ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ২৩:৩৬:৩৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

বিবিসির প্রতিবেদন

কেন কমলার নিরাপত্তা–সুবিধা সরিয়ে নিলেন ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৪০ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০২৫ রবিবার

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সিক্রেট সার্ভিস নিরাপত্তা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন। কমলা গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে সাত মাস আগে পদ ছাড়েন।

মার্কিন আইন অনুযায়ী, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবারকে দায়িত্ব শেষ হওয়ার পর ৬ মাস সিক্রেট সার্ভিসের সুরক্ষা দেওয়া হয়।

তবে সেই মেয়াদ বাড়ানো যায়। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নাকি পদ ছাড়ার আগে হ্যারিসের জন্য সেই সময়সীমা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

এ সিদ্ধান্তকে ঘিরে ইতিমধ্যেই বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস বলছেন, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। নিচে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।

বাইডেন কেন কমলার নিরাপত্তার মেয়াদ বাড়িয়েছিলেন

এখন পর্যন্ত বাইডেন বা হ্যারিস কেউই জানাননি, কেন তাঁকে নির্ধারিত ছয় মাসের বেশি সময় নিরাপত্তা–সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, বাইডেন হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে এক গোপন নির্দেশে এক বছরের জন্য কমলার সুরক্ষা বাড়িয়েছিলেন।

আইনগতভাবে বাইডেনের সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার ছিল।

২০০৮ সালের এক আইনে বলা হয়েছে, পদ ছাড়ার পরও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট, তাঁদের স্ত্রী বা স্বামী এবং ১৬ বছরের নিচে সন্তানেরা সিক্রেট সার্ভিসের সুরক্ষা পেতে পারেন।

যদিও আইনে বলা আছে, এ সুরক্ষা ৬ মাসের বেশি বাড়ানো যাবে না। তবে যদি জরুরি মনে হয়, হোমল্যান্ড সিকিউরিটিবিষয়ক মন্ত্রী বিশেষ পরিস্থিতিতে ‘অস্থায়ী সুরক্ষা’ দিতে পারেন।

সিক্রেট সার্ভিসবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও লেখক রোনাল্ড কেসলার বিবিসিকে বলেছেন, ‘রাজনীতি বাদ দিলে এটি (কমলার নিরাপত্তা সুরক্ষার মেয়াদ বাড়ানো) আসলে নিয়ম মেনেই করা হয়েছিল।’

কমলা কি বেশি ঝুঁকিতে আছেন

সিবিএস নিউজ (বিবিসির মার্কিন সহযোগী প্রতিষ্ঠান) জানিয়েছে, সম্প্রতি হুমকি বিষয়ে নিরাপত্তা সংস্থার মূল্যায়নে দেখা গেছে, কমলাকে অতিরিক্ত সুরক্ষা দেওয়ার মতো গুরুতর কোনো ঝুঁকি নেই।

তবে কমলার শিবিরের কেউ কেউ প্রথম নারী ও কৃষ্ণাঙ্গ নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি অতিরিক্ত হুমকির মুখে ছিলেন—এমনটা ভেবে চিন্তিত ছিলেন বলে জানা গেছে। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে উত্তেজনাপূর্ণ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় তাঁর ঝুঁকি বেড়েছিল।

কমলার ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় ও ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় একাধিক হুমকি পাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালে কয়েকজন পুরুষ অনলাইনে কমলাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। এর আগে ২০২১ সালে ফ্লোরিডার এক নারী স্বীকার করেন, তিনি কমলাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন এবং বন্দুক হাতে ভিডিও ধারণ করে তা কারাগারে থাকা নিজের স্বামীকে পাঠিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এ বন্দুক ৫০ দিনের মধ্যে ব্যবহার করতে পারেন তিনি।

এমনকি, কমলা পদ ছাড়ার পরও চলতি বছরের মার্চে ফ্লোরিডার এক ব্যক্তি তাঁকে স্নাইপার রাইফেল দিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ায় গ্রেপ্তার হন।

তবে রোনাল্ড কেসলারের মতে, অন্যান্য অনেক রাজনীতিকের তুলনায় কমলার বিরুদ্ধে হুমকি তেমন বড় কিছু নয়। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, সিক্রেট সার্ভিস সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে।’

কমলার নিরাপত্তা–সুবিধা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এসেছে তাঁর বই হান্ড্রেড সেভেন ডেসের (১০৭ দিন) প্রচারে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তাঁর ভ্রমণ শুরু করার ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে। বইটিতে স্বল্প সময়ের জন্য তাঁর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়া ও ব্যর্থ নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা ইত্যাদি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন তিনি।

কেসলার বলেন, এ সফরের নিরাপত্তা দিলে এরই মধ্যে চাপে থাকা ও কর্মিসংকটে ভোগা সিক্রেট সার্ভিসের ওপর বাড়তি চাপ পড়ত। কারণ, সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে নিউইয়র্কে অবস্থানকারী বিদেশি রাষ্ট্রনেতা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তার দায়িত্বও নিতে হবে সংস্থাটিকে।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘তাঁর সফরে অন্তত ডজনখানেক গাড়ি সারা দেশে তাঁর সঙ্গে রাখতে হতো। এটি এই সংস্থার দেওয়া সেবার জন্য বড় চাপ।’

কোন কোন নিরাপত্তা–সুবিধা তুলে নেওয়া হলো

সিক্রেট সার্ভিস শুধু গাড়ি বা দেহরক্ষী সরবরাহ করে না। নিরাপত্তা–সুবিধা পাওয়া ব্যক্তির বাড়ির নিরাপত্তাও দেয় তারা, যেমন কমলার লস অ্যাঞ্জেলেসের বাড়িতে নিরাপত্তা–ব্যবস্থা ও অ্যালার্ম বসানো হয়েছিল।

সিক্রেট সার্ভিস আগেভাগেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সম্ভাব্য হুমকি চিহ্নিত করে তা নজরদারিতে রাখে—সেই হুমকি ইলেকট্রনিক মাধ্যমে হোক বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

এসব সুরক্ষা সুবিধার খরচ কত, তা প্রকাশ করেনি সিক্রেট সার্ভিস। তবে জানা গেছে, হুমকি ও নিরাপত্তা–সুবিধার মাত্রা বিবেচনায় নামকরা তারকা বা ব্যবসায়ীদের পেছনে বছরে কোটি কোটি ডলার খরচ হয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০২৩ সালে মেটার (ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান) প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় ২ কোটি ৩০ লাখ ডলারেরও বেশি খরচ হয়েছে। এর মধ্যে ৯৪ লাখ ডলার সরাসরি নিরাপত্তা খাতে ব্যয় করা হয়।

এটি কি ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রতিশোধ

কমলার নিরাপত্তা–সুবিধা প্রত্যাহারের পর তাঁর ঘনিষ্ঠজন ও ট্রাম্পবিরোধীরা অভিযোগ করেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এ পদক্ষেপ নিয়েছেন ট্রাম্প।

এর আগেও ট্রাম্প তাঁর সাবেক সহযোগী ও বিরোধীদের নিরাপত্তা–সুবিধা সরিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে আছেন হান্টার ও অ্যাশলি বাইডেন (জো বাইডেনের সন্তান), অ্যান্থনি ফাউচি (মার্কিন সংক্রামক রোগবিষয়ক সংস্থার সাবেক প্রধান)।

এ ছাড়া সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের নিরাপত্তাও প্রত্যাহার করা হয়েছিল। জন বোল্টন পরবর্তী সময়ে ট্রাম্পের তীব্র সমালোচক হন।

ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসমের মুখপাত্র বব সালাদে সিএনএনকে বলেছেন, ‘জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো তাড়াহুড়া বা প্রতিশোধমূলক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়।’

তবে রোনাল্ড কেসলার মনে করেন, সিক্রেট সার্ভিস জনবলসংকটে ভুগছে। তাই ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের লোকজনের মতো সরাসরি ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ওপর বেশি মনোযোগ দিচ্ছে তারা। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প হয়তো আনন্দের সঙ্গে এটি (কমলার নিরাপত্তা প্রত্যাহার) করেছেন। তবে এর বাস্তব কিছু কারণও আছে।’

সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টদের মধ্যে শুধু ডিক চেনি পদ ছাড়ার পর নিরাপত্তা–সুবিধার মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে পেয়েছিলেন। তখনকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সেই অনুমতি দিয়েছিলেন।

সাবেক প্রেসিডেন্টদের নিয়ম কি আলাদা

হ্যাঁ। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্টরা না হলেও সাবেক প্রেসিডেন্টরা সারাজীবন নিরাপত্তা পান। তবে চাইলে তাঁরা সেটা নিতে না–ও পারেন।

১৯৯৪ সালে খরচ কমাতে কংগ্রেস আইন করে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও তাঁদের স্ত্রী–স্বামীরা পদ ছাড়ার পর ১০ বছর পর্যন্ত নিরাপত্তা পাবেন।

কিন্তু ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট ওবামা আবার আইন পরিবর্তন করে আজীবন নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। বর্তমানে জর্জ ডব্লিউ বুশ, বিল ক্লিনটন, বারাক ওবামা ও জো বাইডেন এ সুবিধা পাচ্ছেন।

শুধু রিচার্ড নিক্সন ১৯৮৫ সালে নিজেই নিরাপত্তা–সুবিধা ত্যাগ করেছিলেন। তখন তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, নিক্সন আসলে সংস্থাটির অর্থ সাশ্রয়ের জন্যই তা করেছিলেন।