফপিএস ডিগ্রি লাভ করেন।

তিনিই ছিলেন ভারতের প্রথম নারী চিকিৎসক, যিনি ডাক্তারি শাস্ত্রের একাধিক বিদেশি ডিগ্রি অর্জনের দুর্লভ দক্ষতা দেখান। বিলেত থেকে ফিরে জনসেবায় মন দেন বিদুষী এবং অকুতোভয় এই নারী। চিকিৎসা করার জন্য ছুটে যেতেন গ্রামান্তরে। পাশাপাশি যোগ দেন রাজনীতিতেও। ১৮৮৯ সালে তিনি এবং স্বর্ণকুমারী বসু যুগ্মভাবে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেন। সেই সময় তার সঙ্গে পরিচয় হয় অ্যানি বেসান্তের। যোগ দেন স্বাধীনতা আন্দোলনে।


কিন্তু অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে শরীর আর তার সঙ্গ দিচ্ছিল না। অবশেষে ১৯২৩ সালের ৩ অক্টোবর, জরুরি কয়েকটি অপারেশন সেরে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন তিনি। সামান্য বিশ্রাম নিয়ে ক্লান্ত দেহে স্নানঘরে ঢোকেন। সেখানেই সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়। আর চোখ খোলেননি কাদম্বিনী!